৪৮/২৫. সুধা
Nectar (নেক্টার)/ ‘رحيق’ (রাহিক্ব)
ভূমিকা (Prolegomenon)
এটি ‘বাঙালী পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী’ এর ‘পালনকর্তা’ পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ একটি ‘বাঙালী পৌরাণিক ছদ্মনাম পরিভাষা’। এর ‘বাঙালী পৌরাণিক মূলক সত্তা’ ‘পালনকর্তা’। এর ‘বাঙালী পৌরাণিক রূপক পরিভাষা’ ‘সাঁই’। এর ‘বাঙালী পৌরাণিক উপমান পরিভাষা’ ‘অমৃতসুধা, গ্রন্থ, চন্দ্র, জল১, তীর্থবারি, পাখি৬, ফল ও ফুল১’। এর ‘বাঙালী পৌরাণিক চারিত্রিক পরিভাষা’ ‘ননি, বিষ্ণু, মাণিক, রাজা, রাম, লালন, স্বরূপ ও হরি’ এবং এর অন্যান্য ‘বাঙালী পৌরাণিক ছদ্মনাম পরিভাষা’ ‘ঈশ্বর, উপাস্য, চোর, পতিতপাবন, পরমগুরু, প্রভু ও মনের-মানুষ’। এ পরিভাষাটি শ্বরবিজ্ঞানের ‘বাঙালী পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী’তে বর্ণিত ‘দুগ্ধ’, ‘শুক্র’, ‘সুধা’ ও ‘মধু’ ইত্যাদি ‘বাঙালী পৌরাণিক মূলক সত্তা’র ব্যাপক পরিভাষা রূপে ব্যবহৃত হয়। এজন্য; বর্ণনার ক্ষেত্র অনুযায়ী এর সঠিক দেহতাত্ত্বিক ব্যুৎপত্তি উদ্ঘাটন করা একান্ত প্রয়োজন।
অভিধা (Appellation)
সুধা১ (বাপৌছ)বি অমৃত, অমির, পীযূষ, সর্গীয়জল জ্যোৎস্না, জল, যা পান করলে অমর হওয়া যায়, অতিশয় সুস্বাদু খাদ্য, nectar, ‘رحيق’ (রাহিক্ব) বিণ অমর, অতি সুস্বাদু, রসনার তৃপ্তিদায়ক, nectar, ambrosia, malmsey (প্র) পৌরাণিক বর্ণনা অনুসারে; স্বর্গীয় দেবতাগণ যে জল পান করে অমরত্বলাভ করেন (শ্ববি) এমন তরল-মানুষ; যে এখনও মূর্তাকার ধারণ করে নি। মাতৃগর্ভে ভ্রূণ লালনপালনের দায়িত্ব পালনকারী সুমিষ্ট, সুপেয় ও শ্বেতবর্ণের জল (রূপ্রশ) পালনকর্তা, ঈশ্বর, উপাস্য, নারায়ণ, নিধি, নিমাই, নিরঞ্জন, প্রভু, স্বরূপ, guardian, রব (আ.ﺮﺐ) (পারদে) খোদা (ফা.ﺨﺪﺍ) (ইদে) মা’বুদ (আ.ﻤﻌﺑﻭﺪ), মুহাম্মদ (আ.ﻤﺤﻤﺪ), রাসুল (আ.رَسُول) (ইপ) কাওসার (আ.ﻜﻭﺛﺮ), ফুরাত (আ.ﻔﺭﺍﺖ) (ইংপ) God, nectar, elixir (দেপ্র) এটি ‘বাঙালী পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী’ এর ‘পালনকর্তা’ পরিবারের ‘বাঙালী পৌরাণিক ছদ্মনাম পরিভাষা’ বিশেষ (সংজ্ঞা) ১. সাধারণত; যে কোনো সুপেয় পানীয়কে সুধা বলা হয় ২. শ্বরবিজ্ঞানে; কেবল অমৃত মানবজলকে সুধা বলা হয় (বাপৌছ) ঈশ্বর, উপাস্য, চোর, পতিতপাবন, পরমগুরু, প্রভু, মনের-মানুষ ও সুধা (বাপৌচা) ননি, বিষ্ণু, মাণিক, রাজা, রাম, লালন, স্বরূপ ও হরি (বাপৌউ) অমৃতসুধা, গ্রন্থ, চন্দ্র, জল১, তীর্থবারি, পাখি৬, ফল ও ফুল১ (বাপৌরূ) সাঁই (বাপৌমূ) পালনকর্তা।
সুধা২ ক্রি সুধানো, জিজ্ঞাসা করা, সংবাদ নেওয়া, ask, inquire, question, query, interrogate.
সুধার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্ধৃতি (Some highly important quotations of nectar)
১. “চাঁদে চাঁদ ঢাকা দেয়া, চাঁদে দেয় চাঁদের খেয়া (দেয়রে), জমিনেতে ফলছে মেওয়া, ঐ চাঁদের সুধা ঝরে।” (পবিত্র লালন- ৪৫২/৩)।
২. “ভরানদী শূন্য করো- শূন্যনদী জলে ভরো, যা খুশি তা করো- কেহ নাই বাঁধা দিবার, তিনপাড়েতে বার্নিস করা- মধু সুধা জল ত্রিধারা, মধু খায় মদনচোরা- মধুমতি নামটি তার।” (বলন তত্ত্বাবলী- ২১৬)।
৩. “সে অমৃত সাগরের সুধা, পান করলে জীবের ক্ষুধা তৃষ্ণা, রয় না, লালন মরল জল পিপাসায়রে, কাছে থাকতে নদী মেঘনা।” (পবিত্র লালন- ২৫৭/৫)।
৪. “স্ত্রীর গর্ভে স্বামীর জন্ম, কে বুঝে তার নিগূঢ়-মর্ম, সুধা শুক্রের হলে গম্য, মনের আঁধার কেটে যায়।” (পবিত্র লালন- ৫৩৮/৩)।
সুধার সাধারণ উদ্ধৃতি (Some ordinary quotations of nectar)
১. “অগ্নি ঢাকা রয় ভস্মের ভিতরে, তেমনই, সুধা রয় গরলে ছল করে, সুধার লোভে গিয়ে- মরে গরল খেয়ে, মন্থনের সাঁতার না জানে যারা।” (পবিত্র লালন- ৪১৮/২)।
২. “অগ্নি যেমন ভস্মে ঢাকা, তেমনই; সুধা গরলমাখা, মন্থনদণ্ডে যাবে দেখা, ভিন্ন আকারে।” (পবিত্র লালন- ৯২০/২)।
৩. “আকাশে বরিষণ হলে, সুষুম্না ইড়া পিঙ্গলে, বলন কয় নিরীক্ষ বলে, যায়রে সুধার ভেদ জানা।” (বলন তত্ত্বাবলী- ১৮)।
৪. “আগুন আছে ভস্মে ঢাকা, সুধা তেমন গরল মাখা, মন্থন করলে যাবে দেখা, ভিন্ন আকারে।” (পবিত্র লালন- ৭০১/২)।
৫. “আপন মনে যার গরলমাখা থাকে, যেখানে যায় সুধার আশায় তথায় গরলই দেখে।” (পবিত্র লালন- ১০৮/১)।
৬. “আসমানি আইন পরশরতন, চিনলি না মন দিন থাকতে, সুধার লোভে গরল খেয়ে, মরলি বিষের জ্বালাতে।” (পবিত্র লালন- ১৮৬/১)।
৭. “কও গুরু কোন সাগরে, জল বাইরে সুধা ভিতরে, বায়ুকলে আহরণ করে, পাড়ি দিয়ে সে ত্রিমোহনা।” (বলন তত্ত্বাবলী- ১৫৭)।
৮. “কতজন সুধার আশায়, ফণীর মুখে হাত দিতে যায়, বিষের আতস লেগে গায়, শেষে তার মরণদশা হয়রে।” (পবিত্র লালন- ৯৪৪/২)।
৯. “কামাঘাতে হত মনরে আমার, সুধা ত্যেজে গরল খায় বেশুমার, লালন কয় মনরে তোর, ভগ্নদশা ভারী ঘটল আখিরে।” (পবিত্র লালন- ২৮২/৪)।
১০. “কোন রাগে সে মানুষ, রয় মহারসের ধনী, পদ্মে মধু চন্দ্রে সুধা, জোগায় বসে রাত্রদিনি।” (পবিত্র লালন- ৩৬৭/১)।
১১. “ক্ষীর মোতি ও সুধা রতী- দুগ্ধের মান মহান অতি, দেখিতে পাবিরে সেইখানে, সপ্তবিংশে হয়রে উদয়- কালোশশীর পরিচয়, বলন কয় দিব্যজ্ঞানে।” (বলন তত্ত্বাবলী- ২৬৭)।
১২. “গুরুর কাছে শিক্ষা নিয়ে, নাগরদোলায় দাঁড়া গিয়ে, রাখবি মোতি সুধা পিয়ে, বলন কাঁইজির মিনতি।” (বলন তত্ত্বাবলী- ১৪১)।
১৩. “গৌর-চাঁদে শ্যামচাঁদের আভা, সহস্র-চন্দ্র যিনি করছেন শোভা, রূপে মুনির মন- করে আকর্ষণ, ক্ষুধা শান্ত সুধা বরিষণে।” (পবিত্র লালন- ৪৩৮/২)।
১৪. “চাঁদ চকোর খেলে যখন, যুগলমীন মিলন হয়রে তখন, তার ওপরে সাঁইয়ের দর্শন, সুধা ভাসে মৃণাল তীরে।” (পবিত্র লালন- ২৭৬/২)।
১৫. “তিথি যোগ ধরে মাস অন্তে, যুগলমিলন হয় চাঁদে চাঁদে, তাতে আভরণ- সুধার বরিষণ, ক্ষুধা নিবারণ হয় সে সুধায়।” (পবিত্র লালন- ৪৩৬/২)।
১৬. “ত্যজিয়ে সে সুধা–রতন, গরল খেয়ে ঘটাই মরণ, মন মানে না গুরুর বচন, তাইতো; মূল হারিয়ে হয় ধন্ধ।” (পবিত্র লালন- ৭৬১/৩)।
১৭. “দুগ্ধ ননিতে মিশাল সর্বদা, মন্থনদণ্ডে করে আলাদা আলাদা, তেমনি, ভাবের ভাবে- সুধা–নিধি পাবে, মুখের কথায় নয়রে সেভাব করা।” (পবিত্র লালন- ৪১৮/৩)।
১৮. “দুগ্ধে যেমন থাকে ননি, ভেয়ানে বিভিন্ন জানি, অমৃত–সুধা ঢাকা তেমনি, আগে পরে গরল দিয়ে।” (পবিত্র লালন- ৯৮৭/৩)।
১৯. “নদীর তিনধারে তিনজন, ব্রহ্মা বিষ্ণু ত্রিলোচন, পাহারা দিচ্ছে সর্বক্ষণ, নদীতে বান ডাকলে সুধা ওঠেরে, তারা পান করে বসে সুখে।” (পবিত্র লালন- ৪০১/৩)।
২০. “পাশাখেলতাম নিরজনে বান্ধব তোর সনে, আজ সুধা–জলে মাখামাখি করতাম দু’জনে, রাত কাটে না প্রহর গণে, বিরহ ব্যথা সহে না।” (বলন তত্ত্বাবলী- ৫৩)।
২১. “পিতার বীর্যে পুত্রের সৃজন, তাতেই পিতার পুনর্জনম, সুধা শুক্রে দেহের গঠন, আলেক রূপে ফিরে সদাই।” (পবিত্র লালন- ৫৩৮/২)।
২২. “প্রেমসাগরের ত্রিমোহনা, সরল সুধা গরল চোনা, সরল ধারা ভুল কর না, নইলে ক্ষ্যাপা যাবি মরি।” (বলন তত্ত্বাবলী- ২৯৯)।
২৩. “ফুলের নামটি নীল লাল জবা, ও তার ফুলে মধু ফলে সুধা, সে ফুলে হয় সাধুসেবা, ও কৃষ্ণ রাধার অলি।” (পবিত্র লালন- ৪৫৪/২)।
২৪. “ফুলের নাম নীল লাল জবা, ফুলে মধু ফলে সুধা, বড় কঠিন তার মর্ম বুঝা, সে ফুল তুলতে মদনাবেটা, সদাই ছাড়ে হাই।” (পবিত্র লালন- ৪৫৯/২)।
২৫. “ফুলের রসিক যারা মর্মমূলে, ডুব দিলো সে জীবনফুলে, সদাই ঐ সুধা–ফুল তুলে, মরণের ভয় কী আছে, দিলে শ্রীগুরুর দোহাই।” (পবিত্র লালন- ৪৫৯/৩)।
২৬. “বলন কাঁইজি হইল চেতন সাঁই-গতি দেখিয়া, ত্রিবেণীতে রইল বসি বায়ুর ঘরে ফাঁদ পাতিয়া, প্রেম–সুধা নীর হইয়া- চলেফেরে প্রেমনদ দিয়া, হাজার বছর তাপ লইয়া মেঘ রূপে হয় বরিষণ।” (বলন তত্ত্বাবলী- ১৯)।
২৭. “বলবো কিসে বৃক্ষের কথা, ফুলে মধু ফলে সুধা, এমন বৃক্ষ মানে যেবা, তার বলিহারি জয়।” (পবিত্র লালন- ৮৯৭/৩)।
২৮. “বিষামৃত আছে মিলন, জানতে হয় স্বরূপসাধন, সুধা ভেবে গরল করে পান, মরো না ঘোরে।” (পবিত্র লালন- ৭০১/৩)।
২৯. “মন আর তুমি মানুষ দু’জন, এ দু’জনাতেই প্রেমালাপন, কখন সুধার বরিষণ, কখন গরল পিয়ে যন্ত্রণা।” (পবিত্র লালন- ৪২২/২)।
৩০. “মন দেখাদেখি কী ভাব, সুধা খেয়ে অমর হব, পারো যদি ভালোই ভালো, তাই লালন ফকির কয়রে।” (পবিত্র লালন- ৯৪৪/৩)।
৩১. “মনের গরল যাবে যখন, সুধাময় সব দেখবে তখন, গুরু পরশিলে এড়াবি শমন, নইলে পড়বি পাকে।” (পবিত্র লালন- ১০৮/৩)।
৩২. “মেয়ে হয়ে মেয়ের দেশে, ভক্তি সাধন করো বসে, আদি-চন্দ্র রাখ কষে, কখনও তারে ছেড় না, ডুব দিলে প্রেমানন্দে, সুধা পাবে দণ্ডে দণ্ডে, লালন কয় পাপ খণ্ডে, আমার মুক্তি হলো না।” (পবিত্র লালন- ৬৯/৪)।
৩৩. “সামর্থ্যকে পূর্ণ জেনে, বসে আছো সে গুমানে, যে রতীতে জন্মে মোতি, সে রতীর বা কী আকৃতি, যারে বলে সুধা–পতি, ত্রিলোকের সে নিহারা।।” (পবিত্র লালন- ৬০৩/৩)।
৩৪. “সামান্য জ্ঞানে কী মন, তাঁরে পারবিরে, যেরূপে বিষ জুদা করে সুধা, রসিকজনা পান করে।” (পবিত্র লালন- ৯৪৪/১)।
৩৫. “সুধা আর শম্ভু-রসের মান, উভয় যেন সমানে সমান, সন্ধি জানে- সাধক সিয়ানে, বড় কঠিন সাধকের জন্যে।” (পবিত্র লালন- ২৪২/২)।
৩৬. “সুধা গরল এক সাথে রাখা, যেমন গুড়ের সঙ্গে মিঠা মাখা, কী ফিকিরি করব সাচ্চা, লালন বলে শিক্ষার তরে।” (পবিত্র লালন- ২৭৬/৪)।
৩৭. “সুধার কথা লোকে বলছে, গুরুর কাছে খবর আছে, জানগা উদ্দিশে, সুধা–নিধি দেখতে পাবি, ভক্তি দিলে ঐ চরণে।” (পবিত্র লালন- ৪০৪/২)।
৩৮. “সেই পঞ্চরস অমৃত–সুধার বাণিজ্য মেলায়, দুগ্ধ রতী সুধা মধু কত যে ভেঁসে বেড়ায়, বলন কাঁইজি ভেবে বলে, ত্রিবেণীর দরজা খুলে, পঞ্চরস নিও তুলে জনমভরি (ও ভোলা মন)।” (বলন তত্ত্বাবলী- ১৯)।
৩৯. “সে করণ সিদ্ধি করা, সামান্যে কী হয়, গরল হতে সুধা নিতে, অকালে সে প্রাণ হারায়।” (পবিত্র লালন- ৯৫৮/১)।
৪০. “সে গাছে বসে মরা, সাঁই দরদী বলছে তারা, ফকির লালন বলে গোরা, তার সুধা খেলে মরা বাঁচে।” (পবিত্র লালন- ৪৯১/৪)।
৪১. “হৃদকমলে খেলছে আসি, জোয়ার ভাটা দিবানিশি, অমাবস্যার পর উদয় শশী, দেখ তার কারসাজি, সুধা বর্ষে রাশিরাশি, কে জানে সে রূপলীলে।” (পবিত্র লালন- ৬৮৭/৩)।
দুগ্ধ অর্থে ‘সুধা’ পরিভাষাটির ব্যবহার (Using the terminology nectar sense for milk)
“আমি ক্ষণেক থাকি স্বরূপদেশে, ক্ষণেক থাকি হাওয়ায় মিশে, শতদলে মিশে ভক্তের উদ্দেশ্যে, দুগ্ধ-সুধা পান করি।” (পবিত্র লালন- ৫৯৫/২)।
শুক্র অর্থে ‘সুধা’ পরিভাষাটির ব্যবহার (Using the terminology nectar sense for semen)
“তিন হাজার বছর পুড়ে, মাটির দেহ হয় সোনা, পাহাড় গলে সুধা ঝরে, থাকে না কোনো লোনা।” (বলন তত্ত্বাবলী- ২৫২)।
সুধার সংজ্ঞা (Definition of nectar)
সাধারণত; যে কোনো সুপেয় পানীয়কে সুধা বলে।
সুধার আধ্যাত্মিক সংজ্ঞা (Theological definition of nectar)
বাঙালী শ্বরবিজ্ঞানে ও বাঙালী পুরাণে; মানবদেহ হতে বিশেষ কৌশলে আহরিত অমৃত পানীয়কে সুধা বলে।
সুধার প্রকারভেদ (Variations of nectar)
বাঙালী শ্বরবিজ্ঞানে ও বাঙালী পুরাণে; সুধা দুই প্রকার। যথা; ১. উপমান সুধা ও ২. উপমিত সুধা।
১. উপমান সুধা (Analogical nectar)
সাধারণত; যে কোনো সুপেয় পানীয়কে উপমান সুধা বলে।
২. উপমিত সুধা (Compared nectar)
বাঙালী শ্বরবিজ্ঞানে ও বাঙালী পুরাণে; কেবল অমৃত মানবজলকে উপমিত সুধা বলে।
সুধার পরিচয় (Identity of nectar)
এটি ‘বাঙালী পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী’ এর ‘পালনকর্তা’ পরিবারের একটি ‘বাঙালী পৌরাণিক ছদ্মনাম পরিভাষা’ বিশেষ। সারাবিশ্বের সর্বপ্রকার সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক পুস্তক-পুস্তিকায় এর ন্যূনাধিক ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। তবে; এ পরিভাষাটি একেক গ্রন্থে একেক ভাষায় ব্যবহার হওয়ার কারণে সাধারণ পাঠক-পাঠিকা ও শ্রোতাদের তেমন দৃষ্টিগোচর হয় না।
বড় হাস্য কৌতুহলের বিষয় হলো; এদেশে এমন একদল লোক সুধার ধারক-বাহক ও প্রচারক যে; যারা এর অভিধা, সংজ্ঞা ও প্রকার তো জানেনই না বরং এর সম্পর্কে সামান্য ধারণাও রাখেন না। তারা কেউ গুরুর মুখের কথাকেই সুধা বলেন আবার কেউ গুরুর জ্ঞানকেও সুধা বলে থাকেন। আবার কেউবা মূত্রকে, কেউবা রজকে আবার কেউবা ভ্রূণথলির ময়লা জলকে সুধা বলে বিশ্বাস করে থাকেন। এজন্য; তাদের নিকট বিষয়টি জানতে চাইলে তারা প্রায় বলে থাকেন এটি; বলা যাবে না। চরম অন্ধবিশ্বাসী ও অনুমান আশ্বারোহী নির্বোধ এসব বকধার্মিকদের খপ্পরেই দেশের অধিকাংশ মানুষ গুরুদাসত্বে বন্দী। প্রকৃতপক্ষে বৈকুণ্ঠের সুপেয় মানবজলকেই যে সুধা বলা হয়। বিষয়টি বঙ্গদেশের অধিকাংশ শিক্ষিতজনও জানেন না। এ বিষয়টি সাধকগুরু গোঁসায়ের নিকট হতে আরও ভালোভাবে জেনে ও বুঝে নেওয়ার পরামর্শ রইল।
মরমী সাধকগণের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও অসাধারণ কৃতিত্ব হলো; মানবদেহ হতে সাধনবলে সুধা আহরণ। মহাত্মা লালন সাঁইজি তাঁর নির্মিত প্রায় সব লালনের মধ্যেই কোনো না কোনভাবে এ সুধার ইঙ্গিত প্রদান করেছেন। এ বিষয়টি শুধু লালনেই নয় বিশ্বের বড় বড় সব মহাগ্রন্থ বা শ্বরবিজ্ঞানের মধ্যেই যথেষ্ট বর্ণনা ও বিবরণ দেখতে পাওয়া যায়। পরিভাষাগুলো না জানার কারণে সাধরণ পাঠক, এমনকি; বড় বড় গবেষকরাও তা অনুধাবন করতে পারে না। বেদ, রামায়ণ, মহাভারত, ত্রিপিটক, তৌরাত, যাবুর, ইঞ্জিল, কুরান, লালন, বলন ও জালালও সুধার রূপক বর্ণনা, বিবরণ, আহরণ করার পদ্ধতি এবং এর উপকারিতার বিষয়বস্তু নিয়েই নির্মিত হয়েছে। এককথায় বিশ্বের সব সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক গ্রন্থাদির মূল ও মুখ্য আলোচনাই হলো; সুধার আহরণ পদ্ধতি এবং এর উপকারিতার বিষয়াশয়।
রূপক ও ব্যাপক পরিভাষা ব্যবহার করে সুধার বর্ণনা করা হয়। তাই; সাধারণ পাঠকরা তেমন কোনকিছুই অনুধাবন করতে পারেন না। এ সুযোগে খুস্কজ্ঞানী সাম্প্রদায়িক মনীষীগণ এ বিষয়টিকে তাদের লেজে গোবরে আলোচনার দ্বারা অসম্ভব ব্যবধানে ভবিষ্যৎকালে নিয়ে গিয়ে স্থাপন করেছেন। উল্লেখ্য যে; শ্বরবিজ্ঞানে বর্ণিত যে কোনো বিষয়বস্তুকে ভবিষ্যৎকালে স্থাপন করলে তাকেই সাম্প্রদায়িক বিষয়বস্তু বলা হয়। তবে; বর্তমানকালে স্থাপন করলে তাকেই শ্বরবিজ্ঞান বা আত্মদর্শন বলা হয়। অর্থাৎ; একই বিষয়বস্তু বর্ণনার সময় আত্মজ্ঞানী রূপকারগণ বর্তমানকালের ক্রিয়াপদগুলো ব্যবহার করেন। যেমন; হয়, পায়, খায় ও যায় ইত্যাদি কিন্তু সাম্প্রদায়িকরা ভবিষ্যৎকালের ক্রিয়াপদগুলো ব্যবহার করে থাকেন। যেমন; হবে, পাবে, খাবে ও যাবে ইত্যাদি। এছাড়াও; সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিকরা আরও একটি বিষয় জুড়ে দেন যে ভালো কাজের পুরস্কার পাবে মরে পুনরুত্থানের পর। এটি;ই সাম্প্রদায়িক গোলকধাঁধার মূল উপমা। কারণ; শ্বরবিজ্ঞানে; অটল হওয়াকে মরা বলা হয় (যদিও মরণের অনেক প্রকারভেদ রয়েছে)। তারাই পিতা-মাতার সন্তান রূপে জন্মগ্রহণ করাকে চরম আড়ালে রেখে পুনর্জন্মকে পুনরুত্থান বলে প্রচার করে থাকেন। পরম্পরাজ্ঞানের উদ্ভব ও উত্থান পতনসহ এ জ্ঞানের ক্রম অগ্রসর হওয়ার ধারাবাহিকতা পুরাণ নির্মাণ ও মহা গ্রন্থাদি রচনাকালের যথা সম্ভব নিখুঁত বিচার বিশ্লেষণ করে বলা যায় যে; মানবদেহ হতে সুধা আহরণের এ প্রাকৃতিক পদ্ধতিটি আবিষ্কারের বয়স প্রায় দশ হাজার বছর। সে সময় হতে আরম্ভ করে প্রায় ছয় হাজার বছর পূর্ব পর্যন্ত তা একমাত্র গুরু শিষ্যের মাধ্যমে মুখে মুখেই প্রচার হয়ে আসছিল। এরই মধ্যে বর্ণনির্মাণ, শব্দগঠন পদ্ধতি ও বাক্য গঠন পদ্ধতিগুলো আবিষ্কার হয়।
অতঃপর; গত চার হাজার বছর পূর্বে চীনে সর্বপ্রথম কাগজ আবিষ্কার হয়। সে কাগজ ভারতবর্ষে এসে পৌঁছা মাত্রই হস্তলিপি আকারে বা হাতে লিখে পুস্তক-পুস্তিকা প্রকাশ পেতে আরম্ভ করে। ভারতবর্ষের প্রথম পর্যায়ের সব পুস্তক-পুস্তিকাই ছিল রূপকার্থে নির্মিত। যেমন; বেদ, রামায়ণ, মহাভারত ও পুরাণ ইত্যাদি। এগুলো সবই একমাত্র মানবদেহ নিয়ে নির্মিত হয়েছিল। পৌরাণিক সাহিত্যাদির মূল আলোচনাই ছিল মানবদেহের সুধা আহরণের বিশেষ বিশেষ কৌশলগুলো। রূপকে রূপকে বর্ণনা করার ফলে রূপকারের অত্যন্ত নিকটস্থ জ্ঞান-শিষ্যরা ব্যতীত- সাধারণ মানুষ, গবেষক, লেখক ও পাঠককুল কেউই সহজে এসব পুস্তক-পুস্তিকার মূলভাব উদ্ধার করতে পারতেন না। অনুধাবন করতে পারতেন না এসব সাহিত্যের বর্ণনা ও বিবরণাদি। যারফলে; রূপকারের তিরোধানের মাত্র কিছু দিনের মধ্যে শ্বরবিজ্ঞানের মূলশিক্ষা ও আত্মতত্ত্বগুলো ভুলে গিয়ে এসব পুস্তক-পুস্তিকার বর্ণনা বিবরণের উপাদানাদি আকাশে, জঙ্গলে, পাহাড়ে ও সাগরে অন্বেষণে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়তেন গবেষকগণ। পৌরাণিক সাহিত্যাদি নির্মাণের সময় মূল শিক্ষাই রাখা হয়েছিল মানবদেহ হতে সুধা আহরণ করা কিন্তু শ্বরবিজ্ঞানের রূপক ও ব্যাপক পরিভাষা অনুধাবন করতে পুনঃপুন ব্যর্থ হয়ে নব্য লেখক ও নব্য গবেষকরা পুনঃপুন এ শিল্পটিকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করার ব্যর্থ প্রচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন।
পৃথিবীর বাস্তব রাজনৈতিক ইতিহাস ও প্রাগৈতিহাসিক যাযাবর জীবন গবেষণা করে দেখা যায় যে; যখন পুরাণ শিল্পটি প্রায় সম্পূর্ণই বিলুপ্ত হয়ে যায় বা বিলুপ্ত হওয়ার উপক্রম হয় ঠিক তখনই বা মাত্র স্বল্প সময়ের ব্যবধানে প্রকৃতির নিয়মেই বিশ্বের প্রত্যন্ত অঞ্চলে, বিশ্ববিখ্যাত একজন রূপকার বা মহামানবের আবির্ভাব হয়। রূপকারগণ এসে হারিয়ে যাওয়া শ্বরবিজ্ঞানের বিলুপ্ত প্রায় মূলশিক্ষা, আবার পুনঃনির্মাণ করে বিশ্ববাসীর সুধা আহরণের পথ পন্থগুলো সুগম করেন। যারফলে; আবার সাধককুল ও পরম্পরা-জ্ঞানধারী শিষ্যরা মানবদেহ হতে সুধারূপ রস আহরণের কৌশলগুলো সহজে পেয়ে থাকেন। রূপকার বা মহামানবগণের তিরোধানের পর মাত্র কয়েক শতাব্দী যেতে না যেতেই এ সাহিত্যটি আবার দিব্যজ্ঞানহীন নির্বোধ সাধারণ নব্য লেখক ও গবেষকগণের দ্বারা আক্রান্ত হতে থাকে। যারফলে; মানবদেহে তরল রস আকারে প্রাপ্ত সাঁই ও কাঁই সত্তাদ্বয় আবার নিরাকার-সত্তায় পরিণত হতে বাধ্য হন। পুনঃপুন এমন উত্থান-পতন ও চরমভাবে ভাঙ্গা-গড়ার মধ্য দিয়েই সাঁইতত্ত্ব ও কাঁইতত্ত্ব পেরিয়ে এসেছে প্রায় দশ হাজার (১০,০০০) বছর। অর্থাৎ; একই বর্ণনা বা একই তত্ত্ব আত্মজ্ঞানীগণের নিকট একবার হয় চরম বাস্তবমূখী আত্মতত্ত্ব, আবার সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিকদের নিকট আরেকবার হয় চরম অন্ধবিশ্বাসের আড্ডা মতবাদ বিশ্ব। অর্থাৎ; একই রূপক ঘটনাবলী বর্তমানকালের ক্রিয়াপদ যোগে বর্ণনা করলেই হয় আত্মতত্ত্ব ও ভবিষ্যৎকালের ক্রিয়াপদ যোগে বর্ণনা করলেই হয় সাম্প্রদায়িক উপাখ্যান।
শ্বরবিজ্ঞানের বর্ণনা অনুযায়ী মানবদেহে প্রাপ্ত পবিত্র রসের সংখ্যা পাঁচটি। যেমন; ১. আদি ২. দুগ্ধ ৩. শুক্র ৪. সুধা ও ৫. মধু। তবে; পারম্পরিক সুবিজ্ঞ মনীষীগণের মতে- সুধার ধারা মাত্র দুটি। যথা; ১. সুধা ও ২. মধু। আত্মজ্ঞানী বিজ্ঞানীরা এ দুটি রসকেই সুধা বলে থাকেন। সুধা কী এবং কেমন এমন প্রশ্ন দেশের সর্বত্রই পারম্পরিকদের মধ্যে প্রায় শুনতে পাওয়া যায়। আবার মহাত্মা লালন সাঁইজির অত্যন্ত চমৎকার ও লোভনীয় বর্ণনাগুলো শ্রবণ করার পর প্রত্যেক পারম্পরিক জ্ঞান-শিষ্যদের এ বিষয় জানা ও বুঝার আগ্রহ আরও অনেক অনেক গুণ বেড়ে যায়। যেমন; তিনি বলেছেন; “অমৃত-সাগরের সুধা, পান করলে জীবের ক্ষুধা তৃষ্ণা, রয় না, লালন মরল জল পিপাসায়রে, কাছে থাকতে নদী মেঘনা” (পবিত্র লালন- ২৫৭/৫)।
পবিত্র লালন হতে সুধার প্রমাণ (The evidence of nectar from the holy Lalon)
১. “অমৃত-সাগরের সুধা, পান করলে জীবের ক্ষুধা তৃষ্ণা, রয় না, লালন মরল জল পিপাসায়রে, কাছে থাকতে নদী মেঘনা।” (পবিত্র লালন- ২৫৭/৫)।
২. “কতজন সুধার আশায়, ফণীর মুখে হাত দিতে যায়, বিষের আতস লেগে গায়, শেষে তার মরণদশা হয়রে।” (পবিত্র লালন- ৯৪৪/২)।
৩. “দুগ্ধ ননিতে মিশাল সর্বদা, মন্থনদণ্ডে করে আলাদা আলাদা, তেমনি, ভাবের ভাবে- সুধানিধি পাবে, মুখের কথায় নয়রে সেভাব করা।” (পবিত্র লালন- ৪১৮/৩)।
সাধু সন্ন্যাসীগণ যোগেশ্বরীর শুভযোগে অষ্টাঙ্গ মৈথুন সাধনবলে এ জীবনজল আহরণ করে পান করে থাকেন। যারফলে; তাঁরা সামান্য পানাহার দ্বারা দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্যলাভ করে থাকেন। এ রস মস্তিষ্ক হতে মেরুদণ্ডের মাধ্যমে প্রোটেষ্ট গ্রন্থি পর্যন্ত প্রবাহিত হয় এবং নিউরন মোটরকে সক্রিয় রাখে। প্রতি ১০০ মিলিলিটার সুধার মধ্যে থাকে- প্রোটিন-১৫-৪৫ মিলিগ্রাম, গ্লুকোজ-৪০-৫০ মিলিগ্রাম, ক্লোরাইড-৭২০-৭৫০ মিলিগ্রাম, কোষ-০.৫ মিলিগ্রাম +লসিকা ইত্যাদি। এ মস্তিস্ক মেরুজলকেই মরমীগণ সাঁই বা বিষ্ণু বলে থাকেন। সাঁই বা বিষ্ণু প্রতিটি দ্বিপস্থ জীবের মাতৃগর্ভে অবস্থান করে জীবকুল ভূমিষ্ঠ বা প্রসব হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত লালনপালন করেন বলেই তাঁকে লালন, লালক, পালক বা পালনকর্তা বলা হয়। মানুষের ক্ষেত্রে জরায়ু বা জঠর হতে তিনটি ধারা প্রবাহিত হয়। প্রথম ধারাটি রক্তিম এটি;কে ঋতুস্রাব বলে- যা প্রকৃতির নিয়মে প্রতি মাসেই যথাযথ প্রবাহিত হয়। এটা অসার এবং দুষিত রক্তধারা। দ্বিতীয় ধারাটিকে সাঁই, বিষ্ণু, বুদ্ধ, ঈশ্বর বা লালন ইত্যাদি বলা হয়- যা মানব সন্তান লালনপালনের জন্য জরায়ুতে যথা সময়ে অবতারিত হয়। সাধকগণ সাধনবলে এর সাথে প্রত্যক্ষ দর্শনলাভ করে সাঁইজি, বৈষ্ণব ও সিদ্ধার্থ ইত্যাদি উপাধিলাভ করেন। এটা সুস্বাদু ও সুপেয় সুভ্রজল। আরবীয় অলিগণ (ﻮﻠﻰ) ফুরাত (ﻔﺭﺍﺖ) বলে, ফার্সি দরবেশগণ (ﺪﺭﻭﻴﺶ) আবহায়াত (ﺁﺏﺤﻴﺎﺖ) বলে, সংস্কৃত সাধুগণ সোম বলে, বাঙালী সাধুগণ সুধা বলে, পালি ভিক্ষুগণ শীল বলে, মহাত্মা লালন সাঁইজি মীন বলে এর নাম করণ করেছেন। এছাড়াও; মীন নিয়ে সাঁইজি আরও কতনা উপমা নির্মাণ করেছেন, তার ইয়ত্তা করাই বড় কঠিন। পবিত্র লালন হতে নিচে মীনরূপ সাঁই বা সুধার কয়েকটি উদ্ধৃতি তুলে ধরা হলো।
১. “অমর্ত্যের এক ব্যাধ বেটা, হাওয়ায় এসে ফাঁদ পেতেছে, সে ফাঁদ অতি ভয়ঙ্কর, মনে লাগে ডর, সে ফাঁদে মীন ধরা পড়েছে।” (পবিত্র লালন- ৫৯/১)।
২. “ডুবে দেখ রে মন, প্রেমনদীর জলে, (মীন রূপে সাঁই খেলে), প্রেমডুবুরী না হলে মীন, বাঁধবে না জালে।” (পবিত্র লালন- ৪৮৩/১)।
৩. “ত্রিবেণীর ত্রিধারে, মীন রূপে গুরু বিরাজ করে, কেমন করে ধরবি তারে, বলরে অবুঝ মন।” (পবিত্র লালন- ১৫৩/৩)।
এমনিভাবে আরও কত পৌরাণিক রূপক ও ব্যাপক পরিভাষার দ্বারা সুধার উপমা ও উদাহরণ দেওয়া হয়েছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। যেমন; অধর, অমির, অম্বু, আত্মারাম, ইষ্টি, উপাস্য, গঙ্গাজল, গোরা, গোরাচাঁদ, গৌতম, গৌর, গৌরাঙ্গ, চাঁদ, তীর্থবারি, নাথ, নারায়ণ, নিতাই, নিধি, নিমাই, নিরঞ্জন, মৎস্য, মিষ্টিজল, মীন, রসরাজ, রাম, লালন, শশী, সুরস, স্বরূপ ও হরি ইত্যাদি। লালনগুলো হতে এসব পরিভাষা উদ্ধৃতি তুলে ধরতে গেলে উদ্ধৃতির আয়তন ব্যাপক বেড়ে যাবে বলে আর উদ্ধৃতি দেওয়া সমীচীন নয় বলে আমরা মনে করি।
দুই বা তিন সাগরের বর্ণনা (Describe of two or three sea)
(এটি মহাত্মা লালন সাঁইজির বাণী নামেও পরিচিত) আব্দুল হালিম বয়াতি লিখেছেন;
“অথৈজলে মাণিক পাবি হইলে ডুবারি
তাওহিদ সাগর কঠিন পাড়ি।
চলে সাগর তিন ধারাতে
নবুয়ত ও বিলায়াতেগোপনে এক ধারা তাতে
যেতে বন্ধুর বাড়ি।”
ইঞ্জিল হতে সুধার প্রমাণ (Description of nectar from the gospel)
“অতঃপর; সে উদ্দীপক আমাকে জীবন জলের (সুধা) নদী দেখালেন। এটা স্ফটিকের মতো পরিষ্কার ছিল। সাঁই মেষশিশুর সিংহাসনের নিকট হতে বের হয়ে নগরের রাস্তার মধ্যখান দিয়ে বয়ে যেতেছিল। সে নদীর দুই পারেই জীবন গাছ ছিল। তাতে বারো প্রকার ফল ধরে। প্রত্যেক মাসেই তাতে ফল ধরে এবং তার পাতায় সব জাতির লোক সুস্থ হয়। অভিশাপ আর থাকে না। সাঁই ও মেষশিশুর সিংহাসন সে নগরে রয়েছে এবং তাঁর দাসেরা তাঁর সেবা করে। তারা তাঁর মুখ দেখতে পায় এবং তাঁর নাম তাদের কপালে লেখা থাকে। রাত্রি আর থাকে না এবং তাদের আর বাতির আলো বা সূর্যের আলোর প্রয়োজন হয় না কারণ সাঁইজি নিজের তাদের আলো হন। তারা চিরকাল রাজত্ব করেন (ইঞ্জিল- ২৭শ খণ্ড, প্রকাশিত কালাম, ২২/১-৫)।
কুরান হতে সুধার প্রমাণ (Description of nectar from the quran)
“ وَهُوَ الَّذِي مَرَجَ الْبَحْرَيْنِ هَذَا عَذْبٌ فُرَاتٌ وَهَذَا مِلْحٌ أُجَاجٌ وَجَعَلَ بَيْنَهُمَا بَرْزَخًا وَحِجْرًا مَحْجُورًا” উচ্চারণ; “ওয়া হুয়াল্লাজি মারাজাল বাহরাইনি হাজা আজবুন ফুরাতুন ওয়া হাজা মিলহুন উজাজুউ, ওয়া জায়ালা বাইনাহুমা বারঝাখাউ ওয়া হিজরাম মাহজুরা” অর্থ; “তিনিই যিনি- চারণ সাগরদ্বয়ে এ তৃষ্ণা নিবারক সুমিষ্ট জল ও এ লোনা বিস্বাদ জল সৃষ্টি করেছেন। উভয়ের মধ্যেই রয়েছে সীমারেখা এবং সেটি সুরক্ষিত পাথর।” (কুরান, ফুরকান- ৫৩)।
লাল সাদা ও কালো ধারার বিবরণ (Description of red, white and black flows)
মরমী কবি ফকির আলমগীর লিখেছেন;
“দুই পাহাড়ের মাঝে মাওলা মসজিদ বানাইছে
কামিনীরা কাম করিয়া কোথায় যেন লুকাইছে।
মসজিদের তিনটি খিড়কি দ্বার
সাপিয়ে রাখছে পানি ওজু করিবার
সেই পানিতে দিনের নবি
আল্লাহর জিকির করতেছে।
নদীতে জোয়ার যায় যখন
তিন প্রকার জল আসে লাল সাদা কালাবরণ
সেই পানিতে মরা কুম্ভীর
হাজার ডিম্ব পাড়তেছে।”
বেদ হতে লাল সাদা ও কালোর প্রমাণ (The evidence of red, white and black flows from the vedas)
“অগ্নি সবার ত্রাণকর্তা অহি দীপ্তিশালী অভীষ্টবর্ষী শিখা ও ঔষধিগুলো দ্বারা সমাচ্ছাদিত। তিনি অপ্রতিহত গতি এবং লাল, সাদা ও কৃষ্ণবর্ণ জ্বালাগুলোতে পরিব্যাপ্ত। তিনি বর্ষণকারী ও অন্নদাতা। আমরা তাকে আহবান করছি, তিনি সমস্ত ধন রক্ষার সাথে আসুক”।১
তৌরাত হতে লাল সাদা ও কালোর প্রমাণ (The evidence of red, white and black flows from the torah)
“লাবন কিন্তু সে দিনই তাঁর পশুপাল থেকে ইয়াকুবের পাওনা ডোরাকাটা ও বড় বড় ছাপের সব ছাগল ও ছোট ছোট ও বড় বড় ছাপের সব ছাগী অর্থাৎ; যাদের গায়ে স্থানে স্থানে সাদা লোম ছিল সেগুলো ও কালো বর্ণের ছানাগুলো সরিয়ে রাখলেন। এগুলোর দেখাশুনার ভার তিনি তাঁর ছেলেদের হাতে দিলেন। তারপর; তিনি ইয়াকুবের কাছ থেকে তিনদিনের পথ দূরে সরে গেলেন। আর ইয়াকুব লাবনের বাকি পশুগুলোর দেখাশুনা করতে লাগলেন” (তৌরাত, সূচনাক্রম, ৩০/৩৫-৩৬)।
লাল সাদা ও কালো সত্তার এমন একই বর্ণনা পবিত্র ইঞ্জিলেও দেখতে পাওয়া যায়। যেমন;
ইঞ্জিল হতে লাল সাদা ও কালোর প্রমাণ (The evidence of red, white and black flows from the gospel)
১. (ক). “মেষশিশু যখন দ্বিতীয় তালা ভাঙ্গলেন তখন আমি দ্বিতীয় জীবন্ত প্রাণীকে বলতে শুনলাম ‘এসো’। তখন আগুনের অন্য একটি লাল ঘোড়া বের হয়ে এলো (ইঞ্জিল- ২৭শ খণ্ড, প্রকাশিত কথা, ৬/৩-৬)।
(খ). “অতঃপর; সে উদ্দীপক আমাকে মরু প্রান্তরে নিয়ে গেলেন। তখন আমি পবিত্র আত্মার বশে ছিলাম। সেখানে একজন স্ত্রীলোককে একটা লাল জন্তুর ওপর বসে থাকতে দেখলাম। অস্বীকার করার জন্য সাঁইয়ের অনেকগুলো নাম সে জন্তুটার ওপর লেখা ছিল। তার সাতটা মাথা ও দশটা শিং। সে স্ত্রীলোকটি বেগুনী ও রক্তিম বর্ণের বসন পরে ছিল এবং তার গায়ে সোনা, মূল্যবান পাথর ও মুক্তার গহনা ছিল (ইঞ্জিল- ২৭শ খণ্ড, প্রকাশিত কথা, ১৭/৩-৪)।
২. “মেষশিশু যখন চতুর্থতালা ভাঙ্গলেন তখন আমি তৃতীয় জীবন্ত প্রাণীকে বলতে শুনলাম “এসো”। তখন আমি একটা সাদা ঘোড়া দেখতে পেলাম। যে সে ঘোড়ার ওপর বসে ছিল তার নাম “মৃত্যু”, মৃত্যদের আত্মার স্থান ঠিক তার পিছনে পিছনে চলছিল। পার্থিবতার চারভাগের একভাগের ওপর তাদের ক্ষমতা দেওয়া হলো যেন তারা ছোরা, দুর্ভিক্ষ, মৃত্যু ও বন্যজন্তু দিয়ে লোকদের মেরে ফেলে (ইঞ্জিল-২৭শ খণ্ড, প্রকাশিত কথা, ৬/৭-৮)।
৩. “মেষশিশু যখন তৃতীয়তালা ভাঙ্গলেন তখন আমি তৃতীয় জীবন্ত প্রাণীকে বলতে শুনলাম “এসো”। তারপর; আমি একটা কালো ঘোড়া দেখতে পেলাম। যে সে ঘোড়াটার ওপর বসে ছিল তার হাতে একটা মাপকাঠি ছিল। আমি সে চারজন জীবন্ত প্রাণীর মাঝখানে কাউকে বলতে শুনলাম “একজন শ্রমিকের একদিনের আয় মাত্র একসের গম বা তিনসের যব পাওয়া যায়। তেল আর আঙ্গুর রস তুমি নষ্ট কর না (ইঞ্জিল-২৭শ খণ্ড, প্রকাশিত কথা, ৬/৫-৬)।
লাল, সাদা ও কালো ধারার একই বর্ণনা পবিত্র কুরানেও দেখতে পাওয়া যায়।
কুরান হতে লাল সাদা ও কালোর প্রমাণ (The evidence of red, white and black flows from the quran)
“ أَلَمْ تَرَى أَنَّ اللَّهَ أَنْزَلَ مِنْ السَّمَاءِ مَاءً فَأَخْرَجْنَا بِهِ ثَمَرَاتٍ مُخْتَلِفًا أَلْوَانُهَا وَمِنْ الْجِبَالِ جُدَدٌ بِيضٌ وَحُمْرٌ مُخْتَلِفٌ أَلْوَانُهَا وَغَرَابِيبُ سُودٌ” উচ্চারণ; “আলাম তারা আন্নাল্লাহ আনজালা মিনাছামায়ি মায়া, ফা আখরাজনা বিহি সামারাতিম মুখতালিফান আলওয়ানুহা, ওয়া মিনাল জিবালি জুদাদুম বাইজুউ ওয়া হুমরুম মুখতালিফুন আলওয়ানুহা ওয়া গারাবিবু ছুউদু” অর্থ; “তুমি কী দেখ নাই যে কাঁই আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণ করেন। অতঃপর; আমরা তা দ্বারা ফলপুঞ্জ বের করি সে সবের বর্ণ বিভিন্ন প্রকার এবং পাহাড়ে বিভিন্ন বর্ণের গীরিপথ রয়েছে পন্থাগুলো বিভিন্ন বর্ণের- তা হলো লাল সাদা ও নিকষ কালো (কুরান- ফাতির- ২৭)।
বিশ্বের প্রায় সব মরমীসাহিত্য, পুরাণ ও সাম্প্রদায়িক গ্রন্থে এ তিনটি ধারার যত না বর্ণনা করা হয়েছে- অন্য কোনো বিষয়াদি নিয়ে এত অধিক লেখালেখি আর হয় নি। এককথায় বলতে গেলে একমাত্র সুধার গুণাগুণ ও তার আহরণ পদ্ধতির বর্ণনা নিয়েই গড়ে ওঠেছে বিশ্বের সব পুরাণ ও সাম্প্রদায়িক গ্রন্থ। প্রমাণ রূপে দেখা যায় যে বিশ্বের প্রায় সব মহাকাব্যেই লালধারা বসিধ, সাদাধারা সাঁই ও কালোধারা কাঁইয়ের অবিকল বর্ণনা পাওয়া যায়। যেমন; ১. “তিন প্রকার জল আসে লাল সাদা কালাবরণ” (কানাইশাহ)। ২. “পন্থাগুলো বিভিন্ন বর্ণের; তা হলো লাল সাদা ও নিকষ কালো” (কুরান)। ৩. “লাল ঘোড়া সাদা ঘোড়া ও কালো ঘোড়া” (ইঞ্জিল)। ৪. “লালসুতা সাদা লোম ও কালো ছানা” (তৌরাত)। ৫. “তিনি অপ্রতিহত গতি এবং লাল, সাদা ও কৃষ্ণবর্ণ জ্বালাগুলোতে পরিব্যাপ্ত” (বেদ)।
সুধা আহরণ পদ্ধতি (Nectar accumulation procedure)
সুধা আহরণের দুটি পদ্ধতির সন্ধান পাওয়া যায়। যথা; ১. প্রাকৃতিক পদ্ধতি ও ২. কৃত্রিম পদ্ধতি।
১. প্রাকৃতিকপদ্ধতি (Natural procedure)
কোনো প্রযুক্তির সাহায্য ব্যতীত কেবল অটলক্ষমতাবলে মৈথুনের দ্বারা মানবদেহ হতে সুধা আহরণ করাকে সুধা আহরণের প্রাকৃতিক পদ্ধতি বলে। একজন দিব্যজ্ঞানী ও পাকাগুরুর নিকট শিষ্যত্ব গ্রহণ করে আগে অটলতা অর্জন করতে হয়। অতঃপর; ঊষা প্রহরে সাঁই নামক এ সুধা আহরণ করতে হয়। মৈথুন বা চাপকল ব্যতীত এটি; মূলাধার চক্রে সঞ্চিত হতে চায় না। এজন্য; মৈথুন দ্বারাই একে সঞ্চয় করা উচিত। মৈথুনে নিরত হয়ে অটলতা অটুট রেখে অবিরত ইন্দ্রিয় সঞ্চালন করতে থাকলে ক্রমে ক্রমে এ রস মূলাধারে সঞ্চিত হতে থাকে। অতঃপর; পাত্রটি পরিপূর্ণ হয়ে গেলে যখন এটি; ঝরে পড়ার উপক্রম হয় তখন একটা পাত্র দ্বারা এটি; ধারণ করতে হয়। অতঃপর; এটি; শীতল করে পান করতে হয়।
২. কৃত্রিমপদ্ধতি (Artificial procedure)
কৃত্রিম প্রযুক্তি বা বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির সাহায্যে মানবদেহ হতে সুধা আহরণ করাকে সুধা আহরণের কৃত্রিমপদ্ধতি বলে। যেমন; চালকল দ্বারা সুধা আহরণ।
মৈথুন ছাড়াও বর্তমান বিজ্ঞানের অবিষ্কৃত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করেও মানবদেহ হতে সুধা আহরণ করা যায়। পাশ্চাত্য বিজ্ঞানীরা এক প্রকার চারকল আবিষ্কার করেছেন। এ কলটি যথাযথভাবে স্থাপন করে কলে চাপ দিলে এটি; স্বয়ংক্রীয়ভাবে মূলাধারচক্রে চাপ দিতে থাকে। যারফলে; নির্দিষ্ট সময় পর আপনাপনি সঞ্চিত সুধা বের হওয়ার উপক্রম হয়। তখন চাপকলটি সরিয়ে নিয়ে পাত্র দ্বারা এ রস আহরণ করা যায়। সাবধান একমাত্র ঊষা প্রহরের প্রথম বা দ্বিতীয়দিবস ভিন্ন এ কলটি লাগানো উচিত নয়। একটি সন্তান গ্রহণের পূর্বে কোনো রমণীরই এ স্বয়ংক্রীয় কলটি লাগানো উচিত নয়। কারণ; এতে জঠর যে চাপ অনুভব করে তাতে পরবর্তীকালে সন্তান ধারণের ক্ষমতা একেবারেই হারিয়ে ফেলার সম্ভাবনা থাকে।
সুধার পরিমাণ (The amount of nectar)
এ রস সাধারণত; এক পোয়া হতে এক সের পর্যন্ত হয়। স্বাস্থ্য ভালো ও পদ্মিনী রমণী হলে- এ রসের পরিমাণ সবচেয়ে অধিক হয়। গড় ১৮ হতে ২৫ বছর বয়সী রমণীদের মধ্যেই সুধার পরিমাণ সর্বাধিক পাওয়া যায়। বয়স ৩০ বছর অতিক্রম করার সাথে সাথে রমণীদেহ হতে এ সুধার পরিমাণ ক্রমে ক্রমে হ্রাস পেতে থাকে। অতঃপর; মাসিক রজ আগমন বন্ধ হয়ে গেলে নারীদেহ হতে এ সুধাদ্বয়ও চিরদিনের মতো বন্ধ হয়ে যায়।
সুধা বা মস্তিষ্ক মেরুজলের পরিচয় (Introducing of nectar or cerebro spinal fluid)
রক্ত যখন মস্তিষ্কে যায় তখন হৃদপিণ্ডের প্রথম ও দ্বিতীয় ভেণ্ট্রীলের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং সেখানে রক্ত থেকে মস্তিষ্ক মেরুজল পৃথক হয়ে যায়। এ মস্তিষ্ক মেরুজলকেই প্রধান জীবনরস বা জীবনজল বা হবপঃধৎ বা ভাইটাল লাইফ জুস (vital life juice) বলা হয়। সাধুগণ ও যোগিগণ একে সুধা বলে থাকেন। সাধুগণ ও যোগিগণ এ জল পান করার দ্বারা অল্প আহার করে, দীর্ঘায়ুলাভ করে থাকেন। এ রস মস্তিষ্ক হতে প্রবাহিত হয়ে, মেরুদণ্ডের মাধ্যমে প্রোটেষ্ট গ্রন্থি পর্যন্ত প্রবাহিত হয় এবং নিউরন মোটরকে সক্রিয় রাখে।
সুধার গুণাগুণ (Qualities of nectar)
দুধ যেমন আদর্শ পানীয়; তেমনই; সুধাও এক প্রকার আদর্শ পানীয়। দুধের মধ্যে যেমন খাদ্যের সব গুণাগুণ পরিপূর্ণভাবেই নিহিত থাকে। তেমনই; সুধার মধ্যেও খাদ্যের সব গুণাগুণ যথাযথভাবেই নিহিত থাকে। সুধার মধ্যে নিহিত খাদ্যসারের পরিমাণ নিম্নরূপ। প্রতি ১০০ মিলিলিটার সুধার মধ্যে প্রোটিন ১৫-৪৫ মিলিগ্রাম, গ্লুকোজ ৪০-৫০ মিলিগ্রাম, ক্লোরাইড ৭২০-৭৫০ মিলিগ্রাম এবং কোষ ও লসিকা ০.৫ মিলিগ্রাম নিহিত থাকে।
আহরিত সুধা পানের সময়সীমা (Deadlines to drink derives nectar)
মানবদেহ হতে সুধা আহরণের পর বর্তমান সময়ের পরিমাপ অনুযায়ী প্রায় দশমিনিট পর এ জল পান করা উচিত। নিঃসরণের সময় এটি; অধিক উষ্ণ থাকে। এজন্য; এটি; শীতল করার জন্য কিছু সময় একটি পাত্রে রেখে দেওয়া উচিত। তবে; তিনঘণ্টার অধিক সময় এটি; কোনো ক্রমেই রাখা ঠিক নয়। কারণ; বাংভারতের জলবায়ুর তাপমাত্রা অনুযায়ী প্রায় তিনঘণ্টা পর এর পচনক্রিয়া আরম্ভ হয়। যেমন; খেজুররস পচে গেলে পান করা যায় না। তেমনই; সুধাও পচে গেলে আর পান করা যায় না। পাত্রে ধারণের সঙ্গে সঙ্গে এটা পান করা উচিত নয়। কারণ; সামান্য শীতল হলে এর স্বাদ অনেকটা বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও; সুধা শীতল হওয়া পর্যন্ত পাতন করলে জননপথ হতে পতিত সামান্য যে ময়লা থাকে তা নিচে তলানি রূপে সঞ্চিত হয়। যারফলে; ওপর হতে সুধা পান করে নিচের ময়লাযুক্ত অংশ ফেলে দেওয়া যায়।
সুধা হিমাগারে রাখার নিয়ম (The rules of nectar cold storage)
আধুনিক বিজ্ঞানের আবিষ্কৃত হিমাগারের সাহায্য নিলে এটি; আবার কয়েক দিন পর্যন্তও রাখা যায়। তবে; হিমাগার ব্যতীত স্বাভাবিকভাবে মাত্র তিনঘণ্টার অধিক সময় এটি; রাখা যায় না। একটি পরিষ্কার বোতলে ভরে ভালোভাবে মুখ আটকিয়ে হিমাগারের সাধারণস্তরে এ জল রাখা যায়। গভীরে রাখার কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ; গভীরে রাখলে এটি; বরফ হয়ে যায়। তবে; সাবধান বোতলে ভরে মুখ আটকিয়ে রাখলেও প্রতিদিন একবার করে বের করে বোতলের মুখ খুলে সঞ্চিত বায়ব পদার্থ বের করে দিতে হয়। তা না হলে বোতলের ভিতরে সঞ্চিত বায়বপদার্থ বোতল বিষ্ফোরণ করে বের হয়ে যায়। বোতলের বায়ব বোতল ভেঙ্গে রেব হয়ে যাওয়ার সময় বিকট শব্দ হয় এবং হিমাগারেরও ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। এসব কারণে সুধা অধিক সময় বোতলে ভরে হিমাগারে রাখা উচিত নয়।
সুধা একবার পান করলে জন্ম-মৃত্যু রহিত হয় কিভাবে? (How to repealed birth and death by once drinking the nectar?)
এটি; এমন এক প্রকার সুধা যে এ জল ব্যতীত বিশ্বের কোনো প্রাণীই সৃষ্টি হতে পারে না। বিশ্ববিখ্যাত শ্বরবিজ্ঞানীদের মতে; এ জলকে প্রাকৃতিক ধাত্রী বলা হয়। ধাত্রী যদি ঠিকমতো সন্তান লালনপালন না করে; তবে; কিছুদিনের মধ্যেই সন্তান প্রয়াণকোলে ঢলে পড়ে। রজস্বলার গর্ভে ১. ঊষা ২. নিশা ৩. ঊর্ধ্বা ৪. শঙ্কা ৫. বিপদ ও ৬. নীরব; এ ছয় প্রহরের মধ্যে শুক্রনিক্ষেপ করলে সন্তান সৃষ্টি হয়। যদি গর্ভে সন্তান সৃষ্টি হয়; তবে; ভূমিষ্ঠ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এ সুধাটি ধাত্রী রূপে সন্তান লালনপালন করে থাকে। তাই; সুধাকে প্রাকৃতিক ধাত্রী বলা হয়। শুক্রনিক্ষেপ না করে মূলাধার হতে এ জল একবার বের করে নিলে ঐ মাসে ঐ জল আর সৃষ্টিও হয় না। যারফলে; গর্ভে সন্তানও আর সৃষ্টি হয় না। গর্ভে সৃষ্ট সন্তানপালন করে যে ধাত্রী সে ধাত্রীই যদি না থাকে তবে সন্তান লালনপালন করবে কে? এজন্য; ঐ মাসে জননপথে শুক্রপাতরূপ মৃত্যুবরণ করার পরও দশমাস পর সন্তান রূপে আর পুনর্জন্ম হয় না। তাই; শ্বরবিজ্ঞানে বলা হয় যে; একবার সুধা পান করলে আর তার জন্ম-মৃত্যু হয় না। অর্থাৎ; সন্তান রূপে জন্ম হয় না। যেহেতু; সন্তান রূপে জন্ম হয় না; সেহেতু; বলা যায় তার শুক্রপাতরূপ মৃত্যুও হয় না। জীবনে একবার যে সাধক সুধা ও মধু আহরণ করার কৌশল আয়ত্ত করতে পারেন; তিনি প্রতি মাসেই সুধা ও মধু আহরণ ও পান করতে পারেন। আর একবার নিয়মিত সুধা আহরণ করার অভ্যাস গড়ে উঠলে কখনই জননপথে শুক্রনিক্ষেপ করার সুযোগ থাকে না। যারফলে; জীবনে কখনই তার সন্তান সৃষ্টি হয় না। এক্ষেত্রে যদিও তিনি সন্তান গ্রহণ করেন নি; তবুও; তিনি আঁটকুড়ে নন। তবে; রোগের জন্য যদি কেউ আঁটকুড়ে হয় সেটি ভিন্ন কথা। এ ব্যাপারে পবিত্র কুরানে বলা হয়েছে; “إِنَّ شَانِئَكَ هُوَ الْأَبْتَرُ” উচ্চারণ; “ইন্না শানিয়াকা হুয়াল আবতার” অর্থ; “নিশ্চয় যিনি আপনার প্রেমিক তিনি আঁটকুড়ে।” (কুরান, কাউসার- ৩)। মহাত্মা লালন সাঁইজি বলেছেন; “১অখণ্ড মণ্ডলাকারং ব্যাপ্তং সারা চরাচর, গুরু তুমি পতিতপাবন পরমঈশ্বর।” (পবিত্র লালন- ৪২/১)। এছাড়াও; কুরানের অনত্র বলা হয়েছে; “مَا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِنْ رِجَالِكُمْ وَلَكِنْ رَسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ وَكَانَ اللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا” উচ্চারণ;– “মা কানা মুহাম্মাদুন আবা আহাদিম মির রিজালিকুম, ওয়া লাকির রাসুলাল্লাহি, ওয়া খাতামান নাবিয়্যিনা, ওয়া কানাল্লাহু বিকুল্লি শাইয়্যিন আলিমা।” অর্থ; “সাঁই (মুহাম্মদ) কারো পিতা ছিলেন না, তোমাদের পুরুষরা (যেমন)। তিনি ছিলেন কাঁইয়ের তত্ত্ববাহক এবং সর্বশেষ বসিধ এবং কাঁই সর্ববিষয়ে সুবিজ্ঞ।” (কুরান- আহযাব-৪০)।
অন্যদিকে; বলন কাঁইজি বলেছেন; “মরেছিল সাঁইজি লালন, পাই না তাঁর পুনর্জনম, এমন মরা মরে কয়জন, স্বেচ্ছা ঝুলে ফাঁসিতে।” (বলন তত্ত্বাবলী)। (মুখ; “মরাকে আর মারবি কত, বেন্ধে যম-রশিতে, যমের কী আর সাধ্য আছে, আবার তারে মারিতে”)।
উল্লেখ্য যে; মহাসাধকগণ স্বেচ্ছায় সন্তানগ্রহণ করেন না। এজন্য; তাঁদের কখনই আঁটকুড়ে বলা উচিত নয়।
আবতার [ﺍﺑﺘﺭ] বিণ নিঃসন্তান, আঁটকুড়ে, সন্তানহীন (শ্ববি) অখণ্ড, অটল {আ}
প্রামাণ্য গ্রন্থাগুলো (Authoritative books)
১. (ঋবেসপ্রখপম, সূ-৪৩, ঋ-১৩)। = ঋকবেদ সংহিতা, প্রথমখণ্ড, পঞ্চম মণ্ডল, সূক্ত-৪৩, ঋক নং- ১৩।
২. (যবেসচবিঅ, য-১১)। = যজুর্বেদ সংহিতা, চতুর্বিংশ অধ্যায়, যজু নং- ১১।
তথ্যসূত্র (References)
(Theology's number formula of omniscient theologian lordship Bolon)
১ মূলক সংখ্যা সূত্র (Radical number formula) "আত্মদর্শনের বিষয়বস্তুর পরিমাণ দ্বারা নতুন মূলক সংখ্যা সৃষ্টি করা যায়।"
রূপক সংখ্যা সূত্র (Metaphors number formula)
২ যোজক সূত্র (Adder formula) "শ্বরবিজ্ঞানে ভিন্ন ভিন্ন মূলক সংখ্যা-সহগ যোগ করে নতুন যোজক রূপক সংখ্যা সৃষ্টি করা যায়; কিন্তু, গণিতে ভিন্ন ভিন্ন সংখ্যা-সহগ যোগ করে নতুন রূপক সংখ্যা সৃষ্টি করা যায় না।"
৩ গুণক সূত্র (Multiplier formula) "শ্বরবিজ্ঞানে এক বা একাধিক মূলক-সংখ্যার গুণফল দ্বারা নতুন গুণক রূপক সংখ্যা সৃষ্টি করা যায়; কিন্তু, মূলক সংখ্যার কোন পরিবর্তন হয় না।"
৪ স্থাপক সূত্র (Installer formula) "শ্বরবিজ্ঞানে; এক বা একাধিক মূলক সংখ্যা ভিন্ন ভিন্ন ভাবে স্থাপন করে নতুন স্থাপক রূপক সংখ্যা সৃষ্টি করা যায়; কিন্তু, মূলক সংখ্যার কোন পরিবর্তন হয় না।"
৫ শূন্যক সূত্র (Zero formula) "শ্বরবিজ্ঞানে মূলক সংখ্যার ভিতরে ও ডানে শূন্য দিয়ে নতুন শূন্যক রূপক সংখ্যা সৃষ্টি করা যায়; কিন্তু, মূলক সংখ্যার কোন পরিবর্তন হয় না।"
< উৎস [] উচ্চারণ ও ব্যুৎপত্তির জন্য ব্যবহৃত () ব্যুৎপত্তির জন্য ব্যবহৃত > থেকে √ ধাতু => দ্রষ্টব্য পদান্তর :-) লিঙ্গান্তর অতএব × গুণ + যোগ - বিয়োগ ÷ ভাগ
- A great 70% flat rate for your items.
- Fast response/approval times. Many sites take weeks to process a theme or template. And if it gets rejected, there is another iteration. We have aliminated this, and made the process very fast. It only takes up to 72 hours for a template/theme to get reviewed.
- We are not an exclusive marketplace. This means that you can sell your items on PrepBootstrap, as well as on any other marketplate, and thus increase your earning potential.