০৪/০২. যবন
Infidel (ইনফিডেল)/ ‘ﻜﺎﻔﺮ’ (কাফির)

ভূমিকা (Prolegomenon)
এটি ‘বাঙালী পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী’ এর ‘অবিশ্বাসী’ পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ ‘বাঙালী পৌরাণিক ছদ্মনাম পরিভাষা’। এর ‘বাঙালী পৌরাণিক মূলক সত্তা’ ‘অবিশ্বাসী’ এবং এর ‘বাঙালী পৌরাণিক রূপক পরিভাষা’ ‘নাস্তিক’।

অভিধা (Appellation)
যবন (বাপৌরূ)বিণ অহিন্দু, বিধর্মী, ম্লেচ্ছ, বিদেশী, প্রাচীন গ্রিক জাতি, আইওনিয়াবাসী গ্রিক, infidel, ‘ﻜﺎﻔﺮ’ (কাফির) (আল) সাম্প্রদায়িক সংস্কারগুলোতে অবিশ্বাসী (প্র) প্রচলিত হিন্দু সাম্প্রদায়িক মতবাদ অমান্যকারী ব্যক্তি (শ্ববি) অবিশ্বাসী, সন্দিগ্ধ, বিশ্বাস করে না এমন (রূপ্রশ) নাস্তিক, পাপিষ্ঠ, মতবাদ বিদ্বেষী, Atheist (ইংপ) unfaithful (ইপৌচা) মিলহিদ (আ.ﻤﻟﺤﺩ), কাফির (আ.ﻜﺎﻔﺮ) (পরি) সৃষ্টিকর্তা (ব্রহ্মা) পালনকর্তা (বিষ্ণু) ও পুনর্জন্মে অবিশ্বাসী ব্যক্তি (দেপ্র) এটি ‘বাঙালী পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী’ এর ‘অবিশ্বাসী’ পরিবারের একটি ‘বাঙালী পৌরাণিক ছদ্মনাম পরিভাষা’ বিশেষ (সংজ্ঞা) ১. সাধারণত; প্রচলিত হিন্দু সাম্প্রদায়িক মতবাদ আমান্যকারীকে বাংলায় ‘যবন’ বলা হয় ২. বাঙালী শ্বরবিজ্ঞানে ও বাঙালী পুরাণে, ভারতীয় দেবতাবাদ (হিন্দু মতবাদ) অবিশ্বাসকারীকে রূপকার্থে ‘যবন’ বলা হয় (বাপৌছ) যবন (বাপৌরূ) নাস্তিক (বাপৌমূ) অবিশ্বাসী Jস্ত্রী যবনী।

যবনের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্ধৃতি (Some highly important quotations of infidel)
১.   “ত্রিপুরাতে বাবার বাড়ি, মা যবন হয় মণিপুরী, বৃথা এদেশ ঐদেশ ঘুরি, আপনঘরের সংবাদ পাই না।” (বলন তত্ত্বাবলী- ২৬৯)।
২.   “ভক্তের দ্বারে বাঁধা আছেন সাঁই, হিন্দু কী যবন বলে, জাতির বিচার নাই।” (পবিত্র লালন- ৭০৭/১)।

যবনের সংজ্ঞা (Definition of infidel)
সাধারণত; প্রচলিত হিন্দু সাম্প্রদায়িক মতবাদ আমান্যকারীকে যবন বলে।

যবনের আধ্যাত্মিক সংজ্ঞা (Theological definition of infidel)
বাঙালী শ্বরবিজ্ঞানে ও বাঙালী পুরাণে; সাম্প্রদায়িক দেব-দেবী অবিশ্বাসকারীকে যবন বলে।

যবনের প্রকারভেদ (Variations of infidel)
বাঙালী শ্বরবিজ্ঞানে ও বাঙালী পুরাণে; যবন দুই প্রকার। যথা; ১. উপমান যবন ও ২. উপমিত যবন।

১. উপমান যবন (Analogical infidel)
সাধারণত; প্রচলিত হিন্দু সাম্প্রদায়িক মতবাদ আমান্যকারীকে উপমান যবন বলে।

২. উপমিত যবন (Compared infidel)
বাঙালী শ্বরবিজ্ঞানে ও বাঙালী পুরাণে; সত্য অস্বীকারকারীকে উপমিত যবন বলে।

যবনের পরিচয় (Identity of infidel)
এটি ‘বাঙালী পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী’ এর ‘অবিশ্বাসী’ পরিবারের একটি ‘বাঙালী পৌরাণিক ছদ্মনাম পরিভাষা’ বিশেষ। সাধারণত; হিন্দু সাম্প্রদায়িক মতবাদ অমান্যকারীকে যবন বলা হয়। অন্যদিকে; শ্বরবিজ্ঞানে; সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক মতবাদ অমান্যকারীকে যবন বলা হয়। হিন্দু দর্শনের যবনকে ইসলামী দর্শনে নাস্তিক বলা হয়। অর্থাৎ; সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক দর্শনের রূপকথা, মনগড়া ব্যাখ্যা, অযৌক্তিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও অনুমানপ্রসূত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ অমান্যকারীকে যবন বা নাস্তিক বলা হয়। পক্ষান্তরে; সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক অনুশাসন অন্ধভাবে অনুকরণ, অনুসরণ ও মান্যকারীকে আস্তিক বলা হয়। কিন্তু প্রকৃত বাস্তবতা হলো; যবন বা নাস্তিকরা স্রষ্টাও অস্বীকার করে না এবং সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক দর্শনও অমান্য করে না। এমনকি; তারা সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক উপসনাও অস্বীকার করে না। তারা কেবল মনগড়া, অলীক, অযৌক্তিক, অনুমানপ্রসূত, অন্ধবিশ্বাসপ্রসূত ও বিজ্ঞান বহির্ভূত রূপকথাকেই অস্বীকার করে। এজন্য; যবন ও নাস্তিক পরিভাষাটির দ্বারা কখনই সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক মতবাদ বিদ্বেষীকে বুঝায় না। বরং; যবন ও নাস্তিক পরিভাষাটি দ্বারা মুক্তমনা ও স্বাধীনমনা লোককে বুঝায়। অথচ বড় হাস্যকর ব্যাপার হলো; বাংভারতের একশ্রেণির সাম্প্রদায়িক যবন ও নাস্তিককে স্রষ্টাদ্রোহী ও স্রষ্টাবিদ্বেষী বলে মনে করে। এটা তাদের চরম দৈন্যতা ও চরম বোকামি। এখানেই; তাদের এ বোকামি ও অন্ধত্ব সীমাবদ্ধ নয়; সাম্প্রদায়িকরা যবন ও নাস্তিকদেরকে ফাঁসি দিয়ে অথবা দেশান্তর করে; তাদের অন্ধবিশ্বাসের বিষবৃক্ষ আরও পাকাপক্ব করতে চায়। সংখ্যালঘু যবন ও নাস্তিকের ওপর সাম্প্রদায়িকদের এমন কদোক্তি বড়ই দুঃখজনক। অন্ধবিশ্বাসীরা যেনতেন মতবাদ যার তার ওপর চাপিয়ে দিবে। সেটা অমান্য করলেই সে হয়তো যবন নয়তো নাস্তিক।

যবন ও নাস্তিকদের ব্যাপারে এতটুকু বলা যায় যে; তাদের দ্বারা পৃথিবীর কোথাও কখনও রক্তপাত বা হানাহানি হয় নি। কিন্তু অন্ধবিশ্বাসী সাম্প্রদায়িকরাই যুগে যুগে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে একজনের মতবাদ অন্যজনের মাথায় চাপিয়ে দিতে গিয়ে সাগর-সাগর রক্তক্ষয় করেছে। পরিশেষে বলা যায়; পৃথিবীর সর্বত্র সর্বকালে ও সর্বযুগে অন্ধবিশ্বাসীরাই ছিল প্রকৃত সাম্প্রদায়িক মতবাদী। অন্যদিকে; বিজ্ঞানী ও দার্শনিকরাই ছিল যবন ও নাস্তিক। আজও পৃথিবীর সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক অঙ্গনের চিত্র ঠিক তা-ই। মানব নির্মিত মতবাদকে ঐশ্বরিক বিধান, ঐশি বিধান, স্বর্গীয় বিধান ও ধর্ম বলা এবং এর পক্ষ-বিপক্ষ গ্রহণ করা হতে বিরত থাকা সব মানুষের একান্ত কর্তব্য। কারণ; এতে শান্তির চেয়ে অশান্তি বাড়ে বৈ হ্রাস পায় না।