৫৮/১১. কর্ণ
Ear (ইয়ার)/ ‘أُذْن’ (উযন)
ভূমিকা (Prolegomenon)
এটি ‘বাঙালী পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী’ এর ‘বলাই’ পরিবারের অধীন গুরুত্বপূর্ণ একটি ‘বাঙালী পৌরাণিক চারিত্রিক পরিভাষা’। এর ‘বাঙালী পৌরাণিক অশালীন মূলক সত্তা’ ‘শিশ্ন’। এর ‘বাঙালী পৌরাণিক রূপান্তরিত মূলক সত্তা’ ‘বলাই’। এর ‘বাঙালী পৌরাণিক রূপক পরিভাষা’ ‘বৈঠা’। এর ‘বাঙালী পৌরাণিক উপমান পরিভাষা’ ‘আঁচল, খুঁটি, গাছ২, চরণ, দৈত্য১, লাঠি ও হাত’। এর অন্যান্য ‘বাঙালী পৌরাণিক চারিত্রিক পরিভাষা’ ‘অনস্থী, আঙ্গুল, জগাই, জনক, বিম্বল ও শুক্রাচার্য’ এবং এর ‘বাঙালী পৌরাণিক ছদ্মনাম পরিভাষা’ ‘কামগুরু, কিরীটী, বণিক, বাবা, বামন, মরা৫ ও শ্রীচরণ’।
অভিধা (Appellation)
কর্ণ (বাপৌচা)বি ১. কান, শ্রোত্র, শ্রাবক, শ্রবনেন্দ্রিয় ক্রি শ্রবণ করা, হৃদয়ঙ্গম করা, কথা বা শব্দ অনুধাবন করা ২. হাল, বৈঠা, মাঝি, কাণ্ডারী ৩. কোণ, কোনা, চতুর্ভূজের বিপীরত কোণা যুক্তকারী রেখা, ear, ‘أُذْن’ (উযন) (প্র) মহাভারতে বর্ণিত চরিত্র বিশেষ, সূর্যের ঔরসজাত কুন্তীর কুমারী অবস্থায়জাত পুত্র। কর্ণ যদুশ্রেষ্ঠ সুরের কন্যা এবং তাঁর পিতৃস্বসার পুত্র কুন্তিভোজের পালিতা কন্যা পৃথা ও কুন্তির পুত্র। তাঁর পূর্বনাম ছিল বসুষেণ। পরে তিনি নিজের অঙ্গ কর্তন করে ইন্দ্রকে কবচ ও কুণ্ডল দান করায় কর্ণ নামে খ্যাত হন। তার স্ত্রীর নাম পদ্মাবতী (আপ্রশ) শিশ্ন, বাঁড়া, মেঢ়্র, হোল, penis, জকর (আ.ﺬﻜﺭ) (আঞ্চ) সোনা, পোতা, ধন (শ্ববি) বলাই, কামদেব, নারদ, বিম্বল, মদন, মন্মথ, মহাদেব, মাধব, রাবণ, লাঠি, শিব, হাত, পা, গাছ, রশি (ইদে) আসা (আ.ﻋَﺼَﺎ), জাকারিয়া (আ.ﺯﻜﺭﻴﺎ), শিমার (আ.ﺸﻤﺭ), হাবিল (আ.ﺤﺎﺒﻞ), মারুত (আ.ﻤﺎﺭﻮﺕ) (ইংপ) finger (দেপ্র) এটি ‘বাঙালী পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী’ এর ‘বলাই’ পরিবারের ‘বাঙালী পৌরাণিক চারিত্রিক পরিভাষা’ ও শ্বরবিজ্ঞানের একটি ‘দেবতা’ বিশেষ (সংজ্ঞা) ১. সাধারণভাবে শ্রবণেন্দ্রিয়কে কর্ণ বলা হয় ২. শ্বরবিজ্ঞানে; পুরুষজাতির শিশ্নকে বলাই বা কর্ণ বলা হয় (বাপৌছ) কামগুরু, কিরীটী, বণিক, বাবা, মরা৫ ও শ্রীচরণ (বাপৌচা) অনস্থী, আঙ্গুল, কর্ণ, জগাই, জনক, বিম্বল ও শুক্রাচার্য (বাপৌউ) আঁচল, খুঁটি, গাছ২, চরণ, দৈত্য১, লাঠি ও হাত (বাপৌরূ) বৈঠা (বাপৌমূ) বলাই।
কর্ণের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্ধৃতি (Some highly important quotations of ear)
১. “কর্ণরাজা ভবে বড় দাতা ছিল, অতিথি রূপে প্রভু সবংশ নাশিল, তবু কর্ণ অনুগত- বলি দিয়ে আপনপুত্র, অতিথির মন করল সান্ত্বনা।” (পবিত্র লালন-৭৩৩/৪)।
২. “চক্ষু কর্ণ করো সংবরণ, বন্ধ রাখ পাণি চরণ, পঞ্চচিহ্ন বলে বলন, গোপন চিহ্ন বলে তাই।” (বলন তত্ত্বাবলী- ১৮০)।
কর্ণের সংজ্ঞা (Definition of ear)
সাধারণত; জীবের শ্রবণেন্দ্রিয়কে কর্ণ বলে।
কর্ণের আধ্যাত্মিক সংজ্ঞা (Theological definition of ear)
বাঙালী শ্বরবিজ্ঞানে ও বাঙালী পুরাণে;; পুরুষজাতির শিশ্নকে কর্ণ বলে।
কর্ণের প্রকারভেদ (Variations of ear)
বাঙালী শ্বরবিজ্ঞানে ও বাঙালী পুরাণে; কর্ণ দুই প্রকার। যথা; ১. উপমান কর্ণ ও ২. উপমিত কর্ণ।
১. উপমান কর্ণ (Analogical ear)
সাধারণত; জীবের শ্রবণেন্দ্রিয়কে উপমান কর্ণ বলে।
২. উপমিত কর্ণ (Compared ear)
বাঙালী শ্বরবিজ্ঞানে ও বাঙালী পুরাণে; পুরুষজাতির শিশ্নকে উপমিত কর্ণ বলে।
কর্ণের উপকার (Benefits of ear)
১. কর্ণ দ্বারা জীবকুল শাব্দগুলোর বোধ অনুধাবন করে থাকে।
২. কর্ণ দ্বারা জীবকুল সুরের ভালোমন্দ বিচার ও বিবেচনা করে থাকে।
৩. যেসব প্রাণীর চোখ নেই তারা কর্ণ দ্বারা শব্দ সঙ্কেত ব্যবহার করে চলাফেরা করে থাকে।
কর্ণের পরিচয় (Identity of ear)
এটি ‘বাঙালী পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী’ এর ‘বলাই’ পরিবারের অধীন একটি ‘বাঙালী পৌরাণিক চারিত্রিক পরিভাষা’ বিশেষ। সারাবিশ্বের সর্বপ্রকার সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক পুস্তক-পুস্তিকায় এর ন্যূনাধিক ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। তবে; এ পরিভাষাটি একেক গ্রন্থে একেক ভাষায় ব্যবহার হওয়ার কারণে সাধারণ পাঠক-পাঠিকা ও শ্রোতাদের তেমন দৃষ্টিগোচর হয় না।
জীবের শব্দ বা ধ্বনি অনুধাবন ইন্দ্রিয়ই মানুষের নিকট কর্ণ নামে পরিচিত। সর্বপ্রকার শব্দগুলো শ্রবণ দ্বারা কর্ণ জীবকুলকে যথাযথ পথ নির্দেশার সঙ্কেত প্রদান করে। কর্ণ দ্বারা সর্বপ্রকার শব্দগুলো শ্রবণের মাধ্যমে জীবকুল ডান, বাম ও পিছন হতে আগত বিপদ কিংবা দুর্ঘটনা হতে আত্মরক্ষা করতে সক্ষম হয়। কর্ণ বাঙালী পুরাণে বর্ণিত প্রধান দশ দেবতা বা দশ ইন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ। কর্ণ শব্দ ও ধ্বনি শ্রুতির দ্বারা অদৃশ্য সঙ্কেত গ্রহণ করে জীবকুলকে অদৃশ্য-জ্ঞান দান করে থাকে। যেসব প্রাণীর চোখ নেই, তারা কর্ণ দ্বারা শব্দ সঙ্কেত ব্যবহার করে চলাফেরা করে। তেমনই; অন্ধ মানুষ। যেমন; অন্ধরা কর্ণ দ্বারা শব্দ সঙ্কেত গ্রহণ করার মাধ্যমেই সবকিছু চিনতে ও জানতে পারে।
প্রাণীকুলের মধ্যে কর্ণযুক্ত ও কর্ণহীন উভয় প্রজাতির প্রাণীর অস্তিত্ব দেখতে পাওয়া যায়। যেমন; সাপ, কেঁচো ইত্যাদি প্রাণীর কর্ণ নেই। উপরোক্ত আলোচনা হতে দেখতে পাই আভিধানিক অর্থে কর্ণ যদিও প্রধান দশটি ইন্দ্রিয়ের মধ্যে একটি কিন্তু প্রপক বিশ্লেষণে দেখা যায় শ্বরবিজ্ঞানে চরিত্র রূপে অলংকৃত মহাভারতে বর্ণিত “কর্ণ” শ্রুতম বা শ্রোত্র বা কান নয়। মহাভারতে বর্ণিত “কর্ণ” হলেন দেবতা ‘বলাই’। অর্থাৎ; আভিধানিক কর্ণের অভিধা কান ও মহাভারোক্ত কর্ণের অভিধা এক নয়। আভিধানিক ক্ষেত্রে কর্ণের অভিধা হচ্ছে কান বা শ্রোবনিন্দ্রিয় কিন্তু পুরাণ বা কর্ণের অভিধা হচ্ছে শিশ্ন। অর্থাৎ; কর্ণের স্বয়ংসম্পূর্ণ দুটি অভিধা রয়েছে।
‘বলন তত্ত্বাবলী’ হতে উদ্ধৃত উপরোক্ত অনুচ্ছেদে কর্ণ অর্থ আভিধানিক কান বুঝায় কিন্তু ‘মহাভারত’ হতে উদ্ধৃত অনুচ্ছেদে কর্ণ অর্থ বলাই বা শিশ্নই বুঝায়। যেহেতু; অর্জুন হলো ভৃগু। “যুদ্ধকালে পরশুরাম ও ব্রাহ্মণের অভিশাপ অনুযায়ী কর্ণ দিব্যাস্ত্র সব বিস্মৃত হন এবং মেদিনী তাঁর রথচক্র গ্রাস করে। রথচক্র উদ্ধারকালে অঞ্জলিক বাণে অর্জুন কর্ণের শিরশ্ছেদ করেন ও কর্ণের দেহস্থ শক্তি সূর্যমণ্ডলে প্রবেশ করে”। আলোচনার যবনিকায় উপনীত হয়ে আমরা বলতে পারি যে; শ্বরবিজ্ঞানে ব্যবহৃত কর্ণের অভিধা সর্বদা দুটি। যথা; ১.কান ও ২.শিশ্ন। এখানে; আলোচ্য কর্ণ শিশ্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অন্যদিকে; বড় দুঃখ-পরিতাপের বিষয় হলো সারাবিশ্বের সর্বপ্রকার সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক মনীষী, বক্তা, ব্যৈখ্যিক, টৈকিক, অভিধানবিদ ও অনুবাদকরা শ্বরবিজ্ঞানে বর্ণিত ‘কর্ণ’ পরিভাষাটির দ্বারা কেবল মানুষের কানকেই বুঝেন ও বুঝিয়ে থাকেন। তাই; সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিকরা চিরদিনের জন্য আধ্যাত্মিক জ্ঞান বা আত্মতত্ত্বের জ্ঞানে চিরান্ধ। এসব কারণেই সাম্প্রদায়িকরা স্বস্ব শ্বরবিজ্ঞানের প্রকৃতশিক্ষা হতে বহু দূরে। বর্তমানকালের সাম্প্রদায়িকদের ব্যাপারে বঙ্গদেশে প্রচলিত একটি প্রবাদ তুলে ধরা যায়- “সারানিশি সপ্তখণ্ড রামায়ণ পড়ে, সকালে বলে সীতা রামের মাসী।”
প্রপক (ব্যাপক-রূপক ব্যাখ্যামূলক উপাখ্যান- ১) Extensive (The episode of extensive-metaphor explanatory- 1)
১. মহাভারতে বর্ণিত চরিত্র বিশেষ, সূর্যের ঔরসজাত কুন্তীর কুমারী অবস্থায়জাত পুত্র।১
প্রপক (ব্যাপক-রূপক ব্যাখ্যামূলক উপাখ্যান- ২) Extensive (The episode of extensive-metaphor explanatory- 2)
২. “কর্ণ যদুশ্রেষ্ঠ শূরের কন্যা এবং তাঁর পিতৃস্বসার পুত্র কুন্তিভোজের পালিতা কন্যা পৃথা বা কুন্তীর পুত্র। কর্ণের আদিনাম বসুষেণ। পরে তিনি নিজের অঙ্গ কর্তন করে ইন্দ্রকে কবচ ও কুণ্ডল দান করায় কর্ণ নামে খ্যাত হন।
একদা ঋষি দুর্বাসা অতিথি রূপে তাঁর গৃহে এলে কুন্তি তাঁর পরিচর্যা করেন, এতে দুর্বাসা তুষ্ট হয়ে কুন্তীকে একটি মন্ত্র শিখিয়ে দেন- যার বলে কুন্তী যে দেবতাকে আহ্বান করবেন, তাঁর প্রসাদে তাঁর পুত্রলাভ হবে। কৌতুহল বশে কুন্তী সূর্যকে আহ্বান করেন। সূর্য এসে বললেন যে; তোমার আহ্বান বৃথা হবে না, আমার সাথে মিলনের ফলে তোমার পুত্রলাভ হবে এবং তুমি কুমারীই থাকবে। যারফলে; কবচ ও কুণ্ডলধারী কর্ণের জন্ম হয়। কলংকের ভয়ে কুন্তী একটি পাত্রের মধ্যে পুত্রকে রেখে জলে ভাসিয়ে দিলেন। সূতবংশীয় অধিরথ ও তাঁর স্ত্রী রাধা সে শিশুকে জলধি হতে উদ্ধার করে বসুষেণ নাম দিয়ে লালনপালন করে বড় করে তোলেন। রাধা কর্তৃক প্রতিপালিত হয়েছিলেন বলে বসুষেণের অন্য নাম রাধেয়। পরে পাণ্ডুর সঙ্গে কুন্তীর পরিণয় হয় এবং যুধিষ্ঠিরাদির জন্ম হয়। সুতরাং কর্ণ পাণ্ডবদের ও যুধিষ্ঠিরাদির ভ্রাতা। কর্ণের মৃত্যুর পর এ গোপন সম্বন্ধটি প্রকাশ পায়। দ্রোণাচার্যের নিকট বিভিন্ন দেশের রাজপুত্রদের সঙ্গে কর্ণও অস্ত্রশিক্ষা করেন। অস্ত্রশিক্ষা প্রদর্শনকালে কর্ণ অর্জুনের প্রদর্শিত সব অস্ত্রকৌশল প্রদর্শন করেন এবং অর্জুনকে দ্বন্দ্বযুদ্ধে আহ্বান করেন। পাণ্ডবগণ অজ্ঞাত কুলশীল কর্ণের কোনো পরিচয় না পেয়ে যুদ্ধের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেন। অর্জুনের প্রতি ঈর্ষাপরায়ণ দুর্যোধন কর্ণের বিক্রম দেখে তাঁর সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করেন। এ আহ্বান প্রত্যাখ্যানের জন্য কর্ণ বিমর্ষ ও লজ্জিত হলে, দুর্যোধন কর্ণকে অঙ্গরাজ্যের রাজপদে অভিষেক করেন।
কিয়ৎকাল পরে দ্রৌপদীর স্বয়ংবর সভায় লক্ষ্যভেদের জন্য ধনু উত্তোলন করলে দ্রৌপদী সূতপুত্রকে বরণ করতে অসম্মত হন। তখন কর্ণ ধনু বা গাণ্ডীব পরিত্যাগ করেন। অর্জুন লক্ষ্যভেদ করে দ্রৌপদীকে লাভ করলে উপস্থিত রাজন্যবর্গের সাথে পাণ্ডবগণের ভীষণ যুদ্ধ হয়, তাতে কর্ণ অর্জুনের নিকট পরাজিত হন। অতঃপর; হস্তিনাপুরের দ্যূতসভায় কর্ণ দ্রৌপদীর প্রত্যাখ্যানের প্রতিশোধ নেন। একদিন কর্ণ দ্রোণাচার্যের নিকট ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ শিক্ষা করতে চাইলেন কিন্তু সূতপুত্র বলে দ্রোণ ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ শিক্ষা দিতে অসম্মত হন। তখন ব্রাহ্মণ পরিচয়ে কর্ণ পরশুরামের নিকট ‘দিব্যাস্ত্র’ প্রয়োগের কৌশল শিক্ষা করেন। একদিন পরশুরাম কর্ণের ঊরুতে মাথা রেখে নিদ্রিত ছিলেন, সে সময় অর্জুনের হিতকামী ইন্দ্র এক বিকট কীট রূপ-ধারণ পূর্বক কর্ণের ঊরু বিদীর্ণ করেন। গুরুর নিদ্রাভঙ্গের আশঙ্কায় কর্ণ যন্ত্রণা সহ্য করতে লাগলেন। পরশুরাম নিদ্রাভঙ্গের পর শিষ্যের সহিষ্ণুতা দেখে বিস্মিত হয়ে বলেন যে; “ব্রাহ্মণের এত সহিষ্ণুতা সম্ভব নয়”। অতঃপর; তিনি কর্ণের প্রকৃত পরিচয় জানতে চান। পরশুরাম কর্ণের নিকট তাঁর যথার্থ পরিচয় জ্ঞাত হন। এতে পরশুরাম রাগান্বিত হয়ে এ অভিশাপ দেন যে; কপট উপায়ে তাঁর নিকট হতে ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ শিক্ষা করার জন্য কার্যকালে কর্ণ তা বিস্মৃত হবেন। কারণ; বেদ-মন্ত্রযুক্ত অস্ত্র অব্রাহ্মণের নিকট স্থায়ী হয় না।
একবার পরশুরামের নিকট অস্ত্রাভ্যাসকালে অসাবধানতাবশতঃ এক ব্রাহ্মণের হোমধেনু হত্যা করার জন্য ব্রাহ্মণ কর্ণকে অভিশাপ দেন যে; যুদ্ধকালে তাঁর মহাভয় উপস্থিত হবে এবং পৃথিবী তাঁকে রথচক্রে গ্রাস করবে ও যে প্রতিদ্বন্দ্বীকে তিনি পরাজিত করতে সচেষ্ট হবেন তাঁরই হস্তে কর্ণের অপমৃত্যু হবে। পরশুরামের নিকট অস্ত্রবিদ্যা শিক্ষাকালে একবার কলিঙ্গরাজের কন্যার স্বয়ংবর উপলক্ষ্যে কর্ণের সাথে মহারাজ জরাসন্ধের ভীষণ যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে জরাসন্ধ সন্তুষ্ট হয়ে কর্ণকে মালিনী নগর দান করেন। কর্ণ ছিলেন দুর্যোধনের একজন প্রধান উপদেষ্টা বা পরামর্শদাতা। জতুগৃহ দাহের পরামর্শদাতাদের মধ্যে কর্ণ ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ। বনবাসকালে দ্বৈতবনে অবস্থানের সময় পাণ্ডবদের দুর্দশাদর্শন অভিলাষে কর্ণ ও শকুনির পরামর্শে দুর্যোধন সপরিবারে সেখানে যান। সেখানে গন্ধর্বরাজ চিত্রসেনের হাতে কৌরবরা পরাজিত হন। তখন কর্ণ তাদের রক্ষা করতে অসর্থ হন। গন্ধর্ব হস্তে সপরিবারে বন্দী হলে অর্জুন দুর্যোধনাদিকে মুক্ত করেন। এরপর কর্ণ দিগ্বিজয়ে যাত্রা করেন ও দুর্যোধনকে বলেন যে; পাণ্ডবরা রাজসূয়যজ্ঞ উপলক্ষ্যে যেসব দেশ জয় করেছেন, তা তিনি একাই জয় করতে পারেন। দিগ্বিজয়ে বিভিন্ন দেশ জয় করে কর্ণ প্রভূত ধন সম্পদগুলো সংগ্রহ করেন। কর্ণের স্ত্রীর নাম পদ্মাবতী। কৃষ্ণসেন, বৃষকেতু, চিত্রসেন প্রভৃতি তাঁর পুত্র। দুর্যোধনের বৈষ্ণবযজ্ঞকালে কর্ণ প্রতীজ্ঞা করেন যে; অর্জুনকে সংহার বা বধ না করা পর্যন্ত পাদ-প্রক্ষালণ বা জলগ্রহণ করবেন না। পরে তিনি আসুরব্রহ অবলম্বন করে প্রতীজ্ঞা করেন যে; অর্জুন নিহত না হওয়া পর্যন্ত তিনি এ ব্রত পালনের সময়ে কোনো প্রার্থী এলে তাঁর নিকট যা চাওয়া হবে তিনি তাই দান করবেন। কর্ণের দানশীলতা পরীক্ষা করবার জন্য শ্রীকৃষ্ণ ছদ্মবেশী ব্রাহ্মণ রূপে কর্ণের পুত্র বৃষকেতুর মাংস ভক্ষণ করতে চান। কর্ণ অম্লান বদনে নিজ পুত্র বধ বা সংহার করে তাঁকে আহার করতে দেন। এ দানশীলতার পরিচয় পেয়ে শ্রীকৃষ্ণ বৃষকেতুকে পুনর্জীবন দান করেন।
এ ব্রত পালনকালে অর্জুনের হিতাকাক্সক্ষী ইন্দ্র ছদ্মবেশী ব্রাহ্মণ রূপে কর্ণের সহজাত কবচ ও কুণ্ডলী প্রার্থনা করেন। পূর্বাহ্নে সূর্য কর্ণকে সতর্ক করে দিলেও প্রতীজ্ঞাবদ্ধ কর্ণ প্রতীজ্ঞা রক্ষা করাই স্থির করেন। তবে; সূর্যের পরামর্শে অর্জুন বধের জন্য ইন্দ্রের নিকট তিনি একাগ্নী শক্তি প্রার্থনা করেন। ইন্দ্র তাঁকে উক্ত শক্তি দান করে বলেন যে; এ শক্তি অত্যন্ত বিপদকালে মাত্র একজনকে বধ করে পুনঃরায় তাঁর নিকট ফিরে যাবে। কবচ ও কুণ্ডল দেওয়ায় তাঁর নাম হলো বৈকর্তন ও কর্ণ। কর্ণের এ শক্তি কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে চতুর্দশ দিবসে ঘটোৎকচ বধেই লোপ পায়। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের প্রাক্কালে শ্রীকৃষ্ণ কর্ণের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁর জন্ম বিবরণ জানিয়ে বলেন যে; তিনি পাণ্ডবদের অগ্রজ এবং মতবাদ অনুসারে পাণ্ডুরই পুত্র। অতএব; তিনিই রাজত্বভার গ্রহণ করে পঞ্চপাণ্ডব ও দ্রৌপদীর সেবালাভ করে বসবাস করুণ। কর্ণ এ অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন। কারণ; তিনি কুন্তী কর্তৃক পরিত্যক্ত এবং অধিরথ ও রাধার স্নেহযত্নে লালিতপালিত হয়েছিলেন বলে অধিরথকেই পিতা রূপে গণ্য করেন। সমস্ত পৃথিবীর বিনিময়েও তিনি এ সম্বন্ধ মিথ্যায় পর্যবসিত হতে দেবেন না। দুর্যোধনের আশ্রয়ে তিনি রাজ্য ভোগ করেছেন এবং তাঁরই ভরসাতে দুর্যোধন এ যুদ্ধে প্রবৃত্ত হয়েছেন। মৃত্যু ও বন্ধন ভয়ে বা লোভের বশবর্তী হয়ে দুর্যোধনের সঙ্গে তিনি মিথ্যাচরণ করতে পারবেন না। এ আলোচনা-বিষয় যুধিষ্ঠিরের নিকট গোপন রাখতে কর্ণ শ্রীকৃষ্ণকে অনুরোধ করেন। কারণ; কর্ণকে জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা বলে জানলে যুধিষ্ঠির কখনই রাজ্য গ্রহণ করবেন না এবং কর্ণ রাজ্যলাভ করলে সে রাজ্য দুর্যোধনকেই দান করবেন। অতএব; কৃষ্ণার্জুন সহায়ে যুধিষ্ঠির রাজ্যলাভ করুন এবং কুরুক্ষেত্রে নিহত যোদ্ধাগণ স্বর্গলাভে সমর্থ হউক- তিনি এটাই চান।
একদিন সন্ধ্যাকালে কর্ণ যখন গঙ্গাতীরে জপব্রতে রত ছিলেন, তখন পাণ্ডবমাতা কুন্তী পাণ্ডবদের প্রাণরক্ষা কামনায় কর্ণকে যুদ্ধ হতে বিরত হয়ে রাজ্য গ্রহণের কথা উত্থাপন করেন। কর্ণের পিতা সূর্যও দৈববাণী দ্বারা কর্ণকে তাঁর মাতা কুন্তীর অভিলাষ পরিপূর্ণ করতে বলেন। মাতা ও পিতার অনুরোধে কর্ণ বিচলিত না হয়ে পরন্ত শৈশবে তাঁকে পরিত্যাগের জন্য তিনি মাতা কুন্তীকে তিরস্কার করেন এবং এ কথাও বলেন যে কুন্তী তাঁর নিজের হিতের জন্যই এ উপদেশ দিচ্ছেন। এদ্ব্যতীত এ কথাও বলতে তিনি কুণ্ঠীত হন না যে; এক্ষণে কৌরবপক্ষ ত্যাগ করলে লোকে তাঁকে বলবে যে; কৃষ্ণার্জুনের মিলিত শক্তির ভীতিতেই কর্ণ এহেন কাজে ব্রতী হয়েছেন। অন্যান্য সব বিষয় ত্যাগ করলেও কেবলমাত্র দুর্যোধনের প্রতি কৃতজ্ঞতা হেতু তাঁর পক্ষে কৌরবপক্ষ পরিত্যাগ অসম্ভব। পরিশেষে কর্ণ কুন্তীকে এ কথাও বলেন যে; এ যুদ্ধে অর্জুন ভিন্ন কোনো পাণ্ডবকেই তিনি হত্যা বা সংহার করবেন না। অর্জুন বা কর্ণকে নিয়ে কুন্তী পঞ্চপুত্রের জননীই থাকবেন।
কর্ণ কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে তাঁর এ প্রতীজ্ঞা পালন করেন। যুদ্ধের প্রাক্কালে ভীষ্ম কবচ-কুণ্ডলহীন কর্ণকে গর্বিত, নিচ ও পরশুরাম কর্তৃক অভিশপ্ত বলে অর্ধরথ গণনা করেন। এতে কর্ণ ক্রুদ্ধ হয়ে ভীষ্মের জীবিতকালে যুদ্ধ করবেন না বলে প্রতীজ্ঞা করেন। ভীষ্মের শরশয্যায় অবস্থানকালে কর্ণ তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ভীষ্ম তাঁকে বলেন যে; তিনি তাঁর জন্মবৃত্তান্ত অবগত আছেন এবং সে কারণেই তিনি তাঁর আপন ভ্রাতা পাণ্ডবদের পক্ষে কর্ণকে যোগ দিতে বলেছিলেন কিন্তু এ কথা শ্রবণান্তে কর্ণ জানান যে; তিনি কোনমতেই দুর্যোধনের পক্ষ ত্যাগ করবেন না। যুদ্ধের ত্রয়োদশ দিনে কর্ণ অন্য ছয়জন মহারথের সঙ্গে মিলিত হয়ে অন্যায় যুদ্ধে অর্জুন পুত্র অভিমন্যুকে বধ বা সংহার করেন। ষোড়শ দিনে দ্রোণের পর কর্ণ সেনাপতি হন। অর্জুন ব্যতীত সব পাণ্ডবই কর্ণ কর্তৃক পরাজিত হয়। কুন্তির নিকট প্রতিশ্রুতি থাকায় তিনি তাদের কাউকেই বধ বা হত্যা করেন নি। এ যুদ্ধে মদ্ররাজ শল্য কর্ণের সারথ্য গ্রহণ করেন ও কর্ণের সাথে কলহ করে তাঁর মনোবল ক্ষুণ্ন করতে সচেষ্ট হন। যুদ্ধকালে পরশুরাম ও ব্রাহ্মণের অভিশাপ অনুযায়ী কর্ণ দিব্যাস্ত্র সব বিস্মৃত হন এবং মেদিনী তাঁর রথচক্র গ্রাস করে। রথচক্র উদ্ধারকালে অঞ্জলিক বাণে অর্জুন কর্ণের শিরশ্ছেদ করেন ও কর্ণের দেহস্থ শক্তি সূর্যমণ্ডলে প্রবেশ করে। কর্ণের চরিত্রে একত্রে নিচতা ও মহত্ত্ব উভয়েরই অপূর্ব সমাবেশ দেখা যায়। জতুগৃহ দাহ, পাণ্ডবদের লাঞ্ছনা, পাশাখেলা ইত্যাদি কুপরামর্শের মূলে ছিলেন কর্ণ। অন্যদিকে; রাজ্যলোভেও তিনি কৌরবপক্ষ ত্যাগ করেন নি। একদিকে; যেমন; তিনি ছিলেন মতবাদ ভীরু, প্রতিশ্রুতি পরায়ণ, মহৎ ও দাতা; অন্যদিকে; তেমনি, ছিলেন আত্মম্ভরী, কোপনস্বভাব, প্রতিহিংসাপরায়ণ ও পাপমতি। এ দুই পরস্পর বিরোধী কর্মের অপূর্ব সংমিশ্রণে কর্ণ চরিত্র অদ্ভূত বৈচিত্রময় ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ (মহাভারত)”।২
প্রামাণ্য গ্রন্থাসমূহ (Authoritative books)
১. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান, বাংলা একাডেমী, ৭ম পুনর্মুদ্রণ, জ্যৈষ্ঠ ১৪১২/জুন ২০০৫।
২. পৌরাণিক অভিধান, সুধিরচন্দ্র সরকার সংকলিত, নবব সংস্করণ, মুদ্রণ- দাস অফসেট প্রসেসর, ২৫ গুলু ওস্তাগার লেন, কলকাতা- ৭০০ ০৩৬।
তথ্যসূত্র (References)
(Theology's number formula of omniscient theologian lordship Bolon)
১ মূলক সংখ্যা সূত্র (Radical number formula) "আত্মদর্শনের বিষয়বস্তুর পরিমাণ দ্বারা নতুন মূলক সংখ্যা সৃষ্টি করা যায়।"
রূপক সংখ্যা সূত্র (Metaphors number formula)
২ যোজক সূত্র (Adder formula) "শ্বরবিজ্ঞানে ভিন্ন ভিন্ন মূলক সংখ্যা-সহগ যোগ করে নতুন যোজক রূপক সংখ্যা সৃষ্টি করা যায়; কিন্তু, গণিতে ভিন্ন ভিন্ন সংখ্যা-সহগ যোগ করে নতুন রূপক সংখ্যা সৃষ্টি করা যায় না।"
৩ গুণক সূত্র (Multiplier formula) "শ্বরবিজ্ঞানে এক বা একাধিক মূলক-সংখ্যার গুণফল দ্বারা নতুন গুণক রূপক সংখ্যা সৃষ্টি করা যায়; কিন্তু, মূলক সংখ্যার কোন পরিবর্তন হয় না।"
৪ স্থাপক সূত্র (Installer formula) "শ্বরবিজ্ঞানে; এক বা একাধিক মূলক সংখ্যা ভিন্ন ভিন্ন ভাবে স্থাপন করে নতুন স্থাপক রূপক সংখ্যা সৃষ্টি করা যায়; কিন্তু, মূলক সংখ্যার কোন পরিবর্তন হয় না।"
৫ শূন্যক সূত্র (Zero formula) "শ্বরবিজ্ঞানে মূলক সংখ্যার ভিতরে ও ডানে শূন্য দিয়ে নতুন শূন্যক রূপক সংখ্যা সৃষ্টি করা যায়; কিন্তু, মূলক সংখ্যার কোন পরিবর্তন হয় না।"
< উৎস [] উচ্চারণ ও ব্যুৎপত্তির জন্য ব্যবহৃত () ব্যুৎপত্তির জন্য ব্যবহৃত > থেকে √ ধাতু => দ্রষ্টব্য পদান্তর :-) লিঙ্গান্তর অতএব × গুণ + যোগ - বিয়োগ ÷ ভাগ
- A great 70% flat rate for your items.
- Fast response/approval times. Many sites take weeks to process a theme or template. And if it gets rejected, there is another iteration. We have aliminated this, and made the process very fast. It only takes up to 72 hours for a template/theme to get reviewed.
- We are not an exclusive marketplace. This means that you can sell your items on PrepBootstrap, as well as on any other marketplate, and thus increase your earning potential.