গুরু

২৯/১. গুরু
Preceptor (প্রিসিপ্টর)/ ‘معلم’ (মুয়াল্লিম)

এটি বাঙালী পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী এর জ্ঞান পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ একটি বাঙালী পৌরাণিক রূপক পরিভাষা। এর বাঙালী পৌরাণিক প্রকৃত মূলক সত্তা জ্ঞান। এর বাঙালী পৌরাণিক সহযোগী মূলক সত্তা জ্ঞানেন্দ্রিয়। এর বাঙালী পৌরাণিক উপমান পরিভাষা আলো। এর বাঙালী পৌরাণিক চারিত্রিক পরিভাষা সম্বিত এবং এর বাঙালী পৌরাণিক ছদ্মনাম পরিভাষা মানুষগুরু

অভিধা (Appellation)
গুরু (বাপৌরূ)বি উপদেষ্টা, উপদেশক, শিক্ষক, দীক্ষক, দেশিক, দিশারী, সাম্প্রদায়িক জীবনের উপদেষ্টা, সাধনপন্থা নির্দেশক, সম্মানে বা বয়সে জ্যেষ্ঠ, মাননীয় ব্যক্তি, preceptor, ‘معلم’ (মুয়াল্লিম) বিণ ভারী, গুণসম্পন্ন, দুর্বহ, দায়িত্বপূর্ণ, কঠিন, মহান, দুরূহ, শ্রদ্ধেয়, মাননীয়, অতিশয়, অধিক (ব্যা) দীর্ঘ মাত্রাযুক্ত (প্র) ১. শ্বরবিজ্ঞানে; গুরু চার প্রকার। যথা; ১. মানুষগুরু (জ্ঞান) ২. জগৎগুরু (শ্বাস) ৩. কামগুরু (বলাই) ও ৪. পরমগুরু (সাঁই) ২. শ্বরবিজ্ঞানীদের মতে; নাসিকার সূর্যশ্বাস ও চন্দ্রশ্বাস বিশেষ . আত্মতাত্ত্বিক মনীষীদের মতে; প্রেমগুরু বা কামগুরু। অর্থাৎ; কামের দেবতা মদন . আত্মতাত্ত্বিক ও মরমী সাধকদের মতে; জীবের লালনপালনকর্তা সাঁই (শ্ববি) জ্ঞান, বুদ্ধি, প্রজ্ঞা, knowledge, আক্বল (.ﻋﻘﻝ), ইলিম (.ﻋﻟﻢ) (রূপ্রশ) বিচারক (ইপৌচা) মাহাদি (. ﻤﻬﺪﻯ), মুর্শিদ (.ﻤﺭﺷﺪ), পির (ফা.ﭙﻴﺭ), শায়েখ (.ﺷﻴﺦ)  (ইংপ) master, teacher (দেপ্র) এটি বাঙালী পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী এর জ্ঞান পরিবারের বাঙালী পৌরাণিক রূপক পরিভাষা ও বাঙালী বাঙালী পৌরাণিক দেবতা বিশেষ (সংজ্ঞা) ১. সাধারণত; মানুষকে নৈতিক শিক্ষাদীক্ষা প্রদানকারী শিক্ষককে বাংলায় ‘গুরু বলা হয় ২. বাঙালী শ্বরবিজ্ঞানে ও বাঙালী পুরাণে, চিত্তপটে সঞ্চিত ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য তথ্যাদিকে রূপকার্থে ‘গুরু বলা হয় (বাপৌছ) মানুষগুরু (বাপৌচা) সম্বিত (বাপৌউ) আলো (বাপৌরূ) গুরু (বাপৌমূ) জ্ঞান।

টীকা (Annotation)
সাধারণতভাবে; গুরু বলতে কেবল মানুষগুরুকে বুঝায়। অন্যদিকে; শ্বরবিজ্ঞানে; গুরু বলতে জ্ঞান, শ্বাস, শিশ্ন ও সাঁইকে বুঝায়। কিন্তু এখানে; গুরু বলতে আধ্যাত্মিক শিক্ষক বা মানুষগুরুকে বুঝানো হয়েছে। মানুষগুরু যে কোনো সাম্প্রদায়িক মতবাদ বা যে কোনো গোত্রের হতে পারেন। গুরুর কোনো জাত নেই। গুরুর কোনো সাম্প্রদায়িক মতবাদ নেই। যে কোনো সাম্প্রদায়িক মতবাদের বা যে কোনো গোত্রের মানুষ আধ্যাত্মিক গুরুর নিকট দীক্ষা নিতে পারে। গুরু ভক্তের উদ্ধারকারী বা ত্রাতা। মানুষগুরু প্রকৃতগুরু নয়। প্রকৃত গুরু হলেন সাঁই। এজন্য; প্রকৃতগুরুর সন্ধান না পাওয়া পর্যন্ত একের পর এক মানুষগুরুর নিকট দীক্ষা গ্রহণ করা ও জ্ঞানার্জন করাই বুদ্ধিমানের কাজ। প্রকৃতগুরুর সন্ধানলাভ করার জন্য; একাধিক গুরুর নিকট দীক্ষা গ্রহণ করা বা জ্ঞানার্জন করা সর্বকালেই সিদ্ধ। প্রকৃতগুরু বা সাঁইয়ের সন্ধান পাওয়ার পর; মানুষগুরু পরিবর্তনের আর প্রয়োজন নেই (গুরু যার থাকে সদয়, শমন বলে তার কিসের ভয়, লালন বলে মন তুই আমায়, করলি দোষী”) (পবিত্র লালন- ১৪৩/৪)

গুরুর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্ধৃতি (Some highly important quotations of preceptor)
১.   “আপনদেশের মধুরবাণী, গুরু আমায় শোনাও না, দেশবাসী কয় উল্টাকথা, সোজা করে শোনায় না।” (বলন তত্ত্বাবলী- ১৫)
২.   “গুরু উপায় বলো না, জনমদুঃখী কপালপোড়া, গুরু আমি একজনা।” (পবিত্র লালন- ৩৮৯/১)
৩.   “ভবে লাফালাফি কর না, ওরে আমার পাগল মনা, ভাঙ্গবে এই রঙ্গখানারে, গুরু বিনা কেউ রবে না।” (বলন তত্ত্বাবলী- ২২৩)

গুরুর কয়েকটি সাধারণ উদ্ধৃতি (Some ordinary quotations of preceptor)
১.   “গুরু উপায় কী আমার, কেমনে হব ত্রিবেণী পার।” (বলন তত্ত্বাবলী- ৯১)
২.   “গুরুকৃপা যার হলো, ফুলের মূল সে চিনল, লালন মহাফেরে পড়ল, ভবের ভক্তিঘটে।” (পবিত্র লালন-৩৪৮/৪)
৩.   “ত্রিতাপ জ্বালায় পরাণ পুড়ে গুরু উপায় বলো না, প্রেমজ্বালায় অঙ্গ জ্বলে মদনজ্বালা সহে না।” (বলন তত্ত্বাবলী- ১৩৩)
৪.   “সুখের নীড় স্বর্গপুরী, মাসান্তে আসে হুরী, গুরু দিলে মিলে সবারি, গুরু বিনা মিলে না ছাই।” (বলন তত্ত্বাবলী- ৩৮)

গুরুর সংজ্ঞা (Definition of preceptor)
বাঙালী শ্বরবিজ্ঞানে ও বাঙালী পুরাণে; যে মহান মনীষী মানুষকে নৈতিক শিক্ষাদীক্ষা প্রদান করেন তাঁকে গুরু বলে।

গুরুর আধ্যাত্মিক সংজ্ঞা (Theological definition of preceptor)
বাঙালী শ্বরবিজ্ঞানে ও বাঙালী পুরাণে; চিত্তপটে সঞ্চিত ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য তথ্যাদিকে জ্ঞান বা গুরু বলে।

গুরুর প্রকারভেদ (Variations of preceptor)
বাঙালী শ্বরবিজ্ঞানে ও বাঙালী পুরাণে গুরু চার প্রকার। যথা;
. মানুষগুরু (জ্ঞান)/ Inductor (ইন্ডাক্টর)/ ‘مغو’ (মোগু)
. জগৎগুরু (শ্বাস)/ Inhaler (ইনহ্যালার)/ ‘مستنشق’ (মুস্তানাশাক্ব)
. কামগুরু (শিশ্ন)/ Cupid (কিউপিড)/ ‘صولجان’ (সাওলাজান)
. পরমগুরু (সাঁই)/ Beverage (বেভ্যারিজ)/ ‘مشروبات’ (মাশরুবাত)।

. মানুষগুরু/ Inductor (ইন্ডাক্টর)/ ‘مغو’ (মোগু)
মানুষগুরুর সংজ্ঞা (Definition of inductor)
বাঙালী শ্বরবিজ্ঞানে ও বাঙালী পুরাণে, মানুষ আকারধারী যে মহান মনীষী সাধারণ মানুষকে জ্ঞান শিক্ষা প্রদান করেন তাকে মানুষগুরু বলে। যেমন; বিদ্যালয়ের শিক্ষক।

মানুষগুরুর আধ্যাত্মিক সংজ্ঞা (Theological definition of inductor)
বাঙালী শ্বরবিজ্ঞানে ও বাঙালী পুরাণে; গুরুপদ প্রাপ্ত ব্যক্তির জ্ঞানকে মানুষগুরু বলে। যেমন; সম্বিত।

মানুষগুরুর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্ধৃতি (Some highly important quotations of inductor)
১.    “গুরু চেনা সহজ নয়রে গুরু চেনা সহজ নয়, জগৎগুরু চিনতে গেলে মানুষগুরু ভজতে হয়।” (বলন তত্ত্বাবলী- ৯৬)
২.  “হক্বের ওপর থাকবে যখন, লাহুত মুক্বাম চিনবে তখন, এ সত্য জেনে ও মন, মানুষগুরু ধরলে না।” (পবিত্র লালন- ৭৪২/৩)
৩.  “গুরু যার থাকে সদয়, শমন বলে কিসের ভয়, লালন বলে মন তুই আমায়, করলি দোষী।” (পবিত্র লালন- ১৪৩/৪)

মানুষগুরুর প্রকারভেদ (Variations of inductor)
বাঙালী শ্বরবিজ্ঞানে ও বাঙালী পুরাণে মানুষগুরু দুই প্রকার। যথা; ১. আধ্যাত্মিক গুরু ও ২. জাগতিক গুরু।

. আধ্যাত্মিক গুরু (Spiritual preceptor)
আত্মদর্শন বা শ্বরবিজ্ঞানের শিক্ষাদীক্ষা প্রদানকারীকে আধ্যাত্মিক গুরু বলে। যেমন; আত্মজ্ঞানী গুরু।

. জাগতিক গুরু (Mundane preceptor)
বৈষয়িকবিদ্যা শিক্ষাদানকারী মনীষীকে জাগতিক গুরু বলে। যেমন; বিদ্যালয়ের শিক্ষক।

মানুষগুরুর পরিচয় (Identity of inductor)
যে মহান মনীষী মানুষকে নৈতিক শিক্ষাদীক্ষা প্রদান করেন তাকে মানুষগুরু বলা হয়। শুধু আকার ও আকৃতিধারী জ্ঞানীকে মানুষগুরু বলা হয় না। মানুষগুরু রূপ ব্যক্তির মধ্যে যে জ্ঞান রয়েছে প্রকৃতপক্ষে সে জ্ঞানকেই গুরু বলা হয়। কারণ; জ্ঞান হলো নিত্য, অক্ষয়, অমর ও অনন্ত কিন্তু আকারধারী মানুষ অনিত্য ও ধ্বংসশীল। অর্থাৎ; আকারধারী মানুষকে মানুষগুরু বলে সম্বোধন করলেও প্রকৃতপক্ষে মানুষগুরু হলো মানুষের জ্ঞান। গুরুদেবের জ্ঞানকে মানুষগুরু বলা হয়। অর্থাৎ; মানুষগুরু হলো মানুষগুরু রূপ ব্যক্তির জ্ঞান

পিতা-মাতা, বড়ভাই, বড়বোন, শ্বশুর-শাশুড়ী, দাদা-দাদী, মামা-মামী ও সর্বশ্রেণির শিক্ষক-শিক্ষিকাসহ সবাই প্রত্যেক মানুষের জন্য মানুষগুরু। যার নিকট হতে কোনো জ্ঞানার্জন করা হয় তিনিই গুরু। আবার আধ্যাত্মিক দীক্ষকগণও মানুষগুরু। গুরুর কোনো জাত নেই এবং গুরুর কোনো সাম্প্রদায়িক মতবাদ নেই। মানুষগুরু যে কোনো সাম্প্রদায়িক মতবাদ বা যে কোনো গোত্রের হতে পারেন। যে কোনো মতবাদের বা যে কোনো গোত্রের লোক তাঁর নিকট দীক্ষা গ্রহণ করতে পারেন। গুরু ভক্তের উদ্ধারকারী বা ত্রাতা। মানুষগুরু প্রকৃতগুরু নয়। প্রকৃতগুরু হলেন সাঁই। এজন্য; প্রকৃতগুরুর সন্ধান না পাওয়া পর্যন্ত একের পর এক মানুষগুরুর নিকট হতে জ্ঞানার্জন করে যাওয়ায় সব বুদ্ধিমানের কাজ। প্রকৃতগুরুর সন্ধানলাভ করার জন্য একাধিক গুরুর নিকট হতে জ্ঞানার্জন করা সর্বকালেই সিদ্ধ। প্রকৃতগুরুর সন্ধান পেয়ে গেলে মানুষগুরু আর পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই।

রক্তমাংসে নির্মিত মানুষকে গোঁসাই বা গুরু ভাবা, গোঁসাই বা গুরুর ছবি ধ্যান করা, গোঁসাই বা গুরুর মুখমণ্ডলের ধ্যান করা সর্বকালে সর্ব ঘরানাতেই নিষিদ্ধ ছিল, এখনও নিষিদ্ধ আছে এবং ভবিষ্যতেও নিষিদ্ধ থাকবে। যে সব গোঁসাই বা গুরু এমন করে তারা একান্ত গুরু-তত্ত্ব না জেনে ও না বুঝেই করে। আবার যে সব গোঁসাই বা গুরু এমন ভাবে তারাও একান্ত গুরু-তত্ত্ব না জেনে ও না বুঝেই ভাবে। এমন গোঁসাই গুরুর সঙ্গ পরিত্যাগ করার সঙ্গে সঙ্গেই আত্মজ্ঞানী সাধকগোঁসাই বা সাধকগুরুর নিকট পুনঃদীক্ষা গ্রহণ করা সবার একান্ত প্রয়োজন।

. জগৎগুরু/ Inhaler (ইনহ্যালার)/ ‘مستنشق’ (মুস্তানাশাক্ব)

জগৎগুরুর সংজ্ঞা (Definition of inhaler)
সাধারণত; সারাবিশ্বে বিরাজিত বাতাসকে জগৎগুরু বলে।

জগৎগুরুর আধ্যাত্মিক সংজ্ঞা (Theological definition of inhaler)
বাঙালী শ্বরবিজ্ঞানে ও বাঙালী পুরাণে; নাসিকার শ্বাসকে জগৎগুরু বলে।

জগৎগুরুর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্ধৃতি (Some highly important quotations of inhaler)
১.   “অখণ্ড মণ্ডলাকারং ব্যাপ্তং সারাচরাচর, গুরু তুমি পতিতপাবন পরমঈশ্বর।” (পবিত্র লালন- ৪২/১)
২.   “গুরু চেনা সহজ নয়রে গুরু চেনা সহজ নয়, জগৎগুরু চিনতে গেলে মানুষগুরু ভজতে হয়।” (বলন তত্ত্বাবলী- ৯৬)
৩.   “রণে, বনে, জলে ও জঙ্গলে যেখানে আমাকে স্মরণ করবে সেখানেই পাবে।” (লোকনাথ)।”

জগৎগুরুর পরিচয় (Identity of inhaler)
শ্বরবিজ্ঞানে; বাতাস বলতে বায়ুমণ্ডলে চলমান বাতাস না বুঝিয়ে বরং নাসিকা যোগে চলাচলকারী শ্বাসকে বুঝানো হয়। নাসিকার শ্বাসরূপ জগৎগুরু ডান ও বাম গতি ধারণ করে সর্বসময় শিষ্য বা ভক্তকুলের সাথে সাথে অবস্থান করেন এবং প্রতিনিয়ত শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে শিষ্যগণকে জীবনের প্রতিটি কাজের শুভাশুভ সংবাদাদি প্রদান করে থাকেন। শ্বাসরূপ বাতাস বিশ্বব্যাপী বিরাজমান বলে শ্বরবিজ্ঞানে তাকে জগৎগুরু বলা হয়।

মানুষগুরু জগতের সর্বত্রই বিরাজ করতে পারে না কিন্তু জগৎগুরু জগতের সর্বত্রই বিরাজ করতে পারেন। উপরোক্ত উক্তিদ্বয় মানুষগুরুর ক্ষেত্রে কখনই প্রযোজ্য নয় বরং এসব উক্তি কেবল জগৎগুরু শ্বাস বা নাসিকার বাতাসের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। অর্থাৎ; নাসিকার শ্বাসরূপ গুরু বিশ্বের সর্বত্র সবার নিকটই একই সময়ে সমানভাবে অবস্থান করতে পারেন কিন্তু রক্তমাংসে গড়া একজন মানুষগুরু বিশ্বের সর্বত্রই একই সময়ে সমানভাবে অবস্থান করতে পারেন না। শক্তি বিশ্বের সর্বত্রই সমানভাবে অবস্থান করতে পারে কিন্তু বস্তু বিশ্বের সর্বত্রই সমানভাবে অবস্থান করতে পারে না। কারণ; শক্তি অসীম কিন্তু বস্তু সসীম। অথচ বস্তু ও শক্তির এসব সূত্রগুলো না জানা এবং গুরুর প্রকারভেদ ও গুরু-তত্ত্ব না জানা নির্বোধ পরম্পরা অনুরাগী ও নির্বোধ রূপক মনীষীগণ অযথায় যত্রতত্র তর্কবিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। গভীর জ্ঞান বা আত্মতত্ত্ব জ্ঞানের দৈন্যতা হেতু কুটতার্কিকদের তর্কবিতর্ক হতে অনেকক্ষেত্রে হাতাহাতি বা সমর-সংগ্রামেরও উৎপত্তি হতেও দেখা যায় মাঝে মাঝে।

. কামগুরু/ Cupid (কিউপিড) ‘صولجان’ (সাওলাজান)
কামগুরুর সংজ্ঞা (Definition of cupid)
বাঙালী শ্বরবিজ্ঞানে ও বাঙালী পুরাণে; কামের দেবতা মদনকে কামগুরু বলে।

কামগুরুর আধ্যাত্মিক সংজ্ঞা (Theological definition of cupid)
বাঙালী শ্বরবিজ্ঞানে ও বাঙালী পুরাণে; পুরুষ জীবের শিশ্নকে কামগগুরু বলে।

কামগুরুর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্ধৃতি (Some highly important quotations of cupid)
১.   “পরমগুরু প্রেম পিরিতি, কামগুরু হয় নিজপতি, কাম ছাড়া প্রেম পায় কী গতি, তাই ভাবে লালন।” (পবিত্র লালন- ২৬৫/৪)
২.   “প্রেম প্রকৃতি স্বরূপসতী, কামগুরু হয় নিজপতি, ও মন অনুরাগী না হলে, ভজন সাধন হয় না।” (পবিত্র লালন- ৬৪৯/২)
৩.   “প্রেমবাজারে কে যাবি, তোরা আয় গো আয়, প্রেমগুরু কল্পতরু, প্রেমরসে মেতে রয়।” (পবিত্র লালন- ৬৫১/১)
৪ .  “প্রেমের রাজা মদনমোহন, নির্হেতু প্রেম সাধনে শ্যাম, ধরে রাধার যুগলচরণ, প্রেমের সহচরী গোপীগণ, প্রেম-দ্বারে বাঁধা রয়।” (পবিত্র লালন- ৬৫১/২)

কামগুরুর পরিচয় (Identity of cupid)
পৃথিবীর সব শ্বরবিজ্ঞানে শিশ্নকে কামগুরু বা কামের দেবতা বলা হয়। যেমন; কাম ব্যতীত জীবের প্রজন্ম টিকিয়ে রাখা যায় না; তেমনই; কোনো প্রজাতির জীব সাংসারিক, সামাজিক, দলবদ্ধ বা সঙ্ঘবদ্ধ হতেও পারে না। যেমন; জীবের প্রজাতি টিকিয়ে রাখার জন্য কামশাস্ত্রে কামের গুরুত্ব অপরিসীম; তেমনই; কামযজ্ঞ পরিচালনার জন্য শিশ্নের গুরুত্ব আরও অপরিসীম। কামযজ্ঞ পরিচালনা করার গুরুত্বের প্রতি লক্ষ্য করেই শিশ্নকে কামদেবতা বা কাম দেবতা বা কামগুরু বলা হয়। Indian mythology (ইন্ডিয়ান মিথোলজি) তে শিশ্নকে শিব, মহাদেব, মদন, রাবণ, লম্বোদর, গণেশ ও দেবরাজ বলা হয়। অর্থাৎ; Indian mythology তে শিশ্নকে personification (পার্সোনিফিকেশন) বা anthropomorphism (এ্যান্থ্রোপামোফিজম) করে বলা হয় দেবরাজ। Indian mythology (ইন্ডিয়ান মিথোলজি) এর দেবরাজকে বলা হয় Jove (জোব), Greek mythology (গ্রিক মিথোলজি) এর দেবরাজকে বলা হয় Zeus (জিউস) এবং Roman mythology (রোমান মিথোলজি) এর দেবরাজকে বলা হয় Jupiter (জুপিটার)।

Jove [জোব] (GMP)n ইন্দ্র, দেবরাজ, indra, zeus, jupiter, ‘إندرا’ (ইন্দ্রা), ‘شركة إندرا’ (শারিকাত ইন্দ্রা), ‘جوبيتر إله الرومان’ (জুবিদার ইলহা আররুমান) (প্র) বাঙালী পুরাণ অনুসারে; ঋকবেদের প্রধান দেবতা {}
Zeus [জিউস] (GMP)n দেবাধিপতি, মহাদেব, jove, jupiter, ‘زيوس’ (ঝিউস), ‘زوس’ (ঝুস), ‘زيوس كبير الآلهة’ (ঝিউস কাবির আলয়ালিহা) (প্র) প্রাচীন গ্রিক দেবরাজ বা দেবাধিদেব, গ্রিক পৌরাণিক দেবরাজ {}
Jupiter [জুপিটার] (GMP)n বৃহস্পতি, সৌরজগতের বৃহত্তম গ্রহ, jove, zeus, ‘جوبيتر’ (জুবিতার), ‘المشترى’ (আলমুশতারি), ‘كوكب المشتري’ (কাওকাব আলমুশতারি), ‘جوبيتر كبير آلهة اليوناني’ (জুবিতার কাবির আলিহাত আলইউনানি) (প্র) রোমানদের দেবরাজ {}

পরিশেষে বলা যায় ভারতীয়দের দেবরাজ, গ্রিকদের দেবরাজ এবং রোমানদের দেবরাজই হলো আলোচ্য কামগুরু শিশ্ন।

. পরমগুরু/ Beverage (বেভ্যারিজ)/ ‘مشروبات’ (মাশরুবাত)
পরমগুরুর সংজ্ঞা (Definition of beverage)
সাধারণত; যে কোনো উচ্চজ্ঞানী শিক্ষককে পরমগুরু বলে।

পরমগুরুর আধ্যাত্মিক সংজ্ঞা (Theological definition of beverage)
বাঙালী শ্বরবিজ্ঞানে ও বাঙালী পুরাণে; জীবজগতের পালনকর্তা সাঁইকে পরমগুরু বলে।

পরমগুরুর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্ধৃতি (Some highly important quotations of beverage)
১.   “অনুরাগের তরণী করো, ধারা চেনে উজানে ধরো, লালন কয় করতে পারো, পরমগুরুর ঠিকানা।” (পবিত্র লালন- ৮২৭/৪)
২.   “আদিতত্ত্ব আত্মা ইন্দ্রিয় রাসুল বহন করে, মহাজ্ঞানীরা আপন আত্মা পায় দেখিবারে, তত্ত্বধারী হলে জ্ঞান- উপধর বলে জ্ঞানীগণ, বলন কয় পরমগুরু হলেন তিনি।” (বলন তত্ত্বাবলী- ২৭৩)
৩.   “ত্রিবেণীর ত্রিধারে, মীন রূপে গুরু বিরাজ করে, কেমন করে ধরবি তারে, বলরে অবুঝ মন।” (পবিত্র লালন- ১৫৩/৩)
৪.   “পরমগুরু প্রেম পিরিতি, কামগুরু হয় নিজপতি, কাম ছাড়া প্রেম পায় কী গতি, তাই ভাবে লালন।” (পবিত্র লালন- ২৬৫/৪)
৫.   “পরমগুরু বড়ই রঙ্গিলা আমার মনভোলা, কত নামে ধরাধামে করে আকারে লীলাখেলা।” (বলন তত্ত্বাবলী- ১১১)
৬.   “পারাপারের খবর জানো, পরমগুরুকে সত্য মানো, লালন কয় ভাবছ কেন, পড়ে মায়াফাঁসে।” (পবিত্র লালন- ৪০৭/৪)
৭.   “মানুষগুরুর প্রেমপণ্যারে- জগৎগুরু চলেফেরে, ধরতে গেলে যায়রে দূরে- পরমগুরু কাছে রয়, মানুষগুরু হইলে সদয়- জগৎগুরু দেয় পরিচয়, জানতে হয় তা নিরালায়- ভক্তিভজন রেখে ভয়।” (বলন তত্ত্বাবলী- ৯৬)
৮.   “হলে অমাবতীর বার, মাটি রসে হয় সরোবর, সাধু গুরু বৈষ্টম তিনে, উদয় হয় সে যোগের দিনে।” (পবিত্র লালন- ১৬২/২)

পরমগুরুর পরিচয় (Identity of beverage)
শ্বরবিজ্ঞানে; সাঁইকে পরমগুরু বলা হয়। সাঁই হলেন তরল-মানুষ; যে এখনও মূর্ত আকার ধারণ করে নি। মাতৃগর্ভে ভ্রূণ লালনপালনের দায়িত্ব পালনকারী সুমিষ্ট, সুপেয় ও শ্বেতবর্ণের জল। মাতৃগর্ভে সর্ব জীবের ভ্রূণ লালনপালনে নিয়োজিত অমৃতরসকে পালনকর্তা বা রূপকার্থে পরমগুরু বলা হয়। এ পরমগুরু ব্যাপারে মহাত্মা লালন সাঁইজি লিখেছেন; “অনুরাগের তরণী করো, ধারা চেনে উজানে ধরো, লালন কয় করতে পারো, পরমগুরুর ঠিকানা।” (পবিত্র লালন- ৮২৭/৪)

গুরুর কয়েকটি ইংরেজি পরিভাষা (Thesaurus words for guru)
abecedarian, angel, authority, boss, bwana, chief, doctor, dominie, educationist, educator, elder, fellow, goodman, husband, illuminate, instructor, intellectual, liege, lord, master, mentor, overlord, paramount, paterfamilias, patriarch, patron, pedagogue, philosopher, preceptor, professor,sage, saint, sapient, savant, scholar, seer, teacher, thinker, yogi.

গুরু পরিভাষাটির উৎপত্তি প্রসঙ্গ (Origin context of the guru terminology)
শিখ সাম্প্রদায়িক যাজক নানক (১৫ এপ্রিল ১৪৬৯- ২২ সেপ্টেম্বর ১৫৩৯ খ্রিস্টাব্দ) সর্বপ্রথম গুরু পরিভাষাটি আবিষ্কার করেন। তারপর; হতে সাম্প্রদায়িক ও আধ্যাত্মিক ব্যক্তিবর্গ এ উপাধি ব্যবহার আরম্ভ করেন। তবে; সাম্প্রদায়িক শিখ মনীষী ও ব্যৈখ্যিকদের মতে; গুরু মাত্র ১০জন। অবশিষ্ট সব অনুসারী। আর কেউ গুরু হতে বা গুরু উপাধি গ্রহণ করতে পারবে না। পরবর্তীকালে এ উপাধিটি ক্রমে ক্রমে ভারতবর্ষসহ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।

Title of the first 10 leaders of sikhism.
The first was Nanak, who before his death (1539) began the tradition that allowed the guru to name his successor. He was followed by 2.Angad (1539–1552) 3.Amar Das 4.Ramdas (1574–1581) 5.Arjan 6.Hargobind 7.Hari Rai 8.Hari Krishen (1661–1664) 9.Tegh Bahadur (1664–1675) and 10.Gobind Singh. In time the Guru became as much a military as a spiritual leader. Gobind Singh discontinued the office in 1708 and vested its authority in the Sikh sacred scripture, the Adi Granth.

গুরু নানকের সংক্ষিপ্ত পরিচয় (Short introduction of guru Nanak)
Guru Nanak is an indian religious leader who founded sikhism in dissent from the caste system of hinduism; he taught that all men had a right to search for knowledge of God and that spiritual liberation could be attained by meditating on the name of God (1469-1539) [syn: {Nanak}]

গুরু-তত্ত্ব (Preceptor mystery)
গোঁসাই বা গুরু-তত্ত্ব অত্যন্ত কঠিন। এটি; সাধক-গুরু বা সাধক-গোঁসাই ব্যতীত অন্য কেউ বুঝে না। ভারপ্রাপ্ত গোঁসাই-গুরু, ছেলেগুরু, নাতিগুরু, পুতিগুরু, ত্রোতিগুরু, গদিনশিনগুরু, জামাইগুরু, ভাইগুরু, ভগ্নীপতি-গুরু, মামাগুরু ও খালুগুরুর জানার তো প্রশ্নই আসে না। অথচ এদেশে কেবল এসব গুরুর আমদানী অধিক। বর্তমানে সাধকগুরু নেই বললেও ভুল হবে না। এ কারণেই বর্তমানে পরম্পরা শিক্ষার এমন করুণদশা। যেমন; মহাত্মা লালন সাঁইজি বলেছেন;

১.   “মুর্শিদতত্ত্ব অথৈ গভীরে, চাররসের মূল সে রস, রসিক হলে জানতে পারে।” (পবিত্র লালন- ৭৯৭/১)
২.   “যার কালিমা দিন দুনিয়ায়, সে শিষ্য হয় কোন কালিমায়, লিহাজ করে দেখ মনরায়, গুরু-তত্ত্ব অথৈ গভীরে।” (পবিত্র লালন- ৫৩০/২)

চারকুল (Four lineage)
শ্বরবিজ্ঞানে (আধ্যাত্মিক বিজ্ঞান) কুল চার প্রকার। যথা;. পশুকুল/ জীবকুল. মানবকুল . দেবতাকুল ও. গুরুকুল/ ঈশ্বরকুল।

. পশুকুল/ জীবকুল (Animalia. অ্যানিম্যালিয়া)/ ‘حيوانية’ (হাইওয়ানিয়া)
সংজ্ঞা (Definition)শ্বরবিজ্ঞানে; সাধারণত; জীবকুলকে পশুকুল বলে।
১.    “জল বয়িবে রক্তিমা রঙ- পাতালে উড়িবে নিশান, অনর্গল গুলিবর্ষণ, করিবে এক জলযান-, অগ্নিকন্যা আসবে ছুটে- জীবকুল পড়বে লুটে, পতিত হবে তাপের চোটে, বিশ্বে বয়িবে অগ্নিবান। (বলন তত্ত্বাবলী- ৪৬)
২.   “জীবের অঙ্গ সঞ্চালনকালে সব দৈবসত্তা কাজ করে, দেবতাগণ না থাকলে কর্মাঙ্গ থাকে কেবল চুপ করে, আন্তদূত উদ্দীপক- জীবদেহের অনুঘটক, শব্দ ইঙ্গিত চিত্র পাঠক- বলন কয় জীবকুলে।” (বলন তত্ত্বাবলী- ১৯২)
৩.   “রক্তিম সাদা কালো ধারা এক নদীতে চলে, তার স্রোতের চিহ্নও রহে না নদীটি শুকালে, সেই নদী পারের ঘাটে, জীবকুলের হয় মরণ।” (বলন তত্ত্বাবলী- ১২৯)

. মানবকুল (Humania. হিউম্যানিয়া)/ ‘بشرية’ (বাশারিয়া)
সংজ্ঞা (Definition)
শ্বরবিজ্ঞানে; মানবীয় গুণাগুণ অর্জনকারী সাধক সম্প্রদায়কে মানবকুল বলে।
১.    “কত কত সহস্র যোনি, ভ্রমণ করে এসেছ শুনি, মৎস্যকূল ডিম্বকুলে- তারপরে মানবকুলে, এসে কী করলে।” (পবিত্র লালন- ১৭১/৩)
২.   “কোন কুলে যাবি মন মনরায়, গুরুকুল যদি কেউ চায়, লোককুল তার ছাড়তে হয়।” (পবিত্র লালন- ৩৫৭/১)
৩.   “দেব-দেবতার বাসনা হয়, মানবকুলে জনম নিতে চায়, লালন বলে গোলক-ধাঁধায়, মানুষের করণ করলি না।” (পবিত্র লালন- ৪৯০/৪)(মুখ; তিন পোড়াতে খাঁটি হলি না, শেষকালে মন তোর কপালে, কী আছে তাও নাই জানা।”)

. দেবতাকুল (Angelia/ Pantheon)/ ‘ملائكية’ (মালায়িকিয়া)
সংজ্ঞা (Definition)
শ্বরবিজ্ঞানে; বাঙালী পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণীতে বর্ণিত বাঙালী পৌরাণিক মূলক সত্তার ছদ্মনামে দেবতায়ন করে দেবতা রূপে আত্মপ্রকাশকারী মহাসাধক সম্প্রদায়কে দেবতাকুল বলা হয়। যেমন; লালন ও বলন প্রমুখ।

. গুরুকুল/ ঈশ্বরকুল (Baptisia. ব্যাপ্টিজিয়া)/ ‘معمدانية’ (মা‘মিদানিয়া)
সংজ্ঞা (Definition)
শ্বরবিজ্ঞানে; পুনর্জন্মহীন, সংযতইন্দ্রিয় ও দেবতা রূপ মহাসাধক সম্প্রদায়কে গুরুকুল বলে।
১.    “নৈরাকারের অর্থ ভারী, আমি কী তাই বলতে পারি, কিঞ্চিৎ প্রমাণ তারই, শুনি সাধুকুলে।” (পবিত্র লালন- ৯৮/২)
২.   “মরণফাঁসি নিয়ে গলে, ঝুলে রইলাম ভূমণ্ডলে, মিছে ঘুরি সাধুকুলে, দুর্নাম চাই মুছিতে।” (বলন তত্ত্বাবলী)(মুখ; মরাকে আর মারবি কত, বেন্ধে যমরশিতে, যমের কী আর সাধ্য আছে, আবার তারে মারিতে।”)

———————————————————————————

১.    “কোন কুলে যাবি মন মনরায়, গুরুকুল যদি কেউ চায়, লোককুল তার ছাড়তে হয়।” (পবিত্র লালন- ৩৫৭/১)
২.   “কেউ সাধুর চরণ ধরে- বসে থাকবে বাম ধারে, হাজার বছরের পরে- শান্ত হবে অগ্নিবান-, দয়ালের দরশন পেলে- তারাই যাবে গুরুকুলে, বাঁকি সব আগুনে জ্বলে,
বলন কয় দিবে প্রাণ।” (বলন তত্ত্বাবলী- ৪৬)(মুখ; একটা মাটির বোমায় বিশ্বটাকে করিবে খানখান, ওরে পাগল-মন, আগে থেকে থাকিও সাবধান।”)
৩.   “না দেখে রূপ ছিলাম ভালো, কেন রূপে নয়ন গেলো, গৃহকুল আর গৌরকুল, যাই কোন দিকি।” (পবিত্র লালন- ২১০/২)
৪.   “বলন কয় এ ভূমণ্ডলে, জ্ঞানী মুনি সাধককুলে, সবাই তোমায় লইছে কোলে, মাথায় রাখছে তুলিয়া।” (বলন তত্ত্বাবলী- ৭৮)
৫.   “বলন কোন জাতির ছেলে, দেখবি গিয়ে সাধুকুলে, সৃষ্টিমূলে জাত রয় না, নিজগুণে বলন হলে।” (বলন তত্ত্বাবলী- ১৯৫)
৬.   “সাধুকুল হারাইয়া আমি, কাঁদি বসে দিনরজনী, ঝরার খালে ঝরছে মণি, দেখা দাও চাঁদবদনে।” (বলন তত্ত্বাবলী- ২০০)

গুরুর পরিচয় (Identity of preceptor)
এটি বাঙালী পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী এর জ্ঞান পরিবারের একটি বাঙালী পৌরাণিক রূপক পরিভাষা বিশেষ। সাধারণত; যে মহান মনীষী মানুষকে নৈতিক শিক্ষাদীক্ষা প্রদান করেন তাঁকেই গুরু বলা হয়। শ্বরবিজ্ঞানে; গুরু মোট চার প্রকার। যথা; ১. মানুষগুরু ২. জগৎগুরু ৩. কামগুরু ও ৪. পরমগুরু। এখানে; উল্লেখ করা একান্ত প্রয়োজন যে; দুই হতে চার ক্রম পর্যন্ত গুরুগুলো মানুষ নন তা পরিষ্কারভাবেই বুঝা যায়। কিন্তু এক ক্রম গুরুও কখনই মানুষ নন। বরং প্রথম গুরুটি হলো মানুষগুরুর জ্ঞান। জগৎগুরু হলো বাতাস। আর বাতাস অর্থ নাসিকার শ্বাস। কামগুরু হলো মদন। আর মদন হলো শিশ্ন। পরমগুরু হলো সাঁই। আর সাঁই হলো সুধা। এবার বলা যায় চার প্রকার গুরু হলো; ১. জ্ঞান ২. শ্বাস ৩. শিশ্ন ও ৪. সুধা।

গুরুর গুরুর পরিচয় ((Identity of preceptor of preceptor)
গুরুর গুরু হলো জ্ঞান। জ্ঞানের ঊর্ধ্বে আর কোনো গুরু নেই। জ্ঞানই সব গুরুর শ্রেষ্ঠ গুরু। জ্ঞান এমনই এক সম্পদ যে এটি বহন করতে কোনো গাড়ি ঘোড়ার প্রয়োজন হয় না। মানুষগুরুর নিকট জ্ঞান রূপ শ্রেষ্ঠগুরু অবস্থান করে। তাই; জ্ঞানী লোকগণকে গুরু রূপে সম্বোধন করা হয়।

জয়গুরুবলার তাৎপর্য (Significance to say ‘guruwin’/ ‘preceptorwin’)

গুরু চার প্রকার। যথা; ১. মানুষগুরু ২. জগৎগুরু ৩. কামগুরু ও ৪. পরমগুরু। এ চার প্রকার গুরুর মধ্যে কেবল জগৎগুরুর শুভসংবাস গ্রহণের সময়ই শিষ্যদের ‘জয়গুরু’ বলা প্রয়োজন।

কোনো শিষ্য প্রথমে মানুষগুরুর নিকট শিক্ষাগ্রহণ করে জগৎগুরু ও পরমগুরুর সন্ধানলাভ করে। জগৎগুরু ও পরমগুরুকে চেনা ও জানার পর শিষ্যরা সর্বসময় জগৎগুরু ও পরমগুরুকে নিজের কাছে দেখতে পায়। জগৎগুরু শ্বাস কোনো সংবাদ নিয়ে যখন কোনো শিষ্যের নিকট উপস্থিত হন এবং কোনো শিষ্য যদি তা অনুভব করতে পারে তবে সঙ্গে সঙ্গে শিষ্য তাঁকে ‘জয়গুরু বলে সম্বোধন করে থাকে। এ হতেই মানুষগুরু ও জগৎগুরু উভয় ক্ষেত্রেই ‘জয়গুরু’ বলে সম্বোধন করার প্রথা উৎপত্তি হয়।

একজন পাকাগুরুই মানবজীবনের সর্বময় সুখ শান্তির মূল। এজন্য; গুরুর সুখই শিষ্যের সুখ। গুরুর শান্তিই শিষ্যের শান্তি। এ হতেই শিষ্যরা গুরু, দাদাগুরু, গুরুভাই, গুরুবোন ও গুরুমা সবার সম্বোধনেই ‘জয়গুরু’ বলে থাকে। ‘জয়গুরু’ অর্থ গুরুর জয় হোক। গুরু তো বিজয়ী। বিজয়ী না হলে তিনি তো গুরুই হতে পারতেন না। তবে; বিজয়ীকে আবার জয়ী হওয়ার আশীর্বাদ করার কারণ কী? এমন প্রশ্নের উত্তর হলো; প্রত্যেক নর-নারীর নিকটই সর্বদা তিন-তিনজন করে গুরু অবস্থান করেন। এজন্য; শিষ্য-শিষ্যারা অন্য কাউকে আদৌ ‘জয়গুরু’ বলে কোনো সম্বোধন করে না বরং প্রত্যেকে প্রত্যেকের নিজের গুরুত্রয়কেই ‘জয়গুরু’ বলে সম্বোধন করে থাকে। প্রত্যেকের নিকট তিনজন করে গুরু বিদ্যমান থাকার অর্থ হলো পুরুষের নিকট সর্বদা অবস্থান করে ১. জ্ঞান ২. শ্বাস ও ৩. শিশ্ন এবং নারীর নিকট সর্বদা অবস্থান করেন ১. জ্ঞান ২. শ্বাস ও ৩. সুধা। প্রত্যেক মানবের চারজন গুরুর মধ্যে পুরুষের নিকট থাকে না ‘সাঁই’ এবং নারীর নিকট থাকে না ‘শিশ্ন’। অর্থাৎ; পুরুষের নিকট কখনও ‘সাঁই‘ থাকেন না এবং নারীর নিকট কখনই ‘শিশ্ন’ থাকে না। এজন্য; বলা হয় বিশ্বের প্রতিটি মানুষের নিকট সর্বদা তিনজন গুরু বিদ্যমান থাকে। যেমন; ‘সাঁই’ সারাজগতের পরমগুরু; তেমনই; ‘শিশ্ন’ সারাজগতের কামগুরু। এজন্য; প্রত্যেক মানুষের চারজন গুরুর কথা বলা হয়।

কামগুরুর কোনো ভজন নেই। এ গুরুকে শাসন করাই ভক্তের কাজ। চারপ্রকার গুরুর মধ্যে কেবল কামগুরুকে শাসন করতে হয়। এ গুরু অটল না হওয়া পর্যন্ত একে ক্রমে ক্রমে শাসন করতেই হবে। এ ব্যাপারে মহাত্মা লালন সাঁইজি লিখেছেন; ১. “পরমগুরু প্রেম পিরিতি, কামগুরু হয় নিজপতি, কাম ছাড়া প্রেম পায় কী গতি, তাই ভাবে লালন” (পবিত্র লালন- ২৬৫/৪) ২. “প্রেম প্রকৃতি স্বরূপসতী, কামগুরু হয় নিজপতি, ও মন অনুরাগী না হলে, ভজন সাধন হয় না (পবিত্র লালন- ৬৪৯/২) ৩. “প্রেমবাজারে কে যাবি, তোরা আয় গো আয়, প্রেমগুরু কল্পতরু, প্রেমরসে মেতে রয়” (পবিত্র লালন- ৬৫১/১) ৪. “প্রেমের রাজা মদনমোহন, নির্হেতু প্রেম সাধনে শ্যাম, ধরে রাধার যুগলচরণ, প্রেমের সহচরী গোপীগণ, প্রেম-দ্বারে বাঁধা রয়” (পবিত্র লালন- ৬৫১/২)। পরমগুরুকে ‘জয়গুরু’ বলে সম্বোধন করার নিয়ম পরম্পরা মতবাদে নেই। কারণ; এ গুরু সবার ভাগ্যে মিলেও না আর যদিওবা মিলে তবে কেবল একে অন্যকেই ‘জয়গুরু’ বলে সম্বোধন করা হয় কিন্তু পরমগুরুকে কখনই সম্বোধন করা হয় না। সারকথা হলো কেবল মানুষগুরু ও জগৎগুরুকেই ‘জয়গুরু’ বলে সম্বোধন করা প্রয়োজন, পক্ষান্তরে; পরমগুরু ও কামগুরুকে ‘জয়গুরু’ বলে সম্বোধন করার কোনো প্রয়োজন নেই।

তথ্যসূত্র (References)

(Theology's number formula of omniscient theologian lordship Bolon)

১ মূলক সংখ্যা সূত্র (Radical number formula)
"আত্মদর্শনের বিষয়বস্তুর পরিমাণ দ্বারা নতুন মূলক সংখ্যা সৃষ্টি করা যায়।"

রূপক সংখ্যা সূত্র (Metaphors number formula)

২ যোজক সূত্র (Adder formula)
"শ্বরবিজ্ঞানে ভিন্ন ভিন্ন মূলক সংখ্যা-সহগ যোগ করে নতুন যোজক রূপক সংখ্যা সৃষ্টি করা যায়; কিন্তু, গণিতে ভিন্ন ভিন্ন সংখ্যা-সহগ যোগ করে নতুন রূপক সংখ্যা সৃষ্টি করা যায় না।"

৩ গুণক সূত্র (Multiplier formula)
"শ্বরবিজ্ঞানে এক বা একাধিক মূলক-সংখ্যার গুণফল দ্বারা নতুন গুণক রূপক সংখ্যা সৃষ্টি করা যায়; কিন্তু, মূলক সংখ্যার কোন পরিবর্তন হয় না।"

৪ স্থাপক সূত্র (Installer formula)
"শ্বরবিজ্ঞানে; এক বা একাধিক মূলক সংখ্যা ভিন্ন ভিন্ন ভাবে স্থাপন করে নতুন স্থাপক রূপক সংখ্যা সৃষ্টি করা যায়; কিন্তু, মূলক সংখ্যার কোন পরিবর্তন হয় না।"

৫ শূন্যক সূত্র (Zero formula)
"শ্বরবিজ্ঞানে মূলক সংখ্যার ভিতরে ও ডানে শূন্য দিয়ে নতুন শূন্যক রূপক সংখ্যা সৃষ্টি করা যায়; কিন্তু, মূলক সংখ্যার কোন পরিবর্তন হয় না।"

< উৎস
[] উচ্চারণ ও ব্যুৎপত্তির জন্য ব্যবহৃত
() ব্যুৎপত্তির জন্য ব্যবহৃত
> থেকে
√ ধাতু
=> দ্রষ্টব্য
 পদান্তর
:-) লিঙ্গান্তর
 অতএব
× গুণ
+ যোগ
- বিয়োগ
÷ ভাগ

Here, at PrepBootstrap, we offer a great, 70% rate for each seller, regardless of any restrictions, such as volume, date of entry, etc.
There are a number of reasons why you should join us:
  • A great 70% flat rate for your items.
  • Fast response/approval times. Many sites take weeks to process a theme or template. And if it gets rejected, there is another iteration. We have aliminated this, and made the process very fast. It only takes up to 72 hours for a template/theme to get reviewed.
  • We are not an exclusive marketplace. This means that you can sell your items on PrepBootstrap, as well as on any other marketplate, and thus increase your earning potential.

পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী

উপস্থ (শিশ্ন-যোনি) কানাই,(যোনি) কামরস (যৌনরস) বলাই (শিশ্ন) বৈতরণী (যোনিপথ) ভগ (যোনিমুখ) কাম (সঙ্গম) অজ্ঞতা অন্যায় অশান্তি অবিশ্বাসী
অর্ধদ্বার আগধড় উপহার আশ্রম ভৃগু (জরায়ুমুখ) স্ফীতাঙ্গ (স্তন) চন্দ্রচেতনা (যৌনোত্তেজনা) আশীর্বাদ আয়ু ইঙ্গিত ডান
চক্ষু জরায়ু জীবনীশক্তি দেহযন্ত্র উপাসক কিশোরী অতীতকাহিনী জন্ম জ্ঞান তীর্থযাত্রা দেহাংশ
দেহ নর নরদেহ নারী দুগ্ধ কৈশোরকাল উপমা ন্যায় পবিত্রতা পাঁচশতশ্বাস পুরুষ
নাসিকা পঞ্চবায়ু পঞ্চরস পরকিনী নারীদেহ গর্ভকাল গবেষণা প্রকৃতপথ প্রয়াণ বন্ধু বর্তমানজন্ম
পালনকর্তা প্রসাদ প্রেমিক বসন পাছধড় প্রথমপ্রহর চিন্তা বাম বিনয় বিশ্বাসী ব্যর্থতা
বিদ্যুৎ বৃদ্ধা মানুষ মুষ্ক বার্ধক্য মুমুর্ষুতা পুরুষত্ব ভালোবাসা মন মোটাশিরা যৌবন
রজ রজপট্টি রজস্বলা শুক্র মূত্র যৌবনকাল মনোযোগ রজকাল শত্রু শান্তি শুক্রপাত
শুক্রপাতকারী শ্বাস সন্তান সৃষ্টিকর্তা শুক্রধর শেষপ্রহর মূলনীতি সন্তানপালন সপ্তকর্ম স্বভাব হাজারশ্বাস
ADVERTISEMENT
error: Content is protected !!