৯২/১. বাতাস
Wind (উইন্ড)/ ‘رياح’ (রিইহা)
ভূমিকা (Prolegomenon)
এটি ‘বাঙালী পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী’ এর ‘শ্বাস’ পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ একটি ‘বাঙালী পৌরাণিক রূপক পরিভাষা’। এর ‘বাঙালী পৌরাণিক প্রকৃত মূলক সত্তা’ ‘শ্বাস’ ‘বাঙালী পৌরাণিক সহযোগী মূলক সত্তা’ ‘প্রাণায়াম’। এর ‘বাঙালী পৌরাণিক উপমান পরিভাষা’ ‘কুকুর, প্রহরী ও সুর১’। এর ‘বাঙালী পৌরাণিক চারিত্রিক পরিভাষা’ ‘অনিল, পবন ও সমীর’ এবং এর ‘বাঙালী পৌরাণিক ছদ্মনাম পরিভাষা’ ‘জগৎগুরু ও ফুৎকার’।
অভিধা (Appellation)
বাতাস (বাপৌরূ)বি বায়ু, পবন, অনিল, সমীরণ, wind, ‘رياح’ (রিইহা) (আল) সংস্রব, প্রভাব, দূষিত বস্তুর প্রভাব, বাতাসরূপী অপদেবতার প্রভাব, ব্যঞ্জন, পাখা (প্র) বঙ্গীয় আত্মজ্ঞানীদের নির্মিত ১. আগুন ২. জল ৩. মাটি ৪. বাতাস ও ৫. বিদ্যুৎ এ পঞ্চাত্মার একটি (শ্ববি) শ্বাস, নিঃশ্বাস, প্রশ্বাস, breath, respiration, দম (আ.ﺪﻡ), নাফ্স (আ.ﻧﻔﺲ) (রূপ্রশ) ঘোণা, সৈনিক, যোদ্ধা, diarchy, horn, trumpet (পরি) নাসিকার সূর্যশ্বাস ও চন্দ্রশ্বাস বিশেষ (দেপ্র) এটি ‘বাঙালী পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী’ এর ‘শ্বাস’ পরিবারের ‘বাঙালী পৌরাণিক রূপক পরিভাষা’ ও ভারতীয় ‘বাঙালী পৌরাণিক দেবতা’ বিশেষ (বায়ুর ক্ষেত্রে) (সংজ্ঞা) ১. সাধারণত; প্রায় তেইশ প্রকার পদার্থের বায়বীয় রূপকে বাংলায় ‘বাতাস’ বলা হয় ২. বাঙালী শ্বরবিজ্ঞানে ও বাঙালী পুরাণে, নাসিকাযোগে চলাচলকারী বায়ুকে রূপকার্থে ‘বাতাস’ বলা হয় (বাপৌছ) জগৎগুরু ও ফুৎকার (বাপৌচা) অনিল, পবন ও সমীর (বাপৌউ) কুকুর, প্রহরী ও সুর১ (বাপৌরূ) বাতাস (বাপৌমূ) শ্বাস।
বাতাসের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্ধৃতি (Some highly important quotations of wind)
১. “ও মন বাতাস বুঝে ভাসারে তরী, তেহাটা ত্রিবেণীর তোড় তুফান ভারী।” (পবিত্র লালন- ২৫৪/১)।
২. “বাতাসে উড়াইয়া গাড়ি, লইয়া চলে তাড়াতাড়ি, বলন কয় যাইরে ছাড়ি, সাধের দেহবাড়ি মায়াজাল।” (বলন তত্ত্বাবলী- ২২০)।
৩. “বেতালা বাউল বাতাসে, পাতালগামী হয় নিমিশে, কেমনে যাই বন্ধুর দেশে, কেমনে হবো মধুকর।” (বলন তত্ত্বাবলী- ২৩১)।
বাতাসের সাধারণ উদ্ধৃতি (Some ordinary quotations of wind)
১. “আকাশে আখেটি করতে পাশ পাতে পাতালে, বাতাসে কৌশল করিয়া বসিয়া রহে জলে, প্রেমের রশি লাগায়- বাঁন্ধিয়া রাখে কারায়, যদি ধরা পড়ে হায়, মুক্তি পাবার সাধ্য নাই।” (বলন তত্ত্বাবলী- ১৬০)।
২. “আকাশে মই লাগিলে উড়ে পাতালে যায় বাতাসে, সাদা কালো দুটি চন্দ্র তার হাতে আসে অনাসে, পায় না চাঁদ অস্ত গেলে, পাহাড় সাগর খগোলে।” (বলন তত্ত্বাবলী- ১২৮)।
৩. “আমাকে ধরা সহজ নয়, আমি যশোদার কানাই, ভক্তের মন রক্ষা করতে ধেনু চরাই, সুবাতাসে ঘুরিফিরি।” (পবিত্র লালন- ৫৯৫/৪)।
৪. “আয়রে সাত আকাশের দ্বার খুলিয়া জলেতে মিশে, আয়রে প্রাতঃ সন্ধ্যা কোমলকোঠায় বাতাসে ভেঁসে, হাজার মাস যোগ ধরিলে, দেখতে পাবি গুরুসাঁই।” (বলন তত্ত্বাবলী- ৩১২)।
৫. “ক্ষণে আগুন ক্ষণে পানি, কী বলো সে নামের ধ্বনি, সিরাজ সাঁইজির গুণে- লালন তাই ভনে, সে বাতাসের সঙ্গে বাতাস ধরে, আছে বসে।” (পবিত্র লালন- ৮২১/৩)।
৬. “গয়া কাশী বৃন্দাবনে- উদয় হয়রে কত নামে, যে যায় মক্কা মদিনে- নিতে তারই চরণধুলা- সপ্ততল পাতালে গিয়ে- লুকায় সেথা নীর হয়ে, বাতাস রূপে দ্বিদ্বারে- চালায় তার অবলীলা।” (বলন তত্ত্বাবলী- ১১১)।
৭. “গুরু গো পাতালেতে ঘর গড়িয়া তুমি থাক আকাশে, আবার মাটির ঘরে আমায় রেখে তুমি ঘুর বাতাসে, একদিন আর খোঁজ নিলে না, শিষ্য কোথায় রয়েছে।” (বলন তত্ত্বাবলী- ৭১)।
৮. “তেমাথা রাস্তায় বসে কাপুরুষ পাইলে ধরে, জলের চুলায় মরামাথা বাতাসে রান্না করে, জোয়ান কী বালক বৃদ্ধ- একপাকে করে সিদ্ধ, কত করে ত্রিশূল বিদ্ধ, অমাবস্যার পরে সে।” (বলন তত্ত্বাবলী- ২২৬)।
৯. “দক্ষিণা বাতাসের পরে, ঐ মহাযোগ ভরা জোয়ারে, সাধিবে তিনযুগ ধরে, বলন কয় নিরালায়, সপ্ততল পাতাল হতে, ভেঁসে উঠবে দয়াল সাঁই।” (বলন তত্ত্বাবলী)।
১০. “দ্বাপরে প্রভু রূপলীলা করে, সাদা কালো দুইরূপ ধরে, আনাগোনা বাতাসের ’পরে, সে সংবাদ কী রাখলি।” (বলন তত্ত্বাবলী- ৬৩)।
১১. “নিশি ছেড়ে দিবসে আসে, সখী নিধুয়া পাথারে বসে, দক্ষিণা বাতাস বুঝে সে, ফুঁক মেরে বাঁশী টানে।” (বলন তত্ত্বাবলী)।
১২. “পাহাড় টিলা বাতাসে উড়ে- একত্রিত হবে গড়ে, আত্মাসম যাবে ধড়ে- দেখবে নিজে বলবান- পূর্বে যেথায় পড়ছে ধরা- সেদিকে ছুটবে তারা, সবাই রবে পাগলপারা, যাদের যে কাণ্ডজ্ঞান।” (বলন তত্ত্বাবলী- ৪৬)।১৩. “প্রেমদানিতে রয় লুকাইয়া হইয়া রতীধর, কামেতে দণ্ড দিয়া প্রকাশ হয় ধরার ’পর, জীব তরাতে সেতুর ’পর- নিজ কর্মে রয় বরাবর, রহে বাতাসের ’পর শাস্ত্রে কয় জীবের জীবন।” (বলন তত্ত্বাবলী- ১৯)।
১৪. “বত্রিশফুল কারে বলে, দেহের বাও-বাতাস কোন্ দিকে চলে, ফকির লালন কয় দেহের মূল, কোন্ দিকে রয়।” (পবিত্র লালন- ৭৯/৪)।
১৫. “বলন কাঁইজি হইল চেতন সাঁই-গতি দেখিয়া, ধরতে তারে বায়ুঘরে সদাই রয় ফাঁদ পাতিয়া, প্রেমসুধা নীর হইয়া- চলেফেরে প্রেমনদ দিয়া, হাজার বছরের তাপ লইয়া মেঘ রূপে হয় বরিষণ।” (বলন তত্ত্বাবলী- ১৯)।১৬. “বাহাত্তর স্পন্ধকী ঘড়ি, সাতাত্তর পালা ধড়ি, মরো না বাতাসে চড়ি, চুরাশিফের খাটি।” (বলন তত্ত্বাবলী- ১২১)।
১৭. “বেবুঝ মন পাগেলা কার আশে বাঁন্ধ পাকাবাড়ি, সাধের বাড়ি পড়ে রবে নাকের বাতাস গেলে ছাড়ি।” (বলন তত্ত্বাবলী- ২১৭)।
১৮. “ভুতের রাজ্যে দশটি থানা- রয়েছে বাহাত্তরজনা, সে রাজ্যের প্রধান ব্যাপারী- তারা সবে চুপিসারে- ভুত-মানুষ পরিমাপ করে, আগুন ও বাতাস ধরি।” (বলন তত্ত্বাবলী- ৯৭)।
১৯. “মাল্লা প্রধান বারোজনা কেবা কোথায় খোঁজ করো, মাঝখানে বসিয়া নায়ের শক্ত হাতে হাল ধরো, দশ উদ্দীপক ষোল সাথী দেখিয়া বাতাসের গতি, গুরুকে করিয়া পতি গুরুনাম পাল তুলিয়া দাও।” (বলন তত্ত্বাবলী- ৫২)।
২০. “মূলাধারের হাজার পর্দা ’পর, সাঁইয়ের চিলেকোঠা ঘর, বলন কয় বাতাসের ’পর, পাবি তারে খোঁজ নিলে।” (বলন তত্ত্বাবলী- ২০)।
২১. “যাবি যদি নিগূঢ়ঘরে, খুঁজে দেখ দেহপিঞ্জরে, যাও সেথা বাতাসে উড়ে, দয়াল সাঁইয়ের ঘরখানায়।” (বলন তত্ত্বাবলী- ১৬৪)।
২২. “যোগে এক হাজার বছর, নিঠাঁইয়ে বাঁধো আপন ঘর, মহাশূন্য বাতাসের ’পর, স্বরূপে দাও নমুনা।” (বলন তত্ত্বাবলী- ২২৪)।
২৩. “লালশালুর নিশান বানায় উড়াইয়া দেয় বাতাসে, একটি প্রহর উড়েরে নিশান প্রতিটি মাসেমাসে, নয় প্রহরই গোলকধামে- রক্তিমা রঙ বৃষ্টি নামে, স্বরূপের অমরাতে- ছোবল দেয় কাম-কামিনী।” (বলন তত্ত্বাবলী- ১৫১)।
২৪. “সাম্প্রদায়িক গ্রন্থে দয়াল ধুঁড়ে, হাতে হাতে শিষ্যত্ব পড়ে, বলন কয় বাতাসে উড়ে, অনুমানে জনম ভরে।” (বলন তত্ত্বাবলী- ১৩৭)।
২৫. “সপ্ততল পাতালের ভানু উদয় হলো গগণে, শুভলগ্ন হারাইলে বান্ধব পাবে না জীবনে, মনের-মানুষ দোল দিয়ে যায়, হায়রে উত্তরা বাতাসে।” (বলন তত্ত্বাবলী- ৫১)।
২৬. “হাজার দুয়ারী বাতাসের ঘর, দুই দুয়ার বন্ধ আছে তার, ঘরামির আবাস তারই ভিতর, জানে সাধক পারমী।” (বলন তত্ত্বাবলী)।
২৭. “সারানিশি যোগ ধরিয়া একা ঘরে থাকি বসিয়া, জলেতে উদয় প্রাণনাথ দাসের বাতাসে মিশিয়া, গুরু বিনা দেয় না দেখা, ঐ নিশি হইলে প্রভাত।” (বলন তত্ত্বাবলী- ১৫০)।
২৮. “সেথায় ঘাটরাণী সর্বনাশে, জোয়ার ভাটা বারো মাসে, বলন কয় বাউল বাতাসে, পড়িয়া চুরাশিপাকে।” (বলন তত্ত্বাবলী- ১৯৮)।
২৯. “স্বর্গ-মর্ত্য পাতাল জুড়া তিনভূতের করাল থাবা, সেথা পঞ্চভূতে করছে খেলা ফাঁক দিলে গোল খাবা, রক্তিমজলা দীঘির পাশে- মরাগোরু উড়ে বাতাসে, মরে শেষে হায়হুতাশে, মরা তার পিছু নিয়েছে।” (বলন তত্ত্বাবলী- ২২৬)।
৩০. “হায় হায় হাজার বছর পাঞ্জালড়ে, সাঁই আসে বাতাসে উড়ে, দ্বিদলে সাঁই নড়েচড়ে, মানুষ ছাড়া নাই ঠাঁই, রক্তিমধারা পাড়ি দিয়ে, বস গিয়ে সাদা ধারায়।” (বলন তত্ত্বাবলী)।
———————————
১. “অরুণ বরুণ বায়ু ক্ষিতি, এ চাররসে নিষ্ঠারতী, সে রসে জ্বালাও বাতি, ত্রিসন্ধ্যা বারোমাস।” (পবিত্র লালন- ২৭৫/৩)।
২. “কুলকুণ্ডলিনীশক্তি বায়ু বিকারে, অচৈতন্য হয়ে আছে মূলাধারে, আত্মতত্ত্ব গুরু-তত্ত্ব সাধনের জোরে, চেতন করো তারে।” (পবিত্র লালন- ১৭২/৩)।
৩. “লালন ফকির ভেবে বলে, বত্রিশফুল দন্তকে বলে, উনপঞ্চাশ বায়ু চলে, মনের-মানুষ উজান ধায়।” (পবিত্র লালন- ৮১৫/৪)।
৪. “সপ্ততলে চতুর্দলে, কুলকুণ্ডলিনী সদা স্থির, তার ঊর্ধ্বদলে, কমলের ওপর মণিপুর, তার ঊর্ধ্বদলে, ঊনপঞ্চাশ পবনের ঘর, প্রাণ অপান উদ্বান ব্যান ও সমান, পঞ্চবায়ু গতিকার।” (পবিত্র লালন- ৫৪৮/৩)।
৫. “স্থির বায়ু হৈমন্তী কয়, মা ফাত্বিমা সত্যমণি হয়, সৃষ্টি স্থিতি যার আশায়, নবি জন্ম নিলো যার দ্বারে।” (পবিত্র লালন- ৬০৫/৩)।
————————————————
১. “ধর চোর হাওয়ার ঘরে ফাঁদ পেতে, সে কিরে সামান্য চোরা, ধরবি কোনাকাঞ্ছিতে।”
২. “সপ্ততালা ভেদ করিলে, হাওয়ার ঘরে যাওয়া যায়, হাওয়ার ঘরে গেলেরে ভাই, অধর-মানুষ ধরা যায়।”
সাধারণ বাতাস অর্থে ‘বাতাস’ পরিভাষাটির ব্যবহার (Using the terminology wind sense ordinary wind)
১. “খুঁজি তারে দেশ বিদেশে, আগুন পানি মাটি বাতাসে, বলন কাঁইজি হারায় দিশে, খুঁজে তারে জগৎময়।” (বলন তত্ত্বাবলী- ২৬৮)।
২. “শূন্য জ্যোতিকা হতে সৃষ্টি বাতাসের গতি, বায়ু জ্যোতি ঢেউ খেলিয়া হলো প্রেমরতী, সাঁই দিবারাতি ডিম্বগতি- নামে অপরূপ মতি, শূন্যের ওপর থাকে ঘর বান্ধিয়া বৃন্দাবন।” (বলন তত্ত্বাবলী- ১৯)।
সংস্পর্শ অর্থে ‘বাতাস’ পরিভাষাটির ব্যবহার (Using the terminology wind sense for contiguity)
১. “মাস ঘুরে তিনদিন পর, বারো দিনে ঘুরে বছর, আমার যৌবন বাতাসে– বলন কয় বন্ধু কানা, চক্ষেতে দেখেও দেখে না, কাঁন্দি আমি দুয়ারে বসে।” (বলন তত্ত্বাবলী- ২৩)।
২. “সাধুর বাতাসেরে মন, বনের কাষ্ঠ হয় চন্দন, হেনপদে যার- নিষ্ঠা না হয় তার, কপালে না জানি কী আছেরে।” (পবিত্র লালন- ৬২৪/২)।
বাতাসের সংজ্ঞা (Definition of wind)
জলবায়ু বিজ্ঞানে; প্রায় তেইশ প্রকার পদার্থের নিরাকার বা বায়বীয় রূপকে বাতাস বলে।
বাতাসের আধ্যাত্মিক সংজ্ঞা (Theological definition of wind)
বাঙালী শ্বরবিজ্ঞানে ও বাঙালী পুরাণে; নাসিকাযোগে চলাচলকারী বায়ুকে শ্বাস বা বাতাস বলে।
বাতাসের প্রকারভেদ (Variations of wind)
বাঙালী শ্বরবিজ্ঞানে ও বাঙালী পুরাণে বাতাস দুই প্রকার। যথা; ১. ডান বাতাস ও ২.বাম বাতাস।
১. ডান বাতাস (Right wind)
নাসিকার ডানপার্শ্বে চলাচলকারী শ্বাসকে ডান বাতাস বলে।
২. বাম বাতাস (Left wind)
বাঙালী শ্বরবিজ্ঞানে ও বাঙালী পুরাণে নাসিকার বামপাশ্বে চলাচলকারী শ্বাসকে বাম বাতাস বলে।
এছাড়াও; বাঙালী শ্বরবিজ্ঞানে ও বাঙালী পুরাণে মানবদেহের বায়ুকে পাঁচভাগে ভাগ করা হয়। যথা; ১. প্রাণ ২. অপান ৩. উদ্বান ৪. ব্যান ও ৫. সমান। যোগ-শাস্ত্রে বলা হয় এই পাঁচটি বায়ুর একটি কূপিত হলে দেহে রোগাক্রমণ ঘটে। আসে মৃত্যুর হাতছানি।
১. প্রাণ (Breath) বাঙালী শ্বরবিজ্ঞানে ও বাঙালী পুরাণে; শ্বাস-প্রশ্বাস রূপে গ্রহণকৃত বায়ুকে প্রাণবায়ু বলে।
প্রাণবায়ুর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্ধৃতি (Some highly important quotations of breath)
“সপ্ততলে চতুর্দলে, কুলকুণ্ডলিনী সদা স্থির, তার ঊর্ধ্বদলে, কমলের ওপর মণিপুর, তার ঊর্ধ্বদলে, ঊনপঞ্চাশ পবনের ঘর, প্রাণ অপান উদ্বান ব্যান ও সমান, পঞ্চবায়ু গতিকার।” (পবিত্র লালন-৫৪৮/৩)। (মুখ; “দেহভাণ্ড কেমন চমৎকার, ভেবে অন্ত পাবে না তার, পঞ্চভূত একত্র করে, কী কীর্তি করেরে কারিগর।”)।
জীবদেহের পাঁচ প্রকার বায়ুর মধ্যে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো ‘প্রাণ’ বায়ুর। শ্বাসগ্রহণ ও ত্যাগ, হৃদযন্ত্র পরিচালনা করা, খাদ্যবস্তুকে পাকস্থলীতে পাঠানো, ধমনী-শিরা-উপশিরা দিয়ে রক্তরস আনা-নেয়া করা, ধমনী, শিরা, উপশিরা, স্নায়ুজালকে কাজে প্রবৃত্ত ও সাহায্য করা প্রভৃতি অতি প্রয়োজনীয় কাজগুলো নিয়ত এই প্রাণবায়ু করে যাচ্ছে। কাজেই দেহে প্রাণবায়ুর ভূমিকা প্রধান।
২. অপান (Fart)
বাঙালী শ্বরবিজ্ঞানে ও বাঙালী পুরাণে; পিছনবায়ু বা পাদকে অপান বায়ু বলে।
অপানবায়ুর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্ধৃতি (Some highly important quotations of fart)
“সপ্ততলে চতুর্দলে, কুলকুণ্ডলিনী সদা স্থির, তার ঊর্ধ্বদলে, কমলের ওপর মণিপুর, তার ঊর্ধ্বদলে, ঊনপঞ্চাশ পবনের ঘর, প্রাণ অপান উদ্বান ব্যান ও সমান, পঞ্চবায়ু গতিকার।” (পবিত্র লালন-৫৪৮/৩)। (মুখ; “দেহভাণ্ড কেমন চমৎকার, ভেবে অন্ত পাবে না তার, পঞ্চভূত একত্র করে, কী কীর্তি করেরে কারিগর।”)।
‘অপান’ বায়ুর কাজ হচ্ছে প্রাণবায়ুকে সাহায্য করা এবং মেয়েদের রজঃনিঃসরণ, সন্তানধারণ ও সন্তান প্রসবে সাহায্য করা ইত্যাদি।
৩. উদ্বান (Whiff)
বাঙালী শ্বরবিজ্ঞানে ও বাঙালী পুরাণে; কথা বলার সময় বা ফুঁক দেওয়ার সময়ে ফুসফুস হতে যে বায়ু বের হয় তাকে উদ্বানবায়ু বলে।
উদ্বানবায়ুর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্ধৃতি (Some highly important quotations of whiff)
“সপ্ততলে চতুর্দলে, কুলকুণ্ডলিনী সদা স্থির, তার ঊর্ধ্বদলে, কমলের ওপর মণিপুর, তার ঊর্ধ্বদলে, ঊনপঞ্চাশ পবনের ঘর, প্রাণ অপান উদ্বান ব্যান ও সমান, পঞ্চবায়ু গতিকার।” (পবিত্র লালন-৫৪৮/৩)। (মুখ; “দেহভাণ্ড কেমন চমৎকার, ভেবে অন্ত পাবে না তার, পঞ্চভূত একত্র করে, কী কীর্তি করেরে কারিগর।”)।
‘উদ্বান’ বায়ুর কাজ হচ্ছে শব্দ করা। এই বায়ুর সূক্ষ্মাংশ বুদ্ধি ও স্মৃতিশক্তিকে পুষ্ট করে। ‘উদ্বান’ বায়ুর সাহায্যে আমরা হাসি, কাঁদি, গান করি, শব্দ করি ইত্যাদি।
৪. ব্যান (Burp)
বাঙালী শ্বরবিজ্ঞানে ও বাঙালী পুরাণে; পাকস্থলী হতে ঢেকুরের মাধ্যমে উদ্গত দুর্গন্ধময় বায়ুকে ব্যানবায়ু বলে।
ব্যানবায়ুর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্ধৃতি (Some highly important quotations of burp)
“সপ্ততলে চতুর্দলে, কুলকুণ্ডলিনী সদা স্থির, তার ঊর্ধ্বদলে, কমলের ওপর মণিপুর, তার ঊর্ধ্বদলে, ঊনপঞ্চাশ পবনের ঘর, প্রাণ অপান উদ্বান ব্যান ও সমান, পঞ্চবায়ু গতিকার।” (পবিত্র লালন-৫৪৮/৩)। (মুখ; “দেহভাণ্ড কেমন চমৎকার, ভেবে অন্ত পাবে না তার, পঞ্চভূত একত্র করে, কী কীর্তি করেরে কারিগর।”)।
‘ব্যান’ বায়ুর কাজ হচ্ছে প্রাণবায়ুকে রক্ত পরিচালনায় সাহায্য করা, পেশি সঙ্কোচন ও প্রসারণে সাহায্য করা এবং দেহ থেকে ঘাম বের করে দেয়া।
৫. সমান (Fragrance (Body odor))
বাঙালী শ্বরবিজ্ঞানে ও বাঙালী পুরাণে; শরীরের ঘ্রাণগুলোকে সমানবায়ু বলে।
সমানবায়ুর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্ধৃতি (Some highly important quotations of fragrance)
“সপ্ততলে চতুর্দলে, কুলকুণ্ডলিনী সদা স্থির, তার ঊর্ধ্বদলে, কমলের ওপর মণিপুর, তার ঊর্ধ্বদলে, ঊনপঞ্চাশ পবনের ঘর, প্রাণ অপান উদ্বান ব্যান ও সমান, পঞ্চবায়ু গতিকার।” (পবিত্র লালন-৫৪৮/৩)। (মুখ; “দেহভাণ্ড কেমন চমৎকার, ভেবে অন্ত পাবে না তার, পঞ্চভূত একত্র করে, কী কীর্তি করেরে কারিগর।”)।
‘সমান’ বায়ু মানুষের জঠরাগ্নিকে উদ্দীপ্ত করে, পাকস্থলী থেকে জরাজীর্ণ খাদ্যবস্তুকে গ্রহণী নাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। তারপর; সার ও অসার অংশে ভাগ করে অসার অংশকে মলনাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।
বাতাসের উপকার (Benefits of wind)
১. বাতাসের অন্যনাম জীবন বা প্রাণ।
২. বাতাস ব্যতীত কোনো প্রাণীই বাঁচতে পারে না।
৩. বাতাস দ্বারা কোনো কাজের শুভাশুভ ফলাফল অগ্রিম জানা যায়।
বাতাসের পরিচয় (Identity of wind)
এটি ‘বাঙালী পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী’ এর ‘শ্বাস’ পরিবারের অধীন একটি ‘বাঙালী পৌরাণিক রূপক পরিভাষা’ বিশেষ। প্রায় একুশটি পদার্থের বায়বীয়রূপকে বাতাস বলা হয়। বাতাস প্রকৃতির এক অনন্য সৃষ্টি। বাতাসই হলো বিশ্বাত্মা। অর্থাৎ; সারাবিশ্বের আত্মা মাত্র একটি তা হলো বাতাস। জীবকুল বাতাসের সাথে কোনো না কোনভাবে সংযুক্ত মাত্র। যেমন; প্রাণীকুল নাসিকা, উদ্ভিদকুল পাতা, মৎস্যকুল কানের ফুলকা এবং যেসব প্রাণী বা উদ্ভিদের নাক ফুলকা ও পাতা কিছুই নেই তারা চর্ম দ্বারা বাতাসের সাথে কোনো না কোনভাবে সংযুক্ত। প্রাণী, উদ্ভিদ ও মৎস্য কিংবা উভয়চর বা খেচর যায় হোক না কেন বিশ্বাত্মা বাতাসের সাথে কোনো না কোনভাবে অবশ্যই সংযুক্ত। বাতাসের সাথে সংযুক্ত না থাকলে বিশ্বের কোনো প্রাণীই মুহূর্তকালও বাঁচতে পারে না। বাতাসের মধ্যে অনেক প্রকার পদার্থ একত্র অবস্থান করে। একেক প্রজাতির জীব বাতাস হতে একেক পদার্থ গ্রহণ করে। সব জীব বাতাস হতে একই পদার্থ গ্রহণ করে না। প্রাণীকুল বাতাস হতে অম্লজান গ্রহণ করে কিন্তু উদ্ভিদকুল বাতাস অঙ্গারাম্লজান গ্রহণ করে। এসব বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনা। শ্বরবিজ্ঞানে মানবের নাসিকার ডান ও বামপার্শ্বে চলাচলকারী বায়ু বা শ্বাসের আলোচনায় প্রধান। ডান ও বামের ভিন্ন ভিন্ন অনুচ্ছেদে আমরা অবশিষ্ট আলোচনা করেছি।
চোখে দেখা যায় না কিন্তু শরীরে লাগলে অনুভব করা যায় এমন এক শক্তিকেই বাতাস বলা হয়। পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠ হতে প্রায় একলাখ ষাট হাজার ক্রোশ চারপার্শ্ব পর্যন্ত বায়ুমণ্ডলের স্তর পরিব্যাপ্ত বলে বিজ্ঞানীরা মতামত প্রকাশ করে থাকেন। পুরো বায়ুস্তকেই বায়ুমণ্ডল বলা হয়। এ বায়ু ও বায়ুমণ্ডল নিয়ে জলবায়ু বিজ্ঞান বা পদার্থ বিজ্ঞান বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করে থাকে। তবুও; বাতাস বা বায়ুমণ্ডলকে নিয়ে শ্বরবিজ্ঞানে কোনকিছুই লেখা হয় না। কারণ; শ্বরবিজ্ঞানে; কেবল নাসিকায় চলাচলকারী শ্বাসকেই বাতাস বলা হয়। উল্লেখ্য যে; কেবল মানবদেহের বিষয়বস্তুর সূক্ষ্ম ইঙ্গিত এবং প্রকৃতি নিয়েই নির্মিত হয় পুরাণ। মানবদেহে ১.প্রাণ ২.অপান ৩.উদ্বান ৪.ব্যান ও ৫.সমান- এ পাঁচ প্রকার বায়ুর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এ পঞ্চবায়ুকে একত্রে অসু বলা হয়। এ বায়ুর সাধন দ্বারাই সুমহান সাধকগণ তাদের স্ব স্ব পালনকর্তা ও সৃষ্টিকর্তার প্রত্যক্ষ দর্শনলাভ করে থাকেন।
বাতাসকে জগৎগুরু বলার রহস্য (Mystery to say the wind world-geek)
বাতাস এক প্রকার যৌগিক পদার্থ। এটি; চোখে দেখা যায় না কেবল অনুভব করা যায়। বাতাস এমন একটি সৃষ্টি যে এ সত্তাটি সারাবিশ্বব্যাপী বিরাজিত। বিশ্বে যত প্রকার পদার্থ রয়েছে সব পদার্থের বায়বীয় রূপটিকেই বাতাস বলা যায়। এর মধ্যে প্রায় ২১টি পদার্থ বায়বীয় রূপে অবস্থান করে। নিচে একটি নির্ঘণ্ট তুলে ধরা হলো। এটি; গত ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে David Ar. Lide প্রণয়ন করেছিলেন।
ক্রমিক সঙ্কেত শতকরা
১. Nitrogen N2 78.084%
২. Oxygen O2 20.9476%
৩. Argon Ar 0.934%
৪. Carbon dioxide CO2 0.314%
৫. Neon Ne 0.001818%
৬. Methane CH4 0.0002%
৭. Helium He 0.000524%
৮. Krypton Kr 0.000114%
৯. Hydrogen H2 0.00005%
১০. Xenon Xe 0.0000087%
১১. Ozone O3 0.000007%
১২. Nitrogen dioxide NO2 0.000002%
১৩. Iodin I2 0.000001%
১৪. Carbon Monoxide CO 0- trace
১৫. Ammonia NH4 0- trace
১৬. ধূলিকণা ও উদ্ভিদকণা 0.01%
১৭. জলীয়বাষ্প 0.41%
অতঃপর; আধুনিক পরিসংখ্যানটিও সংযুক্ত করে দেওয়া হলো।
ক্রমিক সঙ্কেত শতকরা
১. Nitrogen N2 78.09%
২. Oxygen O2 20.95%
৩. Argon Ar 0.933%
৪. Corbon dioxide CO2 0.03%
৫. Neon Ne 0.0018%
৬. Methane CH4 2.0 parts/million (ppm)
৭. Helium He 0.0005%
৮. Krypton Kr 0.0005%
৯. Hydrogen H2 0.00005%
১০. Xenon Xe 0.0000009%
১১. Ozone O3 0-0.07 parts/million (ppm)
১২. Nitrogen dioxide NO2 0.02 parts/million (ppm)
১৩. Iodine I2 0.01 parts/million (ppm)
১৪. Corbon Monoxide CO 0-trace parts/million (ppm)
১৫. Ammonia NH3 0-trace parts/million (ppm)
১৬. Sulfur dioxide SO2 1.0 parts/million (ppm)
১৭. Nitrous oxide N2O 0.5 parts/million (ppm)
১৮. ধূলিকণা ও উদ্ভিদকণা 0.01%
১৯. জলীয়বাষ্প 0.41%
বাতাসের মধ্যে বায়ুবীয় রূপে অবস্থান করে অম্লজান। ইংরেজি ভাষায় একে Oxygen (অক্সিজেন) বলা হয়। বাতাসের মধ্যে এর পরিমাণ প্রায় ২১%। এটি; গ্রহণ করেই জীবকুল জীবনধারণ করে থাকে। জীবকুল অম্লজান oxygen গ্রহণ করে ও অঙ্গারাম্লজান carbon dioxide পরিত্যাগ করে। প্রাণহীন বায়বীয় পদার্থ বাতাসকে বিশিষ্ট রূপকার মনীষীগণ জগৎগুরু বলার কারণ কী? যেমন; মহাত্মা লালন সাঁইজি বলেছেন; “উজান ভাটি তিনটি নালে, দম দমাদম বেদম কলে একশব্দ হয়, গুরুর গুরু পবনগুরু প্রেমানন্দে, সাঁতার খেলায়” (পবিত্র লালন-৪১/২)। এমন প্রশ্নের উত্তর হলো গুরু চার প্রকার। যথা; ১ মানুষগুরু (জ্ঞান)/ Inductor (ইন্ডাক্টর)/ ‘مغو’ (মোগু) ২ জগৎগুরু (শ্বাস)/ Inhaler (ইনহ্যালার)/ ‘مستنشق’ (মুস্তানাশাক্ব) ৩ কামগুরু (শিশ্ন)/ Cupid (কিউপিড)/ ‘صولجان’ (সাওলাজান) ৪ পরমগুরু (সাঁই)/ Beverage (বেভ্যারিজ)/ ‘مشروبات’ (মাশরুবাত)।
১. মানুষগুরু/ Inductor (ইন্ডাক্টর)/ ‘مغو’ (মোগু)
মানুষগুরুর সংজ্ঞা (Definition of inductor)
সাধারণ মানুষকে আত্মতত্ত্ব ভেদ শিক্ষা প্রদানকারী মানুষ আকারধারী মহান মনীষীকে মানুষগুরু বলে।
মানুষগুরুর আধ্যাত্মিক সংজ্ঞা (Theological definition of inductor)
বাঙালী শ্বরবিজ্ঞানে ও বাঙালী পুরাণে; গুরুপদ প্রাপ্ত ব্যক্তির জ্ঞানকে গুরু বলে।
মানুষগুরুর শুধু আকার ও আকৃতিকে মানুষগুরু বলা হয় না। মানুষগুরু রূপ ব্যক্তির মধ্যে যে জ্ঞান রয়েছে প্রকৃতপক্ষে সে জ্ঞানকেই গুরু বলা হয়। কারণ; জ্ঞান হলো নিত্য, অক্ষয়, অমর ও অনন্ত। কিন্তু আকারধারী মানুষ অনিত্য ও ধ্বংসশীল। অর্থাৎ; আকারধারী মানুষকে মানুষগুরু বলে সম্বোধন করলেও প্রকৃতপক্ষে মানুষগুরু হলো মানুষের জ্ঞান। গুরুদেবের জ্ঞানকে মানুষগুরু বলা হয়।
পিতা-মাতা, বড়ভাই, বড়বোন, শ্বশুর-শাশুড়ী, দাদা-দাদী, মামা-মামী ও সর্বশ্রেণির পাঠশালার শিক্ষক-শিক্ষিকাগণসহ সবাই প্রত্যেক মানুষের জন্য মানুষগুরু। যার নিকট হতে কোনো জ্ঞানার্জন করা হয় তিনিই গুরু। আবার আধ্যাত্মিক দীক্ষকগণ মানুষগুরু। গুরুর কোনো জাত নেই এবং গুরুর কোনো সাম্প্রদায় নেই। মানুষগুরু যে কোনো সাম্প্রদায়িক মতবাদ বা যে কোনো গোত্রের হতে পারেন। যে কোনো মতবাদের বা যে কোনো গোত্রের লোক তাঁর নিকট দীক্ষা গ্রহণ করতে পারেন। গুরু ভক্তের উদ্ধারকারী বা ত্রাতা। মানুষগুরু প্রকৃতগুরু নয়। প্রকৃতগুরু হলেন- সাঁই। এজন্য; প্রকৃতগুরুর সন্ধান না পাওয়া পর্যন্ত একের পর এক মানুষগুরুর নিকট হতে জ্ঞানার্জন করে যাওয়ায় সব বুদ্ধিমানের কাজ। প্রকৃতগুরুর সন্ধানলাভ করার জন্য একাধিক গুরুর নিকট হতে জ্ঞানার্জন করা সর্বকালেই সিদ্ধ। প্রকৃতগুরুর সন্ধান পেয়ে গেলে, মানুষগুরু আর পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই। (“গুরু যার থাকে সদয়, শমন বলে কিসের ভয়, লালন বলে মন তুই আমায়, করলি দোষী” (পবিত্র লালন- ১৪৩/৪)।
২. জগৎগুরু/ Inhaler (ইনহ্যালার)/ ‘مستنشق’ (মুস্তানাশাক্ব)
জগৎগুরুর সংজ্ঞা (Definition of inhaler)
বাঙালী শ্বরবিজ্ঞানে ও বাঙালী পুরাণে; সারাবিশ্বে বিরাজিত বাতাসকে জগৎগুরু বলে।
জগৎগুরুর আধ্যাত্মিক সংজ্ঞা (Theological definition of inhaler)
বাঙালী শ্বরবিজ্ঞানে ও বাঙালী পুরাণে; নাসিকার শ্বাসকে জগৎগুরু বলে।
বাঙালী শ্বরবিজ্ঞানে ও বাঙালী পুরাণে; বাতাস বলতে বায়ুমণ্ডলে চলমান বাতাস না বুঝিয়ে বরং নাসিকা যোগে চলাচলকারী শ্বাসকে বুঝানো হয়। নাসিকার শ্বাসরূপ জগৎগুরু ডান ও বাম গতি ধারণ করে সর্বসময় শিষ্য বা ভক্তকুলের সাথে সাথে অবস্থান করেন এবং প্রতিনিয়ত শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে শিষ্যগণকে জীবনের প্রতিটি কাজের শুভাশুভ সংবাদাদি প্রদান করে থাকেন। শ্বাসরূপ বাতাস বিশ্বব্যাপী বিরাজমান বলে শ্বরবিজ্ঞানে তাকে জগৎগুরু বলা হয়। মানুষগুরু জগতের সর্বত্রই বিরাজ করতে পারে না কিন্তু জগৎগুরু জগতের সর্বত্রই বিরাজ করতে পারেন। এ গুরু ব্যাপারে মহাত্মা লালন সাঁইজি লিখেছেন; “অখণ্ড মণ্ডলাকারং ব্যাপ্তং সারা চরাচর, গুরু তুমি পতিতপাবন পরমও ঈশ্বর” (পবিত্র লালন- ৪২/১)। আবার লোকনাথ ব্রহ্মচারী লিখেছেন; “রণে, বনে, পাহাড়ে ও জঙ্গলে যেখানে আমাকে স্মরণ করবে সেখানেই আমাকে পাবে।”
৩. কামগুরু/ Cupid (কিউপিড)/ ‘صولجان’ (সাওলাজান)
কামগুরুর সংজ্ঞা (Definition of cupid)
বাঙালী শ্বরবিজ্ঞানে ও বাঙালী পুরাণে; কামের দেবতা মদনকে কামগুরু বলে।
কামগুরুর আধ্যাত্মিক সংজ্ঞা (Theological definition of cupid)
বাঙালী শ্বরবিজ্ঞানে ও বাঙালী পুরাণে; পুরুষ জীবের শিশ্নকে কামগগুরু বলে।
কামগুরুর কোনো ভজন নেই। এ গুরুকে শাসন করাই ভক্তের কাজ। চারপ্রকার গুরুর মধ্যে কেবল কামগুরুকে শাসন করতে হয়। এ গুরু অটল না হওয়া পর্যন্ত একে ক্রমে ক্রমে শাসন করতেই হবে। এ ব্যাপারে মহাত্মা লালন সাঁইজি লিখেছেন; ১. “পরমগুরু প্রেম পিরিতি, কামগুরু হয় নিজপতি, কাম ছাড়া প্রেম পায় কী গতি, তাই ভাবে লালন।” (পবিত্র লালন- ২৬৫/৪) ২. “প্রেম প্রকৃতি স্বরূপসতী, কামগুরু হয় নিজপতি, ও মন অনুরাগী না হলে, ভজন সাধন হয় না।” (পবিত্র লালন- ৬৪৯/২) ৩. “প্রেমবাজারে কে যাবি, তোরা আয় গো আয়, প্রেমগুরু কল্পতরু, প্রেমরসে মেতে রয়।” (পবিত্র লালন- ৬৫১/১) ৪. “প্রেমের রাজা মদনমোহন, নির্হেতু প্রেম সাধনে শ্যাম, ধরে রাধার যুগলচরণ, প্রেমের সহচরী গোপীগণ, প্রেম-দ্বারে বাঁধা রয়।” (পবিত্র লালন- ৬৫১/২)।
৪. পরমগুরু/ (Beverage. বেভ্যারিজ)/ ‘مشروبات’ (মাশরুবাত)
পরমগুরুর সংজ্ঞা (Definition of beverage)
বাঙালী শ্বরবিজ্ঞানে ও বাঙালী পুরাণে; জীবের লালনপালনকর্তা সাঁইকে পরমগুরু বলে।
পরমগুরুর আধ্যাত্মিক সংজ্ঞা (Theological definition of beverage)
বাঙালী শ্বরবিজ্ঞানে ও বাঙালী পুরাণে; জীবজগতের পালনকর্তা সাঁইকে পরমগুরু বলে।
শ্বরবিজ্ঞানে; সাঁইকে পরমগুরু বলা হয়। সাঁই হলেন তরল-মানুষ; যে এখনও মূর্ত আকার ধারণ করে নি। মাতৃগর্ভে ভ্রূণ লালনপালনের দায়িত্ব পালনকারী সুমিষ্ট সুপেয় ও শ্বেতবর্ণের জল। মাতৃগর্ভে সর্ব জীবের ভ্রূণ লালনপালনে নিয়োজিত অমৃতরসকে পালনকর্তা বা রূপকার্থে পরমগুরু বলা হয়। এ পরমগুরু ব্যাপারে মহাত্মা লালন সাঁইজি লিখেছেন; ১. “ত্রিবেণীর ত্রিধারে, মীন রূপে গুরু বিরাজ করে, কেমন করে ধরবি তারে, বলরে অবুঝ মন।” (পবিত্র লালন- ১৫৩/৩) ২. “হলে অমাবতীর বার, মাটি রসে হয় সরোবর, সাধু গুরু বৈষ্টম তিনে, উদয় হয় সে যোগের দিনে।” (পবিত্র লালন- ১৬২/২)।”
এখানে; যে বাতাসকে জগৎগুরু বলা হয়েছে তা কখনই সাধারণ বাতাস নয়। শ্বরবিজ্ঞানে; বাতাস বলতে কখনই সাধারণ বাতাস বুঝায় না। তাহলে এ বাতাস কী? এটি; কোনো বাতাস? এমন প্রশ্নের উত্তর হলো; শ্বরবিজ্ঞানে; মানুষের নাসিকাযোগে চলাচলকারী শ্বাসকে রূপকার্থে বাতাস বলা হয়। মানবদেহের সর্বত্র সমানভাবে অম্লজান সরবরাহ করার জন্য নাসিকার দুটি ছিদ্র রয়েছে। নাসিকার বামছিদ্র দ্বারা আহরিত অম্লজান বাম অলিন্ধযোগে দেহের বামপার্শ্বে এবং ডানছিদ্র দ্বারা আহরিত অম্লজান ডান অলিন্ধযোগে দেহের ডানপার্শ্বে পরিবেশিত হয়। অম্লজান সরবরাহে যে পার্শ্বে ঘাটতি পড়ে সে পার্শ্বের কোষগুলো ক্রমে ক্রমে দুর্বল হয়ে পড়তে থাকে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে একে পক্ষাঘাত বা Paralysis বলে।
এবার কথা হলো যার অভাবে মানুষ একমুহূর্তও বাঁচতে পারে না। যার ব্যবহার হ্রাস-বৃদ্ধির কারণে পক্ষাঘাতের মতো মরণব্যাধীর কবলে পতিত হতে হয়। এমন গুরুত্বপূর্ণ বস্তুকে গুরু বলাতে কোনো দোষ নেই। যেমন; জ্ঞানকে মানুষগুরু বলা হয়। কারণ; জ্ঞান না থাকলে ঐ মানুষকেও মৃত বলা হয়। আবার সাঁইকে প্রয়োজনীয়তার দিক বিবেচনা করেই পরমগুরু বলা হয়। বিনোদন ও বংশগতির ধারা টিকিয়ে রাখার দিকটি বিবেচনা করেই শিশ্নকে কামগুরু বলা হয়। তেমনই; জীবন বাঁচানোর দিক দিয়েই নাসিকার শ্বাসরূপ বাতাসকে জগৎগুরু বলা হয়। এছাড়াও; নাসিকার শ্বাস মানুষের শুভাশুভ সংবাদ দেয় বলে আত্মজ্ঞানী মনীষীগণ একে জগৎগুরু বলে আখ্যায়িত করেছেন। বিশ্বের সব সাম্প্রদায়িক গ্রন্থেই শ্বাসকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঐশি সাংবাদিক বা ঐশিবাণী বলা হয়েছে। যেমন; পবিত্র কুরানে বলা হয়েছে-
১. “ وَهُوَ الَّذِي يُرْسِلُ الرِّيَاحَ بُشْرًا بَيْنَ يَدَيْ رَحْمَتِهِ حَتَّى إِذَا أَقَلَّتْ سَحَابًا ثِقَالًا سُقْنَاهُ لِبَلَدٍ مَيِّتٍ فَأَنزَلْنَا بِهِ الْمَاءَ فَأَخْرَجْنَا بِهِ مِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِ كَذَلِكَ نُخْرِجُ الْمَوْتَى لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ(৫৭)” অর্থ; “তিনিই যিনি বৃষ্টির পূর্বে সুসংবাদবাহী সমীরণ (শ্বাসদ্বয়/ পঞ্চবায়ু) প্রেরণ করেন, এমনকি; যখন বায়ুরাশি জলপূর্ণ মেঘমালা বয়ে আনে তখন আমরা এ মেঘমালাকে একটি মৃতনগরের জন্য প্রেরণ করি। অতঃপর; তা হতে জল বের করি। অতঃপর; তা হতে সর্বপ্রকার ফলগুলো উৎপন্ন করি। এমনই ভাবেই আমরা মৃতদেরকে বের করি যাতে তোমরা স্মরণকারী হও” (কুরান, আরাফ- ৫৭)।
২. “ أَمَّنْ يَهْدِيكُمْ فِي ظُلُمَاتِ الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَمَنْ يُرْسِلُ الرِّيَاحَ بُشْرًا بَيْنَ يَدَيْ رَحْمَتِهِ أَئِلَهٌ مَعَ اللَّهِ تَعَالَى اللَّهُ عَمَّا يُشْرِكُونَ(৬৩)” অর্থ; “বলত কে তোমাদেরকে জলে ও স্থলে অন্ধকারের মধ্যে পথ দেখান এবং কে তার অনুগ্রহের পূর্বে সংবাদবাহী সমীরণ (শ্বাসদ্বয়/ পঞ্চবায়ু) প্রেরণ করেন? অতএব; কাঁইয়ের সমকক্ষ অন্য উপাস্য আছে কী? কাঁই সর্বপ্রকার অংশীদারিত্বের ঊর্ধ্বে” (কুরান, নমল- ৬৩)।
৩. “ وَاصْبِرْ لِحُكْمِ رَبِّكَ فَإِنَّكَ بِأَعْيُنِنَا وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ حِينَ تَقُومُ(৪৮)” অর্থ; “আপনি আপনার পালনকর্তার আদেশের অপেক্ষায় ধৈর্যধারণ করুণ, অতঃপর; নিশ্চয় আপনি আমাদের দৃষ্টির সামনেই রয়েছেন এবং আপনি ঊষায় আপনার প্রভুর জপনা করুণ যতক্ষণ আপনি না দাঁড়ান” (কুরান, তুর- ৪৮)।
৪. “ لِكُلِّ نَبَإٍ مُسْتَقَرٌّ وَسَوْفَ تَعْلَمُونَ(৬৭) ” অর্থ; “প্রত্যেক সংবাদের সময় সুনির্দিষ্ট এবং শিঘ্রই তোমরা জানতে পারবে” (কুরান, আনয়াম- ৬৭)।
৫. “ أَمْ أَمِنتُمْ أَنْ يُعِيدَكُمْ فِيهِ تَارَةً أُخْرَى فَيُرْسِلَ عَلَيْكُمْ قَاصِفًا مِنْ الرِّيحِ فَيُغْرِقَكُمْ بِمَا كَفَرْتُمْ ثُمَّ لَا تَجِدُوا لَكُمْ عَلَيْنَا بِهِ تَبِيعًا(৬৯)” অর্থ; “পুনর্বার তন্মধ্যে তোমাদেরকে নিয়ে যাওয়া হতে কী তোমরা নিশ্চিন্ত রয়েছ? অতঃপর; তোমাদের জন্য প্রবল বায়ু প্রেরণ করা হবে। অতঃপর; অস্বীকার করার শাস্তি স্বরূপ তোমাদের নিমজ্জিত করা হবে। অতঃপর; তোমরা তোমাদের জন্য আমাদের ওপর কোনো সাহায্যকারী পাবে না” (কুরান, বনি ইস্রাইল- ৬৯)।
এসব উদ্ধৃতি দ্বারা নাসিকার বাম ও ডান শ্বাসের কথাই কেবল বলা হয়েছে। এমনভাবে বিশ্বের সব সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক পুস্তক-পুস্তিকায় নাসিকার শ্বাসরূপ বাতাসের অসংখ্য বর্ণনা-বিবরণ রয়েছে। কিন্তু সাধারণ অনুবাদক, ব্যৈখ্যিক ও টৈকিকগণ জীবনবিধানরূপ সাম্প্রদায়িক গ্রন্থাদির ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণগুলোকে জীবনের সাথে সঙ্গতি স্থাপন না করে কেউ প্রকৃতির সাথে আবার কেউবা সৌরজগতের সাথে সঙ্গতি স্থাপন করে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করার অপপ্রয়াস চালিয়েছেন। এর ফলেই মতবাদ অঙ্গনে বর্তমানে সব লেজে গোবরে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
তথ্যসূত্র (References)
(Theology's number formula of omniscient theologian lordship Bolon)
১ মূলক সংখ্যা সূত্র (Radical number formula) "আত্মদর্শনের বিষয়বস্তুর পরিমাণ দ্বারা নতুন মূলক সংখ্যা সৃষ্টি করা যায়।"
রূপক সংখ্যা সূত্র (Metaphors number formula)
২ যোজক সূত্র (Adder formula) "শ্বরবিজ্ঞানে ভিন্ন ভিন্ন মূলক সংখ্যা-সহগ যোগ করে নতুন যোজক রূপক সংখ্যা সৃষ্টি করা যায়; কিন্তু, গণিতে ভিন্ন ভিন্ন সংখ্যা-সহগ যোগ করে নতুন রূপক সংখ্যা সৃষ্টি করা যায় না।"
৩ গুণক সূত্র (Multiplier formula) "শ্বরবিজ্ঞানে এক বা একাধিক মূলক-সংখ্যার গুণফল দ্বারা নতুন গুণক রূপক সংখ্যা সৃষ্টি করা যায়; কিন্তু, মূলক সংখ্যার কোন পরিবর্তন হয় না।"
৪ স্থাপক সূত্র (Installer formula) "শ্বরবিজ্ঞানে; এক বা একাধিক মূলক সংখ্যা ভিন্ন ভিন্ন ভাবে স্থাপন করে নতুন স্থাপক রূপক সংখ্যা সৃষ্টি করা যায়; কিন্তু, মূলক সংখ্যার কোন পরিবর্তন হয় না।"
৫ শূন্যক সূত্র (Zero formula) "শ্বরবিজ্ঞানে মূলক সংখ্যার ভিতরে ও ডানে শূন্য দিয়ে নতুন শূন্যক রূপক সংখ্যা সৃষ্টি করা যায়; কিন্তু, মূলক সংখ্যার কোন পরিবর্তন হয় না।"
< উৎস [] উচ্চারণ ও ব্যুৎপত্তির জন্য ব্যবহৃত () ব্যুৎপত্তির জন্য ব্যবহৃত > থেকে √ ধাতু => দ্রষ্টব্য পদান্তর :-) লিঙ্গান্তর অতএব × গুণ + যোগ - বিয়োগ ÷ ভাগ
- A great 70% flat rate for your items.
- Fast response/approval times. Many sites take weeks to process a theme or template. And if it gets rejected, there is another iteration. We have aliminated this, and made the process very fast. It only takes up to 72 hours for a template/theme to get reviewed.
- We are not an exclusive marketplace. This means that you can sell your items on PrepBootstrap, as well as on any other marketplate, and thus increase your earning potential.