২৫/০২. ধ্যান
Meditation (মেডিটেশন)/ ‘تأمل’ (তা’মুলু)

ভূমিকা (Prolegomenon)
এটি ‘বাঙালী পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী’ এর ‘চিন্তা’ পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ একটি ‘বাঙালী পৌরাণিক ছদ্মনাম পরিভাষা’। এর ‘বাঙালী পৌরাণিক মূলক সত্তা’ ‘চিন্তা’। এর ‘বাঙালী পৌরাণিক রূপক পরিভাষা’ ‘যোগ’। এর ‘বাঙালী পৌরাণিক উপমান পরিভাষা’ ‘স্বপ্ন’ এবং এর ‘বাঙালী পৌরাণিক চারিত্রিক পরিভাষা’ ‘স্বপন’। পরিভাষাটি শ্বরবিজ্ঞানের ‘চিন্তা’ ও ‘গবেষণা’ ইত্যাদি ‘বাঙালী পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী’তে বর্ণিত ‘বাঙালী পৌরাণিক মূলক সত্তা’র ব্যাপক পরিভাষা রূপে ব্যবহৃত হয়। এজন্য; বর্ণনার ক্ষেত্র অনুযায়ী এর সঠিক দেহতাত্ত্বিক ব্যুৎপত্তি উদ্ঘাটন করা একান্ত প্রয়োজন।

ধ্যান (বাপৌছ)বি চিন্তা, স্মরণ, ভাবনা, কল্পনা, ধারণা, ব্যাখ্যা, সংজ্ঞা, গভীর চিন্তা, কোনো বিষয়ে প্রগাঢ় ভাবনা, কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে মনোনিবেশ, meditation, ‘تأمل’ (তা’মুলু), thought (প্র) অনন্য মনে অত্যন্ত নিবিষ্টভাবে একাগ্রচিত্তে কোনো বিষয় চিন্তা, অভিনিবেশ সহকারে মনন বা স্মরণ (শ্ববি) চিন্তা, উদ্বেগ, স্বপ্ন (ইপ) ফিকির (আ.ﻔﻜﺮ), গাম্ম (আ.ﻏﻢ), হাম্ম (আ.ﻫﻢ) (দেপ্র) এটি ‘বাঙালী পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী’ এর ‘চিন্তা’ পরিবারের ‘বাঙালী পৌরাণিক ছদ্মনাম পরিভাষা’ বিশেষ (সংজ্ঞা) ১. সাধারণত; চক্ষু বন্ধ করে চিন্তা করাকে ধ্যান বলা হয় ২. বাঙালী শ্বরবিজ্ঞানে ও বাঙালী পুরাণে, আত্মতত্ত্ব বিষয়ক গবেষণাকে রূপকার্থে ধ্যান বলা হয় (বাপৌছ) ধ্যান (বাপৌচা) স্বপন (বাপৌউ) স্বপ্ন (বাপৌরূ) যোগ (বাপৌমূ) চিন্তা।অভিধা (Appellation)

ধ্যানের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্ধৃতি (Some highly important quotations of meditation)
১.   “আমি কী সাধনে পাই গো তারে, ব্রহ্মা বিষ্ণু ধ্যানে পায় না যারে।” (পবিত্র লালন- ১৪৭/১)।
২.   “কিঞ্চিৎ ধ্যানে মহাযোগ, সে তুলনা কী আর দেবো, লালন বলে গুরু ভাবো, যাবে সব ধোঁকা।” (পবিত্র লালন- ৭০৩/৪)।
(মুখ; “বেদে নাই যার রূপরেখা, পাবে সামান্যে কী তারে দেখা”)।
৩.   “গুরুর নাম লইয়া তুই, বস না ধ্যানে, মন তোর এত ভাবনা, কী কারণে।” (পবিত্র লালন- ৪০৮/১)।
৪.   “টলে জীব অটলে ঈশ্বর, তাতে কী হয় রসিকনাগর, লালন কয় রসিক বিভোর, রস-ধ্যানে।” (পবিত্র লালন- ৯৭০/৪)।
(মুখ; “সে ভাব সবাই কী জানে, যেভাবে শ্যাম আছে বাঁধা, গোপীর সনে”)।
৫.   “মেঘপানে চাতকের ধ্যান, অন্য জল করে না পান, লালন কয় জগতে প্রমাণ, ভক্তির শ্রেষ্ঠ ভক্তি।” (পবিত্র লালন- ৩১৮/৪)।
(মুখ; “কী হয় যেন আমার গতি, এত জেনে এত শুনে, ঠিক হয় না মনের মতি”)।

ধ্যানের কয়েকটি সাধারণ উদ্ধৃতি (Some ordinary quotations of meditation)
১.   “উজান ভাটি পথ দুটি, দেখ ধ্যান করে খাঁটি, দাও যদি অযথা কাটি, কূল পাবা না।” (পবিত্র লালন- ৮২৭/৩)।
২.   “এক পিরিতে ভবানীর সনে, মজেছিল পঞ্চাননে, নাম রইল ত্রিভুবনে, কিঞ্চিৎ-ধ্যানে মহাদেব সিদ্ধি।” (পবিত্র লালন- ৬৩৪/৩)।
৩.   “একবার বসে দেখ ধ্যানে ভাই, জীবনবেলা আর অধিক নাই, বলন কয় হাইরে হায়ঃ, শেষে কাঁদলে সারবে না।” (বলন তত্ত্বাবলী- ১৯৩)।
৪.   “ঐরূপ দেখে দিনের নবি, ধ্যানে মগ্নে দেখে ছবি, নূর তাজাল্লি ভুলে রবি, ছুটে পালায় মদিনায়।” (পবিত্র লালন- ৩১২/২)।
৫.   “কী সাধনে পাই গো তারে, যার নাম অধর এ সংসারে, মুনি ঋষি হন্নে হলো, যার ধ্যান করে।” (পবিত্র লালন- ৩১৭/১)।
৬.   “গুরুর মুখে শুনি, খায় না কোনো দানাপানি, লালন বলে কিঞ্চিৎ-ধ্যানী, সবুজ রঙ তার গায়েতে।” (পবিত্র লালন- ২৬১/৪)।
৭.   “গুরু রূপ যে ধ্যানে রয়, কী করবে তারে শমন রায়, নেচে গেয়ে ভব পারে যায়, সে গুরুর চরণ-তরীতে।” (পবিত্র লালন- ২৩৯/২)।
৮.   “চাতক করে মেঘের ধ্যান, অন্য বারি করে না পান, ফকির লালন কয় প্রবর্ত প্রমাণ, সাঁইজি সিরাজ যা করে।” (পবিত্র লালন- ৩৪৬/৪)।
৯.   “চার ভেঙ্গে দুই হলো পাকা, সে দুই বজরক্ব লেখাজোখা, তাতে পড়ল আরেক ধোঁকা, একমন দুই করি কী ধ্যানে।” (পবিত্র লালন- ৫৯৬/৩)।
১০. “চেনে না যশোদা-রাণী, গোপাল কী সামান্য ছেলে, ধ্যানে যারে পায় না মুনি।” (পবিত্র লালন- ৪৫০/১)।
১১.  “জাহির নাই বেদ কুরানে, আছে অজুদ মুক্বামে, ঐক্য হয় যার মনে ধ্যানে, যার নাম সাঁই কয়।” (পবিত্র লালন- ১৯৬/৩)।
১২.  “তোমার লীলা তোমার বোল, তোমার ধ্যান তোমার মহল, লালন বলে ওহে দয়াল, এখন বুঝি প্যাঁচ পড়েছে।” (পবিত্র লালন- ৫৮০/৪)।
১৩. “দিবানিশি থাকো মন ঐ ধ্যানে, যার প্রতি হয় গুরুর দয়া, বিবাদ নাই তার কোনো খানে।” (পবিত্র লালন- ৫২২/১)।
১৪. “ধ্যান-যোগে তোমায় দেখি, তুমি সখা আমি সখী, মম হৃদমন্দিরে থাকি, স্বরূপ দাও গো দর্শন।” (পবিত্র লালন- ২৩৬/৩)।
১৫. “ধ্যানী জ্ঞানী মানীজনা, প্রেমের খাতায় সহি পড়ে না, প্রেম পিরিতির উপাসনা, বেদে পাই।” (পবিত্র লালন- ৮৯১/৩)।
১৬.  “ধ্যানে যারে পায় না মহামুনি, ফিরে সে অধর-চাঁদ মোর, মীন রূপে সে স্বরূপ-পানি।” (পবিত্র লালন- ৫৬৮/১)।
১৭. “ধ্যানে যারে পায় না মুনি, সে নিগমে অগম্য-ধ্বনি, কেউ সাঁই পায়রে শুনি, গুরু কৃপায় ভবের ’পরে।” (বলন তত্ত্বাবলী- ২৪১)।
১৮. “নবুয়তে অদেখা ধ্যান, বিলায়েতে রূপের নিশান, নজর এদিকে যায়- ঐদিক আঁধার হয়, দুই রূপের কোন রূপ ঠিক ধরি।” (পবিত্র লালন- ২০৫/৩)।
১৯.  “বনের পশু হনুমান, রাম বিনা তার নাই ধ্যান, মুদিলেও তার দুই নয়ন, অন্য রূপ ফিরে না চায়।” (পবিত্র লালন- ৫০/৩)।
২০. “বহু বেদ পড়াশুনা, সম্বিতে পায়রে মনা, সদা শিব যোগী কিনা, সদাই ধ্যান-যজ্ঞ করে, শ্মশানে মশানে- ফিরে সর্বখানে, কিঞ্চিতের লাগিয়ে।” (পবিত্র লালন- ৫০৬/৪)।
২১.  “বান এলে প্রেম-যমুনায়, ধ্যান রাখলে মণিকোঠায়, বলন কাঁইজি বলে তাই, পাবি সে জল কৌশলে।” (বলন তত্ত্বাবলী- ১১৬)।
২২. “মনটা যাতে রাজি হয়, ধ্যানটা তাতে আপনি যায়, পাথর দেখে শোলার মতো, বেগার ঠেলা- ঢেঁকি গিলা, টাকশালে সহি নাই তো।” (পবিত্র লালন- ১৯৩/২)।
২৩. “যদি কেউ হয় চক্ষুষ্মান, সে দেখে সে রূপ বর্তমান, লালন কয় তার জ্ঞান-ধ্যান, হরি দেখার পুঁতিমালা।” (পবিত্র লালন- ৩৪৪/৪)।
২৪. “যারে ধ্যানে পায় না মহামুনি, আছে সে অচিন-মানুষ মীন রূপ পানি।” (পবিত্র লালন- ৮২২/১)।
২৫. “যোগিন্দ্র মণিন্দ্র যারে, পায় না যোগ ধ্যান করে, সে কৃষ্ণ গোপীর দরে, হয়েছে কিনা।” (পবিত্র লালন- ৮৫০/৩)।
২৬. “যোগী ঋষি মুনিগণে, বসে থাকে যোগ ধ্যানে, শুদ্ধ অনুরাগী বলে, পেয়েছে কেলেসোনা।” (পবিত্র লালন- ৬৪৯/৩)।
২৭. “রসের ধ্যান যে করেছে, গুরুকৃপা সে পেয়েছে, কারণ্য-বারি তাতে বইছে, অটলবিহারী রয়েছে সে, লালন বলে মরিমরি, মনেরে বুঝাই কী ছলে।” (পবিত্র লালন- ৬৮৭/৪)।
২৮. “রাধার কথা কী বলবো মা, তার গুণের নাই সীমা, মুনি ঋষি ধ্যানী-জ্ঞানী, না পেল তার চরণকমলে।” (পবিত্র লালন- ৮৮১/২)।
২৯. “লালন বলে রূপ নয়নে, আছে যেজন যোগ–ধ্যানে, কাজ কিরে তার লোক জানানে, সে সাধন করে নির্জনে।” (পবিত্র লালন- ৯৫৩/৪)।
৩০. “সবে বলে কিঞ্চিৎ-ধ্যানী, গণ্য সে হয় শূলপাণি, লালন বলে কবে আমি, হব তেমনি।” (পবিত্র লালন- ৪৪৫/৪)।
৩১. “শূন্য-ধ্যানের ধ্বজা স্বরূপ, তারে ভাব বিরূপ, সিরাজ সাঁইজি বলেরে রূপ, সাধবি লালন কী করে।” (পবিত্র লালন- ৯৭৯/৪)।
৩২. “সহজ-প্রেমে ডুবনা রে মন, কী কারণে, ডুবলে পাবা সোনার-মানুষ, আছেরে যোগ-ধ্যানে।” (পবিত্র লালন- ৯২৭/১)।
৩৩. “সে যে রাধার কী মহিমা, বেদে দিতে নারে সীমা, ধ্যানে যারে পায় না ব্রহ্মা, কিরূপ জানলি সে রাধারে।” (পবিত্র লালন- ৬৭২/২)।

ধ্যানের সংজ্ঞা (Definition of meditation)
সাধারণত; চক্ষু বন্ধ করে বসে থাকাকে ধ্যান বলে।

ধ্যানের আধ্যাত্মিক সংজ্ঞা (Theological definition of meditation)
বাঙালী শ্বরবিজ্ঞানে ও বাঙালী পুরাণে; আত্মতত্ত্ব-দর্শন গবেষণাকে ধ্যান বলে।

ধ্যানের প্রকারভেদ (Variations of meditation)
বাঙালী শ্বরবিজ্ঞানে ও বাঙালী পুরাণে; ধ্যান দুই প্রকার। যথা; ১. উপমান ধ্যান ও ২. উপমিত ধ্যান।

১. উপমান ধ্যান (Analogical meditation)
সাধারণত; চক্ষু বন্ধ করে চিন্তা করাকে উপমান ধ্যান বলে।

২. উপমিত ধ্যান (Compared meditation)
বাঙালী শ্বরবিজ্ঞানে ও বাঙালী পুরাণে; আত্মতত্ত্ব বিষয়ক গবেষণাকে উপমিত ধ্যান বলে।

ধ্যানের পরিচয় (Identity of meditation)
এটি ‘বাঙালী পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী’ এর ‘চিন্তা’ পরিবারের একটি ‘বাঙালী পৌরাণিক ছদ্মনাম পরিভাষা’ বিশেষ। সাধারণত; চক্ষু বন্ধ করে বসে থাকাকেই ধ্যান বলা হয়। অন্যদিকে; শ্বরবিজ্ঞানে; সর্বপ্রকার গবেষণাকে ধ্যান বলা হয়। বর্তমানে ধ্যানের অভিধা পরিবর্তন করে ধ্যান নিয়ে অবাধ-বাণিজ্য করা আরম্ভ হয়েছে। ইতোমধ্যেই অনেক গুরু-গোঁসাই দেশের অনেক স্থানে ধ্যানাশ্রম, ধ্যানমন্দির, ধ্যানগৃহ ও ধ্যানবিহার নির্মাণ করে ভুয়া ধ্যান-বাণিজ্য করা আরম্ভ করেছে। তাদের মতে; সর্বপ্রকার চিন্তামুক্ত হয়ে চক্ষু বন্ধ করে; বসে বসে প্রভুর স্মরণ করাকেই ধ্যান বলা হয়। কিন্তু প্রকৃতকথা হলো; মানুষের বাস্তবজীবনে এসব অন্তঃসারশূন্য ধ্যানের কার্যকারিতা আছে কী? একবাক্যে সবাই বলবেন নেই। তবে; এসব ধ্যান করে লাভ কী? ধ্যানের প্রকৃত অভিধা ছিল কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে গবেষণা করা। কিন্তু বর্তমানে ধ্যানের নামে যে নৈরাজ্যের প্রচলন আরম্ভ হয়েছে; তা হতে এখনই বুদ্ধিমানদের বের হয়ে আসা প্রয়োজন। তার পরিবর্তে বিজ্ঞান, দর্শন ও প্রযুক্তি নিয়ে ব্যাপক গবেষণা আরম্ভ করা প্রয়োজন। কারণ; এখনই ধ্যান-বাণিজ্যের খপ্পর হতে বের হতে না পারলে; আগামী প্রজন্মকে কোনো ক্রমেই ধর্মান্ধতা, মোল্লাতন্ত্র ও পিরতন্ত্র হতে বের করা সম্ভব হবে না। বিশ্বের কোনো জাতি বা দেশই ধর্মান্ধতার কুসংস্কার মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত কোনো উন্নতিই করতে পারে না।