মন্ত্র

৭৭/১. মন্ত্র
Verse (ভার্স)/ ‘آية’ (আয়াত)

ভূমিকা (Prolegomenon)
এটি বাঙালী পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী এর মূলনীতি পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ একটি বাঙালী পৌরাণিক রূপক পরিভাষা। এর বাঙালী পৌরাণিক মূলক সত্তা মূলনীতি। এর বাঙালী পৌরাণিক উপমান পরিভাষা বিধান এবং এর বাঙালী পৌরাণিক ছদ্মনাম পরিভাষা প্রমাণ

অভিধা (Appellation)
মন্ত্র (বাপৌরূ)বি মন্ত্রণা, উপদেশ, যুক্তি, পরামর্শ, রহস্য, কর্মের মূলনীতি, verse, ‘آية’ (আয়াত) (প্র) পূজা অর্চনায় ব্যবহৃত পবিত্র বাক্য বা পবিত্র শব্দ, সাম্প্রদায়িক মতবাদ বিশ্বাসে ত্রাণকারী শব্দ ও শব্দগুলো, বেদ বা বেদাংশ (প্রাঅ) চরণ, গাথা, শ্লোক (শ্ববি) গুরুপাঠ, গুরুবাক্য, গুরুবাণী, গুরুমন্ত্র, গুরুনিরীক্ষ (দেপ্র) এটি বাঙালী পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী এর মন্ত্র পরিবারের একটি বাঙালী পৌরাণিক রূপক পরিভাষা বিশেষ (সংজ্ঞা) ২. সাধারণত; পূজায় ব্যবহৃত পবিত্র বাক্য বা শব্দাবলীকে বাংলায় ‘মন্ত্র বলা হয় ১. বাঙালী শ্বরবিজ্ঞানে ও বাঙালী পুরাণে, সর্বপ্রকার পরামর্শকে রূপকার্থে ‘মন্ত্র বলা হয় (বাপৌছ) প্রমাণ (বাপৌউ) বিধান (বাপৌরূ) মন্ত্র (বাপৌমূ) মূলনীতি।

মন্ত্রের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্ধৃতি (Some highly important quotations of verse)

. বেদ (Significance)
“দ্বাদশ প্রধয়শ্চক্রমেকং ত্রীণি নভ্যানি ক উ তচ্চিকেত, তম্মিন্ত্সাকং ত্রিশতান শংকবোহর্পিতাঃ ষষ্টির্ন চলাচলাস।” (ঋগ্বেদ সংহিতা, প্রথমখণ্ড, প্রথমমণ্ডল, সূক্ত- ১৬৪, ঋক্- ৪৮)

. ত্রিপিটক (Triplet)
“মগ্গানট্ঠঙ্গিকো সেট্ঠো সচ্চানং চতুরো পদা, বিরাগো সেট্ঠো ধম্মানং বিপদানঞ্চ চক্খুমা।” (ত্রিপিটক, ধম্মপদ, গাথা- ২৭৩)

. তৌরাত (ﺗﻮﺮﺍﺓ) (Bleed)
“তখন ইব্রাম তার উদ্ধার করা দ্রব্যাদির দশভাগের একভাগ সঠিক অধিকারীকে দিলেন।” (তৌরাত, সূচনাক্রম- ১৪/২০)

. যাবুর (زبور) (Psalms)
“হে দয়াল কাঁইজি, দশতারা ও সুরবাহার বাজিয়ে আর বীণার ঝংকার তুলে তোমাকে ধন্যবাদ জানানো, তোমার প্রশংসা গান গাওয়া সকালে তোমার অটল প্রেমের কথা রাতে তোমার বিশ্বস্ততার কথা প্রচার করা কত না আনন্দের ব্যাপার।” (জাবুর, ৯২/১- ৩)

. ইঞ্জিল (ﺍﻧﺠﻴﻝ) (Gospel)
“তবুও; তিনি রাজা নিযুক্ত হয়ে ফিরে এলেন এবং যে দশজন দাসকে সামর্থ্য দিয়েছিলেন তাদের ডেকে আনতে আদেশ দিলেন। তিনি জানতে চাইলেন, ব্যবসা করে তারা কে কত লাভ করেছে। প্রথমজন এসে বললেন; আপনার সামর্থ্য দ্বারা আমি দশগুণলাভ করেছি।” (ইঞ্জিল, লুক- ১৯/১৫- ১৬)

. কুরান (ﻘﺭﺍﻦ) (Triad)
“أَمْ يَقُولُونَ افْتَرَاهُ قُلْ فَأْتُوا بِعَشْرِ سُوَرٍ مِثْلِهِ مُفْتَرَيَاتٍ وَادْعُوا مَنْ اسْتَطَعْتُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ إِنْ كُنتُمْ صَادِقِينَ ” (কুরান, হুদ- ১৩)

. লালন (Lalon)
আজব এক রসিক নাগর ভাসছে রসে, হস্তপদ নাই তার বেগে ধায় সে। সে রসের সরোবর, তিলে তিলে হয় সাঁতার, উজান ভেটেন কল কে তার, ঘুরায় বসে। যোগমায়া যারে বলি, শূন্যে যোগ পাতালে তলি, লালন কয় স্মরণ নিলি, যায় স্বদেশে (পবিত্র লালন- ৯৬)।”

মন্ত্রের কয়েকটি সাধারণ উদ্ধৃতি (Some ordinary quotations of verse)
১.   “গুরু তুমি তন্ত্রের তন্ত্রী, গুরু তুমি মন্ত্রের মন্ত্রী, গুরু তুমি যন্ত্রের যন্ত্রী, না বাজাও বাজবে কেমনে।” (পবিত্র লালন- ৪১৫/৩)
২.   “তুমি রাধা তুমি কৃষ্ণ, মন্ত্রদাতা পরমইষ্ট, মন্ত্র দাও কানে, মন্ত্র দিতে সঁপে দিলে, সাধুগুরু বৈষ্ণব গোঁসাইর চরণে।” (পবিত্র লালন- ৩৬৮/২)
৩.   “নয়নে রূপ না দেখতে পায়, নামমন্ত্র জপলে কী হয়, নামের তুল্য নাম পাওয়া যায়, রূপের তুল্য কার।” (পবিত্র লালন- ৮৩৫/২)
৪.   “পঞ্চমন্ত্র পঞ্চচিহ্ন, ভালো-মন্দ করে ভিন্ন, ভদ্রতার অনন্য চিহ্ন, শিষ্ট-দুষ্ট চেনা যায়।” (বলন তত্ত্বাবলী- ১৮০)
৫.   “প্রেম-নদীতে প্রেমের-বড়শি ফেলবি খবর্দার, নিয়ে গুরুমন্ত্র ছাড়ো যন্ত্র, ঠিক হয়ে বসো তরীর ‘পর।” (পবিত্র লালন- ৬৪৬/১)
৬.   “যে জানে উলটমন্ত্র, খাটায় সে তন্ত্র, গুরু-রূপের মন্ত্র, বিষ ধরে সাধন করে, ভালো যার করণরীতি সাঁই দরদী, দর্শন দিবে তারে।” (পবিত্র লালন- ৮৪৭/৩)
৭.   “রূপে নয়ন করে খাঁটি, ভুলে যায় সে নাম মন্ত্রটি, চিত্রগুপ্ত তার পাপ-পুণ্য, কিরূপে লিখে খাতায়।” (পবিত্র লালন- ৮৯০/৩)
৮.   “শিষ্য যদি হয় ক্বায়িমি, কর্ণে দেয় মন্ত্রবাণী, গুরু নিজে করে চক্ষুষ্মানী, নইলে অন্ধ দুই নয়ন।” (পবিত্র লালন- ৩৯৭/৩)

রিপু অর্থে মন্ত্রপরিভাষাটির ব্যবহার (Using the terminology verse sense for foe)
১.   “দাঁড়ি মাঝির কুমন্ত্রণায়, পড়েছি কতবার ঘোলায়, এবার সুযোগ পেয়ে তাই, সব সঁপিলাম তোমার পায়।” (পবিত্র লালন- ৫১১/৩)
২.   “মন্ত্রণাকারী ছয়জন সদাই, অশেষ কু’কাণ্ড বাঁধায়, ডুবাল ঘাট অঘাটায়, আজ আমারে।” (পবিত্র লালন- ৬২৬/২)
৩.   “মন্ত্রির উপমন্ত্রী লাগে, ইঙ্গিত তেমন তত্ত্বের আগে, নিরাকার সাঁই আকারে জাগে, সেই ভেদ জানলি না।” (বলন তত্ত্বাবলী- ১৩৮)
৪.   “হাত করে মন্ত্রী ছয়জন, নগরে চালায় শাসন, বলন কাঁইজি বলেরে শোন, মনের দায়ে জেল খাটিবি।” (বলন তত্ত্বাবলী- ৬১)

মন অর্থে মন্ত্রপরিভাষাটির ব্যবহার (Using the terminology verse sense for psyche)
“দুঃর্শাসনের রাষ্ট্র ভেঙ্গে করেছি রাষ্ট্র গঠন, সুশাসন করব রাষ্ট্র শান্তি পাবে জনগণ, প্রধানমন্ত্রী আছেন যিনি- তিনি চোরের শিরোমণি, দেশ করছে চোরের খনি- আমায় রেখে জেলখানা।” (বলন তত্ত্বাবলী- ৯৮)

চল্লিশতলা অর্থে মন্ত্রপরিভাষাটির ব্যবহার (Using the terminology verse sense for forty-storey)
“তিনশতষাট জীবন ও মন্ত্রী চল্লিশজন, বাহাত্তর হাজার গ্রামে চব্বিশ হাজার ইউনিয়ন, দশথানা প্রতি জিলাতে- উৎপাত করে চোর ডাকাতে, ছয়জনা চোর ঠেকাতে- আমি একা পারলাম না।” (বলন তত্ত্বাবলী- ৯৮)

মন্ত্রের সংজ্ঞা (Definition of verse)
সাধারণত; যে কোনো পরামর্শকে মন্ত্র বলে।

মন্ত্রের আধ্যাত্মিক সংজ্ঞা (Theological definition of verse)
বাঙালী শ্বরবিজ্ঞানে ও বাঙালী পুরাণে; পূজায় ব্যবহৃত পবিত্র বাক্য বা শব্দাবলী ও কর্মের মূলনীতিমালাকে মন্ত্র বলে।

মন্ত্রের প্রকারভেদ (Variations of verse)
বাঙালী শ্বরবিজ্ঞানে ও বাঙালী পুরাণে; মন্ত্র ৭ প্রকার। যথা; ১. সুমন্ত্র ২. কুমন্ত্র ৩. নামমন্ত্র ৪. টোটকামন্ত্র ৫. কামমন্ত্র ৬. গুরুমন্ত্র ও ৭. কামরূপীমন্ত্র।

.   সুমন্ত্র (Conscientiousness)
সু-পরামর্শকে সুমন্ত্র বলে।

.   কুমন্ত্র (Machination)
কু-পরামর্শকে কুমন্ত্র বলে।

.   নামমন্ত্র (Rosary)
নামীগুরু কর্তৃক প্রদত্ত স্বস্ব সাম্প্রদায়িক মতবাদের উপাস্যের জপনীয় গোপন নামকে নামমন্ত্র বলে।

.   টোটকামন্ত্র (Charm)
সাম্প্রদায়িক ওষুধ ব্যতীত শুধু ঝাড় ফুঁক বা মাদুলি লেখার দ্বারা রোগ নিরাময়ের মন্ত্রগুলোকে টোটকা মন্ত্র বলে।

.  কামমন্ত্র (Consistency)
শুক্র নিয়ন্ত্রণ কৌশলকে কামমন্ত্র বলে।

.  গুরুমন্ত্র (Motto)
তিনজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে গুরুদেবের হাতের ওপর হাত রেখে পাপ বা অন্যায় সম্পাদনকারী ইন্দ্রিয়াদিকে সংযত করার অঙ্গীকার করাকে গুরুমন্ত্র বলে।

.   কামরূপী মন্ত্র (Talisman)
কামরূপ প্রদেশে আবিষ্কৃত সর্পমন্ত্রসহ সব মন্ত্রগুলোকে কামরূপী মন্ত্র বলে।

মন্ত্রের উপকার (Benefits of verse)
১.    কামমন্ত্রের সাহায্যে শুক্র নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
২.   কামমন্ত্রের সাহায্যে অটল হওয়া যায়।
৩.   কামমন্ত্রের সাহায্যে মৈথুনে পূর্ণতৃপ্তি আস্বাদন করা যায়।
৪.   কামমন্ত্রের সাহায্যে বৈতরণী অতিক্রম করে বৈকুণ্ঠ বা স্বর্গে প্রবেশ করা যায়।
৫.   কামমন্ত্রের সাহায্যে সাঁই ও কাঁইয়ের দর্শনলাভ করা যায়।

মন্ত্রের পরিচয় (Identity of verse)
এটি বাঙালী পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী এর মূলনীতি পরিবারের অধীন একটি বাঙালী পৌরাণিক রূপক পরিভাষা বিশেষ। সর্বপ্রকার পরামর্শকে মন্ত্র বলা হয়।

বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় মহামানবগণ অক্লান্ত পরিশ্রম করে শ্বরবিজ্ঞানের বাঙালী পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণীতে বর্ণিত বাঙালী পৌরাণিক মূলক সত্তার কার্যকলাপ নিয়ে রূপকার্থে মানবকল্যাণে যেসব মহাগ্রন্থ নির্মাণ করে গেছেন তার পদ বা চরণগুলোকে মন্ত্র বলা হয়। মহাকাব্যের মহামূল্যবান মন্ত্রগুলো বুঝে কিংবা না বুঝে সুললিত সুরে পাঠকারীদেরকে মন্ত্রী বলে। মন্ত্রীদের মন্ত্রাশ্রয়ী সাধক বা আউল সাধক বা সংক্ষেপে আউল বলে।

আউলরা মনে করেন মহাকাব্যের মহামূল্যবান মন্ত্রগুলোই মানবীয় সব উপাসনার মূল, মহা গ্রন্থাদির মন্ত্রগুলো সুললিত সুরে পাঠ করা অত্যন্ত পুণ্যের কাজ, মন্ত্রগুলোর অধিক যত্ন নেওয়াই পরম সাম্প্রদায়িকতা, মহাকাব্যের বিশেষ বিশেষ মন্ত্র পাঠ করে জলে ফুঁক দিয়ে সে জল পান করলে যে কোনো দুরারোগ্য ব্যাধিও আরোগ্য হয় এবং মহাকাব্যের বিশেষ বিশেষ মন্ত্র কাগজে লিখে মাদুলিতে পুরে দেহের বিশেষ বিশেষ অঙ্গে ধারণ করলে রোগ হতে আরোগ্যলাভ হয়। তারা আরও মনে করেন যে; পুরো মহাগ্রন্থটি মুখস্থ করে চিত্তে ধারণ করাও বড় পুণ্যের কাজ ইত্যাদি। তাই; বিশ্বের সর্বসাম্প্রদায়িক মতবাদের সর্বভাষার সব আউলরা যথানিয়মে যার যার ভাষায় যার যার সাম্প্রদায়িক গ্রন্থের মন্ত্রগুলো পুনঃপুন পাঠ করেন, পুনঃপুন শিক্ষা করেন ও মুখস্থ করে থাকেন। স্থূল দৃষ্টিতে বিশ্বের সর্ব সাম্প্রদায়িক মতবাদের সব মতবাদ ভীরু মানুষই মন্ত্রী বা আউল। যেহেতু; প্রত্যেকেই যার যার সাম্প্রদায়িক গ্রন্থের দুচারটি মন্ত্র প্রায় মুখস্থ করে থাকেন।

আউলদের মধ্যে অত্যন্ত মতবাদ ভীরু বা নিবেদিতপ্রাণ লোকও আছে যারা আপ্রাণ প্রচেষ্টা করে বিশ্বের প্রায় সর্বত্রই যার যার মহা গ্রন্থাদি পাঠকরা বা শিক্ষা করার জন্য বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মহাকাব্যের মন্ত্রগুলো পাঠদান করে জীবিকা অর্জনের পথ অবলম্বন করেছে সুপণ্ডিত মন্ত্রীরা। পাঠশালায় বেতনভোগী মন্ত্রীরা মহাকাব্যের মন্ত্রগুলোর সুগভীর তত্ত্ব উদ্ঘাটনের জন্য কোনো চেষ্টা করতে একেবারে নিরুৎসাহী। মন্ত্র নিয়ে অনেক পুস্তক-পুস্তিকাও তারা নির্মাণ করে থাকে। মানবকল্যাণে নির্মিত মহা গ্রন্থাদির মহামূল্যবান মন্ত্রগুলো দ্বারা জলপড়া, মাদুলিলেখা, আশীর্বাদ করা বা বিশেষ বিশেষ মন্ত্রপাঠ দ্বারা বিশেষ বিশেষ উপাসনা করা ইত্যাদি কাজের অধিক কিছু করতে মন্ত্রী আউলরা উৎসাহিত নয়। সারাবিশ্বে এ প্রকার মন্ত্রী আউলদের সংখ্যায় সর্বাধিক। মহাকাব্যের মন্ত্রগুলোর দ্বারা মনীষীদের নির্ধারিত নীতিমালা অনুযায়ী সামান্য কিছু উপাসনা করে অন্যান্যদের ব্যাপারে গর্ব করতেও দেখা যায় তাদের।

এ মন্ত্রস্তর হতেই সাম্প্রদায়িক বিভিন্ন দল উপদল ও সাম্প্রদায়িক শাখা-প্রশাখার সৃষ্টি হয়েছে সবচেয়ে অধিক। মন্ত্রাশ্রয় শ্বরবিজ্ঞানের সর্বনিম্নস্তর। অধিক মনীষী ভাবধারী, অধিক বুদ্ধিমান পরিচয়দানকারী ও অধিক শিক্ষিত ইচড়ে পাকা লোকদেরকে দেশের বিজ্ঞ সাধুগণ আজীবন মন্ত্রাশ্রয়েই রেখে দেন, তাদের নিকট ঊর্ধ্বস্তরের কোনো গুরুত্বপূর্ণ আধ্যাত্মজ্ঞানের কথা প্রকাশ করেন না কোনো দিন।

বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার প্রচলিত মনীষী, ঠাকুর, চার্চ, ভিক্ষু, অর্হৎ, কবিরাজ, সাপুড়ে, বেদে, বৈদ্য ও জ্যোতিষী প্রত্যেকেই একই পর্যায়ের মন্ত্রী বা আউল। কারণ; প্রত্যেকেই যার যার মন্ত্রকে প্রাধান্য প্রদান করে থাকে এবং অন্যান্যদের মন্ত্রগুলোকে অলীক, অবাস্তব বা মূল্যহীন মনে করে থাকে। বেদেদের সাপ ধরা মন্ত্র বা সাপের বিষ নামানো মন্ত্র, কবিরাজের টোটকা মন্ত্র, সাম্প্রদায়িক মনীষীদের সাম্প্রদায়িক গ্রন্থের মন্ত্র, অন্যান্যদের বৈষয়িক মন্ত্রকে সবাই স্বস্থানে মহামন্ত্র বলেই মনে করে। তা দ্বারা ঝাড়ফুঁক করা, জলপড়া, মাদুলি লেখা, জনসাধারণকে আশীর্বাদ করা ইত্যাদি কাজ অনেক আউলরা করে যার যার জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। এমনকি; একজন বেদে তার সর্পমন্ত্রগুলোকে সর্বমন্ত্রের ঊর্ধ্বে স্থান দিতে দেখা যায়। তাদের দৃঢ় বিশ্বাস এ মন্ত্রগুলো চির সত্য এবং বিশাল ক্ষমতাধর। তাই; কোনো মানুষকে সাপে কামড় দিলে কোনো ঔষধ সেবন ব্যতীতই একমাত্র সর্পমন্ত্র দ্বারা ঝাড়ফুঁক করেই সর্পবিষ নিরাময় করা সম্ভব বলে তারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে। এক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক মহা গ্রন্থাদির কোনো শ্লোক বা বেদের কোনো মন্ত্রই তাদের নিকট গ্রহণযোগ্য নয়।

অনুরূপভাবে একজন কবিরাজও টোটকামন্ত্র দ্বারা সর্বপ্রকার চিকিৎসা, জলপড়া, ঝাড়ফুঁক, মাদুলি লেখা, সুতা পড়া ইত্যাদি কর্ম করে জীবিকা নির্বাহ করে যাচ্ছে আজীবন। তারাও কবিরাজি টোটকামন্ত্রকে মহামন্ত্র বলেই মনে করে থাকে। তারা এও মনে করে যে তাদের টোটকামন্ত্রের ওপর বিশ্বে আর কোনো মন্ত্রই আবিষ্কার হয় নি। তাদের ধারণা মতে; কবিরাজি মন্ত্রগুলো আকাট্য ও অব্যর্থ। যেমন; বেদে ও কবিরাজের নিকট সর্পমন্ত্র ও টোটকা মন্ত্রগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও অব্যর্থ। তেমনই; মন্ত্রবাদী সাম্প্রদায়িক মনীষীদের নিকটও সাম্প্রদায়িক মহাকাব্যের মন্ত্রগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও অব্যর্থ। এমন বেদে, কবিরাজ ও সাম্প্রদায়িক মনীষী সারাবিশ্বের সর্বভাষায় সর্বত্রই রয়েছে এবং যার যার ভাষায় যার যার জাতির নিকট সবাই পুঁজনীয় ও বরণীয়। এমন বেদে, কবিরাজ, ঠাকুর, পুরোহিত, মনীষী, চার্চ, পাদ্রি, ভিক্ষু, শ্রমণ, অর্হৎ, গুরু ও গোঁসাই সবাই একই পর্যায়ের মন্ত্রবাদী এবং তারা সবাই মন্ত্রী। তাদের সবাইকেই শ্বরবিজ্ঞানে মন্ত্রীআউল বা আউল বলা হয়।

বিশ্বের প্রায় সব দেশে সব ভাষায় বেদে কবিরাজ ও সাম্প্রদায়িক মনীষী আছে। এমনকি; বিশ্বের প্রায় সব ভাষাতেই সর্পমন্ত্র, টোটকামন্ত্র এবং ছোট, মাঝারি বা বড় প্রকারের সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক গ্রন্থ বা মহাগ্রন্থ রয়েছে। বিশ্বের সর্ব ভাষাতেই সর্পমন্ত্র, টোটকামন্ত্র ও মহাকাব্যের মন্ত্রগুলোর দ্বারা ঝাড়ফুঁক, জলপড়া, সুতাপড়া, মাদুলি লেখা ও আশীর্বাদ করা ইত্যাদির প্রচলন আছে। বিশ্বের সর্ব ভাষার সর্ব সাম্প্রদায়িক মতবাদের সাধারণ মানুষ এসব বিশ্বাস করেন এবং বেদে, কবিরাজ ও মনীষীদের নিকট হতে এসব গ্রহণ করে উপকার পেয়ে থাকে। কিন্তু মন্ত্রী আউলরা শুধু নিজের মন্ত্রগুলোকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকে। মন্ত্রবাদীরা কখনও এমন মনে করে না যে বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাতেই সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক গ্রন্থ আছে, টোটকা মন্ত্রও আছে, সর্পমন্ত্রও আছে এবং তা দ্বারা মাদুলি লেখা, সুতা পড়া, জলপড়া, আশীর্বাদ করা ইত্যাদির প্রচলন। বিশ্বের সর্বত্রই বেদে, কবিরাজ, মনীষী, ঠাকুর, পুরোহিত, চার্চ, ভিক্ষু ও শ্রমণ সবই আছে।

তারা সবাই যার যার স্থানে থেকে মনে করে যে; তাদের সেটিই সর্বশ্রেষ্ঠ মন্ত্র, তাদের সেটিই সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ ইত্যাদি ইত্যাদি। তারা সবাই বলে আমাদের মন্ত্র শ্রেষ্ঠ, আমাদের গ্রন্থ শ্রেষ্ঠ, আমাদের সাম্প্রদায়িক মতবাদ শ্রেষ্ঠ, আমাদের গ্রন্থটি স্বয়ং আকাশবাণী ও আমাদের গ্রন্থটি স্বর্গীয় বাণী এজন্য; আমাদের মতবাদই শ্রেষ্ঠ ইত্যাদি। যারফলে; এ হতে মারামারি, দলাদলি ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষসহ স্বভাগাভাগির সৃষ্টি হয়। মূলত এভাবে সারাবিশ্বে অসংখ্য সাম্প্রদায়িক মতবাদের সৃষ্টি হয়েছে। আবার একই সাম্প্রদায়িক মতবাদের মধ্যে অসংখ্য দল উপদল ও শাখাপ্রশাখার সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু মূলে ব্যাপারটি হলো; যার যার মন্ত্র, গ্রন্থ, ভাষা, মতবাদ, দল ও সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক নেতা তার তার নিকট সর্বোৎকৃষ্ট ও সুমহান। নিজের মন্ত্র, গ্রন্থ, ভাষা, মতবাদ, দল ও সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক নেতাকে কেউই কখনও ছোট করে বিবেচনা করে না এটাই মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি।

হিন্দুরা বলে; “আমাদের স্বর্গীয় ভাষা ‘নাগরী’।” তেমনই; মুসলমানরা বলে; “আমাদের জান্নাতের ভাষা ‘আরবি’।” হিন্দুরা বলে; “আমাদের আদিপুরুষ ‘গোবিন্দ’।” তেমনই; মুসলমানরা বলে; “আমাদের আদিপুরুষ ‘আদম’।” হিন্দুরা বলে; “আমাদের আদিপিতা ‘মনু’।” তেমনই; মুসলমানরা বলে; “আমাদের আদিপিতা ‘আদম’।” হিন্দুরা বলে; “আমাদের ‘কৃষ্ণ’ মহান কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে মহামূল্যবান ভাষণ প্রদান করেছেন।” তেমনই; মুসলমানরা বলে; “আমাদের ‘মুহাম্মাদ’ বিদায় হজে অত্যন্ত সারগর্ভ বক্তব্য প্রদান করেছেন।” হিন্দুরা বলে; “আমাদের দেব-দেবতা তেত্রিশ কোটি (৩৩,০০,০০,০০০)।” তেমনই; মুসলমানরা বলে; “আমাদের নবি-রাসুল একলাখ চব্বিশ হাজার (১,২৪,০০০)।” হিন্দুরা বলে; “আমাদের দেবতাগণের মধ্যে ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির ও লঙ্কাপতি রাবণ এ দু’জন সশরীরে স্বর্গে প্রবেশ করেছেন।” অন্যদিকে; মুসলমানরা বলে; “আমাদের নবিদের মধ্যে হযরত ‘ইদরিস’ ও মরিয়মপুত্র হযরত ‘ইসা’ এ দু’জন সশরীরে স্বর্গে প্রবেশ করেছেন।” হিন্দুরা বলে; “আমাদের কৃষ্ণের ১,৬০০ গোপী ছিল।” তেমনই; মুসলমানরা বলে; “আমাদের সোলাইমানের ৩০০ বিবি ছিল।” হিন্দুরা বলে; “আমাদের স্বর্গ ৮টি কিন্তু নরক ২৭টি।” তেমনই; মুসলমানরা বলে; “আমাদের স্বর্গ ৮টি কিন্তু নরক ৭টি।” ইত্যাদি।

মন্ত্রী আউলরা স্বমন্ত্রের প্রতি অতিষ্ঠ হয়ে এক সময় নিজ-নিজ গণ্ডি পেরিয়ে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজতে থাকে। জাতিগত, সাম্প্রদায়িক ও গোত্রীয় গোঁড়ামি পরিত্যাগ করে মুক্তির উপায় অন্বেষণ করতে থাকে। এমন পর্যায়ে আউলরা অনন্যোপায় হয়ে ও অগত্যা পড়ে যার যার সাম্প্রদায়িক গ্রন্থের মধ্যে ও মন্ত্রের মধ্যে অতি উত্তম বা ভালো ভালো নাম অন্বেষণ করতে থাকে। অতঃপর; যার যার ভাষায় সাম্প্রদায়িক গ্রন্থের মন্ত্রগুলোর মধ্যে থেকে ১১, ৩৩, ৯৯, ১০১ বা ১০০০ ইত্যাদি সংখ্যক সুন্দর সুন্দর নাম সংগ্রহ করে এক একটি নির্ঘণ্ট নির্মাণ করে। মন্ত্রপাঠ ও প্রচারের চেয়ে উপাস্যের নামজপনা অতি উত্তম, নামজপনায় কল্যাণ আরও অধিক ইত্যাদি জনরব প্রচার করতে থাকে। আবার এও বলে থাকে যে; এ নামগুলো জপনার মধ্যেই চির মুক্তি নিহিত রয়েছে। অনেকে এ কথা মনে ও চিত্তে বিশ্বাসও করে থাকে। যারফলে; মন্ত্রী আউলদের মধ্যে থেকে নামী আউল নামে আরও একটি নতুন দলের সৃষ্টি হয়।

কয়েক শতাব্দী পরে উক্ত নামগুলোর ওপর ভিত্তি করে মনীষী ও নামী আউলরা বিভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন করে। কোন নাম জপনায় কী উপকার, কোন নামের মাদুলি লেখায় কী কল্যাণ, কোন নামটি কিভাবে জপনা করতে হয় ইত্যাদি। আরও কিছুদিন পরে নামজপনার ওপর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অনেক বড় বড় গ্রন্থাদিও নির্মিত হয়। এসব পুস্তক-পুস্তিকাকে পুঁজি করে মন্ত্রীআউল ও নামী আউলরা তর্কবিতর্কে জড়িয়ে পড়ে কিংবা বিতর্কসভার আয়োজন করে থাকে। যারফলে; একই সাম্প্রদায়িক মতবাদের মধ্যে মন্ত্রীআউল ও নামীআউল এ উভয় দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব সংঘাত, সংঘর্ষ ও সংগ্রামের সূত্রপাত হয়।

তথ্যসূত্র (References)

(Theology's number formula of omniscient theologian lordship Bolon)

১ মূলক সংখ্যা সূত্র (Radical number formula)
"আত্মদর্শনের বিষয়বস্তুর পরিমাণ দ্বারা নতুন মূলক সংখ্যা সৃষ্টি করা যায়।"

রূপক সংখ্যা সূত্র (Metaphors number formula)

২ যোজক সূত্র (Adder formula)
"শ্বরবিজ্ঞানে ভিন্ন ভিন্ন মূলক সংখ্যা-সহগ যোগ করে নতুন যোজক রূপক সংখ্যা সৃষ্টি করা যায়; কিন্তু, গণিতে ভিন্ন ভিন্ন সংখ্যা-সহগ যোগ করে নতুন রূপক সংখ্যা সৃষ্টি করা যায় না।"

৩ গুণক সূত্র (Multiplier formula)
"শ্বরবিজ্ঞানে এক বা একাধিক মূলক-সংখ্যার গুণফল দ্বারা নতুন গুণক রূপক সংখ্যা সৃষ্টি করা যায়; কিন্তু, মূলক সংখ্যার কোন পরিবর্তন হয় না।"

৪ স্থাপক সূত্র (Installer formula)
"শ্বরবিজ্ঞানে; এক বা একাধিক মূলক সংখ্যা ভিন্ন ভিন্ন ভাবে স্থাপন করে নতুন স্থাপক রূপক সংখ্যা সৃষ্টি করা যায়; কিন্তু, মূলক সংখ্যার কোন পরিবর্তন হয় না।"

৫ শূন্যক সূত্র (Zero formula)
"শ্বরবিজ্ঞানে মূলক সংখ্যার ভিতরে ও ডানে শূন্য দিয়ে নতুন শূন্যক রূপক সংখ্যা সৃষ্টি করা যায়; কিন্তু, মূলক সংখ্যার কোন পরিবর্তন হয় না।"

< উৎস
[] উচ্চারণ ও ব্যুৎপত্তির জন্য ব্যবহৃত
() ব্যুৎপত্তির জন্য ব্যবহৃত
> থেকে
√ ধাতু
=> দ্রষ্টব্য
 পদান্তর
:-) লিঙ্গান্তর
 অতএব
× গুণ
+ যোগ
- বিয়োগ
÷ ভাগ

Here, at PrepBootstrap, we offer a great, 70% rate for each seller, regardless of any restrictions, such as volume, date of entry, etc.
There are a number of reasons why you should join us:
  • A great 70% flat rate for your items.
  • Fast response/approval times. Many sites take weeks to process a theme or template. And if it gets rejected, there is another iteration. We have aliminated this, and made the process very fast. It only takes up to 72 hours for a template/theme to get reviewed.
  • We are not an exclusive marketplace. This means that you can sell your items on PrepBootstrap, as well as on any other marketplate, and thus increase your earning potential.

পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী

উপস্থ (শিশ্ন-যোনি) কানাই,(যোনি) কামরস (যৌনরস) বলাই (শিশ্ন) বৈতরণী (যোনিপথ) ভগ (যোনিমুখ) কাম (সঙ্গম) অজ্ঞতা অন্যায় অশান্তি অবিশ্বাসী
অর্ধদ্বার আগধড় উপহার আশ্রম ভৃগু (জরায়ুমুখ) স্ফীতাঙ্গ (স্তন) চন্দ্রচেতনা (যৌনোত্তেজনা) আশীর্বাদ আয়ু ইঙ্গিত ডান
চক্ষু জরায়ু জীবনীশক্তি দেহযন্ত্র উপাসক কিশোরী অতীতকাহিনী জন্ম জ্ঞান তীর্থযাত্রা দেহাংশ
দেহ নর নরদেহ নারী দুগ্ধ কৈশোরকাল উপমা ন্যায় পবিত্রতা পাঁচশতশ্বাস পুরুষ
নাসিকা পঞ্চবায়ু পঞ্চরস পরকিনী নারীদেহ গর্ভকাল গবেষণা প্রকৃতপথ প্রয়াণ বন্ধু বর্তমানজন্ম
পালনকর্তা প্রসাদ প্রেমিক বসন পাছধড় প্রথমপ্রহর চিন্তা বাম বিনয় বিশ্বাসী ব্যর্থতা
বিদ্যুৎ বৃদ্ধা মানুষ মুষ্ক বার্ধক্য মুমুর্ষুতা পুরুষত্ব ভালোবাসা মন মোটাশিরা যৌবন
রজ রজপট্টি রজস্বলা শুক্র মূত্র যৌবনকাল মনোযোগ রজকাল শত্রু শান্তি শুক্রপাত
শুক্রপাতকারী শ্বাস সন্তান সৃষ্টিকর্তা শুক্রধর শেষপ্রহর মূলনীতি সন্তানপালন সপ্তকর্ম স্বভাব হাজারশ্বাস
ADVERTISEMENT
error: Content is protected !!