দেবতা

৩৫.. দেবতা
Deity (ডিইটি)/ ‘إله’ (ইলাহ)

ভূমিকা (Prolegomenon)
এটি বাঙালী পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী এর দেহাংশ পরিবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঙালী পৌরাণিক রূপক পরিভাষা। এর বাঙালী পৌরাণিক মূলক সত্তা দেহাংশ। এর বাঙালী পৌরাণিক উপমান পরিভাষা সুর। এর বাঙালী পৌরাণিক চারিত্রিক পরিভাষা কিন্নর এবং এর বাঙালী পৌরাণিক ছদ্মনাম পরিভাষা স্বর্গদূত। এটি একটি বাঙালী পৌরাণিক রূপক প্রধান মূলক সত্তা

দেবতা (বাপৌরূ)বি অধিপতি, অমর, ঈশ্বর, ঐশিদূত, ঐশি সংবাদিক, ঠাকুর, দেব, দেবী, দৈবদূত, দৈবসত্তা, প্রভু, স্বর্গীয় প্রকৃতি, সুর, স্রষ্টা, স্বর্গীয় অবতার, স্বর্গীয় বার্তাবাহক, স্বর্গীয় দূত Jস্ত্রী দেবী (প্র) . সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক পুরাণ মতে; অত্যন্ত সূক্ষ্ম দেহহীন নিষ্পাপ স্বর্গীয় দূত বিশেষ . বাঙালী পুরাণ মতে; নিষ্পাপ অবতার বিশেষ (শ্ববি) মানুষে বিদ্যমান বিষয়বস্তু ও ইন্দ্রিয়াদি, body part, ‘جزء الجسم’ (জুঝুজ জেসম) (গ্রিপৌচা) angel, deity, divinity, idol, god, godhead, godhood, cherubim (ইপৌচা) মালাকি (.ملاك), নবি (نبي) ও রাসুল (ﺮﺴﻭﻝ) (পারদে) ফেরেস্তা (ফা.ﻔﺮﺸﺗﻪ), পয়গাম্বর (ফা.ﭙﻴﮕﻤﺒﺭ) (দেপ্র) এটি বাঙালী পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী এর দেহাংশ পরিবারের বাঙালী পৌরাণিক রূপক পরিভাষা ও বাঙালী শ্বরবিজ্ঞানের বাঙালী পৌরাণিক দেবতা বিশেষ (সংজ্ঞা) ১. সাধারণত; ভারতীয়, গ্রিক, পারসিক ও আরবীয় পুরাণ মতে; অত্যন্ত সূক্ষ্ম দেহহীন নিষ্পাপ স্বর্গীয় দূতকে বাংলায় দেবতা বলা হয় ২. বাঙালী শ্বরবিজ্ঞানে ও বাঙালী পুরাণে, মানুষে বিদ্যমান বিষয়বস্তু ও ইন্দ্রিয়াদি এর রূপক নামে” দেবতায়িত চরিত্রকে রূপকার্থে দেবতা বলা হয় (শিশ্ন> বিম্বল) (বাপৌছ) স্বর্গদূত (বাপৌচা) কিন্নর (বাপৌউ) সুর (বাপৌরূ) দেবতা (বাপৌমূ) দেহাংশ {বাং. দেব+ বাং.তা (প্রত্যয়)}

ﻔﺮﺸﺗﻪ [ফেরেস্তা] (আপৌছ)বি সুর, অমর, অত্যন্ত সুন্দর ও নির্দোষ জীব (প্র) পারসিক পুরাণ মতে; অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও নিষ্পাপ দেহহীন অদৃশ্য জীব বিশেষ (শ্ববি) আরবীয় পারসিক পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী এর পারসিক পৌরাণিক মূলক সত্তার ছদ্মনাম বিশেষ (বাদে) দেবতা (ইদে) ‘ملاك’ (মালাকি) (গ্রিদে) angel (বাদে) দেবতা (দেপ্র) এটি; পারসিক পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী এর দেহাংশ পরিবারের পারসিক পৌরাণিক রূপক পরিভাষা ও পারসিক শ্বরবিজ্ঞানের একটি দেবতা বিশেষ (সংজ্ঞা) . পারসিক পুরাণ মতে; অত্যন্ত সূক্ষ্ম নিষ্পাপ দেহহীন স্বর্গীয় দূতকে ﻔﺮﺸﺗﻪ’ (ফেরেস্তা) বলা হয় . পারসিক পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী এর পারসিক পৌরাণিক মূলক সত্তার ছদ্মনামকে রূপকার্থে বাংলায় দেবতা ও ফার্সিতে ﻔﺮﺸﺗﻪ’ (ফেরেস্তা) বলা হয় (বাপৌছ) স্বর্গদূত (বাপৌচা) কিন্নর (বাপৌউ) সুর (বাপৌরূ) দেবতা (বাপৌমূ) দেহাংশ {ফা}

ملاك [মালাকি] (আপৌছ)বি দেবতা, সুর, অমর, অত্যন্ত সুন্দর ও নির্দোষ জীব (প্র) আরবীয় পুরাণ মতে; অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও নিষ্পাপ দেহহীন অদৃশ্য জীব বিশেষ (শ্ববি) আরবীয় পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী এর আরবীয় পৌরাণিক মূলক সত্তার ছদ্মনাম বিশেষ (ইদে) ‘ﻔﺮﺸﺗﻪ’ (ফেরেস্তা) (বাদে) দৈবদূত, স্বর্গীয় দূত (গ্রিদে) angel (বাদে) দেবতা (দেপ্র) এটি আরবীয় পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী এর দেহাংশ পরিবারের আরবীয় পৌরাণিক রূপক পরিভাষা ও আরবীয় শ্বরবিজ্ঞানের একটি দেবতা বিশেষ (সংজ্ঞা) . আরবীয় পুরাণ মতে; অত্যন্ত সূক্ষ্ম নিষ্পাপ দেহহীন স্বর্গীয় দূতকে ملاك’ (মালাকি) বলা হয় . আরবীয় পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী এর আরবীয় পৌরাণিক মূলক সত্তার ছদ্মনামকে রূপকার্থে বাংলায় দেবতা ও আরবিতে ملاك’ (মালাকি) বলা হয় (বাপৌছ) স্বর্গদূত (বাপৌচা) কিন্নর (বাপৌউ) সুর (বাপৌরূ) দেবতা (বাপৌমূ) দেহাংশ {}

Angel [এঞ্জেল] (GMP)n সুর, অমর, অত্যন্ত সুন্দর ও নির্দোষ জীব (প্র) গ্রিক পুরাণ মতে; অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও নিষ্পাপ দেহহীন অদৃশ্য জীব বিশেষ (শ্ববি) গ্রিক পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী এর গ্রিক পৌরাণিক মূলক সত্তার ছদ্মনাম বিশেষ (বাদে) দেবতা, দৈবদূত, স্বর্গীয় দূত (বাদে) দেবতা (ইদে) ‘ملاك’ (মালাকি), ‘ﻔﺮﺸﺗﻪ’ (ফেরেস্তা) (দেপ্র) এটি গ্রিক পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী এর দেহাংশ পরিবারের গ্রিক পৌরাণিক রূপক পরিভাষা ও গ্রিক শ্বরবিজ্ঞানের একটি দেবতা বিশেষ (সংজ্ঞা) . গ্রিক পুরাণ মতে; অত্যন্ত সূক্ষ্ম নিষ্পাপ দেহহীন স্বর্গীয় দূতকে Angel (এঞ্জেল) বলা হয় . গ্রিক পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী এর গ্রিক পৌরাণিক মূলক সত্তার ছদ্মনামকে রূপকার্থে বাংলায় দেবতা ও গ্রিক ভাষায় Angel (এঞ্জেল) বলা হয় (বাপৌছ) স্বর্গদূত (বাপৌচা) কিন্নর (বাপৌউ) সুর (বাপৌরূ) দেবতা (বাপৌমূ) দেহাংশ {}

Cherub [চেরাব] (GMP)n কিন্নর, দেবদূত, স্বর্গীয় দূত, সুন্দর শিশু ‘الكروب’ (আলকুরুব), অনিন্দ্যসুন্দর শিশু (শিল্পকলায়) ডানাযুক্ত শিশু {}

Cherubim [চেরাবিম] (GMP)n দেবতা, সুর, ঐশিদূত, ‘ملاك’ (মালাকি) (প্র) দ্বিতীয় শ্রেণির দেবদূত বা স্বর্গীয় দূত {}

দেবতার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্ধৃতি (Some highly important quotations of deity)
১.    “অনন্ত রূপ সৃষ্টি করলেন সাঁই, মানবের চেয়ে উত্তম কিছু নাই, দেব-দেবতাগণ করে আরাধন, জন্ম নিতে এ মানবে।” (পবিত্র লালন- ২২৭/২)

. “আরবিতে মালাকি বলে ফার্সিতে ফেরেস্তা কয়, সংস্কৃতে দৈত্য দানব বাংলায় দেবতা হয়, জীবদেহে যোগাযোগকারী; জীব মাত্র থাকে সবারই, ভাব উপলব্ধিকারী; যত আছে সৃষ্টিকুলে।” (বলন তত্ত্বাবলী- ১৯২)

৩.   “ঊন কোটি দেবতা, সঙ্গে আছে গাঁথা, ব্রহ্মা বিষ্ণু শিব নারায়ণ জয় জয় জয়, সে চাঁদ পাতালে- উদয় ভূমণ্ডলে, মহিন্দ্র-যোগে সে চাঁদ দেখা যায়।” (পবিত্র লালন- ৯৯৬/২)

৪.   “জীবের অঙ্গ সঞ্চালনকালে সব অঙ্গই কাজ করে; দেবতাগণ না থাকলে কর্মাঙ্গ থাকে কেবল চুপ করে; আন্তঃ দূত উদ্দীপক; জীবদেহের অনুঘটক; শব্দ ইঙ্গিত চিত্র পাঠক; বলন কয় জীবকুলে।” (বলন তত্ত্বাবলী- ১৯২)

৫.   “দশ দেবতা ষোল সাথী; এক দেহে করে বসতি; আবার হইয়া যায়রে মতি; বলন কয় সে জলধর।” (বলন তত্ত্বাবলী- ১৩১)

৬.   “দুই দেবতা লয়ে সাথে; দয়াল আসে নদীয়াতে; রহে ঊষা প্রহরেতে; আবার শুন্যে উড়ে যায়।” (বলন তত্ত্বাবলী- ২৯৬)

৭.   “দেব-দেবতার বাসনা হয়, মানবকুলে জনম নিতে চায়, লালন বলে গোলকধাঁধায়, মানুষের করণ করলি না।” (পবিত্র লালন- ৪৯০/৪)

৮.   “নীরাকার জ্যোতিতে ধরণীতে আসে দিনমণি; এই ভবে তারাই দর্শন পায় যারা জ্ঞানী-গুণী; রাসুল হলো তত্ত্ববাহক; অধ্যাত্ম্যজ্ঞানের ধারক; আত্মা ইন্দ্রিয় দেবতা বহনকারী পানি।” (বলন তত্ত্বাবলী- ২৭৩)

৯.   “প্রকৃতিই কাঁইয়ের বাণী কেনো ভেবে দেখলি না; শাস্ত্রীয় গ্রন্থের দেহতত্ত্ব কেনো একবার জানলি না; আত্মা ইন্দ্রিয় মন জ্ঞান; শাস্ত্র নির্মাণ উপকরণ; বলন কয় ঈশ্বরায়ন দেবতায়ন; খোঁজো আপন ধড়ে।” (বলন তত্ত্বাবলী- ২৮৭)

১০. “মানব দলেতে আসার আশায়, দেব-দেবতার বাঞ্ছা সদাই, হেন জনম তোমায়- দিলো দয়াময়, কোন কর্মফলে।” (পবিত্র লালন- ১৭১/২)

১১. “মানুষে বিদ্যমান বিষয়বস্তুর রূপক নামে; দেবতায়ন করে ব্যব্হার করা হয় পুরাণ নির্মাণে; শ্বরবিজ্ঞানের পুরাণের দেবতা; প্রত্যঙ্গের রূপক নাম তা; আছে উপমিত বাস্তবতা; সারা দেহ পরিমণ্ডলে।” (বলন তত্ত্বাবলী- ১৯২)

১২. “মাল্লা প্রধান বারো জনা কে কোথায় খোঁজ করো; মাঝখানে বসিয়া নায়ের শক্ত হাতে হাল ধরো; দশ দেবতা ষোল সাথী; দেখিয়া বাতাসের গতি; গুরুকে করিয়া পতি; গুরু নামের পাল তুলিয়া দাও।” (বলন তত্ত্বাবলী- ৫২)

দেবতার সংজ্ঞা (Definition of deity)

বাঙালী শ্বরবিজ্ঞানে ও বাঙালী পুরাণে; অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও নিষ্পাপ দেহহীন স্বর্গদূতকে দেবতা বলে।

দেবতার আধ্যাত্মিক সংজ্ঞা (Theosophical definition of deity)

১.    বাঙালী শ্বরবিজ্ঞানে ও বাঙালী পুরাণে; মানুষে বিদ্যমান বিষয়বস্তু ও ইন্দ্রিয়াদি এর রূপক নামে” দেবতায়ন করে নির্মিত পৌরাণিক চরিত্রকে দেবতা বলে। যেমন; জরায়ুতে ভ্রূণ লালনপালনে নিয়োজিত দেবতাকে বলা হয় লালন

২.   বাঙালী শ্বরবিজ্ঞানে ও বাঙালী পুরাণে; বাঙালী পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণীতে বর্ণিত বাঙালী পৌরাণিক মূলক সত্তা এর রূপক নামে দেবতায়ন করে নির্মিত পৌরাণিক চরিত্রকে রূপকার্থে দেবতা বলে। যেমন; শিশ্নকে বলা হয় মদন।

দেবতার প্রকারভেদ (Variations of deity)

বাঙালী শ্বরবিজ্ঞানে ও বাঙালী পুরাণে দেবতা দুই প্রকার। যথা; ১. উপমান দেবতা ও ২. উপমিত দেবতা।

১. উপমান দেবতা (Analogical deity)

সাধারণত; সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক মনীষীদের রূপক বর্ণনা মতে; অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও নিষ্পাপ দেহহীন স্বর্গীয় দূতকে উপমান দেবতা বলে।

২. উপমিত দেবতা (Compared deity)

বাঙালী শ্বরবিজ্ঞানে ও বাঙালী পুরাণে; বাঙালী পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণীতে বর্ণিত বাঙালী পৌরাণিক মূলক সত্তা এর রূপক নামে দেবতায়ন করে নির্মিত পৌরাণিক চরিত্রকে উপমিত দেবতা বলে।

আবার; বাঙালী শ্বরবিজ্ঞানে ও বাঙালী পুরাণে দেবতা দুই প্রকার। যথা; ১. পুরুষবাচক দেবতা ও ২. নারীবাচক দেবতা। সংক্ষেপে পুরুষবাচক দেবতাকে বলা হয় দেবতা। আর সংক্ষেপে নারীবাচক দেবতাকে বলা হয় দেবী।

. পুরুষবাচক দেবতা (Masculine deity/ God)

সারা বিশ্বের সর্ব প্রকার শ্বরবিজ্ঞান ও পুরাণে ব্যবহৃত, মানুষে বিদ্যমান বিষয়বস্তু ও ইন্দ্রিয়াদি এর রূপক নামে” দেবতায়ন করে নির্মিত পৌরাণিক চরিত্রকে পুরুষবাচক দেবতা বলে। যেমন; মহাদেব, নারদ ও Apollo.

পুরুষবাচক দেবতার প্রকারভেদ (Variations of masculine deity)

সারা পৃথিবীতে যতো প্রকার পুরাণ রয়েছে; তত প্রকার দেবতাও রয়েছে। যথা; ১. বাঙালী দেবতা ২. মিশরীয় দেবতা ৩. গ্রিক দেবতা ও  ৪. আরবীয় দেবতা ইত্যাদি।

. বাঙালী দেবতা (Bengali deity)

বাঙালী শ্বরবিজ্ঞান ও পুরাণে বর্ণিত, মানুষে বিদ্যমান বিষয়বস্তু ও ইন্দ্রিয়াদি এর রূপক নামে” দেবতায়ন করে নির্মিত বাঙালী পৌরাণিক চরিত্রকে রূপকার্থে বাঙালী দেবতা বলে।

যেমন; অনিল, অরুণ, অর্জুন, আদিত্য, কর্ণ, কল্লোল, কানীন, কালা, কালু, কৃষ্ণ, জগাই, জিষ্ণু, ডালিম, ধন্বন্তরী, নরা, পবন, পীযূষ, পূর্ণেন্দু, বঙ্কিম, বপু, বরুণ, বিষ্ণু, বীক্ষণ, বলন, মদন, মধু, মনোরায়, মহাদেব, মহারাজ, মাণিক, মাধাই, রাজা, রাম, লালন, শিব, শুক্রাচার্য, শুভ্রাংশু, শৈলরাজ, শৈলেন্দ্র, শ্রীচরণ, সঞ্জীব, সমীর, সম্বিত, সূর্য, হরি ও হিল্লোল।

. মিশরীয় দেবতা (Egyptian deity)

মিশরীয় শ্বরবিজ্ঞান ও পুরাণে বর্ণিত, মানুষে বিদ্যমান বিষয়বস্তু ও ইন্দ্রিয়াদি এর রূপক নামে” দেবতায়ন করে নির্মিত মিশরীয় পৌরাণিক চরিত্রকে রূপকার্থে মিশরীয় দেবতা বলে।

যেমন; آتون (আটেন), آتوم (আতুম), أنحور (আনহুর), أنوبيس (আনুবিস), آمون (আমুন), إيمحتب (ইমহোটেপ), ابيس (এপিস), أبوفيس (এপোফিস), أوزوريس (ওঝুরিস), أوزيريس (ওঝিরিস), بابي (বাবি), بتاح (পতাহ), بس (বেস), تحوت (তাহওয়াথ), جب (জেব), حابي (হাবি), حورس (হোরাস), خبري (খেবরি), خنسو (খোন্সু), خنوم (খনুম), رع (রা (রে)), ررع حور اختي (রা-হোরাখতি), ست (শেঠ), سرابيس (সেরাপিস), سوكر (সেকার), سوبدو (সোপডু), سوبيك (সোবেক), شو (শু), قيبي (ক্বিবি), كوك (কুক), ماحص (মাহেস), منتو (মন্তু), نوو (নুউ) ও واج ور (ওয়াদ্জ-ওয়ির) ইত্যাদি।

. গ্রিক দেবতা (Greek deity)

গ্রিক শ্বরবিজ্ঞান ও পুরাণে বর্ণিত, মানুষে বিদ্যমান বিষয়বস্তু ও ইন্দ্রিয়াদি এর রূপক নামে” দেবতায়ন করে নির্মিত গ্রিক পৌরাণিক চরিত্রকে রূপকার্থে গ্রিক দেবতা বলে।

যেমন; Adam, Apollo, Archangel, Arise, Aristaeus, Auriferous, Charon, Cloudier, Cupid, Cyclopean, Demigod, Demiurge, Dionysus, Dionysius, Dryad, Gabriel, Hades, Hercules, Hermes, Jove, Jupiter, Juju, Lithe, Mammon, Mars, Michael, Morpheus, Nereid, Oceanus, Orpheus, Phoebus, Poseidon, Satyr, Seraphim, Titan, Titanic, Yahoo, Zealot, Zephyr & Zeus.

. আরবীয় দেবতা (Arabian deity)

আরবীয় শ্বরবিজ্ঞান ও পুরাণে বর্ণিত, মানুষে বিদ্যমান বিষয়বস্তু ও ইন্দ্রিয়াদি এর রূপক নামে” দেবতায়ন করে নির্মিত আরবীয় পৌরাণিক চরিত্রকে রূপকার্থে আরবীয় দেবতা বলে।

যেমন; أبغال (আবগাল), اروتالت (ওরোতালত), إساف’, (ইসাফ), إساف ونائلة (ইসাফ-নায়েলা), إل إله (ইল), القوم (আলক্বাউম), اللہ (আল্লাহ), أوف (আউফ), بعل (বাল), بعل شامان (বালশামান), بیل (বেল), بس بیسو (বেস), تألب ريام (তালাব), ٿياينڊرويس (থানড্রিওস), حكيم (হকিম), ذو شرى (দুশারা), ذو الخلصة (ধুল খুলাসা), رودا (রুদা), سعد صخرة (সাদ সাখরাহ), سين (সিন), شمش (শামস), شيطان (শয়তান), عاري إلهة (আরা), عثتر (আততার), عجليبوول (আগলিবল), عَمُّ أَنَسٍ(আম্মে আনাস) (আম্ম), نابو (নাবু), (نانة (إله) (নান্নাহ), نبي (আনবে), نبي (নবী), نرغال (নের্গল), نسر (নাসর), مالاکبل (মালাকবেল), مناف (মানাফ), ود (ওয়াদ), هدد (হাদাদ), هُبَل (হুবাল), يعوق (ইয়াউক্ব), يغوث (ইয়াগুছ), يثع (ইয়াছা) ও يرحبول (ইয়ারহিবল)।

 

. নারীবাচক দেবী (Feminine deity/ Goddess)

সারা বিশ্বের সর্ব প্রকার শ্বরবিজ্ঞান ও পুরাণে ব্যবহৃত, মানুষে বিদ্যমান বিষয়বস্তু ও ইন্দ্রিয়াদি এর রূপক নামে” দেবীয়ায়ন করে নির্মিত পৌরাণিক চরিত্রকে নারীবাচক দেবী বলে। যেমন; সরস্বতী ও Eve.

নারীবাচক দেবীর প্রকারভেদ (Variations of feminine goddess)

সারা পৃথিবীতে যত প্রকার পুরাণ রয়েছে; ততো প্রকার দেবীও রয়েছে। যথা; ১. বাঙালী দেবী ২. মিশরীয় দেবী ৩. গ্রিক দেবী ও  ৪. আরবীয় দেবী ইত্যাদি।

. বাঙালী দেবী (Bengali goddess)

বাঙালী শ্বরবিজ্ঞান ও পুরাণে বর্ণিত; মানুষে বিদ্যমান বিষয়বস্তু ও ইন্দ্রিয়াদি এর রূপক নামে” দেবীয়ায়ন করে নির্মিত বাঙালী পৌরাণিক চরিত্রকে রূপকার্থে বাঙালী দেবী বলে।

যেমন; আলেয়া, ইন্দুমতী, ঊষা, ঊর্মী, কমলা, কুব্জা, দুর্গা, দেবমায়া, বিজলি, বিরজা, বেণুকা, বেহুলা, মধুমালা, ময়না, মহামায়া, মায়া, মিথিলা, মিনতি, যমুনা, রতী, রাধা, শতরূপা, শিখা, সন্ধ্যা, সরস্বতী, সাগরী ও সীতা।

. মিশরীয় দেবী (Egyptian goddess)

মিশরীয় শ্বরবিজ্ঞান ও পুরাণে বর্ণিত; মানুষে বিদ্যমান বিষয়বস্তু ও ইন্দ্রিয়াদি এর রূপক নামে” দেবীয়ায়ন করে নির্মিত মিশরীয় পৌরাণিক চরিত্রকে রূপকার্থে মিশরীয় দেবী বলে।

যেমন; إيزيس (ইঝিস), إنبوت (ইম্বুত), أمونيت (আমুনেত), باستيت (বাস্তেত), باخت (বাখেত), تاورت (তওরেত), حتحور (হাতহুর), تفنوت (টেফনুত), رعت (রায়েত), سخمت (সেখমেত), سرقت (সেল্কেত), سشات (সেশাত), عنقت (আনুকেত), قادش (ক্বাদিশ), كيشوت (কেবেশুত), ماعت (মা’আত), مافدت (মাফদেত), موط (মুত), مينشيت (মেনশিত), نخبيت (নেখবেত), نوت (নুত), نيث (নেইথ), نيفتيس (নিয়াফথিস), واجيت (ওয়াদজেত) ও هيكات (হেকেত)।

. গ্রিক দেবী (Greek goddess)

গ্রিক শ্বরবিজ্ঞান ও পুরাণে বর্ণিত; মানুষে বিদ্যমান বিষয়বস্তু ও ইন্দ্রিয়াদি এর রূপক নামে” দেবীয়ায়ন করে নির্মিত গ্রিক পৌরাণিক চরিত্রকে রূপকার্থে গ্রিক দেবী বলে।

যেমন; Acheron, Anahita, Aphrodite, Arethusa, Athinai, Aurora, Basilisk, Beas, Chicken, Chimaera, Diana, Dryad, Eridanus, Euphrates, Eve, Ganges, Hecate, Harpy, Irrawaddy, Lethe, Lucifer, Madhumati, Mermaid, Naiad, Nereid, Nymph, Nymphet, Oceanid, Patron, Pishon, Pomona, Tigris, Triplex, Vampire, Venus, Witch & Wraith.

. আরবীয় দেবী (Arabian goddess)

আরবীয় শ্বরবিজ্ঞান ও পুরাণে বর্ণিত; মানুষে বিদ্যমান বিষয়বস্তু ও ইন্দ্রিয়াদি এর রূপক নামে” দেবীয়ায়ন করে নির্মিত আরবীয় পৌরাণিক চরিত্রকে রূপকার্থে আরবীয় দেবী বলে।

যেমন; أترعتا (আতারগাতিস), العزى (উয্যা), بلقيس (বিলকিস), سواع (সুওয়া), عثتر سمين (আতারসামাইন), عشتروت (আশতারতে), عثتر, عشتار (ইশতার), لات اللات (লাত), مناة (মানাত), نائلة (নায়েলা) ও نوحا (নুহা)।

 

দেবতার পরিচয় (Identity of deity)

এটি বাঙালী পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী এর দেহাংশ পরিবারের বাঙালী পৌরাণিক রূপক পরিভাষা বিশেষ। সাধারণত; সাম্প্রদায়িক বিশ্বাস মতে; অত্যন্ত সূক্ষ্ম দেহহীন নিষ্পাপ স্বর্গীয় দূতকে দেবতা বলা হয়। কিন্তু; সারাবিশ্বের সব শ্বরবিজ্ঞানে ও পুরাণে ব্যবহৃত পৌরাণিক মূলক সত্তারূপক নামে দেবতায়ন করে নির্মিত পৌরাণিক চরিত্রকে দেবতা বলা হয়। অথবা শ্বরবিজ্ঞানে; ছোটকি বা চমৎকার নির্মাণ করার সময় ব্যবহৃত সুন্দর সুন্দর নামকেও দেবতা বলা হয়। এছাড়াও; সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক পৌরাণিক কাহিনীর মধ্যে ব্যবহৃত নায়ক, খলনায়ক ও নায়িকার অনুপম নামকেও দেবতা বলা হয়। এগুলোও; সবই মানুষে বিদ্যমান বিষয়বস্তুর রূপক নামে দেবতায়ন করে নির্মিত পৌরাণিক চরিত্র।

উদাহরণত; বলা যায় যে; শিশ্ন একটি আভিধানিক শব্দ। তাই; এটি; দেবতা নয়। এর বাঙালী পৌরাণিক রূপক পরিভাষা হলো; মদন, বলাই ও মন্মথ ইত্যাদি। এসব বাঙালী পৌরাণিক রূপক পরিভাষা; তাই; এসব দেবতা। আরও উন্মুক্ত করে যায় যে; আভিধানিক শব্দ বা প্রতিশব্দকে কখনও দেবতা বলা যায় না। যেমন; হাত, পা, রক্ত, ফুসফুস ও পাকস্থলী ইত্যাদি। কিন্তু, যখন, এসব পরিভাষার প্রতি দেবতায়ন করা হয়; তখন, তা দেবতায় পরিণত হয়। অর্থাৎ; মানুষে বিদ্যমান বিষয়বস্তু ও ইন্দ্রিয়াদি এর রূপক নামে” দেবতায়ন করার পর; তা অবশ্যই পৌরাণিক দেবতায় পরিণত হয়। যেমন; নাসিকা হতে বংশীবাদক নাস্য দেবতা এবং কথা বলা হতে বলন দেবতা ইত্যাদি।

দেবতা কোনো আকারযুক্ত মানুষ নয়। প্রতিটি দেবতাই বাঙালী পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী এর কোনো না কোনো বাঙালী পৌরাণিক মূলক সত্তার গুরুত্বপূর্ণ রূপক নাম বা ছদ্মনাম। দেবতাগণ মর্ত্যের কোনো বিদ্যালয়ে শিক্ষাগ্রহণ করেন না। অথবা তারা কোনো গুরুর নিকটও শিক্ষাগ্রহণ করেন না। দেবতার প্রকৃত কোনো নাম, বসতি বা বংশ পরিচয় নেই। দেবতা সৃষ্টি করা অত্যন্ত কঠিন ও দুরূহ কাজ। সুবিজ্ঞ রূপকার ব্যতীত কোনো সাধারণ লোক দেবতা সৃষ্টি করতে পারে না। প্রায় সাত হাজার (৭,০০০) বছর পূর্ব হতে দেবতা নির্মাণের শুভ সূচনা হয়। পৌরাণিক দেবতা নির্মাণ কাজকে পৌরাণিক শিল্প বলা হয়। প্রায় এক হাজার (১,০০০) বছর পূর্বে এ শিল্পটি মারা যায়। যেমন; নাসিকার ডানশ্বাসের ছদ্মনাম দক্ষিণারায়। দক্ষিণারায় একটি দেবতা। কারণ; এই বাঙালী পৌরাণিক রূপক পরিভাষাটির প্রকৃত অস্তিত্ব রয়েছে। এই পরিভাষাটির বাঙালী পৌরাণিক মূলক সত্তা হলো নাসিকার ডানশ্বাস

আধ্যাত্মিক বিদ্যার গুরুত্বপূর্ণ প্রধান একটি উপাদান হলো কাম। এটি; এমন একটি লজ্জাস্কর বিষয় যে; এর সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়বস্তুর কোনকিছুই মুক্তভাবে প্রকাশ করা যায় না। যথা; শিশ্ন, যোনি, শুক্র ও রজ ইত্যাদি। অনেক সময়; এসব অশ্লীল শব্দের পুনঃপুন প্রয়োগ দেখে, অনেক পাঠক যৌন বিষয় ভেবে পড়তেও চায় না। তারা লজ্জায় মাথা হেঁট করে। এমনকি; পিতা-মাতা, ভাইবোন ও পুত্র-কন্যাসহ সবাই একত্রে বসে পাঠ করারও যায় না। এসব পরিভাষা পুনঃপুন গ্রন্থে লেখলে; একদিকে; গ্রন্থটির সার্বজনীনতা হারায়; অন্যদিকে; হারায় গ্রহণযোগ্যতা। এজন্য; এমন অশ্লীল পরিভাষা দ্বারা লেখা গ্রন্থ কখনও সার্বজনীনতালাভ করতে পারে না এবং অমরত্বও অর্জন করতে পারে না।

আবার; কাম এমন একটি কর্ম যে; এটি; সব দ্বিপস্থ জীবের সহজাত প্রবৃত্তি। বিশ্বের সব দ্বিপস্থ প্রাণী কাম মুক্তভাবে করে। একমাত্র মানুষ অত্যন্ত গোপনে কাম করে। এখন পর্যন্ত মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠজীব রূপে প্রতীয়মান। তাই; মানুষ লজ্জার হাত হতে রক্ষা পাবার জন্য অত্যন্ত গোপনে চুরি করেই কাম অভ্যাস করে এবং আজীবন চুরি করেই তা করে থাকে। অত্যন্ত কঠিন বিষয় হচ্ছে; আজীবন লুকিয়ে লুকিয়ে করা অত্যন্ত লজ্জাস্কর কামকে বিশ্ববাসীর নিকট; বা অসংখ্য পাঠককুলের নিকট গ্রন্থাকারে উপস্থাপন করা। আবার এও সত্য যে; কাম সব মানুষের অত্যন্ত প্রয়োজন। যুবক-যুবতী মাত্রই কাম প্রলুব্ধ। উল্লেখ্য; সারাবিশ্বের গোপন শিক্ষা বলতে একমাত্র কামকেই বুঝায়।

আরও জটিল বিষয় হলো; মৈথুন হতে নিষ্কামিতা অর্জনের মধ্যেই প্রকৃত মুক্তি। তাই; শ্বরবিজ্ঞানে; মৈথুন হতে নিষ্কামী হওয়াকে মানুষের প্রকৃত মুক্তি বলা হয়। কিন্তু পরিবারের পিতা-মাতা, ভাইবোন ও আত্মীয়স্বজন কখনই কেউই; মৈথুন হতে নিষ্কামিতা অর্জনের ব্যাপারে মুখ খুলতে চায় না। যেখানে সংসারের সুখ, যেখানে দাম্পত্যের প্রকৃত প্রশান্তি, যেখানে জন্মনিয়ন্ত্রণ ও শুক্র নিয়ন্ত্রণের মতো কঠিন প্রশিক্ষণ, যেখানে জন্ম-মৃত্যু সংযুক্ত। এমনকি; যেখানে মানবের সুস্বাস্থ্য ও পরমায়ু নির্ভর করে, সে-ই মৈথুন বিষয়ে, কেউ মুক্ত আলোচনা করতে আগ্রহী নয়। আরও বলা যায়; এখানেই; দেহ-রক্ষা, এখানেই; আয়ু-রক্ষা, দাম্পত্য কলহ এখানেই, অধিক সন্তান এখানেই, বাল্যবিবাহ এখানেই, ধর্ষণ ও বলাৎকার এখানেই এবং জনসংখ্যার চাপ এখানেই। তবুও; বিষয়টি গোপনেরও গোপন। সূক্ষ্মভাবে বিচার করলে দেখা যায়; সারাবিশ্বে সুন্দর, স্বাচ্ছন্দময় ও সুখী জীবনযাপনের জন্য অন্তরায় রূপে যত সমস্যা রয়েছে; তার প্রায় নব্বইভাগই (৯০%) মৈথুন হতে উৎপত্তি হচ্ছে। এজন্য; শ্বরবিজ্ঞানে; বলা হয় কাম পরিবারের, পরিবারের দ্বারা ও পরিবারের জন্য করা উচিত কামের জন্যই সংসার এবং সংসারের জন্যই কর্ম বা বৃত্তি। বৃত্তি হলো কঠোর পরিশ্রম। বর্তমান বিচারালয়ে যত অভিযোগ (মামলা) অপেক্ষামান রয়েছে; তার প্রায় নব্বই ভাগ (৯০%) ভাগই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কামের সাথে জড়িত। নিখুঁতভাবে অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে; অবশ্যই অবশিষ্ট দশভাগও কোনো না কোনভাবে কামের সাথেই জড়িত। যেমন; আত্মসাৎ অভিযোগ।

সমীক্ষা (Surveying)

আত্মসাৎ অভিযোগটি অনুসন্ধান করলে প্রায় দেখা যায়; মানুষ মৈথুন তাড়নায় বিবাহ করে। অতঃপর; দাম্পত্য জীবনে কামের প্রাবল্য হতেই সন্তানসন্ততি জন্ম হয়। যারফলে; দম্পতির সন্তানসন্ততি নিয়ে মাথা গুঁজার ঠাঁইয়ের জন্য বাড়ির প্রয়োজন হয়। অতঃপর; তারা বাড়ি ও সন্তান পালন করার প্রয়োজনীয় অর্থ উপার্জন করতে চেষ্টা করে। যখন ব্যর্থ হয়; তখন আত্মসাৎ অপরাধ করে। অথবা তারা একান্তভাবে কামিনীর চিত্তরঞ্জনের জন্যই আত্মসাৎ অপধার করতে বাধ্য হয়। অথবা অতি লোভে আত্মসাৎ কাজে জড়িয়ে পড়ে।

অতি প্রাচীনকাল হতেই বুদ্ধিজীবী ও সুবিজ্ঞ মনীষীগণ এমন সমীক্ষা করে আসছেন। আবার; কামের প্রশিক্ষণের ওপর অধিক গুরুত্বারোপ করা প্রয়োজন; তাও তারা অনুধাবন করতে পেরেছেন। প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও; সে প্রাগৈতিহাসিক যুগে তারা তেমন কিছুই করতে পারেন নি। অবশেষে; প্রায় চার হাজার (৪,০০০) খ্রিস্টপূর্বাব্দে; অর্থাৎ; আজ হতে প্রায় ছয় হাজার (৬,০০০) বছর পূর্বে; ভারতবর্ষীয় সাধু, সন্ন্যাসী, মুনি ও ঋষিগণ মৈথুন সমস্যার স্থায়ী প্রশিক্ষণ পদ্ধতি; বা মৈথুন সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করতে সক্ষম হন। তখনও; কাগজ আবিষ্কার হয় নি।

এ সময়; যাযাবর ও বন্য মানুষ ক্রমে ক্রমে সঙ্ঘবদ্ধ ও সমাজবদ্ধ বসবাসের শুভ সূচনা করে। যারফলে; ক্রমে ক্রমে মানব-সভ্যতারও উন্নয়ন হতে থাকে। তখন; পৃথিবীতে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য ভাষা ও তেমন কোনো নামকরা সাম্প্রদায়িক সংস্কার ছিল না। ছিল না; আলাপী, বেতার, দূরদর্শন, মুদ্রাকর, গ্রাহক ও বাহক ইত্যাদি প্রযুক্তি। অথচ; তখনই; সুবিজ্ঞ আত্মতাত্ত্বিক মনীষীগণ সর্ব সাধারণের জন্য; সনাতনীভাবে কামের স্থায়িত্বলাভ পদ্ধতি, শুক্র নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি, জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি আবিষ্কার করেছিলেন। তখন; তারা বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি ছাড়াই মানুষের সুখী-সুন্দর জীবনযাপনের জন্য; অনেক অনুপম সনাতনী বা প্রাকৃতিক সমাধান খুঁজে বের করেছিলেন। যেখানে সমস্যা; সেখানেই সমাধান করা উচিত। পূর্বকালেই তারা অনুধাবন করতে পেরেছিলেন যে; পৃথিবীতে যত সমস্যার উৎপত্তি হয়; তার নব্বই ভাগই (৯০%) প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মৈথুন হতেই উৎপন্ন হয়। তাহলে; মৈথুন সমস্যার সমাধান করাই শ্রেয়। সুবিজ্ঞ আত্মতাত্ত্বিক মনীষীগণের আবিষ্কৃত সূক্ষ্ম সমাধানগুলো; জনগণের নিকট তুলে ধরার জন্য; তাদের মধ্যেই একদল বর্ণ আবিষ্কার করেছেন, একদল পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা আবিষ্কার করেছেন; এবং অন্যদল পৌরাণিক সত্তার রূপক নামে দেবতায়ন করে দেবতা আবিষ্কার করেছেন।

পুরাণের সংজ্ঞা (Definition of mythology)

১.    মানুষে বিদ্যমান বিষয়বস্তু ও ইন্দ্রিয়াদিকে উপমিত ধরার পর; প্রকৃতির বিভিন্ন বিষয়বস্তুকে উপমান ধরে তার সাথে সার্থক তুলনা করে নির্মিত কাহিনী সংকলনকে পুরাণ বলে।

২.   মানুষে বিদ্যমান বিষয়বস্তু বা ইন্দ্রিয়াদির রূপক নামে ঈশ্বরায়িত চরিত্রকে পৌরাণিক ঈশ্বর; দেবতায়িত চরিত্রকে পৌরাণিক দেবদেবী; মানবায়িত চরিত্রকে পৌরাণিক মানব; মানুষের প্রত্যঙ্গের রূপক নামে প্রাণায়িত চরিত্রকে পৌরাণিক জীবজন্তু; মানুষের প্রত্যঙ্গের রূপক নামকে ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থান ধরার পর; মানুষে বিদ্যমান বিষয়বস্তু বা ইন্দ্রিয়াদির পরিমাণ জ্ঞাপক সংখ্যাকে শতাব্দী, অব্দ, সময়, দিবস, ওজন, দৈর্ঘ্য, জনসংখ্যা ও সৈন্য সংখ্যা ধরে; মানুষের যৌনমিলন ও নৈতিকতা শিক্ষার জন্য সুকৌশলে রূপকভাবে নির্মিত ছোট-বড় চমৎকার, ছোটকি, উপকথা, রূপকথা ও রূপক কাহিনী সংকলনকে পুরাণ বলে। যেমন; বাঙালী পুরাণ ও গ্রিক পুরাণ ইত্যাদি (তথ্যসূত্র; আত্মতত্ত্ব ভেদ; লেখক বলন কাঁইজি)

পৌরাণিক দেবতার সংজ্ঞা (Definition of mythological deity)

১.    মানুষে বিদ্যমান বিষয়বস্তু ও ইন্দ্রিয়াদি এর রূপক নামে” দেবতায়ন করে নির্মিত পৌরাণিক চরিত্রকে দেবতা বলে। যেমন; চোখ হতে দ্রষ্টা, বলাই হতে শুক্রচার্য, রজ হতে বসিধ, সুধা হতে সাঁই ও মধু হতে কাঁই ইত্যাদি।

২.   শ্বরবিজ্ঞানের পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণীতে বর্ণিত বাঙালী পৌরাণিক মূলক সত্তা এর রূপক নামে দেবতায়ন করে নির্মিত পৌরাণিক চরিত্রকে দেবতা বলে।

যেমন; বলন ও বসিধ প্রভৃতি। এখানে মানুষের বাকশক্তির রূপক নামে দেবতায়ন করে কণ্ঠ দেবতা বা পৌরাণিক বলন দেবতা নির্মাণ করা হয়েছে। অর্থাৎ; কণ্ঠে বসে যিনি কথা বলেন তিনিই বলন দেবতা। একে গ্রিক পুরাণে Gabriel, ও আরবীয় পুরাণে জিব্রাইল (جبريل) বলা হয়। আর জিব্রাইল এসেছে গ্রিক Gabriel হতে। গ্রিক গ্যাবরিল এসেছে Gab > Gabble > Gabriel হতে।

মৈথুন নিয়ে আলোচনা করতে হলে; অবশ্যই অশ্লীল শব্দাবলী ব্যবহার করতে হয়। তাহলে; অশ্লীলতাও থাকবে না এবং মৈথুন প্রশিক্ষণ সমস্যাটির সূক্ষ্ম ও সহজ সমাধান প্রদান করা যাবে; এমন ব্যবস্থা কী হতে পারে? এমন চিন্তা তৎকালীন সাধু ও সন্ন্যাসীগণের মস্তিষ্ক পুনঃপুন আন্দোলিত করতো। অবশেষে; তারা শ্বরবিজ্ঞানের পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণীতে বর্ণিত পৌরাণিক মূলক সত্তার রূপক নামে দেবতায়ন করে পৌরাণিক দেবতা নির্মাণের কাজে আত্মনিয়োগ করে। নতুন নতুন দেবতা নির্মাণ করাই ছিল সেই সভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ শ্রেষ্ঠত্ব। সে সময়; মাঝে মাঝে অনেক উচ্চ পর্যায়ের রূপকার বা যাজকগণ; একত্র বসে সাধুসভা বা সাধুসঙ্গ করতেন। অবশেষে; তারা দেখলেন যে; পৌরাণিক দেবতা ও পৌরাণিক মূলক সংখ্যা এর দ্বারা পুরাণ নির্মাণ করলে; একদিকে যেমন; লজ্জাস্কর পরিভাষার হাত হতে রক্ষা পায়; অন্যদিকে; তার সার্বজনীনতাও রক্ষা হয়। তারা এমন চিন্তভাবনা করেই পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী এর গুরুত্বপূর্ণ পৌরাণিক মূলক সত্তার; পৌরাণিক রূপক পরিভাষাপৌরাণিক মূলক সংখ্যা ব্যবহার করে; সর্বপ্রথম নির্মাণ করেন ঈশ্বর বিজ্ঞান। ঈশ্বর বিজ্ঞানকেই সংক্ষেপে শ্বরবিজ্ঞান বলা হয়। ভারতীয় উপমহাদেশে কোথাও এর নাম বেদ, কোথাও এর নাম রামায়ণ, কোথাও এর নাম মহাভারত এবং কোথাও এর নাম পুরাণ। সংস্কৃত ও বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চলে এসব গ্রন্থ সংকলিত হয়েছে। বেদ, রামায়ণ, মহাভারত ও পুরাণ যে নামেই ডাকা হোক না কেনো এগুলো মৈথুন প্রশিক্ষণ গ্রন্থ। এসব গ্রন্থা দ্বারাই সর্বপ্রথম মৈথুন প্রশিক্ষণের ধারা প্রবর্তন করেন। যেমন; লালন সাঁইজির একটি বাণী; করি মানা কাম ছাড়ে না মদনে, ভালো প্রেম রসিক হব কেমনে (পবিত্র লালন- ২৬৬/১)।”

এখানে; সঙ্গমের বাঙালী পৌরাণিক রূপক পরিভাষা হলো কাম এবং শিশ্নের বাঙালী পৌরাণিক রূপক পরিভাষা হলো মদন। এ পরিভাষা দুটির রূপক রূপ গ্রহণ না করে; যদি; আভিধানিক পরিভাষা দ্বারা লালনটি লেখা হতো; তবে; কখনও; সাহিত্যটি সার্বজনীনতা লাভ করতে পারত না। তেমনই; এটি; কোনো দিনই জীবন্ত হতে পারত না। সমাজের এক শ্রেণির লোক; লালনটিকে যৌন-বিষয় বলে প্রচার করতো। সমাজের অন্য এক শ্রেণির লোক; সমাজবদ্ধ জীব রূপে পিতা-মাতা ও পুত্র-কন্যা নিয়ে পরিবারে বসবাসের চাপে তা লজ্জাস্কর বলে পরিত্যাগ করতো। কিন্তু সত্তা দুইটিকে বাঙালী পৌরাণিক রূপক পরিভাষা (দেবতা) দ্বারা পরিবর্তন করার ফলে উক্ত সমস্যা অনায়াসে এড়ানো সম্ভব হয়েছে। যারফলে; কাব্যটিও সার্বজনীনতা লাভ করে ক্রমে ক্রমে জীবন্ত হয়ে উঠেছে। এভাবেই; সুবিজ্ঞ আত্মতাত্ত্বিক মনীষী ও রূপকারগণ; একের পর এক মানবদেহ হতে বিষয়বস্তু, শক্তি, স্থান, কাল ও অবস্থা খুঁজে বের করে তাদের ছদ্ম নামকরণ করে দেবতা সৃষ্টি আরম্ভ করেন। আত্মদর্শনে বর্ণিত সব বাঙালী পৌরাণিক মূলক সত্তার বিষয়বস্তু, শক্তি, স্থান, কাল ও অবস্থার রূপক নামে দেবতায়ন করা পর; সেটি অবশ্যই দেবতা হয়। বিশ্বের সব শ্বরবিজ্ঞান ও পুরাণ এসব দেবতা ও পৌরাণিক মূলক সংখ্যা দ্বারাই নির্মিত।

যতদূর সম্ভব অনুমান করা যায় যে; প্রায় চার হাজার (৪,০০০) খ্রিস্টপূর্বাব্দে; অর্থাৎ; আজ হতে প্রায় ছয় হাজার (৬,০০০) বছর পূর্বে; ভারতবর্ষীয় সাধু, সন্ন্যাসী, মুনি ও ঋষিরা একান্ত মৌখিকভাবে সামান্য আকারে শিক্ষা প্রদান ও লেখাপড়া করানোর পদ্ধতি চালু করে। কাগজ আবিষ্কারের অনেক পূর্বেই তারা সুবিজ্ঞ মনীষীদের বর্ণিত গুরুত্বপূর্ণ বাণী, দৈববাণী বা আকাশ বাণী বা ঐশ্বরিক বাণী রূপে মাটি বা পাথরের ফলকে লিখে রাখতো। আরও ধারণা করা যায় যে; কাগজ আবিষ্কারের পূর্বেই ভারতবর্ষে আধ্যাত্মিকবিদ্যা, জোতির্বিদ্যা ও আয়ুর্বিদ্যা জনসাধারণের নিকট অধিক সুখ্যাতি অর্জন করেছিল। তখনও দর্শনশাস্ত্র সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয় নি। বিজ্ঞান ও দর্শন না থাকায় আদিম মানুষ ত্রিবিদ্যা; অর্থাৎ; আধ্যাত্মিকবিদ্যা (আত্মদর্শন), জোতির্বিদ্যা ও আয়ুর্বিদ্যা দ্বারাই সমাজ ও সভ্যতা গড়ে তুলেছিল।

যতদূর জানা যায়; আজ হতে প্রায় দুই হাজার (২,০০০) বছর পূর্বে কাগজ আবিষ্কার হয়। অতঃপর; সুনিপুণ ও সুবিজ্ঞ সাধু, সন্ন্যাসী, মুনি ও ঋষিরা মাটি ও পাথরের ওপর সংরক্ষিত মহা মূল্যবান বাণী বা পাণ্ডুলিপিগুলোকে গ্রন্থ আকারে সংকলন করে। এভাবে; আত্মদর্শন হতে গড়ে ওঠে মহাগ্রন্থ বেদ। পরে বেদব্যাস ঋক্, সাম, যজু ও অথর্ব বেদ নামে বিভক্ত করেন। অন্যদিকে; সনাতনী স্বাস্থ্য দর্শন হতে গড়ে ওঠে আয়ুর্বেদ। আর জোতির্বিদ্যার ক্রমোন্নতি হতে থাকে।

যেমন; শক্তি আকার ধারণ করার কারণে সর্বকালে বিশ্বের সর্বত্রই বিরাজমান হতে পারে না। তেমনই; দেবতার দেহধারণ করার কারণে সর্বকালে বিশ্বের সর্বত্রই বিরাজমান হতে পারেন না। একই সময়ে সর্বদেহের মধ্যে বা সর্বভূতের মধ্যে প্রবেশ করতেও পারেন না। অর্থাৎ; শক্তির আকার ধারণ করার কারণে; বা দেবতা দেহধারণ করার কারণে; সার্বজনীন ও সর্বত্র বিরাজমানতা গুণটি লোপ পায়। যারফলে; যেমন; উক্ত শক্তিটি সর্বকালে পৃথিবীর সর্বত্র খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। তেমনই; উক্ত দেবতাকেও সর্বকালে পৃথিবীর সর্বত্র খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। এজন্য; সুবিজ্ঞ রূপকার মনীষীগণ সৃষ্টির সব জীবদেহে প্রবেশ করার জন্য; বা সর্বভূতে বিরাজমান থাকার জন্য; পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণীতে বর্ণিত যে কোনো একটি গুরুত্বপূর্ণ পৌরাণিক মূলক সত্তার রূপক নামকেই ছদ্মনাম রূপে গ্রহণ করেন। যারফলে; বিশ্বের সব জীবদেহে বা সর্বভূতে প্রবেশ করতে সক্ষম হন। পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা মাত্রই অমর, অক্ষয় ও অম্লান। উপমাস্বরূপ বলা যায়; সৃষ্টিলগ্ন হতে মানবদেহের; ১. চক্ষু ২. কর্ণ ৩. নাসিকা ৪. জিহ্বা ৫. ত্বক ৬. বাক্ ৭. পাণি ৮. পাদ ৯. পায়ু ও ১০. উপস্থ; এ ১০টি ইন্দ্রিয় অবিকল রয়েছে। অদ্যাবধি একটি সত্তার হ্রাস-বৃদ্ধি হয় নি। এমনকি; কেউ কর্মবিরতিও করে নি। যদি; চক্ষু তার দর্শন কর্ম হতে অব্যাহতি গ্রহণ করতো; তবে; বিশ্বের সব প্রাণীই অন্ধ হয়ে যেত। তদ্রূপ যদি; কর্ণ তার শ্রবণ কর্ম হতে অব্যাহতি গ্রহণ করতো; তবে; বিশ্বের সব প্রাণীই বধির হয়ে যেত। অর্থাৎ; একটি চোখ অবসর গ্রহণ করলে; বিশ্বের সব প্রাণীর একটি চোখ অকেজো হয়ে যেত। তদ্রূপ; যদি; একটি কর্ণ অবসর গ্রহণ করতো; তাহলে বিশ্বের সব প্রাণীর একটি কর্ণ অকেজো হয়ে যেত। কারণ; বিশ্বের সব প্রাণীর চোখ মাত্র দুটি এবং কর্ণও মাত্র দুটি।

আবার; জীবদেহের বলন দেবতা মাত্র একটি। যিনি প্রাণীর কণ্ঠে বসে কথা বলেন তিনিই বলন। যদি; বলন দেবতা একবার অবসর গ্রহণ করেন; তবে; বিশ্বের সব প্রাণীই বোবা হয়ে যাবে। এছাড়াও; হস্ত, পদ, আত্মা, জ্ঞান, মন, বিচার ও বুদ্ধি ইত্যাদি সত্তার রূপক নামে দেবাতায়ন করার সঙ্গে সঙ্গেই একেকজন দেবতায় পরিণত হন। মানবদেহের প্রতিটি প্রত্যঙ্গের রূপক নামে দেবতায়ন করার পর; আরবিতে বলা হয় ‘ملاك’ মালাকি; ফার্সিতে বলা হয় ফেরেস্তা (ﻔﺮﺸﺗﻪ) এবং ইংরেজিতে বলা হয় angel।

আধ্যাত্মিকবিদ্যা বা পরাবিদ্যার (occult, esoteric, theology) ষড়াশ্রয়ের সর্বশেষ স্তর; রূপাশ্রয়ে প্রবেশ করার পর; রূপকারগণ পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী এর গুরুত্বপূর্ণ বা মর্যাদাপূর্ণ একটি সত্তার রূপক নাম গ্রহণ করেন। অতঃপর; লোকধাম হতে নিত্যধামের অমর, অক্ষয়, শাশ্বত ও অম্লান-পুরীতে প্রবেশ করেন। যিনি; একবার নিত্যধামে প্রবেশ করেন; তিনিই; বিশ্বজনীন বা সার্বজনীন রূপে আত্মপ্রকাশ করেন। যেমন; দেবতাগণ সার্বজনীন ও বিশ্বজনীন। তেমনই; সাধকগণও বিশ্বজনীন বা সার্বজনীন গুণলাভ করেন। সাধকগণ পৌরাণিক দেবতার চরিত্রের মাধ্যমেই নিচের চরিত্র ফুটিয়ে তোলেন। পৌরাণিক দেবতার চরিত্রের মধ্যেই নিজেকে লুকিয়ে রাখেন।

পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে; বাঙালী পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণীতে বর্ণিত বাঙালী পৌরাণিক মূলক সত্তা এর রূপক নামে দেবতায়ন করে পৌরাণিক দেবতা সৃষ্টি করা হয়। যেমন; দেবতাগণের ক্ষয়-লয় নেই। তেমনই; সাধকগণেরও কোনো ক্ষয়-লয় নেই। মহাসাধকদের ছদ্মনাম (দেবতা) কখনও লয় বা ম্লান হয় না। বরং; ক্রমে ক্রমে দিগ্বিজয়ী হয়ে ওঠতে থাকে। যেমন; বলন, লালন, বুদ্ধ ও মুহাম্মদ ইত্যাদি।

ইচ্ছা করলেই যে কেউ দেবতার নাম গ্রহণ করতে পারে না। কোনো দেবতার নাম গ্রহণ করতে হলে; অবশ্যই; সাধককে স্থূল, প্রবর্ত ও সাধন স্তর অতিক্রম করতে হয়। অথবা অবশ্যই; সাধককে অন্ধকার, ধন্ধকার ও কুয়াকার স্তর অতিক্রম করতে হয়। অথবা অবশ্যই; সাধককে আউল, বাউল ও নাড়া পথ অতিক্রম করতে হয়। অতঃপর; রূপাশ্রয়ে প্রবেশ করতে হয়। তারপর; পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণীতে বর্ণিত পৌরাণিক মূলক সত্তার সম্যক ছদ্মনাম (রূপক পরিভাষা) আয়ত্ত করতে হয়। সাথে সাথে; সমসাময়িক সর্ব বিদ্যাসহ; প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যার সর্বোচ্চ উপাধি অর্জন করতে হয়। তবে; দেহধামের কোনো একটি প্রত্যঙ্গের রূপক নামকে ছদ্মনাম রূপে গ্রহণ করা যায়। কোনো দেবতাকে ছদ্মনাম রূপে গ্রহণ করার পর; পিতা-মাতার রাখা নাম, সামাজিকভাবে রাখা নাম চিরতরে পরিত্যাগ করতে হয়। সাথে সাথে; পিতা-মাতার নাম ও জন্মস্থানের নাম; চিরতরে পরিত্যাগ করতে হয়। তারপর; ছদ্মনাম রূপে গ্রহণকৃত নামের ওপর; নতুন একটি পৌরাণিক জীবনী নির্মাণ করতে হয়। উল্লেখ্য; নিজের আবিষ্কৃত দেবতার নতুন জীবনী নির্মাণ করে; তা প্রকাশ করার পর; ব্যক্তি-সত্তা চিরতরে বিলুপ্ত করতে হয়ে। একমাত্র মানবদেহের দৈনন্দিন কার্যকলাপের ওপর নির্ভর করে; এ নতুন জীবনী প্রস্তুত করা হয়। ঐ নতুন জীবনী দ্বারা; বিশ্বে নতুন ঐশিদূতের আগমন ঘটে। যেহেতু; নতুনভাবে নির্মিত পৌরাণিক জীবনীতে দেবতার শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকে না। তাই; অধিকাংশ দেবতার ক্ষেত্রেই বলা হয়; “তারা নিরক্ষর। তারা পৃথিবীর প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষায় শিক্ষিত নন। অমুক অমুক মহামানব নিরক্ষর ছিলেন। তিনি স্বয়ং ঐশ্বরীক শিক্ষায় শিক্ষিত ছিলেন। তিনি দেবালয়ের দেবতাগণের মতো ঐশিজ্ঞানে মহাজ্ঞানী ছিলেন। তিনি দেবালয়ে স্বয়ং ঈশ্বরের নিকট হতে শিক্ষাপ্রাপ্ত ছিলেন; ইত্যাদি ইত্যাদি।”

বিষয়টি হলো; স্বর্গীয় দেবতাগণ বিদ্যালয়ে বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে মানুষের নির্মিত বর্ণমালা অ, আ, A, B এবং আলিফ ‘(ﺍ )’ বা ‘(ﺐ)’ ও মানুষের নির্মিত বাক্যসমূহ দ্বারা শিক্ষাগ্রহণ করেন না। তবুও; তারা মানব ও দানবের চেয়ে অধিক ধীশক্তি ও প্রজ্ঞাসম্পন্ন। দেবতাগণ নির্ভুল রূপে কাজ করেন। কারণ; দেবতাগণের কোনো ভুল নেই। যেমন; রসনার কথা বলি; যদিও; রসনা কোনো বিদ্যালয়ে বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে বিদ্যার্জন বা জ্ঞানার্জন করেন নি। তবুও; তাঁর টক, ঝাল, মিষ্ট, তিক্ত, লবণ ও কষা; এ ৬টি স্বাদ অনুভব করতে কোনো সমস্যা হয় না। অনুরূপভাবে; নাসিকার কথা বলা যায়। যদিও; নাস্য কোনো বিদ্যালয়ে বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে বিদ্যার্জন বা জ্ঞানার্জন করেন নি; তবুও; তাঁর সুঘ্রাণ ও দুর্গন্ধ বুঝতে বা অনুভব করতে কোনো সমস্যা হয় না। অনুরূপভাবে; ত্বকের কথা বলা যায়। যদিও; ত্বক কোনো বিদ্যালয়ে বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে জ্ঞানার্জন করে নি; তবুও; তাঁর শীত ও গ্রীষ্ম বুঝতে বা অনুভব করতে কোনো সমস্যা হয় না। অর্থাৎ; মানবদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো সৃষ্টিলগ্ন হতেই স্ব স্ব জ্ঞান-প্রাপ্ত।

বিশ্বের সব দেবতার মাতৃভাষা হলো ইঙ্গিত। এজন্য; নিশ্চিতভাবে বলা যায়; দেবতাগণ সবাই ইঙ্গিত বুঝেন। বিষয়টি এমন যে; যখন পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণীতে বর্ণিত পৌরাণিক মূলক সত্তার ছদ্ম নামে দেবতায়ন করে দেবতা রূপদান করা হয়। তখন; সব দেবতার ক্ষেত্রেই বলা হয়; “তিনি নিরক্ষর ছিলেন। অর্থাৎ; দেহপুরীতে যত দেবতা আছে তারা কেউই মর্ত্যলোক হতে জ্ঞানার্জন করেন না। অথবা কোনো গ্রন্থ পড়ে জ্ঞানার্জন করেন না। যেমন; ওপরে তুলে ধরা হয়েছে জিহ্বা’, নাসিকাত্বক এর বিষয়টি।

পৌরাণিক দেবতায়ন করে নির্মিত দেবতাগণ সবাই স্বয়ং স্বর্গধামের নিত্য শিক্ষায় শিক্ষিত। তাদের শিক্ষা নিত্য, অনন্ত, অক্ষয় ও অম্লান। তাদের জ্ঞান বা শিক্ষা তারা কখনও বিস্মৃতি হন না। কখনও; তারা ভুল করে না। তাদের কোনো ভুল নেই। দেবতা জীবকুলের মতো রক্তমাংসে গড়া আকারধারী জীব নন। প্রতিটি দেবতাই মানুষে বিদ্যমান কোনো না কোনো প্রত্যঙ্গ অথবা মানুষে বিদ্যমান বিষয়বস্তু। এজন্য; দেবতাগণ মর্ত্যধামের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা বিদ্যালয় বা কোনো দীক্ষাগুরুর নিকট হতে শিক্ষা-দীক্ষা গ্রহণ করেন না। কারণ; তাদের মর্ত্যলোকের কোনো শিক্ষা-দীক্ষার প্রয়োজন হয় না। এজন্য; দেবতার সামাজিক কোনো নাম, পিতা-মাতার নাম বা বসতি, ঠাঁই ও অঞ্চল কোনকিছুই নেই। অল্প কথায় বলা যায় পৌরাণিক চমৎকারে ব্যবহৃত সুন্দর সুন্দর নামগুলোই দেবতা। দেবতার দেহতাত্ত্বিক ব্যুৎপত্তি না জানা ও না বুঝাই শ্বরবিজ্ঞান, পুরাণ ও সাম্প্রদায়িক পুস্তক-পুস্তিকা না বুঝার একমাত্র কারণ। এজন্য; যে ব্যক্তি একবার দেবতাগুলো ভালোভাবে চেনে নিবে; সারাবিশ্বের সব শ্বরবিজ্ঞান, পুরাণ ও সাম্প্রদায়িক পুস্তক-পুস্তিকা জানা ও বুঝা সহজ হবে।


মানবদেহে দেবতাগণের অবস্থান

(Deities location of the human body)

দেবতা কী? দেবতার সাথে মানুষের সম্পর্ক কী? মানবদেহে দেবতাগণের অবস্থান কোথায় কোথায়? মানুষে বিদ্যমান বিষয়বস্তু ও ইন্দ্রিয়াদির ওপর পৌরাণিক চরিত্রায়ন করে কিভাবে দেবতা নির্মাণ করা হয়? এসব প্রশ্নের উত্তর আজও অনেকেরই অজানা। যদি; দেবতা সম্পর্কে মানুষের সম্যক জ্ঞান থাকত, তবে; তারা দেবতা ব্যাপারে কোনো অবান্তর বিষয় সহজে গ্রহণ করতো না। তাই; আগে দেবতা, angel, ‘ملاك’ (মালাকি) ও ‘ﻔﺮﺸﺗﻪ’ (ফেরেস্তা) বিষয়ে জানা প্রয়োজন।

পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, মানুষে বিদ্যমান বিষয়বস্তু ও ইন্দ্রিয়াদির রূপক নামে দেবতায়ন করে পৌরাণিক দেবতা নির্মাণ করা হয়।

১.    চোখের রূপক নামে দেবতায়ন করে নির্মাণ করা হয়েছে;

      বাংলায় দ্রষ্টা

      গ্রিসে মাইকেল (Michael)

      আরবিতে মিকাইল (مِيكَائيل)

২.   কানের রূপক নামে দেবতায়ন করে নির্মাণ করা হয়েছে;

      বাংলায় যম

      গ্রিসে আখেঞ্জেল (Archangel)

      আরবিতে আযরাইল (عزرائيل)

৩.   নাসিকার রূপক নামে দেবতায়ন করে নির্মাণ করা হয়েছে;

      বাংলায় বংশীবাদক

      গ্রিসে সেরাফিম (Seraphim)

      আরবিতে ইস্রাফিল (اسرافيل)

৪.   মুখের কথার রূপক নামে দেবতায়ন করে নির্মাণ করা হয়েছে;

      বাংলায় বলন

      গ্রিসে গ্যাবরিল (Gabriel)

      আরবিতে জিব্রাইল (جبريل)

এখানে বিশেষভাবে স্মরণীয় যে; মানবদেহে যমের অবস্থান বিশ্বের একেক ঘরানায় একেক প্রকার। যেমন; সুরেশ্বরের একাংশের মতে; যমের অবস্থান কানে। তাদের ব্যাখ্যা হলো; কানে কোনকিছু শোনার পরই কারো রাগের উদ্ভব হয়। তারপর; কাউকে হত্যা করে। তাই; যমের অবস্থান কানে। লালন ঘরানার মতে ও মুসলমানদের একাংশের মতে; যমের অবস্থান পিঠে। যেমন; কুরানে বর্ণিত আছে যে; আদমের পিঠের ডান ও বাম পাশ হতে আত্মা বের হয়। কুরানের আরেক বর্ণনা অনুসারে; যমের স্থান মুখে। যেমন; মাটি এনে আদমের আকৃতি নির্মাণ কাহিনী। এখানে মাটির ভাবার্থ হলো প্রাণীর খাদ্য।

অর্থাৎ; প্রাণী খাদ্য গ্রহণ করার পর; তা পরিপাক হয়। অতঃপর; অসার পদার্থ মূত্র ও মল রূপে দেহ হতে বেরিয়ে যায়। শরীরে থেকে যাওয়া সার পদার্থ হতে রক্ত সৃষ্টি হয়। তারপর; রক্ত হতে শুক্র সৃষ্টি হয়। এই শুক্রকেই আরবিতে আদম (آدم) বলা হয়। আরবি আদম অর্থ মিশ্রণ; সঙ্কর। কিন্তু আরবি আদম এসেছে গ্রিক অ্যাডাম (Adam) হতে। আর গ্রিক অ্যাডাম অর্থ; পুরুষ মানুষের গলার উঁচু স্থান (হুলকুম)। এছাড়াও;

মধুর রূপক নামে ঈশ্বরায়ন করে নির্মাণ করা হয়েছে সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা

সুধার রূপক নামে ঈশ্বরায়ন করে নির্মাণ করা হয়েছে পালনকর্তা বিষ্ণু

শিশ্নের রূপক নামে দেবতায়ন করে নির্মাণ করা হয়েছে সংহারকর্তা মহাদেব

ব্যর্থতার রূপক নামে দেবতায়ন করে নির্মাণ করা হয়েছে অমঙ্গলের দেবতা বর্থ্য

শিশ্নের রূপক নামে দেবতায়ন করে নির্মাণ করা হয়েছে আদিপিতা মনু

শিশ্নের রূপক নামে দেবতায়ন করে নির্মাণ করা হয়েছে প্রেমের দেবতা মদন

রজঃস্রাবের রূপক নামে দেবীয়ায়ন করে নির্মাণ করা হয়েছে আদিমাতা সরস্বতী

শুক্রের রূপক নামে দেবীয়ায়ন করে নির্মাণ করা হয়েছে মঙ্গলের দেবী দূর্গা

যোননালীর রূপক নামে দেবীয়ায়ন করে নির্মাণ করা হয়েছে, বৈতরণীবিরজা

সুতরাং বলা যায়; যা দ্বারা পৌরাণিক ঈশ্বর, দেবতা, দেবী ও মানব নির্মাণ করা হয়েছে; সেটিই সেই দেবতার তার অবস্থান।


দেবতা মানুষের কাঁধে বসে লেখে

(The deity writes sitting on the shoulders of man)

এবার; গত বিংশ শতাব্দীর ষাটের দশকের একটি লোকগীতি তুলে ধরছি। গানটি তখন অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। এমনকি; তখন; গানটি এ উপমহাদেশের প্রায় সবার মুখে মুখে শুনতে পাওয়া যেত।

আছেন আমার মুক্তার, আছেন আমার ব্যারিস্টার;

শেষ বিচারের হাইকোর্টেতে তিনিই আমায় করবেন পার

            আমি পাপী, তিনি জামিনদার।

মনের ঘরে তালা দিয়া, চাবি লইয়া আছেন সাঁই;

আমি অধম; সাধ্য কী তার হুকুম ছাড়া বাইরে যাই; (মনরে রে)

দুই কাঁধে দুই মুহূরি, লিখতে আছেন ডাইরি;

দলিল দেইখা রায় দিবেন, টাকা পয়সার নাই কারবার;

            সময় থাকতে মনা হুঁশিয়ার।

সে দিনের সেই স্টেশনে, থাকবে নানান প্যাসেঞ্জার;

দ্রুতযানে পার হবে সে, টিকিট কাটা আছে যার; (মনরে রে)

পারাপারে থাকলে তাড়া, সঙ্গে নিও গাড়ি ভাড়া;

জবাবদিহি করতে হবে, ধরলে টিকিট কালেক্টার;

            সময় থাকতে মনা হুঁশিয়ার।”

অধিকাংশ গবেষকের অভিমত হলো; উপরোক্ত গানটি হতেই মানুষের দুই কাঁধে দুই দেবতা বসে থাকা কথাটির উদ্ভব হয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য মতবাদে দেবতা কাঁধের ওপর বসে থাকার কোনো আলোচনা নেই। কেবল; মুসলমান মনীষীদের নিকট এমন অবান্তর কথা শুনতে পাওয়া যায়। তাহলে; মুসলমান মনীষীদের মধ্যে এমন মহা-বিভ্রান্তিকর ধারণা কিভাবে সৃষ্টি হলো; এখন; সেটাই দেখার বিষয়।

সাম্প্রদায়িক পণ্ডিত, বক্তা, বৈখ্যিক ও টৈকিকদের মতে; মানুষ সবার শ্রেষ্ঠ। তাই; তারা মানুষকে ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ (ﺍﺸﺮﺍﻒ ﺍﻟﻤﺨﻟﻮﻗﺎﺖ) বলে থাকে। আবার; কেউ কেউ মানুষকে ‘আশরাফুল ইনসানও’ (ﺍﺸﺮﺍﻒ ﺍﻻﻨﺴﺎﻦ) বলে থাকে। তারা আরও বলে যে; কেবল; মানুষের সুখ-স্বাচ্ছন্দের জন্যই; প্রভু বিশ্বের এত সব বিষয়-আশয় সৃষ্টি করেছেন। প্রভু দেবতা সৃষ্টি করেছেন মানুষের দাস রূপে। এ সূত্র মতে; দেবতা মানুষের দাস। তাদের আরও প্রবল ধারণা যে; মানুষের সেবা-যত্ন করার জন্য; দেবতাগণ সদা-সর্বদা তৎপর। তবে; এদের মধ্যে মাত্র দুইজন দেবতা মানুষের কার্যক্রম লিপিবদ্ধ করে থাকেন।

মানবদেহে অন্যান্য দেবতাগণের অবস্থান ব্যাপারে; তেমন কোনো আলোচনা নেই। তবে; দীর্ঘদিন ধরে; এ উপমহাদেশে; আরবীয় সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক মনীষীদের মধ্যে; মানুষের কার্যক্রম লিপিবদ্ধকারী দুই দেবতার অবস্থান নিয়ে অনেক আলোচনা হয়ে আসছে। এখন পর্যন্ত; আরবীয় সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক পণ্ডিত, বক্তা, আলোচক, বৈখ্যিক, টৈকিক, অভিধানবিদ ও অনুবাদকরা মনে করে যে; মানুষের কার্যবিধি লিপিবদ্ধকারী দেবতা দুইজনের অবস্থান মানুষের কাঁধের ওপর। মানুষের কার্যক্রম লিপিবদ্ধকারী দেবতা দুটির নাম; যথাক্রমে; কিরামান (كِرَامًا) ও কাতেবিন (كَاتِبِينَ)।

এবার; আরও জানা প্রয়োজন যে; নিচে এত স্থান রেখে; দাস প্রভুর কাঁধের ওপর বসে লেখালেখি করা কতটুকু সমীচীন? দেবতা ব্যাপারে অনেক আলোচনাই কুরানে আছে। কিন্তু দেবতা মানুষের কাঁধে বসে লেখালেখি করার কোনো বর্ণনা নেই? তবে; এখানে; এ আয়াত দুটি বিশেষভাবে লক্ষ্যনীয়। যথা; “كِرَامًا كَاتِبِينَ (١١) يَعْلَمُونَ مَا تَفْعَلُونَ(١٢)” উচ্চারণ; “কিরামাং কাতিবিনা (১১) ইয়া’লামুনা মা তাফয়ালুন (১২)।” “Kiraman katibeena (11) Yalamoona ma tafaloona (12)” (১২)” অর্থঃ “সম্মানতি লখেক দুইজন (১১) জানেন তোমরা যা করো (১২)।” “Two honorable writer” (11) They know all that you do (12)” (কুরান, সুরা ইনফতির- ১১-১২)। এখানে; কাতিব (ﻜﺎﺘﺐ) অর্থ; লেখক এবং কাতিবিন (ﻜﺎﺘﺒﻴﻦ) অর্থ; দুজন লেখক।

সর্বপ্রথমে পরিভাষাগুলোর অভিধা জেনে নেওয়া যাক। প্রবন্ধে ব্যবহৃত পরিভাষার অভিধা জেনে নিলে আলোচনা পড়তে ও বুঝতে অনেক সুবিধা হয়।

কাতিব [ﻜﺎﺘﺐ] (আপৌছ)বি লেখক, কেরানি, গীতিকার, উপন্যাসিক, নাট্যাকার (শ্ববি) শিশ্ন, বাঁড়া, মেঢ়্র, হোল, penis, জকর (.ﺬﻜﺭ) (আঞ্চ) সোনা, পোতা, ধন (রূপ্রশ)  বলাই, নারদ, বিম্বল, মদন, মন্মথ, মাধব, মহাদেব, লাঠি, শিব, নাড়া, হাত, পা, গাছ, রশি (দেপ্র) এটি আরবীয় পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী এর বলাই পরিবারের আরবীয় পৌরাণিক ছদ্মনাম পরিভাষা ও আরবীয় শ্বরবিজ্ঞানের একটি দেবতা বিশেষ (সংজ্ঞা) সাধারণত; পুস্তক-পুস্তিকা নির্মাতাদের লেখক বা কাতিব (ﻜﺎﺘﺐ) বলা হয় শ্বরবিজ্ঞানে; পুরুষজাতির শিশ্নকে রূপকার্থে বাংলায় লেখক ও আরবিতে কাতিব (ﻜﺎﺘﺐ) বলা হয় (ইদে) আসা (.ﻋَﺼَﺎ), জাকারিয়া (.ﺯﻜﺭﻴﺎ), শিমার (.ﺸﻤﺭ), হাবিল (আ.ﺤﺎﺒﻞ), মারুত (আ.ﻤﺎﺭﻮﺕ) (গ্রিদে) Finger (বাপৌছ) কামগুরু, কিরীটী, বণিক, বাবা, বামন, মরা ও শ্রীচরণ (বাপৌচা) অনস্থী, আঙ্গুল, কর্ণ, জগাই, জনক, বিম্বল ও শুক্রাচার্য (বাপৌউ) আঁচল, খুঁটি, গাছ, চরণ, দৈত্য, লাঠি ও হাত (বাপৌরূ) বৈঠা (বাপৌমূ) বলাই {}

কাতিবিন [ﻜﺎﺘﺒﻴﻦ] (আপৌছ)বি লেখকযুগল, লেখকগণ, গীতিকারগণ (পরি) জনিত্র, জননেন্দ্রিয়, কামিন্দ্রিয়, genitalia, ‘عورة’ (আওরা), pudendum, reproductive organ, ‘سوء أو عورة’ (সুয়া আও আওরা), ‘أعضاء تناسلية’ (আ’দা তানাসুলিয়া), ‘الأعضاء التناسلية’ (আল’য়াদা আত্তানাসুলিয়া) (শ্ববি)  উপস্থ, সেগো, ভগবান, শুম্ভ-নিশুম্ভ, জগাই-মাধাই, কানাই-বলাই, reproducer (ইপ) মাহগির (ফা.ﻤﻫﻰﮔﻴﺭ) (ইদে) হারুত মারুত (আ.ﻫﺎﺭﻮﺓ ﻤﺎﺭﻮﺓ), হাবিল ক্বাবিল (.ﻗﺎﺑﻞ ﺤﺑﻝ) (দেপ্র) এটি আরবীয় পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী এর উপস্থ পরিবারের আরবীয় পৌরাণিক ছদ্মনাম পরিভাষা ও আরবীয় শ্বরবিজ্ঞানের একটি দেবতা বিশেষ (সংজ্ঞা) . সাধারণত; যে কোনো দুইজন লেখককে লেখকযুগল বা কাতিবিন (ﻜﺎﺘﺒﻴﻦ) বলা হয় . শ্বরবিজ্ঞানে; শিশ্ন ও যোনিকে একত্রে রূপকার্থে লেখকযুগল বা কাতিবিন (ﻜﺎﺘﺒﻴﻦ) বলা হয় (বাপৌছ) দ্বাপর (অশ্বদ্বয়, দুইবন্ধু ও দুইভাই) ও ভগবান (বাপৌচা) জনিত্র ও মধুমালা (বাপৌউ) ঘানী (বাপৌরূ) কণ্ডনী (বাপৌমূ) উপস্থ {.কাতিব. ﻜﺎﺘﺐ> বব}

কিরামান [ﻜﺭﺍﻡ] (আপৌছ)বি অভিজাত ব্যক্তিবর্গ, দানশীল ব্যক্তিবর্গ, মহান ও সম্মানিত ব্যক্তিগণ (ব্য্য) আরবি করিম (ﻛﺮﻴﻢ) পরিভাষাটির বহুবচন {.করিম. ﻛﺮﻴﻢ>}

করিম [ﻛﺮﻴﻢ] (আপৌছ)বিণ দয়ালু, দয়াময়, করুণাময়, দয়াবান (প্র) আরবীয় পুরাণ মতে; কুরানে বর্ণিত উপাস্যের গুণবাচক নিরানব্বই (৯৯)টি নামের মধ্যে একটি (শ্ববি)  সাঁই, বিষ্ণু, ঈশ্বর, প্রভু, গুরু, গোঁসাই (বাপৌরূ) সাঁই (বাপৌমূ) পালনকর্তা {}

কিরামান কাতিবিন [ﻜﺭﺍﻤﺎ ﻜﺎﺘﺒﻴﻦ] (আপৌছ)বি দুইজন মহামান্য লেখক, দুইজন সম্মানিত লেখক, শ্রদ্ধেয় লিপিবদ্ধকারীগণ, ভদ্র লেখকগণ, আদর্শ লেখকগণ (প্র) আরবীয় পুরাণ মতে; যে সম্মানিত দুইজন লেখক দেবতা মানুষের নৈমিত্তিক কর্মফল লিপিবদ্ধ করে থাকেন (ব্য্য) . শ্বরবিজ্ঞানে পুরুষজাতির শিশ্ন ও নারীজাতির যোনিকে একত্রে উপস্থ বলা হয় . নারী-পুরুষ মৈথুনে যেমন কর্ম করে; কানাই-বলাই নামক মহামান্য প্রধান দুই দেবতা তাই লিপিবদ্ধ করেন। এজন্য শ্বরবিজ্ঞানে এঁদেরকে মহামান্য লেখক যুগল বলা হয়। কানাই এত নিপুণ লেখক যে; সামান্যতম শুক্রও যদি কামনদীতে পড়ে, তবে তাও তিনি লিখে রাখেন। তিনি পরবর্তী মাসেই নিয়মিত রজস্রাব বন্ধ করে দেন এবং মাত্র ৩০৯ দিনের মধ্যেই বলাই কী লিখেছিলেন তার ফলাফলস্বরূপ পুত্র কিংবা কন্যা সন্তান বের করে দেন (শ্ববি) উপস্থ, জননযন্ত্র, জনিত্র, জননেন্দ্রিয়, জনকজননী, the reproductive organ (ইদে) হারুত মারুত (.ﻫﺎﺭﻮﺓ ﻤﺎﺭﻮﺓ) (রূপ্রশ) কণ্ডনী, কানাইবলাই, কুরুক্ষেত্র, কুশীলব, গজকচ্ছপ, ঘানি, জগাই-মাধাই, সেগো, ভগবান, মধু-কৈটব, মধুমালা, রাধাকৃষ্ণ, শুম্ভ-নিশুম্ভ (ইংপ) reproducer (ইপ) মাহগির (ফা.ﻤﻫﻰﮔﻴﺭ) (দেপ্র) এটি আরবীয় পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী এর উপস্থ পরিবারের আরবীয় পৌরাণিক ছদ্মনাম পরিভাষা বিশেষ (সংজ্ঞা) . সাধারণত; ভদ্র ও সভ্য লেখকগণকে সম্মানিত লেখকবৃন্দ বা কিরামান কাতিবিন (ﻜﺭﺍﻤﺎ ﻜﺎﺘﺒﻴﻦ) বলা হয় . শ্বরবিজ্ঞানে; কেবল শিশ্ন ও যোনিকে একত্রে রূপকার্থে সম্মানিত লেখকবৃন্দ বা কিরামান কাতিবিন (ﻜﺭﺍﻤﺎ ﻜﺎﺘﺒﻴﻦ) বলা হয় (বাপৌছ) দ্বাপর (অশ্বদ্বয়, দুইবন্ধু ও দুইভাই) ও ভগবান (বাপৌচা) জনিত্র ও মধুমালা (বাপৌউ) ঘানী (বাপৌরূ) কণ্ডনী (বাপৌমূ) উপস্থ {.কিরামান. ﻜﺭﺍﻤﺎ+ .কাতিবিন. ﻜﺎﺘﺒﻴﻦ}

কাতিবিন [ﻜﺎﺘﺒﻴﻦ] (আপৌছ)বি লেখক, কেরানি, গীতিকার, উপন্যাসিক, নাট্যাকার, লেখকগণ, গীতিকারগণ (বাপৌছ) দ্বাপর (অশ্বদ্বয়, দুইবন্ধু ও দুইভাই) ও ভগবান (বাপৌচা) জনিত্র ও মধুমালা (বাপৌউ) ঘানী (বাপৌরূ) কণ্ডনী (বাপৌমূ) উপস্থ {.কাতিব. ﻜﺎﺘﺐ> বব}

আলোচ্য গানটির পর্যালোচনা (In the following song review)

এবার; ভাববার বিষয় হলো; দেবতা কাঁধে উঠে বসে থাকে; এমন কোনো কথা;  কুরানে নেই। কিন্তু; গীতিকার দুই কাঁধে দুই মুহূরি লিখতে আছেন ডাইরি এমন কথা লিখেছেন। আর এখান থেকেই; এ দেশের বয়াতি, বক্তা, বাউল, গবেষক, বৈখ্যিক ও টৈকিকরা; দেবতাগণের মানুষের কাঁধে ওঠে বসে বসে লেখার কথা স্বীকার করে নিয়েছে। তারা কেউ ভেবে দেখে নি যে; দেবতা কী? তারা ভেবে দেখে নি যে; দেবতাগণ কিভাবে মানুষকে সাহায্য করছেন? সারাবিশ্বের সব শ্বরবিজ্ঞানী মনীষীর মতে; মানুষে বিদ্যমান সব সত্তাই রূপকভাবে দেবতা। যেমন; চোখ হতে দ্রষ্টা, শিশ্ন হতে মদন। দেবতাগণ যার যার স্থানেই থাকেন। তারা কেউ কখনও মানুষের কাঁধে ওঠে বসেন না। দেবতা মানুষের কাঁধে উঠে বসে লেখালেখি করে; গীতিকারের এমন মন্তব্য করা চরম নির্বুদ্ধিতার পরিচয়। এখনও যারা; এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বসে আছে; তারাও বোকার রাজ্যের বাসিন্দা।


তাবলিগীদের বিভ্রান্তিকর চিন্তাধারা অপসারণ

(Confusing thoughts removing of Tabligh-propagandist)

দীর্ঘদিন ধরে; এ উপমহাদেশের তাবলীগরা যত্রতত্র বলে বেড়াচ্ছে যে; “দেবতাগণ অত্যন্ত লজ্জাশীল। তাই; তারা কোনো প্রকার লজ্জা অবলোকন করতে পারেন না।”  এ সূত্র ধরে; তারা আরও বলে বেড়াচ্ছে যে; “মানুষ বর্চ্যে গেলে লজ্জায় দেবতাগণ মাথার ওপরে গিয়ে বসে থাকেন। তাই; মাথায় টুপি বা পাগড়ি ব্যতীত বর্চ্যে যাওয়া কারো উচিত নয়। একেবারে কিছু না পেলে; অগত্যা; গামছা বা পাগড়ি হলেও; মাথায় দিয়ে বর্চ্যে যাওয়া আবশ্যক।”

পর্যালোচনা (Review)

সাম্প্রদায়িক হিন্দু ও মুসলমান মনীষীদের মতে; অত্যন্ত সূক্ষ্ম দেহহীন নিষ্পাপ স্বর্গীয় দূত বিশেষকে দেবতা বলা হয়। তারা আরও বলে যে; “দেবতাগণ চোখের পলকে সারাবিশ্ব ভ্রমণ করতে পারেন।” এছাড়া; আরবীয় সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক পণ্ডিতরা আরও বলেন যে; “দেবতাগণের সত্তর সহস্র জ্যোতির পাখা আছে। তাদের জন্ম-মৃত্যু নেই। তাদের বিবাহ-বংশবৃদ্ধি নেই। তাদের আহার-নিদ্রা নেই। তারা সর্বদা নিজ নিজ কর্তব্যে অবিচল। সারাবিশ্বে অসংখ্য দেবতা আছে। বিশেষ করে মানুষের সাথে; নির্দিষ্ট সংখ্যক দেবতা সার্বক্ষণিক অবস্থান করে ইত্যাদি।” এসব পৌরাণিক আলোচনা মাত্র। এগুলোকে ইংরেজিতে বলা হয় mythology (পুরাণ)। এখানে; বিশেষভাবে স্মরণীয় যে; এসব পৌরাণিক রূপক বর্ণনার উৎপত্তি মূল একমাত্র মানবদেহ। তাই; এসব পৌরাণিক বর্ণনাকে আত্মদর্শনগত সত্য বলা ব্যতীত উপায় নেই। নিচে সাম্প্রদায়িক মনীষীদের বর্ণিত রূপক তত্ত্বগুলোর আত্মতত্ত্ব উদ্ঘাটন করা হলো।

সমাধান (Solution)

সারাবিশ্বের অধিকাংশ আত্মতাত্ত্বিক মনীষীর মতে; যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করে তাই দেবতা। এ সূত্র মতে; পায়ু, শিশ্ন, মলাশয় ও মূত্রাশয় সবাই রূপকার্থে দেবতা। এবার কথা হলো; বর্চ্যরে সময় তারা যদি মাথার ওপর গিয়ে চা-পান খেতে থাকে; তবে; মল ও মূত্র অপসারণ করবে কে? পায়ু ছাড়া মল অপসারণ সম্ভব কী? তেমনিভাবে; শিশ্ন ছাড়া মূত্র অপসারণ সম্ভব কী? এতদ্দৃষ্টে মনে হয়; সাম্প্রদায়িক ঠাক-পুরুৎ ও মোল্লা-মুন্সিরা দেবতা বিষয়টিই ভালোভাবে বুঝেও না ও জানেও না। প্রকৃত বিষয় হলো; মানুষে বিদ্যমান সর্বপ্রকার সত্তাই রূপক নামে একেকজন দেবতা। তবে; সত্তার দেবতা হওয়ার যোগ্যতা হলো; মানুষে বিদ্যমান সত্তাগুলোর রূপক বা ছদ্মনাম হতে হবে। অর্থাৎ; আভিধানিক নামে কোনকিছুই দেবতা হতে পারে না। অন্যদিকে; রূপক বা ছদ্মনামে মানুষে বিদ্যমান সব সত্তাই দেবতা হতে পারে। যেমন; পুরুষজাতির পুরুষাঙ্গের আভিধানিক নাম শিশ্ন। সেজন্য; এটি দেবতা নয়। অন্যদিকে; শিশ্নের রূপকগুলো হলো; বলাই, জোগাই, বিম্বল, মদন, মন্মথ, মহাদেব, শিব, লম্বোদর; জাকারিয়া, ইব্রাহিম, হামান ও ইউশা। এঁরা সবাই দেবতা। তাদৃশ; নারীজাতির যৌনাঙ্গের আভিধানিক নাম যোনি’। সেজন্য; এটি দেবতা নয়। অন্যদিকে; যোনির রূপকগুলো হলো; কানাই, কবন্ধ, করঙ্গ, কালনাগিনী, ধন্বন্তরী, রজকিনী, স্রাবস্তী; মক্কা, নুহ ও সুলাইমান। এঁরা সবাই দেবতা।

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে; মানবদেহের সব ইন্দ্রিয় ও অঙ্গই রূপক বা ছদ্মনামে দেবতা। অর্থাৎ; হাত ধারয়িতা দেবতা, পা পথিক দেবতা, চোখ দ্রষ্টা দেবতা, শিশ্ন লেখক দেবতা, যোনি চিকিৎসক দেবতা ও পায়ু রেচক দেবতা ইত্যাদি। এবার; বিচার্য হলো; ধারয়িতা, পথিক, দ্রষ্টা, লেখক, চিকিৎসক ও রেচক প্রভৃতি দেবতা; মানবদেহের বাইরের কোনো প্রাণী? নাকি মানুষে বিদ্যমান বিশেষ বিশেষ সত্তা? উত্তরে অবশ্যই বলতে হবে; এগুলো মানুষে বিদ্যমান সত্তা। তাহলে; সত্যতা হলো; কখনই; মানুষের হাত, পা, চোখ, শিশ্ন, যোনি পায়ু দেবতা নয়। কারণ; এসব মানুষের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গের আভিধানিক নাম। কিন্তু; ধারয়িতা, পথিক, দ্রষ্টা, লেখক, চিকিৎসক রেচক প্রভৃতি দেবতা। কারণ; এসব মানুষের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গের রূপক বা ছদ্মনাম। একথা প্রমাণিত হলো যে; মানুষে বিদ্যমান বিষয়বস্তু ও ইন্দ্রিয়াদির রূপক নামে দেবতায়ন করে পৌরাণিক দেবতা সৃষ্টি করা হয়।


দেবতাগণের দেহহীন হওয়ার প্রমাণ

(The incorporeal evidence of the deity)

তাহলে; উপরোক্ত বর্ণনা হতে দেখা যায়; সব দেবতারই দেহ আছে। কিন্তু; সাম্প্রদায়িক হিন্দু ও মুসলমান মনীষীরা বলে যে; দেবতাগণের দেহ নেই। এমন দ্বন্দ্বের সমাধান হলো; কখনই; দেহের স্থূল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দেবতা নয়। বরং; দেবতা হলো; দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যে বিরাজিত শক্তি। আর শক্তির যে দেহ নেই; এটি অবশ্যই বিজ্ঞান, দর্শন ও যুক্তি দ্বারা প্রমাণিত।

ভালোভাবে বুঝার জন্য; একটি উপমা তুলে ধরা হলো। যেমন; পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীর হাত। হাত থাকার পরও সে কোনকিছু গ্রহণ করতে পারে না। পক্ষাঘাতগ্রস্ত হওয়ার কারণে; যদি হাতের কর্মক্ষমতা লোপ পায়; তবে তার দেবতাও লোপ পায়। এ সূত্র ধরেই বলা যায়; যেমন; অন্ধ-চোখ দেবতা নয়; তেমন; বয়রা-কর্ণও দেবতা নয়। তেমনই; পক্ষাঘাতগ্রস্ত হাত ও পা-ও দেবতা নয়। কারণ; এদের মধ্যে বিরাজিত শক্তি লোপ পেয়েছে। যে শক্তি লোপ পেয়েছে; তা-ই ছিল দেবতা। আর শক্তিগুলোই দেহহীন। আর যাদের দেহ ছিল; তারা তো পড়েই রয়েছে। যেমন; হাতের স্থানে হাত, পায়ের স্থানে পা, কর্ণের স্থানে কর্ণ, চোখের স্থানে চক্ষু; পূর্বের মতোই রয়েছে। কেবল; লোপ পেয়েছে এদের চালিকা শক্তি। বিলুপ্ত শক্তিগুলোই ছিল দেবতা। অর্থাৎ; মানুষে বিদ্যমান বিষয়বস্তু ও ইন্দ্রিয়াদি এর রূপক নামেদেবতায়ন করে সৃষ্ট পৌরাণিক চরিত্রগুলোই দেবতা

শক্তির দেহ নেই। কার্যত; দেখা যায়; সূক্ষ্মদেহী দেবতার অবর্তমানে হাতের স্থানে হাত থাকে বটে; কিন্তু কিছু ধরতে পারে না। তেমনই; পায়ের স্থানে পা থাকে বটে; কিন্তু; হাঁটতে পারে না। অনুরূপভাবে; কানের স্থানে কান থাকে বটে; কিন্তু; কিছু শুনতে পায় না। তেমনই; চোখের স্থানে চোখ থাকে বটে; কিন্তু কিছু দেখতে পায় না। এবার; আশা করা যায় যে; উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা দেবতাগণের সূক্ষ্মদেহ বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে।


দেবতাগণের নিষ্পাপ হওয়ার প্রমাণ

(The impeccable evidence of the deity)

পূর্বেই আলোচনা করা হয়েছে যে; জীবদেহের স্থূল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দেবতা নয়; বরং; অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যে কর্মরত শক্তিগুলোই দেবতা। তাই; এবার; শক্ত করেই বলা যায় যে; দুর্ভাগ্য-দুর্ঘটনার জন্য কখনও শক্তি অপরাধী নয়। বরং অপরাধী হলো শক্তিগুলোর পরিবাহী। যেমন; ধরা যাক, বিদ্যুৎস্পৃশ্য হয়ে কারো মৃত্যু হলো। এরজন্য দায়ী কে? বিদ্যুৎ নাকি পরিবাহী? এর উত্তরে বলতে হবে; এমন মৃত্যুর জন্য; অবশ্যই প্রযুক্তি ও পরিবাহী দায়ী। কারণ; যদি পরিবাহীটি আরও শক্ত হতো এবং যদি প্রযুক্তিটি আরও নিরাপদ হতো; তবে; বিদ্যুৎ কোনভাবেই মানুষটিকে হত্যা করতে পারত না। এবার; আরও শক্তভাবেই বলা যায়; সর্বপ্রকার অপরাধ ও দুর্ঘটনার জন্য শক্তি দায়ী নয়; বরং দায়ী হলো উক্ত শক্তিটির পরিবাহী ও প্রযুক্তি। এ সূত্র ধরেই; সাম্প্রদায়িক পণ্ডিত বা মনীষীরা বলে যে; দেবতাগণ সদা-সর্বদা নিষ্পাপ।


দেবতাগণের চোখের পলকে সারাবিশ্ব ভ্রমণের প্রমাণ

(The evidence traveling around the world twinkling of an eye of the deity)

সাধারণত; চোখের এক পলক অর্থ একবার চোখ বন্ধ করে আবার খোলা। কিন্তু শ্বরবিজ্ঞানে; চোখের এক পলক অর্থ এক জন্ম। অন্যদিকে; সাধারণত; সারাবিশ্ব অর্থ সারা পৃথিবী। কিন্তু শ্বরবিজ্ঞানে; সারাবিশ্ব অর্থ কেবল মানবদেহ। কারণ; আত্মতাত্ত্বিক বিজ্ঞানীগণ বলে থাকেন; বিশ্ব একটি বৃহত্তম মানুষ ও মানুষ একটি ক্ষুদ্রতম বিশ্ব। এ সূত্র ধরেই; তারা বলে থাকেন; যা আছে ব্রহ্মাণ্ডে, তা আছে মানব ভাণ্ডে যেহেতু; বৃহৎ-বিশ্বের সবকিছুকে উপমান ধরলে ন্যূনাধিক উপমিত অস্তিত্ব মানবদেহ নামক ক্ষুদে বিশ্বের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায়। এজন্য; আত্মতাত্ত্বিক বিজ্ঞানীগণ মানবদেহকে ক্ষুদে বিশ্ব বলে থাকেন। আত্মতত্ত্বের এ সূত্র ধরেই; সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক মনীষীরা বলে যে; দেবতাগণ চোখের পলকে সারাবিশ্ব পরিভ্রমণ করতে পারেন। অর্থাৎ; দেবতাগণ মুহূর্তেই দেহবিশ্ব ভ্রমণ করতে পারেন। সাম্প্রদায়িক মনীষীদের এমন কাল্পনিক গল্পের আত্মদর্শন হলো; দেহের প্রত্যঙ্গগুলো জীবনভর দেহ বিশ্বই পরিচালনা করে।


দেবতাগণের সত্তর সহস্র জ্যোতির পাখার প্রমাণ

(The evidence seventy thousand light-wings of the deity)

দেবতাগণের জ্যোতির পাখা বলতে কিছু নেই। এটি; পুরাণের কাব্য-অলঙ্কার ব্যতীত কিছুই নয়। তবে; সত্তর সহস্র হলো; হৃদপিণ্ডের ৭০টি হৃদকম্প। বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ চিকিৎসকের মতে; স্বাভাবিক অবস্থায় মানুষের হৃদকম্পন গড়ে প্রতি মিনিটে ৭০-৭৫টি। এ ৭০কেই শ্বরবিজ্ঞানে; ৭০,০০০ দেবতা, ৭০,০০০ পাখা, ৭০,০০০ বছর, ৭০,০০০ পুণ্য, ৭০,০০০ টাকা, ৭০,০০০ সৈন্য, ৭০,০০০ পর্দা, ৭০,০০০ ব্যক্তি, ৭০,০০০ মাইল ও ৭০,০০০ স্তর ইত্যাদি বলা হয়।


দেবতাগণের জন্ম-মৃত্যুহীন হওয়ার প্রমাণ

(The evidence of birth-deathless of the deity)

আত্মতাত্ত্বিক মনীষীদের সূক্ষ্মদৃষ্টিতে কোনকিছুরই জন্ম-মৃত্যু নেই। মানুষেরও জন্ম-মৃত্যু নেই। যেমন; মরমী কবি মনসুর লেখেছেন; কে বলে মানুষ মরে, আমি বুঝলাম না ব্যাপার; মানুষ মরিলে তবে, বিচার হবে কার।। (মরমী কবি মনসুর)। সারাবিশ্বের বিজ্ঞানী ও দার্শনিকদের ধারণাও প্রায় একই। তবে; স্থূলদৃষ্টিতে জীবের যে জন্ম-মৃত্যু দেখা যায়; তা কেবল পদার্থের রূপান্তর। জীবের ক্ষেত্রে দেহের রূপান্তর মাত্র। অন্যদিকে; পূর্বেই প্রমাণ করা হয়েছে যে; জীবের স্থূল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কখনও দেবতা নয়। দেবতা হলো জীবের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের চালিকা শক্তি। আর শক্তির জন্ম-মৃত্যু বা সৃষ্টি-ধংস কিছুই নেই। আছে কেবল রূপান্তর। দেবতাকে সর্বদা শক্তি রূপে বিচার করেই; এঁদেরকে জন্ম-মৃত্যুহীন বলা হয়। আর বলা হয় দেবতাগণ জন্ম-মৃত্যু ও সৃষ্টি-ধ্বংসের ঊর্ধ্বে।


দেবতাগণের বিবাহ-বংশবৃদ্ধি না থাকার প্রমাণ

(The evidence of not having marriage-breed of the deity)

মহাবিশ্বে কয়েক কোটি প্রজাতির জীব আছে। তারমধ্যে; বিবাহ-সংস্কার আছে কেবল মানুষের। বর্তমানে; পৃথিবীতে প্রায় ৭০০,০০,০০,০০০ সংখ্যক মানুষ রয়েছে। এরমধ্যে; প্রায় ৪,৩০০টি সাম্প্রদায়িক সংস্কার এবং ৬,০০,০০০ পারম্পরিক সংস্কার রয়েছে। এরমধ্যে; বিবাহ প্রথায় বিশ্বাসী রয়েছে মাত্র ১০০,০০,০০,০০০ জন। অর্থাৎ; বর্তমানে; পৃথিবীর অনেক দেশে এবং অনেক জাতির মধ্যে বিবাহ প্রথা বিদ্যমান নেই। আর দেবতাগণের বিবাহের কথা কল্পনাও করা যায় না। পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে; কখনও; মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দেবতা নয়। বরং; মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোর চালিকা শক্তিগুলোই হলো দেবতা। আর কখনও; শক্তির বিবাহ, বংশবৃদ্ধি ও জন্ম-মৃত্যু নেই। যেহেতু; দেবতা শক্তি। তাই; তারা সর্বদা বিবাহ-বংশবৃদ্ধি ও জন্ম-মৃত্যুর ঊর্ধ্বে।


দেবতাগণের আহার-নিদ্রা না থাকার প্রমাণ

(The evidence of not having eating-sleep of the deity)

আহার-নিদ্রা একান্ত জৈবিক প্রকৃতি। জীব মাত্র আহার-নিদ্রার অধীন। অন্যদিকে; বিশ্বের কোনো ভৌতবস্তুর আহার-নিদ্রা নেই। এজন্য; কখনও; ভৌতবস্তু ও শক্তিগুলো আহার-নিদ্রার অধীন নয়। পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে; জীবের বিশেষ বিশেষ শক্তিকে দেবতা বলা হয়। আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে; দেবতার স্থূল দেহ নেই। এসব কারণেই; দেবতাগণ আহার-নিদ্রার অধীন নন। এছাড়াও; বলা যায়; যেহেতু; মানুষে বিদ্যমান বিষয়বস্তু ও ইন্দ্রিয়াদি এর রূপক নামে” দেবতায়ন করে পৌরাণিক দেবতা সৃষ্টি করা হয়; সেহেতু; পৌরাণিক চরিত্রের জন্ম-মৃত্যু কল্পনা করা উচিত নয়।


দেবতাগণের কর্তব্যে অবিচল থাকার প্রমাণ

(The unmoved evidence of action-duties of the deity)

উল্লেখ্য; যেসব সৃষ্টির মন ও জ্ঞান নেই; তাদের কর্তব্যে অবিচল হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। যাদের মন ও জ্ঞান আছে; কেবল; তাদেরই কর্তব্যে বিচল হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে; দেবতাগণ মন, জ্ঞান ও দেহধারী জীব নন। বরং; তারা সূক্ষ্মজীব। তাই; কখনও; তারা কর্তব্যে বিচল হয় না। বরং; তারা সদা-সর্বদা স্বস্ব কর্তব্যে অবিচল থাকে। অর্থাৎ; প্রমাণিত হলো যে; দেবতাগণ সর্বদা নিজ নিজ কর্তব্যে অবিচল। অর্থাৎ; হাতের কাজ হাত যথাযথভাবে করে। পায়ের কাজ পা যথাযথভাবে করে। চোখের কাজ চোখ যথাযথভাবে করে। নাসিকার কাজ নাসিকা যথাযথভাবে করে। কানের কাজ কান যথাযথভাবে করে। মুখের কাজ মুখ যথাযথভাবে করে। শিশ্নের কাজ শিশ্ন যথাযথভাবে করে। যোনির কাজ যোনি যথাযথভাবে করে। তাই; এসব প্রত্যঙ্গের রূপক নামে দেবতায়ন করে পৌরাণিক দেবতা নির্মাণ করাতে কোনো সমস্যা নেই। তবে; কেবল জ্ঞানের ও মনের কাজ যথাযথভাবে করা নিয়ে বিতর্ক আছে। তাই; এই দুইটি সত্তার রূপক নামে দেবতায়ন করে পৌরাণিক দেবতা সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে অধিক সতর্ক থাকা একান্ত প্রয়োজন।


মানুষের নিকট সর্বদা অবস্থিত দেবতা

(Always located deity of human)

এটা; কারো পক্ষেই সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয় যে; মানুষের নিকট সার্বক্ষণিক অবস্থিত দেবতার সংখ্যা কত? তবে; সারা বিশ্বের সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক মনীষীদের মতে; মানুষের নিকট সার্বক্ষণিকভাবে অবস্থিত দেবতার সংখ্যা অগণিত। কেউই; সঠিক সংখ্যা নিরূপণ করতে সক্ষম হয় নি। কেবল; মরমী কবি লালন সাঁইজি বলেছেন;

“ঊনকোটি দেবতা, সঙ্গে আছে গাঁথা,

            ব্রহ্মা বিষ্ণু শিব নারায়ণ জয় জয় জয়,

সে চাঁদ পাতালে, উদয় ভূমণ্ডলে,

            মহিন্দ্র যোগে সে চাঁদ দেখা যায়।” (পবিত্র লালন- ৯৯৬/২)

এছাড়া; আত্মতাত্ত্বিক মনীষীদের মতে; মানুষের সঙ্গে সার্বক্ষণিকভাবে অবস্থিত  দেবতা সংখ্যা ৯৯টি। অন্যথায়; সাম্প্রদায়িক হিন্দু মনীষীদের মতে; দেবতা সংখ্যা তেত্রিশ কোটি। কিন্তু; মানুষের সাথে সার্বক্ষণিকভাবে কতজন দেবতা অবস্থান করে; আজও; তা হিন্দু মনীষীরা নির্ধারণ করতে পারে নি।

অন্যদিকে; আরবীয় সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক মনীষীদের মতে; দেবতা সংখ্যা অসংখ্য। কিন্তু; মানুষের সাথে সার্বক্ষণিকভাবে কতজন দেবতা অবস্থান করে; আজও; মুসলমান মনীষীরা তা নির্ধারণ করতে পারে নি। তবে; মুসলমান মনীষীরা অনুমান ভিত্তিক বলে যে; মানুষের কাছে সার্বক্ষণিকভাবে বেশকিছু দেবতা অবস্থান করে।

 ইসলামী সাম্প্রদায়িক মতবাদে দেবতাদের সংখ্যা অগণিত। একজন গবেষক কাজের ওপর ভিত্তি করে দেবতাদের চৌদ্দটি শ্রেণিতে ভাগ করেছেন। এদের মধ্যে চার জনকে উচ্চমর্যাদার দেবতা বলা হয়। তারা হলেন; জিব্রাইল, মিকাইল, ইস্রাফিল ও আযরাইল। তবে; সতর্কতা হলো; মুসলমানদের প্রধান চার দেবতাই গ্রিক মিথোলোজি হতে ধার করা। পৌত্তলিক আরবরা ছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ। কিন্তু পরবর্তী আরবরা একেবারেই পরাধীন। তারা বাঙালী, পারসিক ও গ্রিক পৌরাণিক কাহিনীর অনুবাদ করে তাদের নিজেদের নামে চালিয়ে দিয়েছে। বাঙালী, পারসিক ও গ্রিক পৌরাণিক চরিত্রাদি গ্রহণ করার পর; কেবল সেগুলোর বর্ণান্তরণ করেই নিজেদের নামে চালিয়ে দিয়েছে। যেমন; তারা গ্রিক গ্যাবরিল (Gabriel) হতে জিবরিল (جبريل) করেছে; তারা গ্রিক মাইখেল (Michael) হতে মিকাইল (مِيكَائيل) করেছে; তারা গ্রিক সেরাফিম (Seraphim) হতে ইস্রাফিল (اسرافيل) করেছে এবং তারা গ্রিক আখেঞ্জেল (Archangel) হতে আজরাইল (عزرائيل) করেছে। যেমন; তারা বাঙালী পুরাণের মনুর কাহিনী হতে নুহের কাহিনী নির্মাণ করেছে। তারা গ্রিক মহাকবি হোমারের নির্মিত পৌরাণিক এ্যাডাম (Adam) চরিত্র হতে আরবীয় পৌরাণিক আদম (أدم) চরিত্র নির্মাণ করেছে। অনুরূপভাবে; তারা হোমারের পৌরাণিক ইভ (Eve) চরিত্র হতে আরবীয় পৌরাণিক হাওয়া (حواء) চরিত্র নির্মাণ করেছে।

  1. জিবরাইল (جبريل); ঐশিদূত ও সর্বশ্রেষ্ঠ দেবতা। কুরানে এই দেবতার নাম তিনবার উল্লেখ করা হয়েছে। (কুরান; ২ নং সুরা বাকারা; আয়াত৯৭৯৮); (কুরান; ৬ নং সুরা তাহরিম; আয়াত)। সুরা নহল ১০২ আয়াতে জিবরাইল দেবতাকে পবিত্র আত্মা বলা হয়েছে। ঐশিক আদেশ-নিষেধ এবং সংবাদাদি আদান-প্রদানকারী দেবতাদের মধ্যে জিব্রাইল প্রধান। তিনিই নবী-রাসুলদের কাছে ঐশিক সংবাদ আদান-প্রদান করেন।
  2. মিকাইল (مِيكَائيل); কুরানে এই দেবতার নাম একবার মাত্র উল্লেখ করা হয়েছে।তিনি বৃষ্টি প্রদান ও খাদ্য উৎপাদনের দায়িত্বপ্রাপ্ত দেবতা (কুরান; ২ নং সুরা বাকারা; আয়াত ৯৮)
  3. ইসরাফিল (اسرافيل); এই দেবতাবিশ্বের ধ্বংস ঘোষণা করেন (কুরান; ৬৯ নং সুরা হাক্কা; আয়াত ১৩)। এই দেবতার নাম কুরানে উল্লেখ নেই কিন্তু হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে।
  4. আজরাইল(عزرائيل); তাকে কুরানে মালাক আল-মাউত নামে অভিহিত করা হয়েছে (কুরান; ৩২ নং সুরা সিজদা; আয়াত ১১)। ইসলামী সমাজে তিনি মৃত্যুর দেবতা ও প্রাণ হরণকারী দেবতা নামে পরিচিত। এই দেবতার নাম কুরানে উল্লেখ নেই, কিন্তু হাদিসে উল্লেখ আছে।
  5. প্রভুর সিংহাসন বহনকারী দেবতা (মালাক হামালাত আল-আরশ)।
  6. সপ্ত স্বর্গের দেবতাগণ।
  7. তত্ত্বাবধায়ক দেবতাগণ (মালাক আল হাফাজা) (কুরান; ১৩ নং সুরা রাদ; আয়াত ১১)
  8. সমাধির মধ্যে প্রশ্নকারী দেবতাগণ (মুনকির ও নাকির)। (মুনকির; কুরান; ৩ নং সুরা আল ইমরান; আয়াত ১০৪, ১১০, ১১৪) (নাকির; কুরান; ২২ নং সুরা আল হাজ; আয়াত ৪৪ কুরান; ৩৪ নং সুরা সাবা; আয়াত ৪৫ কুরান; ৪২ নং সুরা আশ সুয়ারা; আয়াত ৪৭ কুরান; ৬৭ নং সুরা আল মুলক; আয়াত ১৮)
  9. মালিক (مَالِكُ); জাহান্নাম বা নরক তত্ত্বাবধানকারী দেবতা (কুরান; ৪৩ নং সূরা আয-যুখরফ; আয়াত ৭৭)। (وَنَادَوْا يَا مَالِكُ لِيَقْضِ عَلَيْنَا رَبُّكَ ۖ قَالَ إِنَّكُم مَّاكِثُونَ)।
  10. রেদওয়ান (رِضْوَانٌ) জান্নাত বা স্বর্গ তত্ত্বাবধানকারী দেবতা (কুরান; ৩ নং সুরা আল ইমরান; আয়াত১৫, ১৬২)। এছাড়াও; কুরানের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন অর্থে এই শব্দটির ব্যবহার রয়েছে।
  11. জাবানিয়া (زَبَانِيَةُ); জাহান্নামে দায়িত্ব পালনকারী দেবতা (কুরান; ৯৬ নং সুরা আলাক্ব; আয়াত ১৮)। (سَنَدْعُ الزَّبَانِيَةَ(18))।
  12. নিয়ম শৃঙ্খলা তত্ত্বাবধানকারী দেবতাগণ।
  13. কিরামুন ও কাতিবীন (كِرَامًا كَاتِبِينَ); দুইজন সম্মানিত লেখক দেবতা। যারা প্রত্যেক মানুষের ভালো-মন্দ কর্ম লেখে রাখেন (কুরান; ৮২ নং সুরা ইনফিতার; আয়াত ১১১২)। (كِرَامًا كَاتِبِينَ(١١) يَعْلَمُونَ مَا تَفْعَلُونَ(١٢))
  14. ……..


কোন দুইজন দেবতা মানুষের কৃতকর্মের গণনা গ্রহণ করে? (পৌরাণিক কাহিনী)

(Which two deities takes people’s actions calculation?) (Mythology)

সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মতে; অবশ্যই; মানুষের কর্মফল গ্রহণকারী দেবতা রয়েছে। আরবীয় পুরাণ মতে; মানুষের কর্মফল গ্রহণকারী দেবতা মাত্র দুইজন। এঁরা বিশিষ্ট দেবতাগণের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ। আরবীয় সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক মনীষীরা আরও বলে যে; এই দেবতা দু‘জন মাটির সমাধির মধ্যে মানুষের কর্মফল গ্রহণ করেন। আরবীয় সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক মনীষীদের রূপক বর্ণনা হলো; মানুষের প্রয়াণের পর; যখন; শব সমাধিস্থ করা হয়; তখন; তারা সমাধির মধ্যে প্রবেশ করেন। আবার; তাদের মধ্যে কেউ কেউ এমনও বলে থাকেন যে: শব সমাধিস্থ করে লোকজন চল্লিশ ধাপ সরে যাওয়ার পর; তারা সমাধির মধ্যে উপস্থিত হয়। অতঃপর; মৃতের নিকট থেকে কর্মফল গ্রহণ করা আরম্ভ করেন। আরবীয় পুরাণ মতে; মানুষের কর্মফল গ্রহণকারী দেবতা দুইজন হলেন; ‘মুনকার’ (ﻤﻨﻛﺮ) ও ‘নাকির’ (ﻨﻛﻴﺮ)।

প্রথমে এদের অভিধা জানা একান্ত প্রয়োজন। এখনও; এ উপমহাদেশে, শ্বরবিজ্ঞানের বাঙালী পৌরাণিক রূপক পরিভাষাগুলোর কোনো আধ্যাত্মিক অভিধান প্রণীত হয় নি। তাই; পবিত্র বেদ, রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ, গীতা, ত্রিপিটক, বাইবেল (তৌরাত, যাবুর, ইঞ্জিল, কুরান), হাদিস, তাপসির ও লালন মানুষের নিকট চির অজানাই রয়ে গেছে। সেজন্য; এখানে; ব্যক্তিগত প্রয়াসে যতটুকু সম্ভব; সঠিক অভিধা প্রণয়ন করার প্রাণপণ চেষ্টা করেছি।

মুনকির [ﻤﻨﻛﺮ] (আপৌছ)বিণ বিজ্ঞ, প্রাজ্ঞ, পণ্ডিত, মনীষী, বিদ্বান, চতুর, বুদ্ধিমান বি বিজ্ঞতা, পাণ্ডিত্য, চাতুরি (প্র) আরবীয় সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক মনীষীদের মতে; সমাধির মধ্যে মানুষের কর্মাকর্মের গণনা গ্রহণকারী দেবতা বিশেষ (শ্ববি)  কানাই, অযোধ্যা, কবন্ধ, করঙ্গ, কালনাগিনী, গণ্ডগ্রাম, গোকুল, গোষ্ঠ, চুলা, নাগিনী, নৌকা, পাথর, ব্রজ, রজকিনী, স্রাবস্তী, হিবাচী (প্রাঅ) মাঙ্গ, মার্গ, যোনি, sex, vagina, ফারজ (.ﻔﺮﺝ) (আঞ্চ) গুয়া, সেঁটা, গাঁড় (ইংপ) origin, source (ইদে) মক্কা (.ﻤﻜﺔ), দাজ্জাল (.ﺪﺟﺎﻞ), হামান (.ﻫﺎﻤﺎﻦ), হারুত (আ.ﻫﺎﺭﻮﺓ) (দেপ্র) এটি বাঙালী পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী এর কানাই পরিবারের ইসলামী পৌরাণিক ছদ্মনাম পরিভাষা বিশেষ (সংজ্ঞা) . সাধারণত; আরবীয় সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক মনীষীদের মতে; সমাধির মধ্যে মানুষের কর্মাকর্মের গণনা গ্রহণকারী দেবতা দুইজনের একজনকে বিজ্ঞ বা মুনকির (ﻤﻨﻛﺮ) বলা হয় . শ্বরবিজ্ঞানে; যোনিকে রূপকার্থে বিজ্ঞ বা মুনকির (ﻤﻨﻛﺮ) বলা হয় (বাপৌছ) কালনাগিনী, ধন্বন্তরী, ব্রজপুর ও মরা (বাপৌচা) কবন্ধ, দস্যু, দানব, বরুণ, বৃত্র, মাধাই, রাক্ষস ও হিবাচী (বাপৌউ) অন্ধকূপ, করঙ্গ, চুলা, পাখি ও প্রস্তর (বাপৌরূ) রজকিনী (বাপৌমূ) কানাই {}

নাকির [ﻨﻛﻴﺮ] (আপৌছ)বিণ অজ্ঞ, মূর্খ, অবোধ বি অজ্ঞতা, মূর্খতা, বোকামি (পরি) মন্দ, অধম, বক্রতা (প্র) আরবীয় সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক মনীষীদের মতে; সমাধির মধ্যে মানুষের কর্মাকর্মের গণনা গ্রহণকারী দেবতা বিশেষ (শ্ববি)  বলাই, কামদেব, নারদ, বিম্বল, মদন, মন্মথ, মহাদেব, মাধব, রাবণ, লাঠি, শিব, শুক্রাচার্য, হাত, পা, গাছ, রশি (আঅ) শিশ্ন, বাঁড়া, মেঢ়্র, হোল, penis, জকর (.ﺬﻜﺭ) (আঞ্চ) সোনা, পোতা, ধন (ইদে) আসা (.ﻋَﺼَﺎ), জাকারিয়া (.ﺯﻜﺭﻴﺎ), শিমার (.ﺸﻤﺭ), হাবিল (.ﺤﺎﺒﻞ), মারুত (আ.ﻤﺎﺭﻮﺕ) (গ্রিদে) finger (দেপ্র) এটি বাঙালী পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী এর বলাই পরিবারের বাঙালী পৌরাণিক চারিত্রিক পরিভাষা ও শ্বরবিজ্ঞানের দেবতা বিশেষ (সংজ্ঞা) . সাধারণত; আরবীয় সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক মনীষীদের মতে; সমাধির মধ্যে মানুষের কর্মাকর্মের গণনা গ্রহণকারী দেবতা দুইজনের একজনকে অজ্ঞ বা নাকির (ﻨﻛﻴﺮ) বলা হয় . শ্বরবিজ্ঞানে; পুরুষজাতির শিশ্নকে বলাই বা রূপকার্থে অজ্ঞ বা নাকির (ﻨﻛﻴﺮ) বলা হয় (বাপৌছ) কামগুরু, কিরীটী, বণিক, বাবা, মরা ও শ্রীচরণ (বাপৌচা) অনস্থী, কর্ণ, জগাই, জনক, দৈত্য ও শুক্রাচার্য (বাপৌউ) আঁচল, খুঁটি, গাছ, চরণ, বৈঠা, রশি, লাঠি ও হাত (বাপৌরূ) বিম্বল (বাপৌমূ) বলাই {}

মুনকির নাকির [ﻨﻛﻴﺮ ﻤﻨﻛﺮ] (আপৌছ)বি বিজ্ঞ ও অজ্ঞ, পণ্ডিত ও মূর্খ, চাতুর ও বোকা (পরি) জনিত্র, জননেন্দ্রিয়, কামিন্দ্রিয়, genitalia, ‘عورة’ (আওরা), pudendum, reproductive organ, ‘سوء أو عورة’ (সুয়া আও আওরা), ‘أعضاء تناسلية’ (আ’দা তানাসুলিয়া), ‘الأعضاء التناسلية’ (আল’য়াদা আত্তানাসুলিয়া) (প্র) আরবীয় পুরাণ মতে; মানুষের প্রয়াণোত্তর সমাধির মধ্যে প্রশ্নকারী বিজ্ঞ ও অজ্ঞ নামক দুইজন মহান দেবতা বিশেষ (শ্ববি)  উপস্থ, সেগো, ভগবান, শুম্ভ-নিশুম্ভ, জগাই-মাধাই, কানাই-বলাই, reproducer (ইপ) মাহগির (ফা.ﻤﻫﻰﮔﻴﺭ) (ইদে) হারুত মারুত (.ﻫﺎﺭﻮﺓ ﻤﺎﺭﻮﺓ), হাবিল ক্বাবিল (.ﻗﺎﺑﻞ ﺤﺑﻝ) (দেপ্র) এটি বাঙালী পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী এর উপস্থ পরিবারের ইসলামী পৌরাণিক ছদ্মনাম পরিভাষা ও শ্বরবিজ্ঞানের একটি ‘দুটি দেবতা’ বিশেষ (সংজ্ঞা) শ্বরবিজ্ঞানে শিশ্ন ও যোনিকে একত্রে উপস্থ বা রূপকার্থে বিজ্ঞ-অজ্ঞ বা মুনকির নাকির (ﻨﻛﻴﺮ ﻤﻨﻛﺮ) বলা হয় (বাপৌছ) দ্বাপর (অশ্বদ্বয়, দুইবন্ধু ও দুইভাই) ও ভগবান (বাপৌচা) জনিত্র ও মধুমালা (বাপৌউ) ঘানী (বাপৌরূ) কণ্ডনী (বাপৌমূ) উপস্থ {. মুনকির. ﻤﻨﻛﺮ+ . নাকির. ﻨﻛﻴﺮ}

নাকির [ﻨﻛﻴﺮ] (আপৌছ)বিণ অজ্ঞ, মূর্খ, অবোধ বি অজ্ঞতা, মূর্খতা, বোকামি (পরি) মন্দ, অধম, বক্রতা {}


দেবতা বিষয়ক পৌরাণিক কাহিনীর দেহতাত্ত্বিক ব্যুৎপত্তি

(The theological origin of the myths about the deities.)

আরবীয় সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক মনীষীদের রূপক বর্ণনা মধ্যে; অজ্ঞ-বিজ্ঞ দেবতাগণ মানবদেহে কিভাবে কার্যরত আছেন; এ বিষয়ে সঠিক কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় না। যতটুকু জানা যায়; তার সবই কেবল কাল্পনিক তত্ত্ব। আত্মতাত্ত্বিক বিজ্ঞানীদের মতে; বাঙালী পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী এর অন্তর্ভুক্ত ‘বলাই’ ও ‘মন’কে কেবল অজ্ঞ বলা হয়। তবে; আলোচ্য প্রসঙ্গের ক্ষেত্রে; কোনো ক্রমেই ‘মন’-কে অজ্ঞ বলা প্রযোজ্য নয়। কারণ; এর সত্তা দুটির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং; এর বাহিনী মোট ৩৭ জন। তাই; এক্ষেত্রে মনকে পরিত্যাগ করে কেবল বলাইকেই গ্রহণ করা উচিত।

অন্যদিকে; বিশ্ববিখ্যাত আত্মতাত্ত্বিক মনীষীদের অধিকাংশের মতে; বাঙালী পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী এর বাঙালী পৌরাণিক মূলক সত্তার মধ্যে কানাই’, জ্ঞান’, পালনকর্তা’, ভৃগুসৃষ্টিকর্তা-কে অধিক বিজ্ঞ বলা হয়। তবে; এক্ষেত্রে কোনো ক্রমেই জ্ঞান’, পালনকর্তা’, ভৃগুসৃষ্টিকর্তা-কে গ্রহণ করা যাবে না। কারণ; এ বাঙালী পৌরাণিক মূলক সত্তাগুলো কোনমতেই মানুষের কর্মফল গ্রহণকারী আলোচ্য দেবতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়। তাহলে; অবশিষ্ট থাকে কানাই। এখানে; ‘কানাই’কেই বিজ্ঞ বলা যায়। সুচারুভাবে নিরূপণের পর; বলা যায় যে; আরবীয় সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক মনীষীদের নির্ধারিত ও আলোচ্য; সেই অজ্ঞ-বিজ্ঞ দেবতাই হলেন বলাই কানাই

বলাই কানাই কিভাবে সমাধির মধ্যে মানুষের কর্মফল গণনা গ্রহণকারী দেবতা হতে পারেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়; শ্বরবিজ্ঞানে; সমাধি বলতে মাটির গর্তকে বুঝায় না; বরং; সমাধি বলতে জীবদেহকে বুঝায়। তাই; সর্বদা; ঐশিবাণী নির্মাতা সুমহান রূপকার মনীষীগণ; সমাধি বলতে জীবদেহকে গ্রহণ করে থাকেন। সমাধি বলতে; যদি; জীবদেহ বা মানবদেহকে বুঝায়; তবে ;‘বলাই ও কানাই’ হলেন আমাদের আলোচ্য; সেই অজ্ঞ-বিজ্ঞ দেবতা। আরও স্মরণীয় যে; শ্বরবিজ্ঞানে; মানুষের কর্মফলের গণনা গ্রহণ করা বলতে; কেবল রতীপাত বা শুক্রপাত দায়কেই বুঝায়। মাটির সমাধির মধ্যে গণনা গ্রহণ করা বলতে; জীবন্ত দেহ থাকতে থাকতে আত্মসমালোচনা করা বুঝায়। চল্লিশ ধাপ অতিক্রম করার পর; গণনা গ্রহণ করতে আরম্ভ করা বলতে; জীবনের চল্লিশ বছর অতিক্রম করা বুঝায়। ‘বলাই ও কানাই’ গণনা গ্রহণ করে বলতে; চন্দ্রচেতনা শক্তি ক্রমান্বয়ে শিথিল হওয়া বুঝায়। পরিশেষে বলা যায়; আরবীয় সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক পুরাণে রূপকভাবে বর্ণিত; অজ্ঞ-বিজ্ঞ দেবতা হলেন ‘বলাই-কানাই’; ‘সমাধি’ হলো ‘দেহ’; ‘চল্লিশ ধাপ’ হলো ‘চল্লিশ বছর’; এবং মানুষের ‘কর্মফল’ হলো ‘শুক্র-ক্ষরণ’ দায়।


লেখক দেবতার পৌরাণিক দর্শন

(The mythological philosophy of the writer-angel)

ভারতবর্ষের সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক হিন্দু মনীষীদের মতে; দেবতার সংখ্যা ৩৩ কোটি। বিভিন্ন দেবতা বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত রয়েছে। তারমধ্যে; মাত্র একজন দেবতা নিয়োজিত রয়েছে; মানুষের ভাগ্য ও কৃতকর্ম লেখা; এবং তা যমের নিকট প্রদান করার জন্য। তার নাম হলো চিত্রগুপ্ত। চিত্রগুপ্তের কাল্পনিক কাহিনীটির উদ্ধৃতি নিচে দেওয়া হলো। পাঠ করলেই বুঝা যায় যে; এটি; কাল্পনিক।

চিত্রগুপ্ত দেবতার পৌরাণিক দর্শন

(Mythological philosophy of the Chitragupta (Phallus) deity)

চিত্রগুপ্ত হচ্ছেন যমের কর্মচারী। ব্রহ্মার দেহ হতে এঁর সৃষ্টি। জগৎ সৃষ্টি করার পর, যখন; ব্রহ্মা ধ্যানমগ্ন ছিলেন; তখন; তাঁর দেহ হতে বিভিন্ন বর্ণে চিত্রিত এক পুরুষ মস্যাধার ও লেখনি নিয়ে উদ্ভূত হন। ইনিই ছিলেন ব্রহ্মার পুত্র। জন্মের পর; তিনি ব্রহ্মাকে জিজ্ঞেস করেন যে; আমাকে কী কাজ করতে হবে? যোগনিদ্রা হতে উত্থিত হওয়ার পর; ব্রহ্মা পুত্রকে আদেশ দেন যে; মানুষের পাপুপুণ্য লেখা ও বিচার করার জন্য; চিত্রগুপ্তকে যমালয়ে বাস করতে হবে। আমার কায়া হতে তোমাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এজন্য; এখন হতে তুমি কায়স্থ নামে পরিচিত হবে। এই কায়স্থ দেবতাই মানুষের চিত্রবিচিত্র পাপপুণ্যের গণনা গোপন রাখেন। এজন্য; তাঁকে চিত্রগুপ্ত বলা হয়। চিত্রগুপ্তের ৯টি পুত্রসন্তান জন্মগ্রহণ করেছিল; তাদের নাম ছিল অম্বষ্ঠ, মাথুর, গৌড়, সেনক ও শ্রীবাস্তব্য প্রভৃতি।

চিত্রগুপ্ত মানুষের কার্যক্রম লেখার পাশাপাশি; মানুষের ভাগ্যের শুভাশুভ ফলগুলোও লিখে থাকেন। ভারতীয় সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক মনীষীদের রূপক বর্ণনা মতে; কার্তিক মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে; নবজাতকের ভাগ্য লেখা হয়। এজন্য; সেদিনই ঐ দেবতার পূজা করা হয়। বাঙালী পুরাণে কথিত আছে যে; অভিশপ্ত রাজা সৌদাস চিত্রগুপ্তের পূজা করার পর; তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করে; পাপমুক্ত হয়ে স্বর্গগমন করেন। ঐ তিথিতে ভীষ্ম চিত্রগুপ্তের উপাসনা করে; তাঁর প্রসাদে ইচ্ছামৃত্যু বর প্রাপ্ত হন। যমরাজ পাপীদের যন্ত্রণা দেবার জন্য, চিত্রগুপ্তকে নিযুক্ত করেছিলেন (পৌরাণিক অভিধান)

চিত্রগুপ্ত দেবতার দেহতাত্ত্বিক ব্যুৎপত্তি

(Theological etymology of the Chitragupta (Phallus) deity)

শিশ্ন ও যোনি, অর্থাৎ; বলাই ও কানাই এই দুই দেবতা বিশ্বের সব জীবের চিত্র নির্মাণ করেন। এজন্য; এদের চিত্রগুপ্ত বলা হয়। কুরানে; যাকে ‘ﻜﺭﺍﻤﺎ ﻜﺎﺘﺒﻴﻦ’ (কিরামান কাতিবিন) বা সম্মানিত দেবতা বলা হয়েছে; পুরাণে; তাকে চিত্রগুপ্ত বলা হয়েছে। অর্থাৎ; বাঙালী পুরাণে যাকে চিত্রগুপ্ত বলা হয়েছে; আরবীয় পুরাণে তাকে কিরামান কাতিবিন বলা হয়েছে। মানুষের ভাগ্যলিপি, শুভাশুভ ও কৃতকর্ম লেখক দেবতা বিষয়ে; কুরানে বলা হয়েছে; “كِرَامًا كَاتِبِينَ(১১) يَعْلَمُونَ مَا تَفْعَلُونَ” উচ্চারণ “কিরামাং কাতিবিনা (১১) ইয়া’লামুনা মা তাফয়ালুন (১২)।” “Kiraman katibeena (11) Yalamoona ma tafaloona (12)” অর্থঃ “সম্মানতি লেখকদ্বয় (১১) জানেন তোমরা যা করো (১২)।” “Two honorable writer” (11) They know all that you do (12)” (কুরান, সুরা ইনফতির- ১১-১২)। আর লালন বাণীর মধ্যে চিত্রগুপ্ত ব্যাপারে লেখা আছে নিম্নরূপ।

১.   “প্রেম পাপ কী পুণ্য হয়রে, চিত্রগুপ্ত লেখতে না রে, সিরাজ সাঁইজি কয় লালনরে, তাই জানাই।” (পবিত্র লালন- ৮৯১/৪)

২.   “রূপে নয়ন করে খাঁটি, ভুলে যায় সে নাম মন্ত্রটি, চিত্রগুপ্ত তার পাপ-পুণ্য, কিরূপে লিখে খাতায়।” (পবিত্র লালন- ৮৯০/৩)

এবার; বলা যায় যে; বাঙালী পুরাণে বর্ণিত চিত্রগুপ্তই আরবীয় পুরাণে বর্ণিত ‘ﻜﺭﺍﻤﺎ ﻜﺎﺘﺒﻴﻦ’ (কিরামান কাতিবিন)। আর এই চিত্রগুপ্ত বা ‘ﻜﺭﺍﻤﺎ ﻜﺎﺘﺒﻴﻦ’ (কিরামান কাতিবিন) হচ্ছেন হিন্দুদের ভগবান। ভগবান হলো উপস্থ। আর ভগবান এর বাঙালী পৌরাণিক মূলক সত্তা হলো ‘যোনি-শিশ্ন’।

সন্তান ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে; রোগা হবে নাকি বলিষ্ঠ হবে; এসব লেখে উপস্থ। তাই; শ্বরবিজ্ঞানে; উপস্থকে লেখক দেবতা বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে, বিভিন্ন ভাষায় এর ভিন্ন ভিন্ন নামকরণ করা হয়। তারপর; তার ওপর নরত্বারোপ করে; তাকে ব্যক্তি রূপে পৌরাণিক চরিত্র রূপায়ণ করা হয়। সাধারণ মানুষ পুরাণ সম্পর্কে তেমন জানে না। এজন্য; তারা চিত্রগুপ্ত বা ‘ﻜﺭﺍﻤﺎ ﻜﺎﺘﺒﻴﻦ’ (কিরামান কাতিবিন) দেবতাকে সূক্ষ্মজীব মনে করে থাকে।


দেবতা নির্মাণ কৌশল (Deity construction techniques)

শ্বরবিজ্ঞানের বাঙালী পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণীতে বর্ণিত বাঙালী পৌরাণিক মূলক সত্তা এর রূপক নামে দেবতায়ন করে পৌরাণিক দেবতা নির্মাণ করা; পৌরাণিক মূলক সংখ্যাপৌরাণিক সংখ্যা সূত্রগুলোর সাহায্যে চমৎকার নির্মাণ করা; অতঃপর; দেবতা ও চমৎকার দ্বারা পুরাণ নির্মাণ করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। এটা অত্যন্ত কঠিন সাহিত্য শিল্প। সম্পূর্ণ নতুন একটা দেবতা সৃষ্টি অত্যন্ত দুরূহ কাজ। কখনই; মহাবিজ্ঞ রূপকার ব্যতীত সাধারণ লেখক, গবেষক, বৈখ্যিক ও টৈকিকরা নতুন দেবতা সৃষ্টি করতে পারে না। দেবতা হলো শ্বরবিজ্ঞানের বাঙালী পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণীতে বর্ণিত যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বাঙালী পৌরাণিক মূলক সত্তা এর রূপক নামে দেবতায়িত নাম মাত্র। নতুন নতুন দেবতা নির্মাণ করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু নিয়মাবলী মেনে চলা একান্ত কর্তব্য। যেমন; . নতুন দেবতা নির্মাণের জন্য অবিকল আভিধানিক কোনো শব্দ গ্রহণ করা যাবে না . নতুন দেবতা নির্মাণের উপাদান রূপে আধুনিক প্রযুক্তি বা বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা যাবে না . নতুন দেবতা নির্মাণের জন্য আধুনিক কোনো স্থান বা যন্ত্রপাতির ব্যবহার করা যাবে না।

যতদূর জানা যায়; আজ হতে প্রায় ছয় হাজার (৬,০০০) বছর পূর্বে; সর্বপ্রথম ভারতবর্ষে দেবতা নির্মাণ পৌরাণিক শিল্পটির শুভ সূচনা হয়েছিল। অতঃপর; প্রায় চার হাজার (৪,০০০) বছর পর্যন্ত নিজের স্বকীয়তা ও স্বাধীনতা নিয়ে স্বগৌরবে দাঁড়িয়ে ছিল। তখন; ভারতবর্ষে বিশিষ্ট মনীষী ও রূপকারগণের মধ্যে দেবতা নির্মাণ করার ব্যাপক প্রতিযোগিতা চলতো। এ প্রতিযোগিতা প্রায় পাঁচ হাজার (৫,০০০) বছর পূর্বে আরম্ভ হয়ে; ৪০০ বছর পূর্ব পর্যন্ত চলে এসেছিল। অর্থাৎ; বলা যায়; এ ধারাটি গত ছয় হাজার (৬,০০০) বছর পূর্ব হতে; চারশত (৬,০০০- ৪০০) বছর পূর্ব পর্যন্ত চলে এসেছিল। যারফলে; ভারতবর্ষে নির্মিত হয়েছিল বিশ্ববিখ্যাত বেদ, ত্রিপিটক, রামায়ণ, মহাভারত ও পুরাণের মতো মহাগ্রন্থগুলো। ভারতবর্ষে প্রায় চারশত (৪০০) বছর পূর্বেই; সুযোগ্য রূপকার বা আত্মতাত্ত্বিক মনীষীর অভাবে; দেবতা নির্মাণ করার পৌরাণিক শিল্পটি মারা যায়। যারফলে; সম্পূর্ণ নতুন ও অভিনব মহাগ্রন্থ নির্মাণ করার কাজটিও বন্ধ হয়ে যায়।

উল্লেখ্য; ভারতবর্ষে দেবতা নির্মাণ করার মহান কাজটি অসংখ্য ঋষির মাধ্যমে আরম্ভ হয়েছিল। অর্থাৎ; মহাগ্রন্থ ঋগ্বেদ নির্মাণের দ্বারা তার সূচনা হয়েছিল এবং বেদব্যাস কর্তৃক অষ্টাদশ পূরাণ নির্মাণের মধ্য দিয়ে তা শেষ হয়েছিল। কালের আবর্তন-বিবর্তনে; শিল্পটি ক্রমে ক্রমেই সারা মধ্যপ্রাচ্যেই বিস্তারলাভ করেছিল। উল্লেখ্য; তখন পেশাদার দোভাষী (translator) বা অনুবাদক না থাকার জন্য; দুর্বোধ্য, দুষ্প্রবেশ্য ও দুরধিগম্য পুরাণ ভিন্ন ভাষায় ভিন্ন জাতির বুঝে নিতে প্রায় দুই হাজার (২,০০০) বছর সময় লেগেছিল।

অন্যদিকে; তখন প্রাচীন গ্রিক সম্রাজ্য জুড়ে পুরাণ চর্চা হতো। তাই; সেখানে নির্মিত হয়েছিল ইলিয়াড, ওডিসিঈনিদ। পরবর্তীকালে; গ্রিক সম্রাজ্যে নির্মিত পুরাণ দ্বারাই; মহাগ্রন্থ বাইবেল সংকলিত হয়েছে। পরবর্তীকালে; বাইবেল হতেই তৌরাত, যাবুর, ইঞ্জিল ও কুরানকে ভিন্ন ভিন্ন গ্রন্থ রূপে সংস্কার করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে বাইবেলের আংশিকের নাম তৌরাত, আংশিকের নাম ইঞ্জিল, আংশিকের নাম যাবুর ও আংশিকের নাম কুরান। উল্লেখ্য; গ্রিক অঞ্চলে দেবতা নির্মাণ মহান কাজটি; মহাকবি হোমারের ইলিয়াডওডিসি নামক মহাগ্রন্থ নির্মাণের দ্বারা সূচনা হয়। অতঃপর; সেখানেও অতি উচ্চমানের আধ্যাত্মিক গ্রন্থ বা পুরাণ নির্মাণের ধারা বিগত হাজার বছর (১,০০০) পূর্ব পর্যন্ত টিকে ছিল।

অন্যদিকে; আজ হতে প্রায় চার হাজার (৪,০০০) বছর পূর্বে আরবীয় উপদ্বীপেও; শ্বরবিজ্ঞান, পুরাণের ব্যাপক চর্চা ও অনুশীলনের সূচনা হয়েছিল। তাই; বলা যায়; প্রায় চার হাজার (৪,০০০) বছর পূর্বে আরবীয় অঞ্চলেও দেবতা নির্মাণ করার সূচনা হয়েছিল। এ ধারাটি; গত চার হাজার (৪,০০০) বছর পূর্ব হতে আরম্ভ হয়ে; এক হাজার (৪,০০০- ১,০০০) বছর পূর্ব পর্যন্ত টিকে ছিল। যারফলে; পারস্যে নির্মিত হয়েছিল বিশ্ববিখ্যাত Avesta’ (আভেস্তা) ও মাজদাক মহাগ্রন্থ। অতঃপর; সেখানে আরও নির্মিত হয়েছিল হাদিস, ইসলামের রূপক ইতিহাস, পারস্য রজনীর গল্প ও আরব্য রজনীর গল্প ইত্যাদি। প্রায় এক হাজার (১,০০০) বছর পূর্বেই; পারস্যে সুযোগ্য রূপকার বা আত্মতাত্ত্বিক মনীষীর অভাবে; দেবতা নির্মাণ পৌরাণিক-সাহিত্য শিল্পটি মারা যায়। যারফলে; সেখানেও; সম্পূর্ণ নতুন ও অভিনব মহাগ্রন্থ নির্মাণের কাজটিও বন্ধ হয়ে যায়। সেই সাথে; মহাগ্রন্থ নির্মাণ শিল্পটিও পৃথিবীর বুক থেকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। তাই; এখন; মহামানবদের নরত্বারোপ করে নির্মিত দেবতার ব্যাপারে বলা হয়; তারা কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত নন। বরং; তারা স্বয়ং ঐশ্বিক শিক্ষায় শিক্ষিত।

ভারতবর্ষে নির্মিত দেবতার ক্ষেত্রে; প্রায় সবার গুরুদেবের নাম উল্লেখ করতে দেখা যায়। যেমন; শ্রীকৃষ্ণের গুরুদেব ছিলেন সান্ধিপনী। কিন্তু গ্রিক ও আরবীয় দেবতার ক্ষেত্রে; কারো গুরুদেবের নাম দেখা যায় না। যেমন; আদম, ইসা, মুসা, জাকারিয়া ও মুহাম্মদ ইত্যাদি। আরবীয় অলি-আব্দালরা; তাদের দেবতাগণের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগুরু কিংবা আধ্যাত্মিক দীক্ষা গুরু কারো নামই উল্লেখ করে নি। কুরানে বর্ণিত মুহাম্মদের মহাপরিনির্বাণের পর হতে; আরবীয় অলি-আব্দালদের মধ্যেও; সব দেবতার ক্ষেত্রেই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগুরু ও আধ্যাত্মিক দীক্ষাগুরুর নাম উল্লেখ করতে দেখা যায়। যেমন; বলা হয়; রাবেয়া বসরীর গুরুদেব ছিলেন হাসান বসরী। অন্যদিকে; বাংভারতীয় উপমহাদেশে; রূপকার্থে নির্মিত দেবতার ক্ষেত্রে; প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগুরুর নাম উল্লেখ না থাকলেও; প্রায় ক্ষেত্রেই আধ্যাত্মিক দীক্ষাগুরুর নাম উল্লেখ করতে দেখা যায়। যেমন; মহাত্মা লালন সাঁইজির আধ্যাত্মিক দীক্ষাগুরু মহাত্মা সিরাজ সাঁইজি।

অতীব দুঃখের বিষয় যে; গত প্রায় এক হাজার বছর (১,০০০) পূর্বে; পুরাণ নির্মাণ শিল্পটি পৃথিবীর বুক হতে বিলীন হয়ে যায়। তাই; বলা যায় প্রায় হাজার বছর (১,০০০) পূর্ব হতে অদ্যাবধি আর কোনো উচ্চমাণের পৌরাণিক মহাগ্রন্থ নির্মিত হতে দেখা যায় নি। বর্তমানে যাকিছু নির্মাণ হচ্ছে; তা অবশ্যই বেদ, মহাভারত, রামায়ণ, ত্রিপিটক, বাইবেল (তৌরাত, যাবুর, ইঞ্জিল, কুরান), হাদিস ও ইসলামের রূপক ইতিহাস; এমন কোনো না কোনো মহাকাব্যের অনুকূলে। বিগত হাজার (১,০০০) বছরের মধ্যে; সারাবিশ্বের কোথাও; সম্পূর্ণ স্বাধীন, অনন্য ও অভিনব কোনো মহাগ্রন্থ বা পুরাণ নির্মিত হয় নি। এখানে; মহাগ্রন্থ বলতে বুঝানো হয়েছে; প্রাচীনকালে ভারতবর্ষের সুবিজ্ঞ রূপকার মনীষীদের নির্মিত ব্রহ্মা, বিষ্ণু, হরি, নিতাই, রাম, লক্ষ্মণ, সীতা, গৌর ও গোবিন্দ ইত্যাদি দেবতা দ্বারা লেখা পুস্তক-পুস্তিকা। অন্যদিকে; প্রাচীনকালে পারস্যের সুবিজ্ঞ রূপকার মনীষীদের নির্মিত; আদম, হাওয়া, ইব্রাহিম, নূহ, আল্লাহ, রাসুল ও নবি ইত্যাদি দেবতা দ্বারা লেখা পুস্তক-পুস্তিকা। এবং প্রাচীন গ্রিসের সুবিজ্ঞ রূপকার মনীষীদের নির্মিত Adam, Aphrodite, Apollo Archangel, Aurora, Basilisk, Charon, Chimera, Cloudier, Cockatrice, Cupid, Cyclopean, Demiurge, Devil, Diana, Dragon, Druid, Eve, Graces, Harpy, Harridan, Hag, Hecate, Hellcat, Hercules, Hesperides, Hex, Jove, Jupiter, Lethe, Lithe, Lethe-Lithe, Lucifer, Mermaid, Mammon, Mars, Morpheu, Naiad, Neptune,  Nymph, Nereid, Nymph, Nymphet, Oceanid, Oceanus, Oneiros, Orpheus, Oubliette, Phoebus, Satyr, Styx, Titan, Titanic, Vampire, Venus, Vesper, Witch, Wraith, Yahoo, Zephyr & Zeus ইত্যাদি দেবতা দ্বারা লেখা পুস্তক-পুস্তিকা।

কেউ প্রশ্ন করতে পারে যে; প্রাচীনকালে নির্মিত পরিভাষাগুলো ব্যতীত বর্তমানের লেখক ও গবেষকগণ আরও নতুন নতুন পরিভাষা পাবে কোথায়? এমন প্রশ্নের উত্তর হলো; পূর্বকালের রূপকাররা যেখানে পেয়েছিল; এরাও সেখানে পাবে। এখনও সেখানে; অসংখ্য নতুন নতুন পরিভাষা, অভিনব তথ্য ও আধুনিক গবেষণার অগণিত বিষয়বস্তু বিদ্যমান রয়েছে। সর্বকালের সর্ববৃহৎ সে জ্ঞান-ভাণ্ডার বা শব্দভাণ্ডার হচ্ছে মানবদেহ। মানবদেহ হতে অনন্তকাল নতুন নতুন বিষয়বস্তু, শক্তি ও অবস্থা আবিষ্কার হতেই থাকবে; এবং তা নিয়ে নিত্য নতুন দেবতা ও চমৎকার নির্মাণ হতেই থাকবে। বাস্তবেও দেখা যায়; আত্মদর্শনের মতো এত বড় জ্ঞান-ভাণ্ডার বিশ্বে আর নেই।

এখন বলা যায় যে; যতদিন পর্যন্ত; প্রাচীনকালের মতো গবেষকরা ও অনুসন্ধানীরা; আবারও আত্মদর্শনে প্রবেশ না করবে; ততদিন পর্যন্ত; প্রাচীনকালের সুমহান কাব্যগুলোর মতো অনুপম, অনন্য, অমর ও অনন্ত মহান কাব্য নির্মাণ করতেও পারবে না। আরও উল্লেখ্য যে; আত্মতত্ত্ব ভালোভাবে না জেনে; কখনই; বিশ্বের কোনো মনীষীই ম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক মহাগ্রন্থ হতে; বিশ্ববাসীর জন্য বাস্তব কল্যাণমুখী ও হিতকর শিক্ষা উদ্ধার করতে পারবে না। ঠাকুর, পুরোহিত, পাদরী, ভিক্ষু, অর্হৎ ও আলিমরা; মহাগ্রন্থগুলোর যেসব চমৎকার বর্ণনা করে; যার যার অনুসারীদের শোনায়; তার বাস্তবমুখী ও কল্যাণমূলক কোনো শিক্ষা; তারা জাতির নিকট তুলে ধরতে সক্ষম হন নি। যারফলে; প্রতিটি সাম্প্রদায়িক মতবাদের মধ্যে আধ্যাত্ববাদী মতবাদের উদ্ভব হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে; তারাই পারম্পরিক নামে পরিচিত। পারম্পরিক, আত্মতাত্ত্বিক ও আধ্যাত্মিক সাধু সন্ন্যাসীগণই একমাত্র পুরাণ বা পৌরাণিক জ্ঞানের প্রকৃত ধারক ও বাহক। তাই; তারাই প্রকৃত শ্বরবিজ্ঞানী।

তথ্যসূত্র (References)

(Theology's number formula of omniscient theologian lordship Bolon)

১ মূলক সংখ্যা সূত্র (Radical number formula)
"আত্মদর্শনের বিষয়বস্তুর পরিমাণ দ্বারা নতুন মূলক সংখ্যা সৃষ্টি করা যায়।"

রূপক সংখ্যা সূত্র (Metaphors number formula)

২ যোজক সূত্র (Adder formula)
"শ্বরবিজ্ঞানে ভিন্ন ভিন্ন মূলক সংখ্যা-সহগ যোগ করে নতুন যোজক রূপক সংখ্যা সৃষ্টি করা যায়; কিন্তু, গণিতে ভিন্ন ভিন্ন সংখ্যা-সহগ যোগ করে নতুন রূপক সংখ্যা সৃষ্টি করা যায় না।"

৩ গুণক সূত্র (Multiplier formula)
"শ্বরবিজ্ঞানে এক বা একাধিক মূলক-সংখ্যার গুণফল দ্বারা নতুন গুণক রূপক সংখ্যা সৃষ্টি করা যায়; কিন্তু, মূলক সংখ্যার কোন পরিবর্তন হয় না।"

৪ স্থাপক সূত্র (Installer formula)
"শ্বরবিজ্ঞানে; এক বা একাধিক মূলক সংখ্যা ভিন্ন ভিন্ন ভাবে স্থাপন করে নতুন স্থাপক রূপক সংখ্যা সৃষ্টি করা যায়; কিন্তু, মূলক সংখ্যার কোন পরিবর্তন হয় না।"

৫ শূন্যক সূত্র (Zero formula)
"শ্বরবিজ্ঞানে মূলক সংখ্যার ভিতরে ও ডানে শূন্য দিয়ে নতুন শূন্যক রূপক সংখ্যা সৃষ্টি করা যায়; কিন্তু, মূলক সংখ্যার কোন পরিবর্তন হয় না।"

< উৎস
[] উচ্চারণ ও ব্যুৎপত্তির জন্য ব্যবহৃত
() ব্যুৎপত্তির জন্য ব্যবহৃত
> থেকে
√ ধাতু
=> দ্রষ্টব্য
 পদান্তর
:-) লিঙ্গান্তর
 অতএব
× গুণ
+ যোগ
- বিয়োগ
÷ ভাগ

Here, at PrepBootstrap, we offer a great, 70% rate for each seller, regardless of any restrictions, such as volume, date of entry, etc.
There are a number of reasons why you should join us:
  • A great 70% flat rate for your items.
  • Fast response/approval times. Many sites take weeks to process a theme or template. And if it gets rejected, there is another iteration. We have aliminated this, and made the process very fast. It only takes up to 72 hours for a template/theme to get reviewed.
  • We are not an exclusive marketplace. This means that you can sell your items on PrepBootstrap, as well as on any other marketplate, and thus increase your earning potential.

পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী

উপস্থ (শিশ্ন-যোনি) কানাই,(যোনি) কামরস (যৌনরস) বলাই (শিশ্ন) বৈতরণী (যোনিপথ) ভগ (যোনিমুখ) কাম (সঙ্গম) অজ্ঞতা অন্যায় অশান্তি অবিশ্বাসী
অর্ধদ্বার আগধড় উপহার আশ্রম ভৃগু (জরায়ুমুখ) স্ফীতাঙ্গ (স্তন) চন্দ্রচেতনা (যৌনোত্তেজনা) আশীর্বাদ আয়ু ইঙ্গিত ডান
চক্ষু জরায়ু জীবনীশক্তি দেহযন্ত্র উপাসক কিশোরী অতীতকাহিনী জন্ম জ্ঞান তীর্থযাত্রা দেহাংশ
দেহ নর নরদেহ নারী দুগ্ধ কৈশোরকাল উপমা ন্যায় পবিত্রতা পাঁচশতশ্বাস পুরুষ
নাসিকা পঞ্চবায়ু পঞ্চরস পরকিনী নারীদেহ গর্ভকাল গবেষণা প্রকৃতপথ প্রয়াণ বন্ধু বর্তমানজন্ম
পালনকর্তা প্রসাদ প্রেমিক বসন পাছধড় প্রথমপ্রহর চিন্তা বাম বিনয় বিশ্বাসী ব্যর্থতা
বিদ্যুৎ বৃদ্ধা মানুষ মুষ্ক বার্ধক্য মুমুর্ষুতা পুরুষত্ব ভালোবাসা মন মোটাশিরা যৌবন
রজ রজপট্টি রজস্বলা শুক্র মূত্র যৌবনকাল মনোযোগ রজকাল শত্রু শান্তি শুক্রপাত
শুক্রপাতকারী শ্বাস সন্তান সৃষ্টিকর্তা শুক্রধর শেষপ্রহর মূলনীতি সন্তানপালন সপ্তকর্ম স্বভাব হাজারশ্বাস
ADVERTISEMENT
error: Content is protected !!