১১/০৩. দৈববাণী
Oracle (ওরাকল)/ ‘شهيق’ (শাহিক্ব)

ভূমিকা (Prolegomenon)
এটি ‘বাঙালী পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী’ এর ‘ইঙ্গিত’ পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ একটি ‘বাঙালী পৌরাণিক উপমান পরিভাষা’। এর ‘বাঙালী পৌরাণিক মূলক সত্তা’ ‘ইঙ্গিত’। এর ‘বাঙালী পৌরাণিক রূপক পরিভাষা’ ‘প্রত্যাদেশ’। এর অন্যান্য উপনাম পরিভাষা ‘ঐশিবাণী ও প্রতিভাস’। এর ‘বাঙালী পৌরাণিক চারিত্রিক পরিভাষা’ ‘গীর্বাণ, বলন ও সুবোল’ এবং এর ‘বাঙালী পৌরাণিক ছদ্মনাম পরিভাষা’ ‘অবতার, ঐশিদূত ও দীপন’।

অভিধা (Appellation)
দৈববাণী (বাপৌউ)বি ঐশিবাণী, স্বর্গীয় বাণী, oracle, ‘شهيق’ (শাহিক্ব) (পরি) মানবদেহ হতে প্রকাশিত শুভাশুভ লক্ষণ (শ্ববি) ইঙ্গিত, চিহ্ন, লক্ষণ, কম্পন, স্পন্ধন, সঙ্কেত, wink, hint, ইশারা (আ.ﺍﺸﺎﺭﺓ) (ইপ) খবর (আﺨﺑﺮ.) (বাদে) গীর্বাণ, গীষ্পতি (ইংপ) orator, speaker (ইদে) জিব্রাইল (আ.ﺠﺑﺮﺍﺌﻴﻞ) (দেপ্র) এটি ‘বাঙালী পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী’ এর ‘ইঙ্গিত’ পরিবারের ‘বাঙালী পৌরাণিক উপমান পরিভাষা’ বিশেষ (সংজ্ঞা) ১. সাধারণত; সাম্প্রদায়িক মনীষীদের মতে; স্রষ্টা দেবতা-প্রেরিত বাণীকে দৈববাণী বলা হয় ২. বাঙালী শ্বরবিজ্ঞানে ও বাঙালী পুরাণে, মানবদেহে প্রকাশিত সর্বপ্রকার ইঙ্গিতকে রূপকার্থে বাংলায় দৈববাণী বলা হয় (বাপৌছ) অবতার, ঐশিদূত ও দীপন (বাপৌচা) ‘গীর্বাণ, বলন ও সুবোল (বাপৌউ) ঐশিবাণী, দৈববাণী ও প্রতিভাস (বাপৌরূ) প্রত্যাদেশ (বাপৌমূ) ইঙ্গিত {বাং.দৈব+ বাং.বাণী}

দৈববাণীর ১টি গুরুত্বপূর্ণ উদ্ধৃতি (A highly important quotations of oracle)
“এ দেহে ইঙ্গিত বুঝাতে, বাণী লিখে মতবাদ পুস্তকে, গ্রন্থ তামামী- ঐশিবাণী, গোঁসাই কয় কাঁই কথন।” (বলন তত্ত্বাবলী- ১২৪)।

দৈববাণীর সংজ্ঞা (Definition of oracle)
সাধারণত; সাম্প্রদায়িক মনীষীদের মতে; স্রষ্টা দেবতা-প্রেরিত বাণীকে দৈববাণী বলে।

দৈববাণীর আধ্যাত্মিক সংজ্ঞা (Theological definition of oracle)
বাঙালী শ্বরবিজ্ঞানে ও বাঙালী পুরাণে; সর্বপ্রকার দৈহিক সঙ্কেতকেই দৈববাণী বলে।

দৈববাণীর প্রকারভেদ (Variations of oracle)
বাঙালী শ্বরবিজ্ঞানে ও বাঙালী পুরাণে; দৈববাণী তিন প্রকার। যথা; ১. কায়িক দৈববাণী ২. বাচনিক দৈববাণী ও ৩. লিখিত দৈববাণী।

১. কায়িক দৈববাণী (1. Corporeal oracle)
শ্বরবিজ্ঞানে; মানবদেহে প্রকাশিত সর্বপ্রকার ইঙ্গিতকে কায়িক দৈববাণী বলে।

২. বাচনিক দৈববাণী (2. Oral oracle)
বাঙালী শ্বরবিজ্ঞানে ও বাঙালী পুরাণে; মুখ দ্বারা প্রকাশিত আত্মদর্শন বিষয়ক সর্বপ্রকার বাণীকেই বাচনিক দৈববাণী বলে।

৩. লিখিত দৈববাণী (3. Written oracle)
সাধারণত; আত্মতাত্ত্বিক বিজ্ঞানী ও মরমী কবিগণের নির্মিত আত্মদর্শন বিষয়ক বাণীকেই লিখিত দৈববাণী বলে। যেমন; আধ্যাত্মিক গান, গীতি ও বাণী ইত্যাদি।

লিখিত দৈববাণীর বৈশিষ্ট্য (Feature of written oracle)

ঐশিবাণী অর্থ দেবতাগণের কথা। শ্বরবিজ্ঞানে; মানবদেহের সব প্রত্যঙ্গের ইঙ্গিতকেই ঐশিবাণী বলা হয়। এখানে বিশেষভাবে স্মরণীয় যে; ঐশিবাণী রূপে পরিচিত সাম্প্রদায়িক গ্রন্থাদি মানুষেই নির্মাণ করেছে। অর্থাৎ; মানুষের লিখিত বাণীকেই দৈববাণী বলা হয়। তবে; সাধারণ বাণী ও দৈববাণীর মধ্যে বেশকিছু পার্থক্য রয়েছে। দৈববাণীর যেসব গুণ থাকা প্রয়োজন তা হলো;

১.    দৈববাণী অবশ্যই রূপকভাবে নির্মিত হয়।
২.   দৈববাণী অবশ্যই দেহতাত্ত্বিক হতে হয়।
৩.   দৈববাণী বিশ্ববাসীর কল্যাণমূলক হতে হয়।
৪.   দৈববাণী সার্বজনীন ও সর্বকালীন হতে হয়।

উপরোক্ত ৪টি গুণ বা বৈশিষ্ট্য সম্বলিত সব বাণীকেই দৈববাণী বলা হয়। বাঙালী মরমী সাধক লালন সাঁইজি নির্মিত প্রতিটি লালনের মধ্যেই দৈববাণী হওয়ার ৪টি গুণ পরিপূর্ণ রূপেই বিদ্যমান। এজন্য; অনায়াসে লালনগুলোকে ঐশিবাণী, স্বর্গীয় বাণী বা দৈববাণী বলা যায়। অনুরূপভাবে; মরমী কবি জালাল খাঁ, রাধারমণ, দীনহীন ও বলন কাঁইজি নির্মিত মরমী বাণীগুলোকেও নিশ্চিত দৈববাণী বা ঐশিবাণী বলা যায়।

অবার, অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলো; সারাবিশ্বের অধিকাংশ সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক মনীষী মানুষের লিখিত দৈববাণীকে বিধাতা প্রদত্ত বাণী মনে করে। আর সেজন্যই; সমাজে সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদের সৃষ্টি হয়েছে।

আবার, বাঙালী শ্বরবিজ্ঞানে ও বাঙালী পুরাণে; দৈববাণী দুই প্রকার। যথা ১. উপমান দৈববাণী ও ২. উপমিত দৈববাণী।

১. উপমান দৈববাণী (Analogical oracle)
সাম্প্রদায়িক মনীষীদের মতে; স্রষ্টা দেবতা-প্রেরিত বাণীকে উপমান দৈববাণী বলে।

২. উপমিত দৈববাণী (Compared oracle)
বাঙালী শ্বরবিজ্ঞান ও বাঙালী পুরাণ মতে; মরমী ও দেহতাত্ত্বিক মনীষীদের নির্মিত; আত্মদর্শ বিষয়ক সর্বজনীন ও সর্বকালীন রূপক বাণী ও মানবদেহে প্রকাশিত সর্ব প্রকার ইঙ্গিতকেই উপমিত দৈববাণী বলে। যেমন; আধ্যাত্মিক গান, জ্বর, ঠাণ্ডা ও দেহের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গের কোষগুচ্ছের কম্পন ইত্যাদি।

দৈববাণীর পরিচয় (Identity of oracle)
এটি ‘বাঙালী পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী’ এর ‘ইঙ্গিত’ পরিবারের একটি ‘বাঙালী পৌরাণিক উপমান পরিভাষা’ বিশেষ। সারাবিশ্বের সর্বপ্রকার সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক পুস্তক-পুস্তিকায় এর ন্যূনাধিক ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। তবে; এ পরিভাষাটি একেক গ্রন্থে একেক ভাষায় ব্যবহৃত হওয়ার কারণে; সাধারণ পাঠক-পাঠিকা ও শ্রোতাদের তেমন দৃষ্টিগোচর হয় না। দৈববাণী অর্থ দেবতাগণের ইঙ্গিত। শ্বরবিজ্ঞানে; মানবদেহের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ইঙ্গিতকেই দৈববাণী বলা হয়। কিন্তু; মজার বিষয় হলো; অন্ধবিশ্বাসী সাম্প্রদায়িকরা এখানো মনে করে যে; আড়ালে থেকে বিধাতা হয়তো বাণীগুলো প্রেরণ করেন। তারা এখনও জানে না যে; দৈববাণী রূপে পরিচিত সাম্প্রদায়িক গ্রন্থাদি মানুষই নির্মাণ করেছে। দৈববাণী বলতে হিন্দুদের একদল বেদকে, আরেক দল গীতাকে, বৌদ্ধরা ত্রিপিটককে, খ্রিস্টানরা ইঞ্জিলকে, মুসলমানরা কুরানকে, লালনীয়রা লালনকে এবং বলনীয়রা বলনকেই বুঝে থাকে। এসব দৈববাণী যে মানুষের দ্বারা নির্মিত; তা হয়তো এখনও সাম্প্রদায়িক মনীষীদের মাথায় প্রবেশ করে নি। এ ব্যাপারে বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলাম বলেছেন; “পুজিছে গ্রন্থ ভণ্ডের দল মূর্খরা সব শোন, মানুষ এনেছে গ্রন্থ সকল গ্রন্থ আনে নি মানুষ কোনো”। অতঃপর; বাঙালী মহামানব লালন সাঁইজি লিখেছেন; “একেক দেশে একেক বাণী, পাঠান কী সাঁই গুণমনি, এসব মানুষের রচিত জানি, লালন ফকির কয়।” (পবিত্র লালন- ৩০৩/৪)। প্রকৃত বিষয় হলো; পৌরাণিক রূপক বর্ণনাকেই দৈববাণী বলা হয়। দৈববাণী সবই মানুষের নির্মিত।